মহান ভাষা আন্দোলনের মাসে এক মামলায় বাংলায় রায় দিয়েছেন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ। বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রায় দেন।

তিন দশকের বেশি সময় আগে পাবনার ঈশ্বরদীতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগে করা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর আজ বাংলায় রায় দেন আদালত। বাংলায় রায়ের পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত অংশটুকু আদালত ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার আগে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম বলেন, মামলার বিষয়বস্তু বিস্তৃত। চুম্বক পয়েন্ট ও সংক্ষিপ্ত আদেশ ঘোষণা করা হবে। ফেব্রুয়ারি মাস মহান ভাষা আন্দোলনের মাস। ঐতিহাসিক এ ঘটনা ১৯৫২ সালের। রায়টা বাংলায় দেওয়া হচ্ছে। এরপর রায়ের পর্যবেক্ষণসহ সিদ্ধান্ত অংশটুকু ঘোষণা করা হয়।

মামলায় ২০১৯ সালের ৩ জুলাই রায় দেন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক ও পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো.

রুস্তম আলী। রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সবাই বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের সাবেক-বর্তমান নেতা-কর্মী।

মামলায় বিচারিক আদালতের রায়সহ যাবতীয় নথি ২০১৯ সালে হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছায়, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

আরও পড়ুনহাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলা: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জনসহ বিএনপির ৪৭ নেতা-কর্মী খালাস১ ঘণ্টা আগে

ফৌজদারি কোনো মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কারও মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যেটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত।

অন্যদিকে বিচারিক আদালতের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করতে পারেন হাইকোর্টে।

সাধারণত ডেথ রেফারেন্স ও এসব আপিলের ওপর একসঙ্গে হাইকোর্টে শুনানি হয়ে থাকে।

আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর গত ৩১ জানুয়ারি শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায়ের জন্য আজ দিন রাখেন। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ বিএনপির দণ্ডিত ৪৭ নেতা-কর্মীর সবাই হাইকোর্টের রায়ে খালাস পেয়েছেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আইসিসি টুর্নামেন্টে ‘রাজা’ ভারত, ‘রানি’ নিউজিল্যান্ড

দলগুলো ঘুরেফিরে একই। সাম্প্রতিক সময়ে আইসিসি টুর্নামেন্টে পারফর্ম করা দলগুলোর কথা বলতে গেলে ভারত, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার নামই আসে। তবে এদের মধ্যে আবার ভারতের দাপট সবচেয়ে বেশি। আরেকটি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালের আগে ২০১১ সাল থেকে হওয়া আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোতে কোন দল সবচেয়ে ধারাবাহিক, আসুন দেখে নিই।সবচেয়ে বেশি জয়

২০১১ সাল থেকে হওয়া আইসিসির সাদা বলের টুর্নামেন্টে ৮৬ ম্যাচের মধ্যে ৭০টিতেই জিতেছে ভারত। যা এ সময়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ২১টি বেশি। অস্ট্রেলিয়া ৭৭টি ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ৪৯টিতে। সমান ৪৫টি করে জয় নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার, এই দুই দলও খেলেছে ৭৭টি ম্যাচ। ৮০ ম্যাচে ইংল্যান্ডের জয় ৪১টিতে।

নকআউটে নিয়মিত সদস্য: ভারত ও নিউজিল্যান্ড

২০১১ সালের পর আইসিসি টুর্নামেন্ট হয়েছে ১৪টি। এর মধ্যে ভারত শুধু দুবার নকআউট পর্বে পৌঁছাতে পারেনি (২০১২ ও ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ)। ১২ বার নকআউট পর্বে পৌঁছে ভারত চারবার সেমিফাইনালে হেরেছে, পাঁচবার রানার্সআপ হয়েছে এবং শিরোপা জিতেছে তিনবার।

নিউজিল্যান্ডের সাফল্যও এখানে কম নয়। এ সময়ে তারা আটবার নকআউট পর্বে উঠেছে, যার মধ্যে চারবার সেমিফাইনালে হেরেছে এবং তিনবার রানার্সআপ হয়েছে। ২০২১ সালে ভারতের বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল জিতে শিরোপা ঘরে তুলেছে কিউইরা। ন্যূনতম সেমিফাইনালে ওঠাকে নকআউট বলে বিবেচনা করা হয়েছে।

না হেরে নকআউটে

কোনো ম্যাচ না হেরে নকআউটে যাওয়া—এ সময়ে ভারতের এমন অর্জন পাঁচবার। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কোনো ম্যাচ না হেরেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দলটি।

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড নকআউটে উঠেছিল কোনো ম্যাচ না হেরেই।

২০১১ সালের পর ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত ৩৮টি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে মাত্র তিনটিতে হেরেছে এবং একটিতে টাই। ভারত সর্বশেষ গ্রুপ পর্বের ম্যাচ হেরেছে ২০১৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। মানে ৬ বছর আগে। এরপর তারা টানা ১৪টি ম্যাচ জিতেছে।

নেতৃত্বে কোহলি-রোহিত

ভারতের ধারাবাহিক সাফল্যের পেছনে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার অবদান সবচেয়ে বেশি। কোহলি আইসিসি টুর্নামেন্টে ‘প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট’ হয়েছেন তিনবার—২০১৪ ও ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে। ২০২৩ সালে ঘরের মাঠে এক আসরেই করেন ৭৬৫ রান, যা বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ।

ওয়ানডে বিশ্বকাপে রোহিত শর্মার সেঞ্চুরি আছে ৭টি, যা যেকোনো ব্যাটসম্যানের চেয়ে বেশি। ২০১৯ বিশ্বকাপে তাঁর পাঁচটি সেঞ্চুরি এক আসরে সর্বোচ্চ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে সর্বাধিক ৫০টি ছক্কা মারা খেলোয়াড় ভারতীয় অধিনায়ক।

ভারতীয় অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের সর্বোচ্চ ২০ উইকেট নিয়েছেন। ২০১৩ আসরের ফাইনালে তিনিই ছিলেন ম্যাচসেরা। এ ছাড়া পেসার মোহাম্মদ শামি ২০২৩ বিশ্বকাপে ২৪টি উইকেট নেন, যা ভারতের হয়ে এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড।

নিউজিল্যান্ডের সাফল্যের নায়ক উইলিয়ামসন

নিউজিল্যান্ডের সাফল্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন কেইন উইলিয়ামসন। আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোতে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রান তাঁর। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও তিনি দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। তাঁর ব্যাটে চড়েই নিউজিল্যান্ড গিয়েছিল ফাইনালে।

মিচেল স্যান্টনার ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১০ উইকেট নিয়ে দলকে সেমিফাইনালে তুলেছিলেন। এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও তিনি ৪.৮৫ ইকোনমিতে ৭ উইকেট নিয়েছেন।

ভালো অবদান আছে পেসার ম্যাট হেনরিরও। ২০১৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ৩৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ভারতের বিপক্ষে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও তিনি সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ৪ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১০টি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উইলিয়ামসন মানেই কি ওয়ানডে ফাইনালে ব্যর্থতা
  • আইসিসি টুর্নামেন্টে ‘রাজা’ ভারত, ‘রানি’ নিউজিল্যান্ড