কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর হাতে আটকের পর নির্যাতনে যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে নিহত তৌহিদুলের স্ত্রী ইয়াছমিন নাহার বাদী হয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ওই আসামিদের সঙ্গে নিহত যুবদল নেতার পরিবারের জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ আছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ২০–২৫ জনকে। তাঁরা সাদা (সিভিল) পোশাকধারী ও সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের প্রয়াত আবদুর রহমানের ছেলে সাইফুল ইসলাম, ইটাল্লা গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে তানজিল উদ্দিন, মোক্তল হোসেনের ছেলে নাজমুল হাসান, খায়রুল হাসান, সাইদুল হাসান এবং বামইল গ্রামের পেয়ার আহমেদের ছেলে সোহেল।  

নিহত তৌহিদুল ইসলাম (৪০) কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন।

মামলার এজাহারে বাদী ইয়াছমিন নাহার উল্লেখ করেন, ‘আসামিদের সঙ্গে আমার স্বামীর জায়গাজমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। আসামিরা পরস্পর নিকটাত্মীয়। জায়গাজমির বিরোধের কারণে স্থানীয়ভাবে অসংখ্যবার আসামিদের সঙ্গে আমার স্বামীর সালিস বৈঠক হয়, কিন্তু তারা কোনো তোয়াক্কা করেননি। তারা আমার স্বামীকে খুন করে লাশ গুমের হুমকি দিয়েছে একাধিকবার। গত ২৬ জানুয়ারি আমার শ্বশুর মারা যান; ৩১ জানুয়ারি দুপুরে কুলখানির আয়োজন করা হয়েছিল। ৩০ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাত থেকে কুলখানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে আমরা বিভিন্ন আয়োজনের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকি। রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে আমার স্বামী বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। পরিবারের অন্যরা যাঁর যাঁর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তখন মামলার আসামিরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় ২০–২৫ জন সিভিল পোশাকধারী ও সেনাবাহিনীর মতো পোশাক পরিহিত লোক আমাদের বসতবাড়িতে এসে আমার স্বামীকে বসতঘর থেকে আটক করে। তাঁরা আমাদের প্রত্যেকটি ঘর তল্লাশি করেন। একপর্যায়ে আমার স্বামী এবং মামলার দুই নম্বর সাক্ষী ইটাল্লা গ্রামের লুৎফর রহমানকে (৪৫) নিয়ে চলে যান। ৩১ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এজাহারনামীয় আসামিরাসহ সিভিল পোশাকধারী ও সেনাবাহিনীর মতো পোশাক পরিহিত অজ্ঞাতপরিচয় ২০-২৫ জন আমার স্বামী ও ২ নম্বর সাক্ষীকে আহত অবস্থায় আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। তাঁরা এদিক-সেদিক খোঁজাখুঁজি করে ২ নম্বর সাক্ষীকে ছেড়ে দিয়ে আমার স্বামীকে নিয়ে পুনরায় চলে যায়। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের সময় আমার ভাশুর আবুল কালাম আজাদের মোবাইল ফোনে পুলিশ কল দিয়ে জানায়, আমার স্বামীকে গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ এলাকায় অচেতন অবস্থায় পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।’

আরও পড়ুনরাতে আটক যুবদল নেতার সকালে মৃত্যু, শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন৩১ জানুয়ারি ২০২৫

এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেছেন পুলিশের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে তাঁর ভাশুর কয়েকজন সাক্ষীকে নিয়ে কুমিল্লা সদর (জেনারেল) হাসপাতালে যান। সেখানে তাঁর স্বামীকে (তৌহিদুল) চিকিৎসা না দিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তখন পুলিশের গাড়িতে করে তাঁর স্বামীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমার স্বামীকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য নীল–ফোলা কালচে জখমের দাগ ছিল। এজাহারনামীয় আসামিরা জায়গাজমির বিরোধের জেরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাঁর স্বামীকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটক রেখে হত্যা করেছেন।

আরও পড়ুন‘আমার ভালো বাবাটাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে’০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আজ দুপুরে বাদী ইয়াছমিন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেনাবাহিনীর আশ্বাসে আমরা সন্তুষ্ট হয়ে ঘটনার নেপথ্যে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আমরা দেখতে চাই, জড়িত সেনাদের কতটা কঠোর বিচার করে সেনাবাহিনী। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ঘটনার মূলহোতা যাঁরা আমাদের মামলার আসামি তাঁরাই। তাঁরাই সেনাবাহিনীকে দিয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করিয়েছেন। আমি খুনিদের বিচার চাই। এ ছাড়া ঘটনার নেপথ্যে অন্য কেউ থাকতে পারেন। আমি বিশ্বাস করি, পুলিশ ভালোভাবে তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে।’  

এ বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। আসামিরা ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুনকুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে তৌহিদুলের মৃত্যু নিয়ে আইএসপিআরের বিবৃতি০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য বদল ন ত ল ইসল ম ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ছয়জন গ্রেপ্তার

বগুড়ায় দুই সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গতকাল রোববার রাতভর অভিযান চালিয়ে বগুড়া শহরের কলোনি, বনানী ও গণ্ডগ্রাম গ্রাম এলাকা থেকে ওই ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে দুটি ধারালো বার্মিজ চাকু উদ্ধার করা হয়। ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে শাজাহানপুর থানায় অস্ত্র আইনে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। এ ছাড়া হামলার শিকার এক সাংবাদিক বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় ১০ জনকে আসামি করে পৃথক একটি মামলা করেছেন।

গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন শাজাহানপুর উপজেলার গণ্ডগ্রাম দক্ষিণপাড়ার আবদুল মতিনের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২২), একই এলাকার বেলাল হোসেনের ছেলে হাবিবুর রহমান (২৫), গণ্ডগ্রাম নতুনপাড়ার হারুনুর রশিদের ছেলে তারিকুল ইসলাম (২২), একই এলাকার জিন্নাহ খানের ছেলে জিসান খান (২১), গণ্ডগ্রাম সারিয়াকান্দিপাড়ার মৃত মিলন হোসেনের ছেলে জিহাদ (২০) ও বগুড়া শহরের মালতিনগর স্টাফ কোয়ার্টার বটতলা এলাকার আনারুল ইসলামের ছেলে টুটুল (২০)।

গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় জেলখানা মোড়ে একটি জুস বারে দুই সাংবাদিকসহ তিনজন মারধরের শিকার হন।

আহত দুই সাংবাদিক হলেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের বগুড়া প্রতিনিধি খোরশেদ আলম এবং অনলাইন পোর্টাল বগুড়া লাইভের স্টাফ করেসপনডেন্ট আসাফুদৌলা (নিয়ন)। তাঁরা বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁদের সঙ্গে থাকা তৌফিকুল ইসলামকেও মারধর করা হয়েছিল।

বগুড়া জেলা ডিবির পরিদর্শক ইকবাল বাহার প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার ছয়জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁরা কয়েকজন জুস বারে জুসের অর্ডার করেছিলেন। কিন্ত সাংবাদিকেরা জুস বারে এসে আগে আগে জুস চান। এ নিয়ে কথা–কাটাকাটির জেরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

ইকবাল বাহার আরও বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের দলনেতা রকিবুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ ছয়টি মামলা বিচারাধীন। বার্মিজ চাকু উদ্ধারের ঘটনায় নতুন করে শাজাহানপুর থানায় ডিবি বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা করেছে।

হামলার শিকার সাংবাদিক খোরশেদ আলম বলেন, তাঁদের ওপর হামলার ঘটনায় আজ বেলা তিনটার দিকে বগুড়া সদর থানায় সাংবাদিক আসাফুদৌলা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এতে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বগুড়ায় সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ছয়জন গ্রেপ্তার