জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিচ্ছেন ট্রাম্প, স্থগিত থাকছে ফিলিস্তিনি ত্রাণও
Published: 5th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ থেকে তাঁর দেশকে বের করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তায় কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ–এর জন্য ত্রাণ বরাদ্দও চালু হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী সরকার গত বছর জাতিসংঘের জেনেভাভিত্তিক মানবাধিকার পরিষদ থেকে সরে গিয়েছিল। এ ছাড়া ইসরায়েলের অভিযোগের পর ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তায় কাজ করা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর জন্য তহবিল পাঠানোও বন্ধ করে দেয় দেশটি।
ইউএনআরডব্লিউএর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযোগ ছিল, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে যে অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল, তাতে অংশ নেওয়া কয়েকজন যোদ্ধাকে সংস্থাটি আশ্রয় দিয়েছে।
ইউএনআরডব্লিউএ এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন। নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাতের পরই ট্রাম্প জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিলেন।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ ও ইউএনআরডব্লিউএর বিরুদ্ধে ইসরায়েল এবং ইহুদিবিদ্বেষী আচরণ করার অভিযোগ করে আসছিল।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি জাতিসংঘের নিয়মিত পরিচালনা বাজেটের ২২ শতাংশ দিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের পরই দ্বিতীয় স্থানে চীন।
আরও পড়ুনগাজাকে দখলে নেওয়ার ট্রাম্পের পরিকল্পনায় কী আছে১ ঘণ্টা আগেগতকাল মঙ্গলবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার সব সময়ই মনে হয়েছে, জাতিসংঘের অসাধারণ সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে এটি সেই সম্ভাবনার জায়গায় নেই.
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘কোনো কোনো দেশ “বহিরাগত”, খুব খারাপ এবং প্রায় সময় তারাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে।’ তবে তিনি কোনো দেশের নাম বলেননি।
ট্রাম্প এর আগে ২০১৮ সালের জুনে মানবাধিকার পরিষদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। সে সময়ে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত ছিলেন নিকি হ্যালি। হ্যালি অভিযোগ করেছিলেন, পরিষদ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে পক্ষপাতিত্ব করছে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণায় কোন দেশগুলো সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫পরে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি মানবাধিকার পরিষদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ফিরিয়ে আনেন। ২০২১ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র ৪৭ সদস্যের পরিষদে একটি আসন জেতে। কিন্তু বাইডেন প্রশাসনই গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঘোষণা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র টানা দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য মানবাধিকার পরিষদের সদস্য হতে চায় না।
আরও পড়ুনগাজার দখল নিতে চান ট্রাম্প৬ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণকাজে বাধা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শুনানি শুরু
অধিকৃত ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অঞ্চলে জাতিসংঘের নানা সংস্থা, অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠন বা তৃতীয় কোনো দেশের মানবিক কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। কিন্তু জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী ইসরায়েল এসব কাজ করতে পারে না। ইসরায়েল কেন এসব কাজ করতে পারে না, দেশটি জাতিসংঘের সনদ মেনে চলতে কেন বাধ্য, তা নিয়ে আজ সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বা বিশ্ব আদালতে শুনানি শুরু হয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে জাতিসংঘের প্রধান আদালত আইসিজের মূল ভবন পিস প্যালেসে আজ সকালে শুনানি শুরু হয়। মৌখিক এই শুনানি চলবে পাঁচ দিন। ইসরায়েল মৌখিক শুনানিতে (ওরাল প্রসিডিংসে) অংশ নিচ্ছে না। তবে, তাঁরা লিখিত পরামর্শ ও আপত্তি জমা দিয়েছে।
সোমবার আইসিজের শুনানির শুরুতে কথা বলেন সুইডেনের আইনজীবী ও কূটনীতিক এলিনর হামারশোল্ড। ২০২৫ সাল থেকে তিনি জাতিসংঘের আইনবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং প্রধান আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সূচনা বক্তব্য তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় কোনো দেশ বলপ্রয়োগ করে অন্য দেশের ভূখণ্ড অধিগ্রহণ করতে পারে না। এটা নিষিদ্ধ।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে হামারশোল্ড বলেন, ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলগুলোর ওপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব দাবি করার কোনো অধিকার নেই। কিন্তু ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেট জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে (ইউএনআরডব্লিউএ) অবৈধ ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে দেশটি আসলে ফিলিস্তিনের অধিকৃত ভূখণ্ডের ওপর সার্বভৌমত্ব বিস্তারের চেষ্টা করেছে।’
হামারশোল্ডের যুক্তি, ‘ইসরায়েলের পার্লামেন্টে গৃহীত এসব আইন এবং অধিকৃত অঞ্চলে প্রয়োগযোগ্য দেশটির অন্যান্য আইনের ভিত্তিতে নেওয়া পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইসরায়েলের এসব কাজ ইউএনআরডব্লিউএর আওতায় দেশটির কর্তব্যের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।’
দখলকারী শক্তি হিসেবে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের বাধ্যবাধকতা মনে চলতে বাধ্য বলে মত দেন হামারশোল্ড। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ এবং জাতিসংঘ কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইসরায়েলের দায়িত্ব।’
২০২৪ সালের অক্টোবরে ইউএনআরডব্লিউএকে অবৈধ ঘোষণা করে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট। ইসরায়েল জাতিসংঘের সদস্য হওয়ায় বিলটির মধ্য দিয়ে বিশ্ব সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাকালীন সনদ লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ইসরায়েলের এই বিলের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সনদ অনুযায়ী, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বিশেষ অধিকার ও নিরাপত্তাসুবিধা ভোগ করে। তাই ইসরায়েলের ইউএনআরডব্লিউএকে অবৈধ ঘোষণার এখতিয়ারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে আজ শুনানি শুরু হয়েছে।
তবে, এমন একসময়ে এই শুনানি শুরু হলো, যখন ২ মার্চ থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় নতুন করে পূর্ণ অবরোধ জারি করেছে ইসরায়েল। ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় নতুন করে হামলা শুরুর পর এই পদক্ষেপ নেয় দেশটি। ফলে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে খাদ্য ও জরুরি চিকিৎসাসামগ্রীসহ অন্যান্য ত্রাণসংকট তীব্রতর হয়েছে।
সোমবার শুনানিতে হামারশোল্ডের পর কথা বলেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত আম্মার হিজাজি। ইসরায়েল মানবিক সহায়তাকে ‘যুদ্ধের অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখার, হত্যার এবং বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা করছে। যেসব সংগঠন তাঁদের জীবন বাঁচাতে কাজ করছে, তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। ফিলিস্তিনি জনগণকে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে স্থানান্তর এবং ধ্বংস করাই এসব কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য।’
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়েছে ভূখণ্ডটির পতাকা হাতে দুই ব্যক্তি। আইসিজের সামনে, নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে, ২৮ এপ্রিল ২০২৫