ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যার ১০০০ দিন
Published: 5th, February 2025 GMT
ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যার ১,০০০ দিন হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো পাওয়া যায়নি এই হত্যাকাণ্ডের সুবিচার।
আল-জাজিরার পোড়-খাওয়া সাংবাদিক শিরিন নিহত হন ২০২২ সালের ১১ মে। পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে এক ইসরায়েলি হামলার সংবাদ প্রচার করছিলেন তিনি। তার মাথায় ছিল হেলমেট, পরনে ছিল স্পষ্ট 'প্রেস' লেখা ভেস্ট। এরপরেও তাকে "ঠান্ডা মাথায় খুন" করে ইসরায়েল, দাবি করেছে আল জাজিরা।
সংবাদ মাধ্যম, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা, এমনকি জাতিসংঘ শিরিনের মৃত্যু নিয়ে তদন্ত করে এবং একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়- রীতিমত পরিকল্পনা করে শিরিনকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী।
২৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের আগ্রাসন নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন করে গেছেন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান শিরিন। যে দিন তাকে হত্যা করা হয়, সেদিন সংঘর্ষ এবং ক্রস-ফায়ারের আওতা থেকে দূরে ছিলেন শিরিন এবং তার সহকর্মীরা। তবে তার ২০০ মিটার (৬৬০ ফুট) দূরে ছিল ইসরায়েলি সেনারা। তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্পষ্ট ভিডিও রয়েছে। তাতে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ শিরিনকে সাহায্য করতে যেসব সহকর্মীরা ছুটে এসেছিলেন, তাদের ওপরেও গুলিবর্ষণ করা হয়।
সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরেও শিরিনকে হত্যার পর ইসরায়েলকে নিয়ে বলার মত কোনো তদন্ত করেনি কেউই, না জাতিসংঘ, না যুক্তরাষ্ট্র, না কোনো আন্তর্জাতিক আদালত।
ইসরায়েলের বক্তব্য
শুরুর দিকে দায় এড়াতে চেষ্টা করে ইসরায়েল। দাবি করা হয়, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা হত্যা করেছে শিরিনকে। কিন্তু দ্রুতই তারা দায় স্বীকার করে, দাবি করে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে শিরিনের মৃত্যু ছিল নিছকই 'দুর্ঘটনা।'
এক সপ্তাহ পর ইসরায়েল জানায় তারা এ ঘটনায় কোনো তদন্ত করবে না, কারণ তাতে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে সমালোচনা দেখা দেবে।
এরও এক বছর পর ইসরায়েল সেনা মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি শিরিনের মৃত্যুতে 'গভীর দুঃখ' প্রকাশ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এর মতে শিরিনের মৃত্যুর আগে ২২ বছর সময়কালে ২০ জন সাংবাদিকে মৃত্যুতে কোনো ইসরায়েলি সেনার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ইসরায়েল। শুধু তাই নয়, ২০২৩ সালে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৫৯ ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে হত্যা করে ইসরায়েল।
যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ
ইসরায়েলের দুঃখ প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে তদন্তের তাগাদা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। অথচ প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জোর দিয়ে বলেছিলেন শিরিনের হত্যার সাথে জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত।
প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি, পশ্চিম তীরের কর্তৃপক্ষ সুবিচারের আশায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিয়েছিল এ বিষয়ে। শিরিনকে হত্যা করে যে বুলেটটি, তা তুলে দেওয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফরেনসিক এক্সপার্টদের হাতে। এর তেমন কোনো সুরাহা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন জানান, বুলেটটি এতই ক্ষতিগ্রস্ত যে তার থেকে কোনো তথ্য বের করা যায়নি।
অন্যান্য তদন্ত
শিরিনের মৃত্যু নিয়ে স্বাধীনভাবে তদন্ত করে কয়েকটি সংবাদ সংস্থা এবং তদন্ত সংস্থা। ২০২২ সালের মে মাসে সিএনএন জানায় তাদের তদন্তে দেখা গেছে শিরিনকে টার্গেট করেছিল ইসরায়েল।
ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনি সংস্থা আল-হক এবং ব্রিটিশ সংস্থা ফরেনসিক আর্কিটেকচারের প্রকাশিত এক যৌথ তদন্তে দেখা যায় পরিকল্পনা করেই হত্যা করা হয় শিরিনকে।
এছাড়া আল-জাজিরাও এ বিষয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট কী করেছে?
শিরিন হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলার অনুরোধ করে আলজাজিরা। এটা ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। ছয় মাসব্যাপী অনুসন্ধান চালিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান, ভিডিও ফুটেজ এবং বিভিন্ন ধরনের নতুন আলামত নিয়ে তৈরি একটি তথ্যপঞ্জিও আইসিসির কাছে দাখিল করেছে আলজাজিরা। এছাড়া ওই বছরই আইসিসি বরাবর আরেকটি মামলার অনুরোধ করে শিরিনের পরিবার।
কিন্তু এ বিষয়ে কোনো মামলা হবে কিনা, বা শিরিনের সুবিচারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা, এ বিষয়ে এখনো মুখ খোলেনি আইসিসি।
জাতিসংঘের ভূমিকা
ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, শিরিনকে টার্গেট করে অযৌক্তিক বলপ্রয়োগ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা এটাও জানায় যে ইসরায়েলি বাহিনীর এক বিশেষ ইউনিট এর সাথে জড়িত।
কমিশনের এই তদন্তে আটজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়, এ বিষয়ে সহজলভ্য সব তথ্য যাচাই করা হয়, এছাড়া আল জাজিরা, সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনগুলোকেও আমলে নেওয়া হয়।
জাতিসংঘের এই তদন্তের তথ্য আইসিসিকে দিয়ে তাদের তদন্তে সাহায্য করার অনুরোধ জানিয়েছে আল জাজিরা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল তদন ত পর ইসর য় ল র ইসর য় ল ইসর য় ল র আল জ জ র আইস স
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বকাপের ‘দ্বিগুণ প্রাইজমানি’ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে
চলতি বছরের জুনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হবে ৩২ দলের ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের প্রথম আসর। তার আগে আজ বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ, ২০২৫) বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা ঘোষণা করেছে ২০২৫ ক্লাব বিশ্বকাপের প্রাইজমানি। এই টুর্নামেন্টের জন্য নির্ধারণ করা প্রাইজমানির পরিমাণ শুনে অনেকেই অবাক হতে পারেন। কারণ সেটি ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের প্রাইজমানির দ্বিগুণের চেয়েও বেশি!
২০২৫ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের প্রাইজমানি হবে ১০০ কোটি ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের প্রাইজমানি ছিল ৪৪ কোটি ডলার এবং ২০২৩ নারী ফুটবল বিশ্বকাপের প্রাইজমানি ছিল ১১ কোটি ডলার।
ফিফা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ৩২ দল নিয়ে আয়োজিত এই ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে ২০০ কোটি ডলার তথা আড়াই হাজার কোটি টাকা আয় হতে পারে। এছাড়াও ২০২৮ সাল থেকে মেয়েদের ক্লাব বিশ্বকাপও অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করেছে ফিফা।
আরো পড়ুন:
চ্যাম্পিয়ন ম্যানইউর বিদায়, শেষ আটে ফুলহ্যাম ও ব্রাইটন
পয়েন্টে শীর্ষে বার্সা, গোলে লেভানডোফস্কি
ফিফার বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, টুর্নামেন্ট থেকে আয় হওয়া পুরো অর্থই অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হবে। ফিফা কোনো অর্থ নিজেদের জন্য রাখবে না। ক্লাবগুলোকে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে প্রাইজমানি দেওয়া হবে এবং প্রতিটি ক্লাবের জন্য প্রাইজমানি নির্ধারিত থাকবে।
৩২ দলের ক্লাব বিশ্বকাপের প্রথম আসরটি চলতি বছরের ১৫ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি শহরের ১২টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। ১৫ জুন মায়ামির হার্ডরক স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচে ইন্টার মায়ামি মুখোমুখি হবে মিসরের আল আহলি ক্লাবের। ফাইনাল ম্যাচটি নিউজার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।
ক্লাব বিশ্বকাপে ছয় মহাদেশের যেসব দল অংশ নেবে:
ইউরোপ (উয়েফা) থেকে: ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি, রিয়াল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ, প্যারিস সেন্ট-জার্মেই, জুভেন্টাস ও আটলেটিকো মাদ্রিদ।
দক্ষিণ আমেরিকা (কনমেবল) থেকে: ফ্লামেঙ্গো, পালমেইরাস, রিভার প্লেট ও বোকা জুনিয়র্স।
উত্তর ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান (কনকাকাফ) থেকে: মন্টেরি, সিয়াটল সাউন্ডার্স ও লিওন।
আফ্রিকা (সিএএফ) থেকে: আল আহলি ও উইদাদ কাসাব্লাঙ্কা।
এশিয়া (এএফসি) থেকে: উরাওয়া রেড ডায়মন্ডস ও আল হিলাল।
ওশেনিয়া (ওএফসি) থেকে: অকল্যান্ড সিটি।
আয়োজক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে: ইন্টার মিয়ামি।
উল্লেখ্য, প্রতিটি দেশের সর্বোচ্চ দুটি করে দল এই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারবে। সে কারণে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, আর্সেনাল ও লিভারপুলের মতো ইংলিশ ক্লাবগুলো এই আসরে অংশগ্রহণ করতে পারছে না।
ঢাকা/আমিনুল