সদ্য সমাপ্ত শীতকালীন দলবদলে সবচেয়ে বড় চমক ছিলেন নেইমার জুনিয়র ও মার্কাস রাশফোর্ড। ব্রাজিলিয়ান তারকা বিশাল অঙ্কের অর্থ ছাড় দিয়ে একেবারে ফ্রিতে ফিরে গেছেন ছেলেবেলার ক্লাব সান্তোসে। আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে ২০ বছরের সম্পর্ক ছেদ করে অ্যাস্টন ভিলায় নাম লিখিয়েছেন রাশফোর্ড। তবে পাঁচ সপ্তাহব্যাপী (৩ ফেব্রুয়ারি, সোমবার ইংল্যান্ডের স্থানীয় সময় রাত ১১টায় সমাপ্ত) দলবদলে সবচেয়ে মরিয়া ছিল ম্যানচেস্টার সিটি।

দল পুনর্গঠনে ২১৬ মিলিয়ন ইউরো (১৮০ মিলিয়ন পাউন্ড) খরচ করেছেন পেপ গার্দিওলা। তবে ইংলিশ ক্লাবগুলোর মধ্যে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা লিভারপুল ও আর্সেনাল ৩৪ দিনের দলবদলে নতুন কাউকে নেয়নি। লা লিগার রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনাও কাউকে দলভুক্ত করেনি। তবে পিএসজি ও অ্যাস্টন ভিলা এবারের দলবদলে বেশ লাভবান হয়েছে।

ম্যানসিটি: দুই বছর আগে ট্রেবল ও টানা চার প্রিমিয়ার লিগজয়ী ম্যানচেস্টার সিটির অবস্থা এবার বেশ নাজুক। নতুন ফরম্যাটের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়তে পড়তে শেষ রাউন্ডে এসে কোনোমতে প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে তারা। আর প্রিমিয়ার লিগে পঞ্চম স্থানে থাকলেও শিরোপা জেতার সম্ভাবনা অনেকটাই শেষ হয়ে গেছে। এ জন্য দল পুনর্গঠনে হাত দিয়েছেন সিটি বস পেপ গার্দিওলা। ২০২৪ সালে পাকা করে রাখা আর্জেন্টাইন প্রতিভা ক্লডিও ইচিভেরিকে রিভারপ্লেট থেকে দলে ভেড়ানো ছাড়াও ফ্রাংকফুর্ট থেকে ফরোয়ার্ড উমর মারমোশ, লেন্স থেকে ডিফেন্ডার আব্দুকোদির কুশানভ, পালমেইরাস থেকে তরুণ ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার ভিতোর রেইস এবং শেষ মুহূর্তে পোর্তো থেকে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার নিকো গঞ্জালেজকে দলে ভিড়িয়েছেন সিটি। আর ক্লাব ছেড়েছেন সিটির সাফল্যের অন্যতম সেনানী ডিফেন্ডার কাইল ওয়াকার।

অ্যাস্টন ভিলা: শীতকালীন দলবদলে অ্যাস্টন ভিলাও বেশ ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে। তাদের ২১ বছর বয়সী কলম্বিয়ান স্ট্রাইকার জন ডুরান্ড সৌদি ক্লাব আল নাসরে যোগ দেওয়ায় অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। তবে ৭৭ মিলিয়ন ইউরোতে তাঁকে বিক্রি করে আদতে লাভবান হয়েছে ভিলাই। দলবদলের একেবারে শেষ দিকে ম্যানইউ থেকে ধারে রাশফোর্ডকে টেনে সে অভাব তারা পূরণ করে ফেলেছে। এ ছাড়া পিএসজি থেকে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার মার্কো অ্যাসেনসিও, চেলসি থেকে ডিফেন্ডার এক্সেল ডিসাইস, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ডাচ স্ট্রাইকার দোনেল মালেন, স্প্যানিশ রাইটব্যাক আন্দ্রেস গার্সিয়াকে তারা দলে ভিড়িয়েছে। আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার এমিলিয়ানো বুন্দিয়া, ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার দিয়াগো কার্লোস দল ছাড়লেও দলবদলের পর নতুন চেহারায় দেখা যাবে ভিলাকে।

পিএসজি: এবারের দলবদলে বেশ মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছে পিএসজিও। নাপোলি থেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা উইঙ্গার খাভিচা খারাস্তাস্কেলিয়াকে দলে ভিড়িয়েছে মাত্র ৬০ মিলিয়ন ইউরোতে। মিডফিল্ডার জাভি সিমন্সকে ৪৬ মিলিয়ন ইউরো লাভ করে লাইপজিগে বিক্রি করেছে, মোটা অর্থে মিস মাস্টার স্ট্রাইকার কোলু মোয়ানিকে জুভেন্টাসে ধারে পাঠিয়েছে। মার্কো অ্যাসেনসিও দল ছাড়ায় অবশ্য তাদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড: এবারের দলবদলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। নতুন কোচ রুবেন আমোরিম বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রত্যাশিত কাউকেই পাননি পর্তুগিজ কোচ। বায়ার্ন মিউনিখ থেকে ফরাসি প্রতিভা ম্যাতিয়াস টেলকে দলে টানার সবকিছু পাকা করলেও শেষ মুহূর্তে তাঁকে ছোঁ মেরে নিয়ে যায় টটেনহাম। নামি কাউকে দলে টানতে তো পারেনি, উল্টো আক্রমণভাগের দুই তারকা রাশফোর্ড ও অ্যান্থনি চলে গেছেন। ইতালিয়ান ক্লাব লেচ্চে থেকে তরুণ ডেনিশ ডিফেন্ডার প্যাট্রিক ডোরগু ও আর্সেনাল থেকে আরেক তরুণ ডিফেন্ডার এইডেন হেভেনকে দলে টানাই আমোরিমের উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

এসি মিলান: ম্যানসিটির রক্ষণের দীর্ঘদিনের সেনানী কাইল ওয়াকারকে দলে টেনেছে এসি মিলান। ইতালিয়ান জায়ান্টরা দলবদলের একেবারে শেষ মুহূর্তে চেলসি থেকে পর্তুগিজ উইঙ্গার জোয়াও ফেলিক্স এবং ফেনুয়ার্দ থেকে মেক্সিকান স্ট্রাইকার সান্তিয়াগো জিমিনেজকে দলে ভিড়িয়ে চমক দেখিয়েছে। 

আর্সেনাল: প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা লড়াইয়ে লিভারপুলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হলো আর্সেনাল। তবে বুকায়ো সাকা ও গ্যাব্রিয়েল জেসুস চোটে পড়ার পর স্ট্রাইকার সংকটে ভুগছে তারা। এ সংকট কাটাতে তারা অ্যাস্টন ভিলার ওলি ওয়াটকিন্স, জুভেন্টাসের দুসান ব্লাহোভিচ ও অ্যাথলেটিক বিলবাও স্ট্রাইকার নিকো উইলিয়ামকে টার্গেট করেছিলেন। কিন্তু অনেক দরকষাকষি করেও কাউকেই দলে ভেড়াতে পারেনি গানাররা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অ য স টন ভ ল আর স ন ল প এসজ

এছাড়াও পড়ুন:

এমবাপ্পের ‘গোপন’ বিষয় জানাতে বই লিখছেন ক্যাম্পোস

কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ঘিরে নতুন এক সত্য উন্মোচনের অপেক্ষায় ফুটবল বিশ্ব। প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) ছাড়ার পর তার দলবদলের নেপথ্য কাহিনী, ক্লাবের অভ্যন্তরীণ সংকট ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ খুলতে চলেছেন পিএসজির স্পোর্টিং ডিরেক্টর লুইস ক্যাম্পোস। জনপ্রিয় ট্রান্সফার বিশেষজ্ঞ ফ্যাব্রিজিও রোমানো জানিয়েছেন, ক্যাম্পোস একটি বই লিখছেন যেখানে তিনি সবকিছু খোলাসা করবেন বলে জানিয়েছেন। বইটিতে ক্যাম্পোস নিজের দায়িত্বকালীন অভিজ্ঞতা, দলবদলের কৌশল এবং ক্লাব পরিচালনার নানান অজানা দিক তুলে ধরবেন।

মোনাকো থেকে পিএসজি, দুই ক্লাবেই এমবাপ্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ক্যাম্পোসের। ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে ক্লাবের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিতর্কের পর যখন এমবাপ্পে পিএসজি ছাড়ার দ্বারপ্রান্তে, তখন তিনিই ছিলেন তার পাশে। সেই সময় এমবাপ্পে বলেছিলেন, ‘লুইস ক্যাম্পোস আর কোচ লুইস এনরিক না থাকলে আমি পিএসজির হয়ে আর খেলতাম না।’

২০২৪ সালে ফ্রি ট্রান্সফারে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন এমবাপ্পে। তার এই বিদায়ের নেপথ্য গল্প নিয়েও ক্যাম্পোস মুখ খুলবেন বইটিতে এমনটাই ধারণা ফুটবল বিশ্লেষকদের।

মোনাকোতে থাকাকালীনই ক্যাম্পোস নজর কাড়েন তরুণ প্রতিভা তুলে আনার দক্ষতায়। তার গড়া দল ২০১৬-১৭ মৌসুমে লিগ শিরোপা জেতে। এরপর লিলে গ্যাব্রিয়েল ম্যাগালহায়েস, রাফায়েল লেয়াও, নিকোলাস পেপের মতো খেলোয়াড়দের কিনে বিশাল মুনাফায় বিক্রি করে খ্যাতি কুড়ান। সেই ধারাবাহিকতায় পিএসজিকেও নতুন রূপ দিয়েছেন তিনি।

তবে পিএসজির সঙ্গে ক্যাম্পোসের বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে আগামী গ্রীষ্মে। নতুন করে চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়ায় গুঞ্জন উঠেছে, তিনি অন্য কোনো ক্লাবে যোগ দিতে পারেন। আর্সেনালের স্পোর্টিং ডিরেক্টরের দায়িত্বে থাকার গুঞ্জন ছিল, যদিও ওই পদে এখন ইতালিয়ান আন্দ্রেয়া বের্তা নিয়োগ পেয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এমবাপ্পের ‘গোপন’ বিষয় জানাতে বই লিখছেন ক্যাম্পোস