উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। উপজেলা পর্যায়ে আদালতের কার্যক্রম বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, উপজেলা সদরের ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, জেলা সদর থেকে দূরত্ব ও যাতায়াত ব্যবস্থা, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বিন্যাস এবং মামলার চাপ বিবেচনা করে কোন কোন উপজেলায় আদালত স্থাপন করা প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আজ বুধবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংস্কার প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, বর্তমানে যেসব স্থানে চৌকি আদালত আছে, সেগুলো সচল রাখার প্রয়োজন আছে কি না বা সেগুলোর ভৌগোলিক এখতিয়ার পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন আছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, উপজেলা আদালতগুলোতে জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ পর্যায়ের বিচারকদের পদায়ন করতে হবে এবং তাদের দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় এখতিয়ার দিতে হবে। আইনগত সহায়তা কার্যক্রম ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা, বিশেষত মধ্যস্থতা পদ্ধতি উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে হবে।

কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে আজ বুধবার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিতে একাধিকবার সময় বাড়ায়। অংশীজন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে প্রায় চার মাস পর বিচার বিভাগের জন্য এ-সংক্রান্ত ‘৩০টি’ সংস্কার প্রস্তাব করেছে সংস্কার কমিশন।

সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত সুপারিশে উপজেলা সদরে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতসহ লিগ্যাল এইড কার্যক্রম সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ গঠনেরও কথা থাকছে তাদের প্রস্তাবে। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিচার বিভাগ সংস্কারের খসড়া সারসংক্ষেপ জমা দেওয়া হয়।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নানা ক্ষেত্রে সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে আট সদস্যের বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয় ৩ অক্টোবর। এই কমিশন বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছে খসড়া প্রতিবেদনে। এতে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য বিচারক নিয়োগে পৃথক কমিশন গঠন, দেশের সব প্রশাসনিক বিভাগে হাই কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা, জেলা পর্যায়ে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা, উপজেলায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠা, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের মতো সুপারিশ রয়েছে।

প্রতিবেদন প্রসঙ্গে সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান সমকালকে বলেন, সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে– প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ থাকবে। কমিশনের পক্ষ থেকে বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন ও উপজেলা পর্যায়ে ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতসহ লিগ্যাল এইড কার্যক্রম সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘পুরোনো মামলা নিষ্পত্তি, চুক্তিতে বিচারক নিয়োগ, বাণিজ্যিক আদালত স্থাপন, মোবাইল কোর্টসহ বিভিন্ন বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। সরকার এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা বা জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারব কিনা বলতে পারছি না।’
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর য য় সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বার কাউন্সিলের ফি কমানোর দাবিতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট পরীক্ষার ফি কমানোর দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১০ মার্চ) বিকেল ৪টায় আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল ভাস্কর্য এবং চির উন্নত মম শির এর সামনে এ কর্মসূচি পালন করে। এ সময় পরীক্ষার ফি ৪০২০ টাকা থেকে কমিয়ে ৩০০ টাকা করার দাবি জানান তারা।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের হাতে ‘অযৌক্তিক এবং বৈষম্যমূলক ফি বাতিল চাই’, ‘অধিকার নিয়ে বাণিজ্য,চলবে না’, ‘জুডিশিয়ারিতে ননক্যাডার চাই’, ‘বার কাউন্সিলের অযৌক্তিক ফি কমাতে হবে’, ‘বৈষম্যমুক্ত বার কাউন্সিল চাই’সহ বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

শিক্ষার্থীরা জানান, ইন্টিমেশন দেওয়ার পর প্রথমেই রেজিস্ট্রেশনের জন্য ১ হাজার ৮০ টাকা দিতে হয়। এরপর আবার পরীক্ষায় বসার জন্য ৪ হাজার ২০ টাকা দিতে হয়। বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরির ফি কমানো হয়েছে। আমাদের দোষটা কী? আমাদের দাবি ৪ হাজার ২০ টাকা থেকে কমিয়ে ফি ৩০০ টাকা নির্ধারণ করুন। আমরা এই যৌক্তিক দাবির দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।

আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী তৈয়ব শাহনূর বলেন, “রাষ্ট্র যন্ত্রের এতগুলো সংস্কার চলছে. এমন সময়ে সবার চোখের সামনে এ রকম অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত হতাশাজনক। দ্রুত ফি কমাতে হবে। আর জুডিশিয়ারিতে ননক্যাডার বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য এবং ক্ষমতায়নের জন্যই জরুরি।”

আরেক শিক্ষার্থী সানজিদা সাবা বলেন, “বার কাউন্সিলের ফি কমানো আর জুডিশিয়ারিতে ননক্যাডার পদ যৌক্তিক দাবি। এগুলো নিয়ে টালবাহানা না করে দ্রুত মানতে হবে। এটা আমাদের অধিকার।

সম্প্রতি বার কাউন্সিল পূর্বের মত বার কাউন্সিল এনরোলমেন্ট পরীক্ষায় ৪ হাজার ২০ টাকা ফি নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর থেকে ঢাকাসহ  বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী ও শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মসূচি পালন করছে।

ঢাকা/তৈয়ব/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ