ফের ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপের নীতিতে ট্রাম্প
Published: 5th, February 2025 GMT
ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি অনুসরণ করার জন্য একটি প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মাধ্যমে মূলত তিনি তার প্রথম মেয়াদের নীতিতে ফিরে গেলেন।
ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের এই নীতির মধ্যে রয়েছে, ইরানের তেল রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রচেষ্টা, যাতে তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখা যায়। খবর রয়টার্সের।
প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করার পর এবং সফররত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের আগ মুহূর্তে ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, তিনি ইরানের বিরুদ্ধে এই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করতে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
গাজা নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা জাতিগত নিধনের সামিল: জাতিসংঘ
গাজা উপত্যকা দখল করবে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আদেশটির কথা উল্লেখ করে বলেন, “সবাই চায় আমি এটি স্বাক্ষর করি। আমি তা করেছি এবং এটি ইরানের জন্য খুবই কঠিন হবে।”
এরপর ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে চায়। তিনি বলেন, “আমি ইরানকে বলছি, যারা খুব মনোযোগ সহকারে শুনছে, ‘আমি একটি দুর্দান্ত চুক্তি করতে সক্ষম হতে চাই। এমন একটি চুক্তি যেখানে আপনি আপনার জীবন চালিয়ে যেতে পারেন।”
ট্রাম্পের মতে, “ইরানের একটি জিনিস থাকতে পারে না। তাদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে না। তারা যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে এগিয়ে যায়, তাহলে আমি মনে করি এটি তাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক হবে।”
তেহরান পারমাণবিক অস্ত্রের কতটা কাছাকাছি জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, “তারা খুব কাছাকাছি।”
এ বিষয়ে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে ইরানের মিশন রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে জবাব দেয়নি।
ট্রাম্প সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে ইরানের ওপর তেল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ করেছেন।
ট্রাম্প বলেন, “তেল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে প্রয়োগ না করার বাইডেনের নীতি ওয়াশিংটনকে দুর্বল করেছে এবং তেহরানকে সাহস জুগিয়েছে। যা ইরানকে তেল বিক্রি, নগদ অর্থ সঞ্চয় এবং সশস্ত্র মিলিশিয়ার মাধ্যমে পরমাণু কর্মসূচি ও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম করেছে।”
গত বছরের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক নজরদারি সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি শুরু করেছে ইরান। তাদের কাছে ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ৯০ শতাংশের কাছাকাছি।
ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির লক্ষ্য অস্বীকার করেছে।
ট্রাম্পের স্বাক্ষর করা প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডামে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে- মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারিকে ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক চাপ’ আরোপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও প্রয়োগ ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এছাড়া মার্কিন অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইরানের তেল রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের অনুমান অনুযায়ী, তেল রপ্তানি থেকে তেহরানের ২০২৩ সালে ৫৩ বিলিয়ন ডলার এবং এর আগের বছর ৫৪ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। ওপেকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে উৎপাদন ২০১৮ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ইরানের তেল রপ্তানি প্রায় শূন্যের কোঠায় নিয়ে গিয়েছিলেন। বাইডেনের আমলে ইরান নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সফল হওয়ায় তেল রপ্তানি বৃদ্ধি পায়।
ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছে, প্রয়োজনে তারা ইরানের ওপর সব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করতে প্রস্তুত। যাতে করে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে না পারে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কারাবন্দি সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন চমেকে ভর্তি
কারাবন্দি সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে তাঁকে কারাগার থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রবীণ এ রাজনীতিবিদকে চিকিৎসকরা ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পরিবারও।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাসুদ হাসান বলেন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের অনেক বয়স হয়েছে। তাই তিনি ডিমেনশিয়াসহ নানা রোগে ভুগছেন। নিয়মিত পরীক্ষার জন্য তাকে বুধবার সকালে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। এটি নিয়মিত চেকআপের অংশ।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন বলেন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, ডিমেনশিয়াসহ নানা শারীরিক সমস্যা রয়েছে। আমাদের চিকিৎসকরা তাঁকে দেখার পর ঢাকার পিজিতে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বিষয়টি আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গ্রেপ্তারের পর থেকে তাঁর স্বাস্থ্য অবনতির কথা শোনা যাচ্ছিল। এতে তাঁর পরিবার একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করে। সুচিকিৎসা এবং জামিনের আবেদন জানিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ একাধিক দপ্তরে চিঠিও দেওয়া হয়।
তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে তিনি কিছুই মনে রাখতে পারেন না। দিনের পর দিন একাকিত্বের কারণে এই রোগ তাঁকে বেশ কাবু করে ফেলছে। তাই কিছুদিন আগেও এসকল শারীরিক জটিলতা বিবেচনায় রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে জামিন এবং সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছিল মোশাররফের পরিবার।
পল্টন থানার একটি হত্যা মামলায় গত বছরের ২৭ অক্টোবর ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে মোশাররফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭২ সালে তিনি সংবিধান প্রণেতাদের একজন ছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বিভিন্ন সময়ে সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।