সামাজিক সুরক্ষায় অর্ধেকের বেশি বরাদ্দ পেনশন, সুদ, ভবন নির্মাণ, যন্ত্রপাতি কেনায়...: টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন
Published: 5th, February 2025 GMT
সামাজিক সুরক্ষা বা নিরাপত্তা খাতে বাজেটে বরাদ্দ করা টাকার অর্ধেকের বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তার অন্তর্ভুক্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অবসরভোগী সরকারি কর্মচারীর পেনশন, কৃষি খাতে ভর্তুকি ও সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধ। এমন ২১টি খাতকে গরিব মানুষের সুরক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্স।
সম্প্রতি প্রকাশিত বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণবিষয়ক টাস্কফোর্সের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া চলতি অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ রাখা অর্থের ৫৩ শতাংশই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সরকারের জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের (এনএসএসএস) সঙ্গে এই খাতগুলো মিলছে না।
সামাজিক সুরক্ষার নামে কিছু খাতে বরাদ্দের আরও কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, যেমন জয়িতা ফাউন্ডেশনের ভবন নির্মাণ, ভূমিকম্পসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় যন্ত্রপাতি কেনা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কল্যাণে অনুদান, ইলিশ মাছ সম্পদ উন্নয়নে প্রযুক্তি কর্মসূচি, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড, গ্রামীণ যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনা মূল্যে বই ছাপা ও বিতরণের মতো খরচও সামাজিক সুরক্ষা খাতের খরচ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
অর্থাৎ সামাজিক সুরক্ষা বাজেটের নামে বরাদ্দ রাখা হলেও এসব টাকা শেষ পর্যন্ত দরিদ্র ও আর্থিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী পায় না। ফলে তাদের দারিদ্র্য অবস্থারও উন্নতি হয় না।
টাস্কফোর্সের প্রধান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগ বেশি দেখানোর জন্য এমন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কোনো খাতে হয়তো একটু কল্যাণ হবে, সেটিও সামাজিক সুরক্ষা খাতে ঢোকানো হয়েছে। বাস্তবে সামাজিক নিরাপত্তা বলতে যা বোঝায়, এর সঙ্গে তার মিল নেই। তাঁর পরামর্শ হলো, সামাজিক নিরাপত্তার সংজ্ঞা ঠিক করে প্রকৃত সুবিধাভোগী চিহ্নিত করে বরাদ্দ পৌঁছে দেওয়া।
পেনশন ও সঞ্চয়পত্র সুদ বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট দলিল অনুসারে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মোট ১৪০টি খাতে এসব অর্থ ব্যয় করা হবে। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনএসএসএসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এমন ২১টি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট ৭২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা।
এসব খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেনশন খাতে, যেখানে বরাদ্দের পরিমাণ সাড়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কৃষি খাতে ভর্তুকি বাবদ রাখা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা ও সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধ রাখা হয়েছে ৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা।
সামাজিক নিরাপত্তা খাত হিসেবে এসব বরাদ্দ দেখানোয় প্রশ্ন তোলা হয়েছে টাস্কফোর্স প্রতিবেদনে। ফলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিশাল খরচ দেখানো হলেও সেখানে গরিব মানুষের জন্য বরাদ্দ থাকছে সামান্যই।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাজেটের ১৭ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পেনশনের মতো অসামঞ্জস্যপূর্ণ ২১টি কর্মসূচি বাদ দিলে সেই বরাদ্দ কমে দাঁড়ায় মাত্র ৭ শতাংশে।
সুবিধাভোগী বাছাইয়ে রাজনৈতিক বিবেচনা ও দুর্নীতি
টাস্কফোর্সের মতে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আরেকটি দুর্বলতা হচ্ছে, ভাতা পাওয়ার উপযুক্ত নন, এমন অনেক মানুষকে রাজনৈতিক বিবেচনায় ও দুর্নীতির মাধ্যমে বাছাই করা হয়। যোগ্যতা থাকলেও অনেকে ভাতা পান না। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির এসব দুর্বলতা ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যের চক্র থেকে বেরোনোর পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ৫৪ শতাংশ পরিবার সামাজিক সুরক্ষা আওতার বাইরে। অন্যদিকে সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা পায়, এমন ৬২ শতাংশ পরিবার গরিব নয় এবং তারা কোনো ঝুঁকির মধ্যেও নেই। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসব ত্রুটি দূর করা গেলে আরও অন্তত ১১ লাখ মানুষকে অতিদরিদ্র ও ২৫ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা সম্ভব হতো।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিভিন্ন দুর্বলতা টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পেনশন স্কিমের মতো অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিভিন্ন কর্মসূচি সামাজিক সুরক্ষার আওতায় রাখার প্রয়োজন নেই।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, অনেক যোগ্য (যাঁদের প্রয়োজন আছে) মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধার আওতায় আসেননি, আবার অনেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় এ সুবিধা পেয়েছেন। এখানে স্বচ্ছতা আনা জরুরি। অনেকগুলো মন্ত্রণালয়-দপ্তরের মাধ্যমে এ সেবা না দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তাসেবা একক কাঠামোর মধ্যে আনা প্রয়োজন।
স্বাধীনতার পরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ছিল মূলত দুর্যোগে ত্রাণ দেওয়া বা মঙ্গা সহায়তাকেন্দ্রিক। পরবর্তী সময়ে এসব কর্মসূচিতে নানা জটিলতা তৈরি হয়। এসব দুর্বলতা কাটাতে ২০১৫ সালে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল (এনএসএসএস) গ্রহণ করে সরকার। কিন্তু সেখানেও বেশ কিছু দুর্বলতা দেখা যায়। দারিদ্র্য ও বৈষম্য মোকাবিলায় এসব কর্মসূচি কতটা ভূমিকা রাখছে, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে। ২০২৬ সালে এনএসএসএসের মেয়াদ শেষ হবে। এ বাস্তবতায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছে টাস্কফোর্স।
ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ
টাস্কফোর্স মনে করে, সামাজিক সুরক্ষা হিসেবে সুবিধাভোগীদের যত টাকা ভাতা দেওয়া হয়, তা ন্যূনতম জীবনধারণের জন্য পর্যাপ্ত নয়। এই ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। বর্তমানে প্রতি মাসে ৬০০ টাকা করে বয়স্কভাতা, ৫৫০ টাকা করে বিধবা ভাতা ও ৮৫০ টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৪০টি কর্মসূচির সংখ্যা কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।
তিন কোটির বেশি মানুষ গরিব
দেশে গত এক যুগে দারিদ্র্য কমেছে—৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমেছে। এ সময় অতিদরিদ্র সাড়ে ১৭ শতাংশ থেকে কমে সাড়ে ৫ শতাংশে নেমেছে। তা সত্ত্বেও দেশের তিন কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমায় এবং ৯৩ লাখ মানুষ অতিদরিদ্রের কাতারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে এই তথ্য পাওয়া যায়।
এর বাইরে দেশের ১৫ শতাংশের বেশি মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। অর্থাৎ আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হলে তাঁরা যেকোনো সময় দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারেন। করোনার সময় ধাক্কা সামলাতে না পেরে এই শ্রেণির অনেকে নতুন করে দরিদ্র হয়েছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র বলত সরক র প নশন
এছাড়াও পড়ুন:
মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবসা বাড়াচ্ছে শপআপ, বড় বিনিয়োগ
বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী স্টার্টআপ কোম্পানি শপআপ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবভিত্তিক প্রযুক্তিনির্ভর সরবরাহকারী কোম্পানি ‘সারি’-এর সঙ্গে একীভূত হয়ে নতুন কোম্পানি গঠন করেছে। নতুন সেই কোম্পানির নামকরণ করা হয়েছে ‘সিল্ক’ গ্রুপ। নতুন গ্রুপ গঠনের পরপরই ১১ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ডলারের বর্তমান বিনিময় হার ১২২ টাকা হিসাবে দেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মূলত সৌদিভিত্তিক কোম্পানি সারির সঙ্গে শপআপ শেয়ার সোয়াপ বা অদলবদলের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে একীভূত হয়ে নতুন কোম্পানি গঠন করেছে। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ–সংক্রান্ত চুক্তিও হয়ে গেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সে ঘোষণা এখনো দেওয়া হয়নি। চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আজ বুধবার শপআপের একীভূত হওয়া ও বড় বিনিয়োগের ঘোষণাটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারের কথা রয়েছে।
সৌদি আরবে ৩০ লাখের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। এসব প্রবাসী বাংলাদেশি যাতে সহজে বাংলাদেশের পণ্য পেতে পারেন, সে লক্ষ্যে সারির সঙ্গে শপআপকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আফিফ জামান, সহপ্রতিষ্ঠাতা, শপআপসূত্র জানায়, বাংলাদেশের শপআপ ও সৌদি আরবের সারি একে অপরের সঙ্গে একীভূত হলেও কোম্পানি দুটি স্ব স্ব নামে নিজ নিজ ব্যবসা ক্ষেত্রে ব্যবসা চালিয়ে যাবে। তবে এই দুই কোম্পানির মালিকানায় থাকবে নতুন কোম্পানি সিল্ক গ্রুপ। বাংলাদেশি শপআপ ও সৌদি সারির মিলে গঠিত সিল্ক গ্রুপ বড় ধরনের বিনিয়োগও পেয়ে গেছে এরই মধ্যে। সৌদি সরকারের বিনিয়োগ তহবিল পিআইএফের সানাবিল ইনভেস্টমেন্ট, পেপ্যালের সহপ্রতিষ্ঠাতা পিটার থিয়েলের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিল, ই-বের প্রতিষ্ঠাতা পিয়ের ওমিডিয়ার, কুয়েত সরকারের ওয়াফ্রা, কাতার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন তহবিল থেকে এ বিনিয়োগ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে শপআপের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে শপআপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফিফ জামান প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি আরবে ৩০ লাখের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি। এসব প্রবাসী বাংলাদেশি যাতে সৌদি আরবে বসে যেন সহজে বাংলাদেশের পণ্য পেতে পারেন, লক্ষ্যে সৌদি প্রতিষ্ঠান সারির সঙ্গে শপআপকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে সৌদি আরবে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হলেও তা পরিমাণে খুবই কম ও হাতে না কয়েকটি কোম্পানির। আমরা রপ্তানির এ পরিসর বড় করতে চাই। দেশের ছোট উদ্যোক্তারাও যাতে দেশটিতে তাঁদের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির সুযোগ পান, সেই পথ তৈরি করতেই এ উদ্যোগ।’
সারি ও শপআপ একে অপরের সঙ্গে একীভূত হয়ে সিল্ক নামে যে কোম্পানি গঠন করেছে, সেটির কার্যক্রম সৌদি আরবের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের আরও কিছু দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান আফিফ জামান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা শুরু শপআপ একটি হোলসেল মার্কেট প্ল্যাটফর্ম। এটি দেশের শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলে পর্যন্ত নিত্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে। অর্থাৎ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য সংগ্রহ করে সেই পণ্য গুদামজাত, পরিবেশক ও ছোট ছোট মুদির দোকানে সরবরাহ করে থাকে। এ জন্য দেশজুড়ে রয়েছে তাদের নেটওয়ার্ক। প্রতিষ্ঠানটি নিত্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবকাঠামো ও আর্থিক সেবাও দিয়ে থাকে। বর্তমানে দেশজুড়ে পণ্য সরবরাহব্যবস্থা নিশ্চিত করতে শপআপের ২০০টির বেশি পরিবেশক কেন্দ্র বা হাব রয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে শপআপ দেশের প্রায় পাঁচ লাখ মুদির দোকানে পণ্য সরবরাহ করে। প্রতিষ্ঠানটিতে পাঁচ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করেন।
অন্যদিকে সৌদি প্রতিষ্ঠান সারিও একটি প্রযুক্তিনির্ভর হোলসেল মার্কেট প্ল্যাটফর্ম বা বিটুবি মার্কেট প্ল্যাটফর্ম। যাদের কাজ হচ্ছে উৎপাদকের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে দ্রুত তা ভোক্তার দোরগোরায় পৌঁছে দিতে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা। কোম্পানিটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে প্রায় দুই হাজার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে তারা। কোম্পানিটি ৩০ হাজারের বেশি পণ্য সরবরাহ করে তাদের গ্রাহকদের কাছে।
শপআপের কর্মকর্তারা জানান, ১১ কোটি ডলারের নতুন বিনিয়োগসহ ৩১ কোটি ১০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে। এর আগে বিভিন্ন ধাপে যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কোম্পানিটি নানা ধরনের বিনিয়োগ পেয়েছিল, তার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পিটার থিয়েল ভালার ভেঞ্চার, ই-বে প্রতিষ্ঠাতার ফ্লারিশ ভেঞ্চারস, টেনসেন্টের বিনিয়োগকারী প্রসুস, অস্ট্রিয়ার স্পিডইনভেস্ট, সেকোইয়া ক্যাপিটাল ও নিউইয়র্কের টাইগার গ্লোবাল।
বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফাস্ট কোম্পানি ২০২৩ সালে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সেরা উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে স্থান পেয়েছিল বাংলাদেশের শপআপ। ‘দ্য ১০ মোস্ট ইনোভেটিভ এশিয়া-প্যাসিফিক কোম্পানিজ অব ২০২৩’ শিরোনামের এ তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানশপআপ। তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে ছিল বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরি করা চীনা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি ও ইন্দোনেশিয়ার স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠান ভিডিও।
শপআপ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির রাজস্ব আয় বা রেভিনিউ ছিল ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক অর্থবছরে কোম্পানিটি প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। গত অর্থবছরে তাদের ব্যবসা আগের অর্থবছরের চেয়ে আড়াই গুণ বেড়েছে। খাদ্য, নিত্যপণ্য ও ডিজিটাল পণ্য বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত দেশের বড় বড় সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে শপআপ। কোম্পানির মূল ব্যবসা এখন লাভজনক বলে জানিয়েছে তারা।
সারি ও শপআপের যৌথ উদ্যোগে গঠিত সিল্ক গ্রুপ নতুন যে বিনিয়োগ পেয়েছে, তা কোথায় ব্যবহার করা হবে—জানতে চাইলে শপআপের সহপ্রতিষ্ঠাতা আফিফ জামান বলেন, এ বিনিয়োগের মধ্যে একটি অংশ মূলধনি বা ইক্যুইটি বিনিয়োগ। আর একটি অংশ সিল্ক ফাইন্যান্সিয়ালের জন্য অর্থায়ন সুবিধা হিসেবে কাজে লাগানো হবে। এ বিনিয়োগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।