কলকাতায় শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী অষ্টম বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন
Published: 5th, February 2025 GMT
কলকাতায় আজ শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী অষ্টম বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। এই বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দেবেন ভারতের শীর্ষ শিল্পপতি মুকেশ আম্বানিসহ দেশ-বিদেশের শিল্পপতিরা। প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগের।
গত বছর এই সম্মেলন হয়নি। সর্বশেষ এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০২৩ সালের ২১ ও ২২ নভেম্বর। সেবারও যোগ দিয়েছিলেন রিলায়েন্স গোষ্ঠীর কর্ণধার মুকেশ আম্বানিসহ দেশ–বিদেশের শিল্পপতিরা।
গত শিল্প সম্মেলনে রিলায়েন্স গোষ্ঠীর কর্ণধার মুকেশ আম্বানি ঘোষণা দিয়েছিলেন, আগামী তিন বছরে বাংলায় ২০ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করবে রিলায়েন্স গোষ্ঠী। তার আগেই বাংলায় তারা ৪৫ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে। বলেছিলেন, বাংলার শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কৃষিক্ষেত্রকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আরও উন্নত করা হবে। একই সঙ্গে রাজ্যের টেলিযোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করে জিওকে আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হবে।
আজ বেলা দুইটায় এই বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন বা বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট শুরু হবে কলকাতার উপশহর রাজারহাটের নিউটাউনে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মিলনায়তন বিশ্ববঙ্গ কনভেনশন সেন্টার হলে। আগামীকাল এই সম্মেলন শেষ হবে।
এর আগে বাংলাদেশের শিল্পপতিরা এই সম্মেলনে যোগ দিলেও এবার বাংলাদেশের শিল্পপতি বা কোনো প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বৈঠকে গুরুত্ব পাবে গণতন্ত্রে উত্তরণ মানবাধিকার, রোহিঙ্গা
চার দিনের সফরে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বাংলাদেশ সফরকালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে একাধিক বৈঠক করবেন তিনি। বৈঠকে গুরুত্ব পাবে অন্তর্বর্তী সরকারের গণতন্ত্রে উত্তরণ, রোহিঙ্গা ইস্যু ও মানবাধিকার।
শাহজালাল বিমানবন্দরে আজ জাতিসংঘ মহাসচিবকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। আগামীকাল শুক্রবার সকালে মহাসচিবের অবস্থানরত হোটেলে প্রথমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে। এর পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন আন্তোনিও গুতেরেস। বৈঠক শেষে তারা একসঙ্গে কক্সবাজার যাবেন। সেখান থেকে তারা যাবেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘের বাংলাদেশে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা নিজ নিজ কার্যক্রম সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ব্রিফ করবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পর লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব। রাতেই কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন তারা। আন্তোনিও গুতেরেসের সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর। প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে তিনি রমজান মাসে সংহতি জানাতে বাংলাদেশে আসছেন। প্রতি বছর তিনি রমজান মাসে মুসলিম দেশগুলোতে সফর করে থাকেন। এ ছাড়া সফরে তিনি রোহিঙ্গা নিয়ে আলোচনা করবেন। সেখানে আন্তর্জাতিক সহায়তার বিষয়টি উঠে আসবে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে সংস্কার, নির্বাচন এবং এর সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতিসংঘ বিভিন্ন সরকারের সময় বাংলাদেশিদের পাশে থেকেছে। ফলে জাতিসংঘের সহযোগিতা ও সংহতি চলমান থাকবে। কী ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হবে এবং অগ্রাধিকার বিষয়গুলো কী, তা অন্তর্বর্তী সরকার বা আগামীতে নির্বাচিত সরকার জাতিসংঘকে জানাবে।
সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা এক চিঠিতে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা ও সংহতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা, জাতিসংঘ মহাসচিব এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি রোহিঙ্গা নিয়ে মাইলফলক কোনো দৃষ্টান্ত তৈরি করতে চান। হয়তো রাখাইনে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় বাংলাদেশ করিডোর ব্যবহারের একটি ব্যবস্থা করে দিতে পারে, এটি একটি মাইলফলক হতে পারে। এ নিয়ে প্রশাসন ও সরকারের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।
তিনি বলেন, বৈঠকে অবশ্যই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পথে উত্তরণ নিয়ে আলোচনা হবে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব এ বিষয়ে সরকারের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানিয়েছেন। এ ছাড়া মানবাধিকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
আগামী শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয়ে যাবেন আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে জাতিসংঘের কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। এর পর সেখান থেকে দুপুরে হোটেলে ফিরে গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন আন্তোনিও গুতেরেস। এ ছাড়া সেখানে বাংলাদেশের যুবসমাজ ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। এ দিন বিকেলে একটি যৌথ প্রেস ব্রিফিং হওয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি সন্ধ্যায় জাতিসংঘ মহাসচিবের সৌজন্যে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। রোববার সকালে তাঁর ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।
রোহিঙ্গা শিবিরে শিশুর তীব্র অপুষ্টি
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে শিশুদের অপুষ্টির হার বেড়েছে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, তীব্র অপুষ্টির কারণে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন– এমন রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে ২৭ শতাংশ বেড়েছে। এটি একটি বিপজ্জনক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। রোহিঙ্গা শিবিরের বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গা শিশুদের জীবন হুমকিতে ফেলে– এমন ক্ষুধার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ইউনিসেফ মঙ্গলবার জানায়, বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী আশ্রয়স্থল কক্সবাজারে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি শিশু। রোহিঙ্গা পরিবারগুলো এখন অপুষ্টির মুখোমুখি হচ্ছে। রোহিঙ্গা শিবিরের ১৫ শতাংশের বেশি শিশু এখন অপুষ্টিতে ভুগছে।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ারস বলেন, ইউনিসেফ শিশুদের জন্য থাকার ও সেবা প্রদানের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিন্তু নিশ্চিত তহবিল ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।