পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, ‘‘সরকার একবারে ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেনি। তবে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করছে, যাতে দেশীয় উদ্যোক্তারা নিরাপদ বিকল্প তৈরি করতে পারে।’’

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘নীতি থেকে বাস্তবায়ন: বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ ও সামুদ্রিক আবর্জনা মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উপ‌দেষ্টা বলেন, ‘‘যতদিন না একবারে ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়, ততদিন ধাপে ধাপে এ থেকে সরে আসতে হবে।’’ পাশাপাশি, সরকার সব ধরনের একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করেছে—এমন গুজবকে ‘ভিত্তিহীন মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দেন এবং এটিকে প্লাস্টিক শিল্পের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ তৈরির চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেন।

প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা তুলে ধরে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘প্লাস্টিক বর্জ্য হারিয়ে যায় না, বরং ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়, যা মাছের মাধ্যমে আমাদের খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে। এটি এমন একটি বিষয় যেখানে ব্যক্তি, সরকার ও ব্যবসায়ী—সবারই দায়িত্ব রয়েছে।’’ 

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে অধিকাংশ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের সহজলভ্য বিকল্প রয়েছে। তাই ব্যবসায়ীদের আরো দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিতে হবে।’’ পুরান ঢাকার অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিক কারখানাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘এটি ধাপে ধাপে বন্ধ করার পরিকল্পনা প্রয়োজন।’’

তিনি বলেন, ‘‘একটি সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার—নিষিদ্ধকরণ একমাত্র সমাধান নয়, বরং ধাপে ধাপে ব্যবহার বন্ধ করা, পুনর্ব্যবহার ও পুনর্ব্যবস্থাপনা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ফিনল্যান্ড সরকার অত্যাধুনিক পুনর্ব্যবস্থাপনাকেন্দ্র স্থাপনে আমাদের সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এবং আমরা শিগগিরই তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।’’

তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান, ২০৩০ সালের আগেই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে একটি সময়সীমাবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। একইসঙ্গে, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অবৈধ পলিথিন কারখানা বন্ধ করতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘নিয়মকানুন মেনে চলার প্রতি প্রতিরোধ অগ্রহণযোগ্য।’’

তিনি প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা যদি একযোগে কাজ করি, তবে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন সম্ভব।’’

পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড.

মো. কামরুজ্জামান, এনডিসি-এর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকোন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন, ইউনিডো-ভিয়েনা, অস্ট্রিয়ার সার্কুলার ও রিসোর্স এফিসিয়েন্সি ইউনিট প্রধান জেরোম স্টুকি এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন বক্তব্য রাখেন।

সম্মেলনে নীতিনির্ধারক, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিরা প্লাস্টিক দূষণ ও সামুদ্রিক আবর্জনা হ্রাসে কার্যকর কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব যবহ র ব যবস একব র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গুমের ঢেউ, বেড়েছে রহস্যজনক মৃত্যু

শওকত আহমেদের মৃতদেহ যখন পাওয়া গেল, তখন তাঁর চোখ দুটি ছিল রক্তাক্ত। তাঁর চুল খসে পড়ছে। ১৮ বছর বয়সী এ যুবকের হাত-পায়ের চামড়া উঠে যাচ্ছিল। তাঁর বাবা মোহাম্মদ সাদিক এসব তথ্য জানান। ঘটনাটি গত ১৬ মার্চের। এর তিন দিন পরই সাদিক জানতে পারেন তাঁর বড় ছেলে রিয়াজও (২৫) মারা গেছেন। তারা দু’জনই এক মাস আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন। 

ভারত শাসিত কাশ্মীরের গুজ্জার সম্প্রদায়ের মানুষ তারা। স্থানীয় আইন প্রয়োগ সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, শওকত ও রিয়াজ কাশ্মীরের কুলগাম অঞ্চলের একটি নালায় ডুবে গিয়েছিলেন, যা তাদের বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। তাদের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ‘সম্ভাব্য আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়। 
কিন্তু সাদিক ও গুজ্জার সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ বয়ান মানতে নারাজ। সাদিক জানেন না তাঁর দুই ছেলের গুম হওয়া ও পরে মারা যাওয়ার আসল কারণ কী; এটি নিরাপত্তা বাহিনী করেছে, নাকি সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, তাদের নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

সরকারি বাহিনী এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বয়ানের ওপর গভীর অবিশ্বাস রয়েছে ওই অঞ্চলের মানুষের, যেখানে সম্প্রতি ব্যাপক হারে বেড়েছে গুম। এসব গুমের কিছুদিন পরই মিলছে মৃতদেহ। মুখতার আহমদ আওয়ান নামে ২৪ বছরের আরেক যুবক নিখোঁজ রয়েছেন, যার খোঁজ এখনও মেলেনি। তারা বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বের হয়ে আর ফেরেননি। 

সরকারের ওপর অনাস্থা কাশ্মীরের ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত। অ্যাসোসিয়েশন অব প্যারেন্টস অব ডিসঅ্যাপিয়ার্ড পারসন্সের (এপিডিপি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালে ভারত শাসিত এলাকাটিতে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হলে এ পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ হাজার কাশ্মীরি নিখোঁজ হয়েছেন।

কেবল এ তিনজনই নয়, কাশ্মীরে যেন গুমের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। গত ৫ মার্চ কুলগামের পাশের কাঠুয়া জেলা থেকে যুগেশ সিং (৩২), দর্শন সিং (৪০) ও ১৫ বছরের বরুণ সিং নিখোঁজ হন। তারা বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলেন। তিন দিন পর তাদের মরদেহ পাওয়া যায়। কয়েকদিন পর কাঠুয়া থেকেই মোহাম্মদ দিন ও রহমান আলি নামে আরও দুই কিশোর গুম হয়। এক মাস পার হলেও এখনও তাদের খোঁজ মেলেনি। 

২০২০ সালে ভারতের এক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজৌরি জেলায় গুজ্জার সম্প্রদায়ের তিন তরুণকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ ওঠে। পরে পুলিশ এ ঘটনায় ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠন করে। এতে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজানোর অভিযোগ আনা হয়। কোর্ট মার্শালে ওই কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত হন। তবে পরে তিনি জামিন পেয়ে যান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ