ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। একসময় চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় করলেও হঠাৎ করে অন্তরালে চলে যান। এর মধ্যে বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। এদিকে, তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ করেছেন তার মা ও বোন।

পপির বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন তার বোন ফিরোজা পারভীন। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় জিডি করা হয়।

জিডির সূত্র ধরে জানা যায়, পৈতৃক জমি দখলে নেওয়ার জন্য স্বামী আদনান উদ্দিন কামাল, কল্লোল মজুমদার, শিপনসহ সোমবার বেলা ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে সোনাডাঙ্গা থানাধীন শিববাড়ি, ভাড়াটিয়া বাড়ির সামনে হাজির হন। বাধা দিলে একপর্যায়ে ফিরোজা পারভীনসহ সবাইকে হুমকি দেন পপি ও তার স্বামী।

আরো পড়ুন:

টলিউডে ফের অচলাবস্থা!

নায়ক বিদেশে, প্রেক্ষাগৃহে আসছে ‘দায়মুক্তি’

পপিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট নানা ইস্যু নিয়ে চর্চা হলেও এতদিন চুপ ছিলেন এই নায়িকা। অবশেষে অভিযোগ নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন পপি। তিনি বলেন, “৬ কাঠা জমি চাচা ও বাবার কাছ থেকে আমার কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে কিনেছি। কিন্তু এদের অত্যাচারের জন্য এখনো পর্যন্ত এই জমি ভোগ করতে পারিনি।”

পপির বিরুদ্ধে পেশি শক্তি প্রয়োগ করে জমি দখলের অভিযোগ এনেছে পরিবার। তবে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নায়িকা বলেন, “আমি কেন জমি দখল করব? আমি একবারও বলেছি ওই জমি নেব, আমার লাগবে।”

পুরো পরিবার পপির উপার্জনে সারাজীবন চলেছে। এ তথ্য উল্লেখ করে পপি বলেন, “এদের শরীরের চামড়া, জামা কাপড় সব আমার পরিশ্রমের টাকায় কেনা৷ আমার পরিবারের কেউ কখনো উপার্জন করে খায়নি৷ আমার বাবা কিন্তু এদেরকে (পরিবার) উপার্জন করে চালায়নি। আমার টাকায় চলেছে।”

বলে রাখা ভালো, পারিবারিক বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে খুলনার শিববাড়ি এলাকায় পপির বাবার ১১ কাঠা জমি। অভিযোগ অনুযায়ী, এর মধ্যে ৫ কাঠা জমি আগে থেকেই নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন পপি। এখন বাকি ৬ কাঠার মালিকানা পেতে মা, ভাই ও বোনদের চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, পপির মা যে বাড়িতে থাকেন, সেটির বিদ্যুতের লাইনও নিজের নামে করিয়ে নিয়েছেন এই চিত্রনায়িকা।

১৯৯৭ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে পা রাখেন পপি। কিন্তু তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘কুলি’। এই চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন ওমর সানী। সিনেমাটি সেই সময়ে ৭ কোটি টাকা ব্যবসা করে মাইলফলক অর্জন করে। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র চলচ চ ত র পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

‘সংসার চালানোই মুশকিল, ইফতার কিনবো কিভাবে’

গাইবান্ধা শহরে কুলির কাজ করেন সদর উপজেলার পূর্ব কোমরনই মিয়াপাড়া গ্রামের জাহিদুল ইসলাম। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। কাজকর্ম তেমন না থাকায় অতিরিক্ত আয়ও হয়না। তবুও কষ্ট করে ৭০ থেকে ৮০ টাকার ইফতার কিনতে হয়। তা দিয়েই চলে পরিবারের চারজনের ইফতার। 

শুধু জাহিদুল ইসলাম নন, তার মতো আরও অনেক মানুষের আয় কমে যাওয়ায় এবার তাদের অনেকেই  ইফতার সামগ্রী কিনতে পারছেন না। 

সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া প্রায় প্রত্যেক পেশাজীবির আয় কমেছে। এর মধ্যে দিনমজুর, অটোভ্যান-রিকশা চালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অন্যতম। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির তুলনায় তাদের আয় বাড়েনি, বরং কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে পবিত্র রমজান মাসের ইফতার সামগ্রী বিক্রির দোকানেও।

গাইবান্ধা ডিবি রোডের রড সিমেন্টের দোকানে কুলির কাজ করেন শফিকুল ইসলাম। সারাদিনে আয় করেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। তিনি বলেন, “এই টাকা দিয়ে সংসার চালানোই মুশকিল। ইফতার কিনবো কিভাবে? এবছর এক দিনও ইফতার কিনিনি। ভাত-তরকারি দিয়েই ইফতার করি।” 

ডিবি রোডের কাচারি বাজার এলাকায় সড়কের পাশে ভ্রাম্যমাণ ইফতার বিক্রেতা শুভ মিয়া। তিনি বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর বেচা-বিক্রি অনেক কম। গত বছর সারাদিনে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার ইফতার বিক্রি করেছিলাম। এ বছর ৩ হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মানুষের হাতে টাকা নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যও ভালো না।” 

মাঠ বাজার এলাকার আজাদ মিয়া জর্জ কোর্টে চাকরি করেন। বিকেলে ইফতার কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, “আগের মতো আর ইফতার কিনতে পারিনা। এখন বুট, বুন্দিয়াসহ তিন-চারটা আইটেম ৮০ টাকায় কিনেছি। বাসায় মুড়ি আছে, এসব দিয়েই পরিবারের সবাই ইফতার করবো।” 

তিনি বলেন, “চাল, ডাল, তেল, মাছ-মাংসসহ  নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুরই দাম বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। সবকিছু কেমন যেন থমকে আছে। যারা ব্যবসা করেন, তারাও ভালো নেই। তাই, ইফতারের পিছনে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়।” 

রমজানে শহরের ডিবি রোড, স্টেশন রোড, পার্ক মোড়, কাচারি বাজার, পুরাতন বাজার মোড়, জেলা পরিষদ মোড়, হাসপাতাল রোড, বাস টার্মিনাল, খন্দকার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় বসেছে অস্থায়ী এসব ইফতার সামগ্রীর দোকান।

ইফতারের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ১০০ গ্রাম ছোলা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়, বেগুনি ৫ টাকা, পিঁয়াজু ৫ টাকা, প্রতি পিস জিলাপি আকার ভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা, চিংড়ির বড়া ১০ টাকা, গ্রিল চিকেন সিঙ্গেল ৮৫ টাকা, বুন্দিয়া ১০০ গ্রাম ১৫ টাকা, খাসির কার্টলেট ৩০ টাকা, চিকেন ফ্রাই কোয়ার্টার ১২০ টাকা, হালিম হাফ ৮০ টাকা, চিকেন বিরানি ১৫০ টাকা, খাসির কাচ্চি ১৫০ টাকা, বিফ রোল ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

ভ্রাম্যমান ইফতার বিক্রেতা ডি বি রোডের সিয়াম বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি কমেছে। গত বছর রোজার শুরু থেকেই ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার ইফতার বিক্রি করেছি। এবছর ছয় রোজা পার হলেও একদিনে ৫ হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে না।” 

সদর উপজেলার মিয়াপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম রড সিমেন্টের দোকানে কুলির কাজ করেন। সারাদিনে আয় করেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। তিনি জানান, এই টাকা দিয়ে সংসার চালানোই মুশকিল। ইফতার কিনবো কিভাবে? 

রড সিমেন্টের দোকানে কাজ করেন শহরের মিতালিবাজার এলাকার কবির মিয়ার ইফতার কেনার সামর্থ্য নেই 

শহরের মিতালিবাজার এলাকার ভ্যানচালক কবির মিয়া। বিভিন্ন দোকানে কুলির কাজ করেন। তিনি বলেন, “আগের মতো আয়, রোজগার নাই। এখন সারাদিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কামাই করি। ইফতার কেনার সামর্থ্য নেই। ভাত খেয়েই ইফতার করি।”

শহরের বড় মসজিদ এলাকার ভ্রাম্যমাণ ইফতার বিক্রেতা বাদশা মিয়া গত বছর ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা ইফতার বিক্রি করতেন। এ বছর ৩ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারছেন না তিনি। 

বিক্রেতা বাদশা মিয়া বলেন, “এবছর যে বেচা-বিক্রি হচ্ছে, তাতে করে দোকানের কর্মচারীদের বেতন দিতেই শেষ। আগে কখনো এত কম বিক্রি হয়নি। ব্যবসার অবস্থা একেবারেই খারাপ।”

ঢাকা/মাসুম/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ