অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত আরও দুটি সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই দুটি কমিশন হলো জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।

আজ বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেন জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধানেরা।

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে শেষবারের মতো সভা করেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যরা।

এ সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর কাছে সাংবাদিকেরা সুপারিশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বিস্তারিত বলতে রাজি হননি। শুধু বলেন, ১০০ টির বেশি সুপারিশ আছে।

অন্যদিকে সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো.

মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সেটি হবে পাবলিক ডকুমেন্ট। ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে, সবাই জানবেন।’

এ দিকে এ বিষয়ে আজ বেলা দুইটায় সংবাদ ব্রিফিং ডেকেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

গত অক্টোবরে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনসহ ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়। আজ দেওয়া হলো আরও দুটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন।

সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল জানানো হয়েছে,৬টি কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করবে। এরপর তাদের সুপারিশগুলো নিয়ে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে সব রাজনৈতিক দল এবং গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যুর ঘটনায় রাজশাহীর আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। এতে আসামি হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রয়াত নাসির উদ্দিন পিন্টুর ভাই নাসিম আহমেদ রিন্টু রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালতে রিন্টুর পক্ষে আইনজীবী আবদুল মালেক রানা মামলার আবেদন উপস্থাপন করেন।

আদালতে রিন্টুর সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু, নগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট, ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক লিমনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

গোপালগঞ্জে দেয়ালে দেয়ালে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ পোস্টার

বাবার হত্যাকারীদের শেখ হাসিনা রক্ষা করেছেন: রেজা কিবরিয়া

মামলার আরজিতে দেখা গেছে, আসামির তালিকায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আসাদুজ্জামান কামাল, আনিসুল হক, হাজী মো. সেলিম, সোলায়মান সেলিম, ইরফান সেলিম, মনির হোসেন ওরফে কোম্পানি মনির ওরফে স্প্রিট মনির এবং এএস শরিফ উদ্দিন ওরফে ব্ল্যাক শরিফ।

এছাড়াও তৎকালীন আইজিপি, তৎকালীন আইজি প্রিজন, তৎকালীন ঢাকা ও রাজশাহীর ডিআইজি প্রিজন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম, জেলার শাহাদত হোসেন, কারা চিকিৎসক আবু সায়েম, কয়েদি রাব্বানী ও বিডিআর বিদ্রোহ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবু কাহার আকন্দের নাম রয়েছে মামলার আসামিদের তালিকায়।

ছাত্রদলের সভাপতি থাকা অবস্থায় ২০০১ সালের নির্বাচনে ঢাকার লালবাগ-কামরাঙ্গীরচর চর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাসির উদ্দিন পিন্টু। পরে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হন তিনি। ঢাকার পিলখানা হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। এ ছাড়া, একটি অস্ত্র লুটের দায়ে তার ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। 

নাসির উদ্দিন পিন্টু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছিলেন। তবে আদালতে সাজা হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। নির্বাচন করতে পারেননি তিনি।

নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল পিন্টুকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কয়েক দিন পরে তিনি অসুস্থবোধ করলে ২৬ এপ্রিল তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর তাকে আবার কারাগারে নেওয়া হয়। পরে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে চিঠি দিয়ে কারাগারে চিকিৎসক ডাকা হয়। চিঠি পেয়ে একজন চিকিৎসক গেলেও তাকে কারাগারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি অভিযোগ ওঠে। ২০১৫ সালের ৩ মে দুপুরে কারাগার থেকে পিন্টুকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ কারণে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩ এর ৭ (১) ধারা মতে আদালতে এ মামলার আবেদন করা হয়েছে।

নাসির উদ্দিন পিন্টুর ভাই নাসিম আহমেদ রিন্টু বলেন, “আমার ভাইয়ের জনপ্রিয়তা ও বিএনপির প্রতি তার অবদানকে ভয় পাচ্ছিল হাসিনা সরকার। তাই তাকে পরিকল্পিতভাবে পিলখানা মামলায় ফাঁসিয়ে সাজা দেওয়া হয়। এরপর কারাগারে নিয়ে হত্যা করা হয়।”

তিনি আরো বলেন, “গ্রেপ্তারের পর নির্যাতনের কারণে আমার ভাই প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তার সুচিকিৎসা নিশ্চিতে পরিবারের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছিল। হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ আই হসপিটালে নিজ খরচে তার নিয়মিত চিকিৎসা চলবে। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে তাকে ঢাকায় না রেখে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ ও পরে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর চিকিৎসা না করে সুপরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়।”

নাসিম আহমেদ রিন্টুর আইনজীবী আবদুল মালেক রানা বলেন, “আদালতে মামলার আরজি জমা দেওয়া হয়েছে। আদালত বক্তব্য শুনেছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আদালত কোনো আদেশ দেননি। আজ বিকেলে কিংবা পরে আদালত আদেশ দিতে পারেন। তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য এটি কোনো তদন্ত সংস্থার কাছে পাঠানো হতে পারে।”

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ