সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর হামলায় আহত কয়েকজন
Published: 5th, February 2025 GMT
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত তিন গণমাধ্যমকর্মী। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে আজ বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহত এক সাংবাদিককে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আইন, বিচার ও মানবাধিকারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ)।
পাবনার ঈশ্বরদীতে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগে করা মামলায় আজ রায়ের দিন ধার্য ছিল। এ উপলক্ষে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আদালত ও আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হতে দেখা যায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রায় ঘোষণা শেষ হয়।
সাধারণত কোনো মামলা, মামলার রায় ও আদেশের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী বা পক্ষ হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে ব্রিফিং করে থাকে।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে, রায় ঘোষণার পর বর্ধিত ভবনের সামনে গণমাধ্যমকর্মীরা আইনজীবীদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবসহ পাবনা জেলা বিএনপির নেতা–কর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য অনুযায়ী, একপর্যায়ে এক যুবক সাংবাদিকদের ঠেলে সেখানে রাখা ডায়াসের সামনে চলে আসেন। এ নিয়ে তর্ক হয়। সেখানে উপস্থিত পাবনা থেকে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। গণমাধ্যমকর্মীদের কিল–ঘুষি ও লাথি মারেন। এতে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। এর মধ্যে সেখানে উপস্থিত হয়ে বিএনপির আইন সম্পাদক কায়সার কামাল ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস পরিস্থিতি শান্ত করেন। পাশাপাশি কায়সার কামাল মারধরের শিকার জাবেদ আখতারকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অ্যাম্বুলেন্সে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে পাঠান।
জাবেদ আখতার বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও ল রিপোর্টার্স ফোরামের প্রশিক্ষণ ও কল্যাণ সম্পাদক। ল রিপোর্টার্স ফোরাম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাবেদ আখতারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকেরা ব্রিফিং বর্জন করে হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে ব্রিফিংস্থলে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিআইন, বিচার ও মানবাধিকারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান জাবেদ ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন এক বিবৃতিতে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা কোনোভাবে কাম্য নয়। জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
ল রিপোর্টার্স ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম নূর মোহাম্মদের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, আজ পাবনার ঈশ্বরদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় রায় হয় হাইকোর্টে। ওই রায়ের পর আইনজীবীদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে অপেক্ষা করছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। সে সময় ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর জন্য ধাক্কাধাক্কি করতে থাকেন পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার বিএনপির কয়েক শ নেতা-কর্মী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব।
ধাক্কাধাক্কির সময় এটিএন নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাবেদ আখতারের সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের। একপর্যায়ে পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার বিএনপির ২০ থেকে ২৫ নেতা-কর্মী জাবেদ আখতারকে লাথি ও কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এ সময় তাঁকে রক্ষা করতে গিয়ে তাঁদের মারধরের শিকার হন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম পান্নু, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হাসান জাবেদসহ বেশ কয়েকজন। ভাঙচুর করা হয় টেলিভিশনের মাইক্রোফোনও।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণম ধ যমকর ম জ ব দ আখত র ব এনপ র উপস থ ত আইনজ ব কর ম র
এছাড়াও পড়ুন:
‘জয় বাংলা ব্রিগেড তৈরি করে দেশ অস্থিতিশীলের চেষ্টা করছেন তুরিন আফ
‘শেখ হাসিনা তাদের রেখে পালিয়ে গেছে। এখন জয় বাংলা ব্রিগেড তৈরি করে দেশকে অস্থিতিশীল ও সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করছে তুরিন আফরোজরা। হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছে।’
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে রিমান্ড শুনানিকালে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে আব্দুল জব্বার নামের এক শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় আজ রিমান্ড শুনানি হয়।
সোমবার (৭ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক সুমন মিয়া।
বেলা ১টার দিকে তুরিন আফরোজকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানিকালে তাকে এজলাসে তোলা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘তুরিন আফরোজ আলোচিত, বিতর্কিত মানুষ। ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে হাসিনার পক্ষে মিডিয়াতে তুমুল বক্তব্য দিতেন। হাসিনাকে সমর্থন করে বিরোধীদের আন্দোলন-সংগ্রামের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতেন। ফ্যাসিজম রক্ষা করতে সহযোগিতা করতেন। সুপ্রিম কোর্টে যেসব আইনজীবী একটি কলোনি তৈরিতে সহায়তা ও আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করত, তাদের এক জন তুরিন আফরোজ। তার এ ধরনের বক্তব্য রাখার এবং সহযোগিতার দুটি উদ্দেশ্য ছিল—এক. হাসিনার আনুকূল্য লাভ করে বড় পদ পাওয়া। আরেকটি হলো—পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে মা-ভাইকে বঞ্চিত করে দখলে রাখা।’
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, ‘প্রথমটা অর্জন করেছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তৈরি করা হয়েছিল। পুরস্কারস্বরূপ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান তুরিন আফরোজ। নিয়োগ পাওয়ার পর তারা আসামিদের বিরুদ্ধে বক্তব্য ও তাদের নিয়ে কটূক্তি করেন। পরে আবার আসামিদের পক্ষে গিয়ে বড় ধরনের আর্থিক সুবিধা নেওয়ারও অভিযোগ আছে। ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে প্রসিকিউটর পদ থেকে অব্যাহতি পান। ক্ষমতার অপব্যবহার করে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে মা-ভাইকে বঞ্চিত করে এককভাবে দখলে নেন।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বিতর্কিত ভূমিকা পালন করায় নীলফামারীর জলঢাকাতেও তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। মামলা হলেই কিন্তু সব আসামিকে ধরা হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন জায়গায় মিছিল, মিটিং হয়েছে। হাসিনা তাদের ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে। তারা জয় বাংলা ব্রিগেড তৈরি করে দেশকে অস্থিতিশীল ও সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করছে। যারা বিদেশে পালিয়ে গেছে এবং দেশে যারা অবস্থান করছে, তারা এসব করছে। হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছে। তুরিন আফরোজ এর সাথে সম্পৃক্ত। তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়। বিভিন্ন সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাচেষ্টা মামলার সাথেও সম্পৃক্ত। তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থণা করছি।’
তুরিন আফরোজের পক্ষে শুনানি করতে কয়েকজন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হন। তবে তুরিন আফরোজ জানান, তার আইনজীবী আছে। তখন বিচারক জানতে চান, কে আপনার আইনজীবী? তুরিন আফরোজ বলেন, ‘সাইফুল করিম।’ তবে তাকে খুঁজে পাননি তুরিন আফরোজ।
পরে আদালতে বক্তব্য রাখেন তুরিন আফরোজ। এরপর আদালত তার চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
ঢাকা/মামুন/রফিক