দীর্ঘদিন ধরে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের বাইরে আছেন জনপ্রিয় নায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। বিয়ে ও সন্তান জন্মের খবর নিয়েও মুখ খোলেননি তিনি। এক সময়ের জনপ্রিয় এই এবার খবরের শিরোনাম হলেন নেতিবাচক বিষয় নিয়ে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন তার মাসহ পরিবারের সদস্যরা। তবে পপির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা অযৌক্তিক বলে মনে করেছেন তার কিছু সহকর্মী।

চিত্রনায়িকা পপিকে নিয়ে আলোচনার মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী নায়িকা রিয়ানা রহমান পলি। সেই সূত্র ধরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

তিনি সমকালকে বলেন, ‘পপি আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী। তার সঙ্গে কয়েকটি ছবিতে কাজ করেছি। সেই সুবাদে আমি কাছে থেকে চিনি-জানি। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে পপি পরিবারের জন্য কী করেছে, সেটা আমরা সবাই কম-বেশি জানি। এতোকিছু করার পরও পপির পরিবারের সদস্যরা কীভাবে এমন অভিযোগ তুলতে পারে সেটা বুঝে আসছে না।’

১৯৯৫ সালের পর থেকে পপির বাবাও বেকার ছিলেন। বলতে গেলে, পপি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় থেকে তার পরিবারের কারো রোজগারের পথ ছিল না। নিজের টাকায় পরিবারের জন্য তিনি সবকিছু করেছেন। এমনকি বিয়েও করেছেন দেরিতে। নিজের টাকায় তিনি অনেক জায়গা জমি কিনেছেন। এই সময় এসে পপির বিরুদ্ধে যে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে তা একেবারে অযৌতিক বলে মানে করেন এই নায়িকা।

পলির কথায়, ‘ফিল্মে পপির কোনো বান্ধবী ছিল না। তার মা সেটা কখনো চাইতেন না। তিনিই সব সময় পপির সঙ্গে থাকতেন। এর মাঝেও তার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। আমরা দেখেছি পপি কত টাকা আয় করতো। সেই সময় কিন্তু পপির পরিবারে আয় করার মত কোনো মানুষ ছিল না। পপির সব টাকা তার মা-বাবার হাতে চলে যেতো। মা-বাবাসহ সব ভাইবোন পপির টাকায় চলল। সেই ধারা আজ প্রায় ২৫ বছর ধরে চলে আসছে। ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে যদি তার নিজের আয়ের হিসাব পরিবারের কাছ থেকে চায় সেটা অপরাধ হয় কীভাবে।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে পলি বলেন, ‘একটা সময় তার ভাই-বোনরা তো পপির টাকা খেয়েছে। তার টাকা দিয়েই ২৫ বছর পার করে দিল। একজন শিল্পী দিনরাত পরিশ্রম করে টাকায় আয় করে। সেই শিল্পীকে আমার মূর্হুতেই ধূলিসাৎ করে ফলছি। আমিও শতাধিক সিনেমা করেছি। আমারা যখন কাজের মধ্যে থাকি তখন আমাদের আয়ের কোনো হিসাব থাকে না। আমাদের বাবা-মা কিংবা স্বামীর মাধ্যমেই টাকা জমা হয়। সে ক্ষেত্রে যদি কেউ বেইমানি করে সেখানে আমাদের কিছু বলার থকে না। পপি অনেক কষ্ট করে টাকা উপার্জন করেছে। কাজ না করে সেই টাকা ১৪ গোষ্ঠী মিলে খেয়ে শেষ করবে। আর তার হিসাব চাইলে পপি খারাপ? এটা যে পপির ক্ষেত্রেই ঘটেছে তা নয়। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অনেক ঘটনা আছে। আমরা সত্যি অসহায়।’

প্রসঙ্গত, পপির বিরুদ্ধে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ তুলে সোমবার সোনাডাঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তার বোন ফিরোজা পারভীন। একই অভিযোগ করেছেন তার মা।

জিডি সূত্রে জানা গেছে, পৈতৃক ৬ কাঠা জমি দখলের নেওয়ার জন্য স্বামী আদনান উদ্দিন কামাল, কল্লোল মজুমদার ও শিপনসহ পপি ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিববাড়ি এলাকার ভাড়াটিয়া বাড়ির সামনে যান। এতে বাধা দিলে পপি ও তার স্বামী ফিরোজা পারভীনকে হুমকি দেন।

এসব বিষয়ে জানতে পপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন ত র পর ব র র দখল র

এছাড়াও পড়ুন:

গুলশানে লোক জড়ো করে গাড়ি ভাঙচুর, মারধরকারীকে শনাক্ত করলেন তরুণী

রাজধানীর গুলশানে লোক জড়ো করে এক ব্যক্তিকে রক্তাক্ত করা এবং গাড়ি ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির নাম জুয়েল রানা (৩১)।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ব্যক্তির ছবি দেখে এক তরুণী তাঁকে শনাক্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, জুয়েলের হাতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনিও ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন।

গুলশানের সড়কে এক ব্যক্তিকে রক্তাক্ত করার ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবারের। ওই ঘটনায় আজ শুক্রবার মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত জুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘণ্টাখানেক আগে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।

যে ব্যক্তিকে রক্তাক্ত করা হয়েছে, তাঁর নাম মাহবুব আলম। তিনি একটি সুপরিচিত শিল্পগোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। তিনি বৃহস্পতিবারের ঘটনা ধরে আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেন।

যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে ঘটনা জানান মাহবুব আলম। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি গাড়ি চালিয়ে গুলশান-১ থেকে গুলশান-২ নম্বরের দিকে যাচ্ছিলেন। এক ব্যক্তি গুলশান-১ নম্বরে সিগন্যাল অমান্য করে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। তিনি হঠাৎ গাড়ির সামনে এসে পড়েন।

মাহবুব বলেন, ‘আমি হর্ন (ভেঁপু) বাজিয়ে গাড়িটি ব্রেক করি। তখনই ওই ব্যক্তি (জুয়েল) গাড়ির বনেটে (সামনের অংশ) জোরে থাপ্পড় দেন। চিৎকার করে বলতে থাকেন, গুলশান তাঁর এলাকা। এখানে তিনি যখন খুশি, যেভাবে খুশি সেভাবেই রাস্তা পার হবেন।’

জুয়েল গাড়িটির গতি রোধ করে দাঁড়ান বলে জানান মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘আমি গাড়ি থেকে নেমে ট্রাফিক সার্জেন্টকে ডাকতেই তিনি দৌড়ে এসে আমার শার্টের কলার চেপে ধরেন। বলতে থাকেন, আমি নাকি তাঁকে গাড়ি চাপা দিতে চেয়েছি। আমাকে সে দেখে নেবে। গাড়িতে আমার সঙ্গে আরও তিন সহকর্মী ছিলেন। ঘটনার এক পর্যায়ে আমার এক সহকর্মী গাড়ি থেকে নেমে সার্জেন্টদের ঘটনার বিষয়ে বলতে গেলে ওই ব্যক্তি তাঁকে (সহকর্মী) গালিগালাজ করতে থাকেন।’

‘ব্যস্ত সড়কে ওই ব্যক্তি এতটাই উত্তেজিত ছিলেন যে সার্জেন্টরা আমাদের চলে যেতে বলেন। তখন ওই ব্যক্তি কখনো গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন, কখনো বনেটে উঠে পড়েন’, বলেন মাহবুব।

ফেসবুকে মাহবুব আলম লিখেছেন, জুয়েলের আচরণে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট অসহায়ের মতো হয়ে পড়েন। পুলিশ সদস্যরা তাঁকে (মাহবুব) গাড়ি সড়কের এক পাশে নিয়ে থামাতে বলেন। যখন তিনি গাড়িটি সড়কের পাশে নিচ্ছিলেন, তখন জুয়েল তাঁর মুখে ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করেন। এ সময় তাঁর মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল।

মাহবুবের ভাষ্য, ঘটনার এ পর্যায়ে গুলশান-১ নম্বরে দায়িত্বরত সার্জেন্টরা তাঁকে (মাহবুব) ঘিরে ধরেন। তাঁরা তাঁকে চলে যেতে অনুরোধ করেন।

মাহবুব বলেন, ‘আমি গাড়ি নিয়ে গুলশান-২ নম্বরের দিকে চলে যেতে থাকি। গুলশান-২ নম্বরের সিগন্যালে গাড়ি থামতেই ওই ব্যক্তি কোথা থেকে দৌড়ে এসে আবার গাড়ির বনেটে উঠে পড়েন। আর চিৎকার করে বলতে থাকেন, আমি তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম। আমি নাকি সার্জেন্টদের চোখ ফাঁকি দিয়ে গুলশান-১ নম্বর থেকে পালিয়ে এসেছি।’

মাহবুবের দাবি, তিনি গাড়ি চালিয়ে কিছু দূরে গুলশান-২–এর ৫২ নম্বর সড়কে পুলিশের ‘ডিপ্লোমেটিক ডিভিশনের’ ফটকের সামনে যান। জুয়েলও সেখানে যান। সেখানে গিয়েও জুয়েল চিৎকার করে লোক জড়ো করতে থাকেন। এ সময় জড়ো হওয়া কয়েকজনকে নিয়ে জুয়েল গাড়ির দরজা টেনে খোলার চেষ্টা করতে থাকেন। দরজা খুলতে না পেরে তিনি একটি ইট দিয়ে আঘাত করে গাড়ির কাচ ভেঙে ফেলেন। তাঁর সঙ্গে থাকা লোকেরাও মারমুখী ছিলেন।

গাড়ির কাচ ভাঙার পর মাহবুব তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে গাড়ি থেকে নামেন। তিনি বলেন, তিনি উপস্থিত সবাইকে জিজ্ঞেস করেন, তাঁর গাড়ির কাচ কেন ভাঙা হলো? জুয়েলের শরীরের কোথায় তিনি আঘাত করেছেন? বরং জুয়েলই তাঁকে মেরে রক্তাক্ত করেছেন, গাড়ি ভেঙেছেন। তখন জড়ো হওয়া লোকদের কেউ কেউ জুয়েলকে নিয়ে গুলশান থানায় যেতে রাজি হন।

থানায় নেওয়ার পর কী হলো

মাহবুব আলম বলেন, ‘গুলশান থানায় যাওয়ার পর আমরা ওই ব্যক্তিকে নিয়ে থানার পরিদর্শকের (অপারেশন) কাছে যাই। তিনি সব শুনে আমাকে অভিযোগ লিখতে বলেন। এ সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি থানাতেও চোটপাট দেখাতে থাকেন। পরিদর্শক আমাকে মামলার জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট আনতে বলেন। আমি অভিযোগ লিখে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে রাত ১০টার দিকে ফিরে দেখি ওই ব্যক্তি আর থানায় নেই।’

‘পরে থানায় কথা বলে জানতে পারি হামলাকারী ওই ব্যক্তি উল্টো আমার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে চলে গিয়েছেন’, বলেন মাহবুব।

মাহবুব বলেন, দ্বিতীয় দফায় গুলশান থানায় গিয়ে পরিদর্শকে (অপারেশন) না দেখে তিনি ওসির সঙ্গে দেখা করে সব খুলে বলেন। ওসিকে জুয়েলের ছবিও দেখান। তখন পাশে থাকা এক পুলিশ সদস্য ওসিকে বলেন, ছবিতে দেখানো লোকটি গুলশান-১ নম্বরের চিহ্নিত নেশাখোর-ছিনতাইকারী। ফখরুদ্দিন বিরিয়ানির পেছনের গলিতে তিনি আড্ডা দেন। তাঁকে ধরলে ১৫-২০ জনের একটা ‘গ্যাংকে’ ধরা যাবে। ওসি তখন ডিউটি অফিসারকে ডেকে মামলা নিতে বলেন।

ওসি বলার পরও পরিদর্শক (অপারেশন) মামলা গ্রহণের ক্ষেত্রে গড়িমসি শুরু করেন বলে অভিযোগ করেন মাহবুব আলম। তিনি বলেন, পরিদর্শক বলছিলেন এসব ঘটনায় মামলা-জিডি করে কোনো লাভ নেই। মামলা করলে ওই ব্যক্তিও তাঁর (মাহবুব) বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।

মাহবুবের এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মুকলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। উভয় পক্ষই থানায় এসে অভিযোগ করেছিলেন। আমরা মাহবুব আলমের অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। মামলার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তিনি শুধু সকালে এসে একটি স্বাক্ষর দিলেই মামলা হয়ে যেত।’

ঘটনাটির ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর পাল্টে যায় চিত্র। নড়েচড়ে বসে পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় থানায় ডাকা হয় ভুক্তভোগী মাহবুব আলমকে। মামলাও নেওয়া হয়।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেখে এক তরুণী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চিনতে পারেন। তিনি শুক্রবার ফেসবুকে লেখেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই ব্যক্তিসহ তিনজন গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কের সামনে ছিনতাইয়ের জন্য তাঁর গলায় ছুরি ধরেছিলেন।

রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই তরুণী গুলশান থানায় ছিলেন। পরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি মোটরসাইকেলে এসে ওই ব্যক্তি তাঁর গলায় ছুরি ধরে হাতব্যাগ থেকে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেন।

ওই তরুণী আরও বলেন, শুধু তাঁর টাকা নয়, তিনি যে শরিকি যাত্রার (রাইড শেয়ারিং) মোটরসাইকেলে ছিলেন, সেটার চালকের টাকাও নিয়ে গেছেন জুয়েল ও তাঁর সঙ্গীরা। তাঁদের আঘাত করে আহত করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমিও জুয়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থানায় এসেছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গুলশানে লোক জড়ো করে গাড়ি ভাঙচুর, মারধরকারীকে শনাক্ত করলেন তরুণী