জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে মাদক মামলায় নাছরিন আক্তার নামে এক নারীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। সঙ্গে পাঠানো হয়েছে তার তিন বছরের শিশু ছেলে ইব্রাহিমকেও। একই মামলায় নাজমা বেগম ও রুবেল হোসেন নামে দুজনকেও কারাগারে পাঠানো হয়। আজ বুধবার তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তল্লাশি চালিয়ে প্রাইভেট কার, ৪০ কেজি গাঁজা গাজা ও ইয়াবাসহ তাদের আটক করে পুলিশ। 

জানা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা থেকে একটি প্রাইভেট কার চুরি হয়েছে এমন সংবাদ পায় আক্কেলপুর থানা-পুলিশ। পৌর এলাকার আক্কেলপুর-বগুড়া সড়কের সোনামুখী মসজিদ এলাকায় তল্লাশি চৌকি বসিয়ে গাড়িটির গতি রোধ করা হয়। পরে তিনজনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। গাড়িটিতে তল্লাশি চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা ও ৩৬৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। বুধবার শিশুসহ তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

আটক ব্যক্তিরা হলেন- কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার চকবাজার শুভপুর এলাকার রুবেল হোসেন, জয়পুরহাট সদর উপজেলার সাখিদারপাড়া গ্রামের নাজমা বেগম এবং কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ছাইকট গ্রামের নাসরিন আক্তার। নাজমা বেগমের নামে আগেও বগুড়া, নাটোর ও কুমিল্লায় একাধিক মাদক মামলা চলমান রয়েছে।
 
ইব্রাহিমের মা নাসরিন আক্তার বলেন, কয়েকদিন আগে তার স্বামী রাকিব হোসেন মারা যান। তিনিও মাদক কারবারী ছিলেন। দারিদ্রতার কারণে স্বামীর এক সহযোগীর পরামর্শে নেমে পড়েন এ কাজে। দুই হাজার টাকার চুক্তিতে কুমিল্লা থেকে গাঁজার চালান আনছিলেন তারা। 

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ রপ্তানি বন্ধ করে দিল চীন 

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিরল খনিজ ও চুম্বক আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র যার বেশির ভাগই আসে চীন থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ তীব্র হওয়ার মধ্যেই এবার বেইজিং বিরল কয়েকটি খনিজ পদার্থ ও চুম্বক দেশটিতে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। চীন সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন চীনা বন্দরে চুম্বকের চালান পাঠানো বন্ধ করেছে। এর ফলে পশ্চিমা বিশ্বে অস্ত্র, ইলেকট্রনিক্স ও বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত খনিজ পদার্থের সরবরাহ কমে গেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, বিশ্বজুড়ে হুমকির মুখে পড়েছে অটোনির্মাতা থেকে শুরু করে অ্যারোস্পেস নির্মাতা, সেমিকন্ডাকটর কোম্পানি ও সামরিক কন্ট্রাক্টাররাও। খবর-নিউইয়র্ক টাইম্‌স

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যযুদ্ধ মোকাবিলা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে আলোচনা করে এসেছে চীন সরকার। চীন থেকে কোন কোন জিনিস রপ্তানি করা হবে তা নিয়ে একটি নতুন বিধিমালা ব্যবস্থার খসড়া তৈরি করেছে চীন প্রশাসন। সেই খসড়া তালিকাতেই আছে বিরল খনিজ ও চুম্বকের কথা। একবার এই নতুন ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলে কয়েকটি কোম্পানিসহ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কনট্রাক্টরদের জন্যও স্থায়ীভাবে এই খনিজ এবং চুম্বক রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে বিপদে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, গাড়ি থেকে শুরু করে ড্রোন, রোবোট এবং ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত অনেককিছু তৈরিতেই চুম্বক অপরিহার্য। সেইসঙ্গে বিরল খনিজ পদার্থও রপ্তানি না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই খনিজ বৈদ্যুতিক গাড়ি থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সরঞ্জাম তৈরিতে কাজে লাগে।

কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপের পাল্টা জবাব দিয়েছে চীন। তারাও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা দিয়েছে। শনিবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। বুধবার তারা মার্কিন পণ্যের ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করে। কিছু চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্কও আরোপ করা হয়।

এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের প্রকৃতি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলো। যুক্তরাষ্ট্র যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, চীন তার পাল্টা পদক্ষেপই নিচ্ছে বারবার। তবে চীন এটাও বলেছে, এরপর যুক্তরাষ্ট্র আবার পাল্টা শুল্ক দিলে তারা আর এতে ‘সাড়া দেবে না’। তারা এটাও বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা আরোপিত ‘অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ শুল্ক’ আরোপের বিষয়টি ‘আন্তর্জাতিক এবং অর্থনৈতিক বাণিজ্যের নিয়মনীতি, মৌলিক অর্থনৈতিক আইন এবং সাধারণ জ্ঞানকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করছে এবং এটি সম্পূর্ণ একতরফা ধমকাধমকি ও জবরদস্তি’।

বেইজিংয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য রপ্তানির ওপর আরোপিত শুল্ক ‘অর্থনীতিতে বাস্তবিক কোনো তাৎপর্য ছাড়াই একটি সংখ্যার খেলায় পরিণত হয়েছে’। তিনি আরও বলেছেন, বারবার শুল্ক বৃদ্ধি কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘জবরদস্তিকে’ আরও উন্মোচিত করবে। এটি একটি রসিকতায় পরিণত হবে।

মাত্র এক সপ্তাহ আগেও চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। সেটা এখন বাড়তে বাড়তে ১২৫ শতাংশে পৌঁছেছে। গত ২ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের যেসব দেশের পণ্যে উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন, নয়ই এপ্রিল বুধবার তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই দিনই তিনি জানান, চীন, কানাডা ও মেক্সিকো বাদে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওপর ধার্যকৃত পাল্টা শুল্ক আগামী ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। তবে এই ৯০ দিন, অর্থাৎ তিন মাস এই দেশগুলোর সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।

একই দিনে চতুর্থ বারের মতো চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বাজারে চীনের পণ্যে সর্বশেষ ধার্যকৃত শুল্ক ছিল ১০৪ শতাংশ। বুধবার তা কার্যকর হওয়ার দিনই আবার বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছিলেন, আমি আগেই সতর্ক করেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যদি কোনো দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তবে তারা সঙ্গে সঙ্গে নতুন ও অনেক বেশি হারে শুল্কের মুখোমুখি হবে। এই প্রতিক্রিয়ায় চীন বলে, চীনকে চাপ বা হুমকি দিয়ে কখনোই লাভ হবে না।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, তাদের সরকার উসকানিকে ভয় পায় না। এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, প্রতিশোধমূলক শুল্ক নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে আরও একটি অভিযোগ করেছে চীন। ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের বর্ডার ট্যাক্স ১০ শতাংশ বাড়ানোর পর ডব্লিউটিও'র কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেছিল চীন। এরপরে গত সপ্তাহে ডব্লিউটিওতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে তারা বিবাদ সংক্রান্ত আরেকটি আবেদন দাখিল করে। 

যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে উচ্চ শুল্কের সম্মুখীন দেশগুলো এখন চীনের মতো তাদের অভিযোগও ডব্লিউটিও'র বিরোধ নিষ্পত্তি আদালতে নিয়ে যেতে পারে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, রাষ্ট্রপতি হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউটিও'র আপিল সংস্থায় বিচারক নিয়োগে বাধা দেওয়া শুরু করে। সংস্থাটি তাদের ক্ষমতার চেয়েও বেশি ভূমিকা রাখছে এই যুক্তিতে ওই পদক্ষেপ নেয় তারা। ফলে এই আদালত মূলত বর্তমানে কাজ করতে পারছে না এবং নিয়ম লঙ্ঘনর বিষয়েও খুব কমই ব্যবস্থা নিতে পারছে ডব্লিউটিও।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিফেন ম্যাকডোনেল বলেছেন, চীনা ক্রেতাদের স্থানীয় ব্র্যান্ড কেনার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ অব্যাহত থাকায় বেইজিং এখনও অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে রয়েছে। এদিকে চীনের ঘোষণার পর, ইউরোপীয় স্টক মার্কেটগুলো লাল রঙে প্রবেশ করেছে। এর মানে হলো প্রারম্ভিক লেনদেনে সামান্য বৃদ্ধি পাওয়ার পর তিনটি প্রধান স্টক সূচক এখন নিম্নমুখী। পতনশীল বাজারের মানে হলো বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন বেশিরভাগ কোম্পানি মুনাফা হারাচ্ছে। কারণ তারা বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের প্রবণতা পণ্যের চাহিদা কমিয়ে দেবে এবং দাম বাড়িয়ে দেবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ