রাজধানীর হাজারীবাগের গজমহল শিশুপার্কে বড় একটা ব্যানার ঝুলছে। তাতে লেখা ‘শহীদ মুন্না স্পোর্টস টুর্নামেন্ট’। শিশুপার্ক পেরিয়ে ডানে মোড় নিলে মুন্না নামের কিশোরের বাড়ির পথ। পুরো নাম আব্দুল মোতালেব (১৪)। মায়ের ডাকনাম মুন্নির সঙ্গে মিলিয়ে তার ডাকনাম রাখা হয়েছিল ‘মুন্না’। গত সোমবার বাসার সামনের মোড়ে দাঁড়িয়ে মোতালেবের বাবা আব্দুল মতিন বললেন, ঠিক এখানেই একজন শিক্ষার্থী মুঠোফোনে মোতালেবের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ছবি দেখিয়ে পরিবারের খোঁজ চাইছিলেন। লোকজন ছবি দেখে মোতালেবকে চিনতে পেরে বাসায় ছুটে এসে খবর দেন। ওই শিক্ষার্থীর মাধ্যমে তাঁরা প্রথম ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর জানতে পারেন।

গত ৪ আগস্ট আন্দোলনে থাকার সময় জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি এক জায়গায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মোতালেব গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মোতালেব ওই শিক্ষার্থীকে জানিয়েছিল, ‘আমার বাসা গজমহলে। আমাকে একটু মায়ের কাছে দিয়ে আসেন।’ মায়ের সঙ্গে আর দেখা হয়নি মোতালেবের। অনেক ছোটাছুটি করে মোতালেবের লাশ নিয়ে রাতে ঘরে ফিরেছিলেন বাবা।

মোতালেবের মতো চাপা পড়েছে হোসেন মিয়া, শুভ শীল, সিফাত হোসেন ও বাচ্চুর নাম।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রাণ দেওয়া শহীদদের একজন মোতালেব। মা-বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আন্দোলনে গিয়ে প্রাণ দেওয়া এই কিশোরের নাম লোকের মুখে মুখে নেই। গণমাধ্যমেও খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়নি এই কিশোরের কথা। মোতালেবের মতো চাপা পড়েছে হোসেন মিয়া, শুভ শীল, মো.

সিফাত হোসেন ও বাচ্চু হাওলাদারদের নাম। শুধু পরিবারগুলো বইয়ের ধুলা ঝেড়ে, পোশাকের ভাঁজ খুলে, ছবি নেড়েচেড়ে প্রিয়জনকে বাঁচিয়ে রেখেছেন নিজেদের মধ্যে।

শিশু হোসেনের মা বললেন, ‘ছেলে দেশের জন্য রক্ত দিছে। এখন কেউ আর খোঁজখবর রাখে না আমাদের।’ শুভ শীলের ভাইয়ের আক্ষেপ, ‘বিচার দেখি না কেন?’ মো. সিফাত হোসেনের ভাই সব শহীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান। মো. বাচ্চু হাওলাদারের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে অনটনে দিন কাটাচ্ছেন। ছেলেমেয়ের জন্য একটা শোভন চাকরি চান তিনি।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ টাকা করে অর্থসহায়তা পেয়েছেন। এর বাইরে শিশু-কিশোর শহীদ হিসেবে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা পেয়েছে মোতালেব ও হোসেনের পরিবার। সিফাতের বয়স ১৮ বছরের নিচে হলেও মন্ত্রণালয়ের ওই সহায়তা পায়নি তার পরিবার। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুধু জামায়াতে ইসলামী মোতালেব, সিফাত, বাচ্চু হাওলাদারের পরিবারকে ২ লাখ টাকা ও হোসেনের পরিবারকে ১ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছে।

মোতালেব, হোসেন মিয়া ও বাচ্চু হাওলাদারের পরিবার মামলা করেছে। সিফাত হত্যা মামলার বাদীকে সিফাতের পরিবার চেনে না। মামলায় উল্টো সিফাতের আত্মীয়স্বজনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলা প্রত্যাহারে গত ২১ নভেম্বর পরিবারটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছে। ভয়ে মামলা করেনি শুভর পরিবার।

‘এর চেয়ে বড় আর কী হারাব?’

গজমহলের অলিগলি পেরিয়ে মোতালেবদের বাসা। একটা সীমানাদেয়ালের মধ্যে ১২টি কক্ষ। এর একটি কক্ষে বাবা, মা, তিন বছর বয়সী ছোট ভাইয়ের সঙ্গে থাকত মোতালেব। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বাবা আব্দুল মতিন ট্যানারি কারখানায় চামড়ায় রং করার কাজ করেন। ঘরে প্রবেশের পর মা-বাবা যত্ন করে ছেলের ছবি, স্কুলের প্রজেক্ট দেখাচ্ছিলেন। মা জেসমিন বেগম যতক্ষণ ছেলের কথা বলছিলেন, ততক্ষণই তাঁর চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। বললেন, ‘যত দিন বাঁচি, ছেলের ছবি দেখেই বাঁচব। এর চেয়ে বড় আর কী হারাব?’

বাবা আব্দুল মতিন বলেন, ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলের ওয়ার্ডে-মর্গে কোথাও ছেলেকে পাননি। তাঁর কান্না দেখে এক কর্মচারী জানান, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীরা দুজনের মরদেহ নিয়ে গেছেন। আব্দুল মতিন বলেন, ‘শহীদ মিনারে মেঝেতে শুইয়ে রাখা ছেলের পা দেখেই চিনতে পারি। গায়ের ওপর জাতীয় পতাকা দেওয়া ছিল।’

‘টেনে রাস্তায় এনে শুভকে গুলি করে পুলিশ’

মৃত্যুর মাত্র দুই মাস আগে সাভারের জিরানী এলাকায় এক পোশাক কারখানায় যোগ দিয়েছিলেন শুভ শীল (২৪)। বড় ভাই সোহাগ শীলও ওই কারখানায় কাজ করতেন। কারফিউর কারণে কারখানা বন্ধ থাকায় শুভ সাভারে এসে বন্ধুদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ২০ জুলাই সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বড় ভাইয়ের মুঠোফোনে কল করে শুভ বলেন, ‘দাদা, আমি তো শেষ!’ শুভ নিজেই ভাইকে জানান, সাভার অন্ধ কল্যাণ সংস্থা মার্কেটে তিনি লুকিয়ে ছিলেন। ‘পাইছি, একটারে পাইছি!’ বলে পুলিশ সেখান থেকে তাঁকে টেনে বের করে রাস্তায় এনে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার ৫-৬ ঘণ্টা পর্যন্ত জ্ঞান ছিল শুভর। লোকজন একটা ভ্যানের মাল নামিয়ে তাঁকে সেটাতে উঠিয়ে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিছুটা হেঁটে, কিছুটা অটোরিকশায় করে ঘণ্টাখানেক পর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন বড় ভাই আর মা। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ জুলাই ভোরে মারা যান শুভ। বিকাশ শীল ও সাধনা শীলের দুই সন্তানের মধ্যে ছোট ছিলেন শুভ।

বড় ভাই সোহাগ বলেন, সরকার যেন হত্যার বিচার শুরু করে—এটাই তাঁদের চাওয়া।

লাশের স্তূপের ওপর ছিল হোসেনের নিথর দেহ

মানিক মিয়া ও মালেকা বেগম দম্পতির দুই মেয়ে, এক ছেলের মধ্যে হোসেন মিয়া (১০) ছিল বড়। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ‘চিটাগাং রোড’ এলাকায় পরিবারটি থাকত। স্থানীয় একটি স্কুলে সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত পড়ত হোসেন। অনেক সময় বাবার সঙ্গে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে পানি ও পাঁপড় বিক্রি করত। বাবা মানিক মিয়া বলেন, ওই এলাকায় তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠায় তাঁরা দু-তিন দিন বাসা থেকে বের হচ্ছিলেন না। ২০ জুলাই বিকেলে তাঁদের অগোচরে রাস্তায় চলে যায় হোসেন। টের পেয়ে তিনি রাস্তায় বের হয়ে ছেলেকে খুঁজে পাননি। গুলিতে অনেকে মারা গেছে শুনতে পেয়ে রাত ৯টায় তিনি রাস্তায় এসে চিৎকার করে ছোটাছুটি শুরু করলে এক লোক এসে মুঠোফোনে একটা ভিডিও দেখিয়ে জানতে চান এটা হোসেন কি না। ভিডিওতে তিনি দেখেন, গুলিবিদ্ধ হোসেনকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। পরে কারফিউ আর গোলাগুলির মধ্যেই রাত একটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান। এক ঘণ্টা পর মর্গে খুঁজে পান ছেলেকে। মানিক মিয়া বলেন, ‘২০-৩০টা লাশের ওপর পইড়া ছিল আমার হোসেন। গায়ে একটা গামছা দেওয়া।’

স্বীকৃতি চায় পরিবার

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর আদাবর থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বাচ্চু হাওলাদার (৩৮)। মিরপুর-১-এ স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে থাকতেন পেশায় দরজি বাচ্চু হাওলাদার। তাঁর মৃত্যুর পর পুরো পরিবারটি চরম অনটনের মধ্যে পড়েছে। স্ত্রী লাইলী বেগম বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর দুই মাস ঢাকায় ছিলেন। বাড়ি ভাড়া বাকি ছিল। ঋণ ছিল। সহায়তা পেয়ে সেসব শোধ করেছেন। সংসার চালানোর জন্য ১৮ বছরের ছেলেকে পোশাক কারখানায় কাজে ঢুকিয়েছেন। গ্রামেও নিজেদের কোনো বাড়ি নেই তাঁর। ডিগ্রি ও দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়ে এখন বরিশালে কখনো দেবরের বাসায়, কখনো ভাইয়ের বাসায় থাকেন। মেয়ের জন্য চাকরির চেষ্টা করছেন। অনেকে আশ্বাস দিলেও চাকরি জোটেনি।

১৬ বছর ৯ মাস বয়সী মাদ্রাসার ছাত্র মো. সিফাত হোসেনও ৫ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বংশাল থানার কাছে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়। বরিশালের মুলাদী উপজেলায় সিফাতের পরিবার বাস করে। বাবা মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদার দুবাইপ্রবাসী। মায়ের নাম আকলিমা বেগম। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সিফাত ছিল তৃতীয়। বড় ভাই মো. ইকবাল হাসান (১৯) বলেন, বিকেল থেকে ভাইয়ের ফোন বন্ধ ছিল। পরদিন তাঁরা ঢাকার হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের মর্গে সিফাতের লাশ পান। তিনি শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি করে বলেন, এই সরকার শহীদদের স্বীকৃতি না দিলে অন্য সরকার এসে মর্যাদা দেবে না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল ব দ ধ হওয় র ম ড ক ল কল জ র পর ব র বড় ভ ই র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সংকটাপন্ন বনাঞ্চলে আবার পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ 

কক্সবাজারে ৭০০ একর বনভূমিতে এবার ডিজিটাল পার্ক স্থাপন করতে চায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এ বনটিতে রয়েছে ৫৮ প্রজাতির দুর্লভ বৃক্ষ এবং বিপন্ন হাতি, বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বাস। তার পরও তাতে চলছে পার্ক স্থাপনের তোড়জোড়।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পূর্ব পাশে ঝিলংজা মৌজার এ জমি স্থায়ী লিজ, ভাড়াভিত্তিক অথবা চুক্তিভিত্তিক লিজ নেওয়ার জন্য বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে বি-কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড নামের এ প্রতিষ্ঠানটি। গত রোববার এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি বন অধিদপ্তর থেকে কক্সবাজার বিভাগীয় বন কার্যালয়ে এসে পৌঁছেছে। চিঠিতে সরেজমিন তদন্ত করে মতামতসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১১ নভেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে সিইও নাদিরা আক্তার এ আবেদন করেন।

মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন ঝিলংজা বনভূমির এ এলাকাটি প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন। শুধু তাই নয়, ৭০০ একর এ বনভূমি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ স্থাপনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নামে বন্দোবস্ত দিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ভূমি মন্ত্রণালয় বনভূমির এই বরাদ্দ বাতিল করে।

চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন ৭০০ একর বনভূমি লিজ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে একটি প্রতিষ্ঠান। তারা আবেদনে জমিটি পতিত বলে উল্লেখ করেছে। বাস্তবে পুরো জায়গাটি প্রাকৃতিক বনসমৃদ্ধ পাহাড়ি এলাকা। 

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বি-কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও নাদিরা আক্তারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও মেসেজ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে সোমবার সন্ধ্যায় তাঁকে আবারও ফোন করলে একজন রিসিভ করে এ প্রতিবেদককে জানান, কক্সবাজারে পর্যটকদের বিনোদন দেওয়ার জন্য জনস্বার্থে পার্কটি নির্মাণে আবেদনটি করা হয়েছে। সরকার জায়গাটি দিলে করব, না দিলে আমরা করব না। 

তাঁর এ বক্তব্যটি নাদিরা আক্তারের বক্তব্য বলেও জানান তিনি। নিজেকে ঢাকার একজন ব্যবসায়ী দাবি করে তিনি নাম বা বিস্তারিত পরিচয় দেননি।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ১৯৯৯ সালে ওই ঝিলংজা মৌজার বনভূমিসহ কক্সবাজার সদর ও সাগর সৈকতকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুসারে ইসিএ এলাকায় কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ, প্রতিবেশ-পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো তৎপরতা চালানো নিষেধ। কিন্তু ২০২১ সালে ওই বনভূমিকে খাস জমি দেখিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল ভূমি মন্ত্রণালয়।

কক্সবাজারভিত্তিক পরিবেশ সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) তথ্যমতে, ‘কক্সবাজার জিয়াউর রহমান ডিজিটাল পার্ক’ স্থাপনের জন্য আবেদনকৃত জায়গায় ৫৮ প্রজাতির বৃক্ষ আছে। এর মধ্যে আছে গর্জন, চাপালিশ, তেলসুর, মোস, কড়ই, বাটনা, ভাদি, বহেরাসহ অনেক দুর্লভ প্রজাতির গাছ। এ ছাড়া বন্যপ্রাণীর মধ্যে এশীয় বন্যহাতি, বানর, বন্যশূকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখি রয়েছে এ বনভূমিতে। 

ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান উপদেষ্টা আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ১৯৯৯ সালে ঝিলংজা মৌজাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে বনভূমির গাছ কাটাসহ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন নিষিদ্ধ করা হয়। ৭০০ একর রক্ষিত বনও এই সংকটাপন্ন এলাকার অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ এবং জাতিসংঘ জীববৈচিত্র্য সনদে বন সংরক্ষণের অঙ্গীকার রয়েছে। দেশের বনভূমির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় নতুন করে এ বনভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া জনস্বার্থবিরোধী।

১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার এ এলাকাটি রক্ষিত বন ঘোষণা করে। বন বিভাগ এত বছর ধরে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। বিপন্ন এশীয় বন্যহাতিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণীর নিরাপদ বসতি এই ঝিলংজা বনভূমিতে। বন আইন অনুযায়ী, পাহাড় ও ছড়াসমৃদ্ধ এই বনভূমির ইজারা দেওয়া বা না দেওয়ার এখতিয়ার শুধু বন বিভাগের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ