ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাবাসীদের স্থানান্তর ও উপত্যকাটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা জাতিগত নিধনের সামিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদক ফারনাজ ফাসিহির গাজা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে এ উত্তর দেন জাতিসংঘ মহাসচিব। খবর ডেইলি ট্রিবিউনের।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নিউইয়র্ক টাইমসের জাতিসংঘ ব্যুরো প্রধান ফাসিহি আরো জানান, গুতেরেস বলেছেন- ট্রাম্পের পরিকল্পনা চিরকালের জন্য একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে অসম্ভব করার ঝুঁকি তৈরি করেছে।

আরো পড়ুন:

গাজা উপত্যকা দখল করবে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করল চীন

ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের মহাসচিব এমন মন্তব্য করেন।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র গাজা ‘দখল’ করবে এবং এটি পুনর্গঠন করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবে। তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই উপত্যকা পুনর্নির্মাণ করে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো হবে, যা বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান ও আবাসন সৃষ্টি করবে।    

ট্রাম্প বলেন, “আমরা এটির (গাজার) মালিক হবো এবং সেখানকার সমস্ত বিপজ্জনক অবিস্ফোরিত বোমা এবং অন্যান্য অস্ত্র নির্মূল করব, ভূখণ্ডটি সমতল করব এবং ধ্বংস হওয়া বিল্ডিংগুলো থেকেও আমরা মুক্তি পাবো, এগুলোকে সমতল করব (এবং) সেখানে এমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন করব যা ওই এলাকার মানুষের জন্য প্রচুর চাকরি এবং আবাসন সৃষ্টি করবে।”

গাজাবাসীদের মধ্যপ্রাচ্যের এক বা একাধিক দেশে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “আমি বলতে চাইছি যে, তারা সেখানে আছে কারণ তাদের কোনো বিকল্প নেই। তাদের কী আছে? এটি এখন ধ্বংসস্তূপের একটি বিশাল স্তূপ।”

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের গাজা দখল ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দেশটির মিত্র এবং প্রতিপক্ষ উভয়েরই তীব্র বিরোধিতার আশঙ্কা রয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল করব

এছাড়াও পড়ুন:

নারীর অধিকারকে দেখতে হবে মানবাধিকার হিসেবে

নারীর অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে দেখলেই সমাজে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে। পাশাপাশি নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভয়ের ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে হবে। নারী–পুরুষের সমতা নিশ্চিত করতে হবে।

আজ রোববার বেলা ১১টায় ঢাকার ধানমন্ডি ডব্লিউভিএ অডিটরিয়ামে ‘আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশুর মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করি: আদিবাসী নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও কাপেং ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ আয়োজন করে।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সভাপতি ফাল্গুনী ত্রিপুরা। সেখানে তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে অন্যান্য নারীর মতো আদিবাসী নারীরাও রাজনৈতিক সংঘাত, দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন, এমন নানা সমস্যা মোকাবিলা করে চলেছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে পুরুষের কথাই প্রাধান্য পায়। নারীর অধিকার যে মানবাধিকার, পুরুষেরা এ বিষয়টি বিবেচনায় আনলে সমাজে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে। নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভয়ের ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে হবে। নারী উন্নয়নে প্রান্তিক নারীদের কথা মূলধারায় যুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশের ৫৪টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীরা যুগ যুগ ধরে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, বঞ্চনা ও নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আদিবাসী নারীদের বিভিন্ন সময়, বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করা হয় বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুলেখা ম্রং। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বাঙালি কিংবা বসতি স্থাপনকারীদের অবশ্যই আদিবাসী নারীর প্রতি মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। নারীদের নিয়ে সমাজে যেসব অপসংস্কৃতির চর্চা হয়, তা বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমি বলেন, আদিবাসী প্রান্তিক নারী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে আদিবাসী কোটার কথা তুলতে হবে। তাদের নিজস্ব দাবিদাওয়া নিজেদেরই আন্দোলন করে মূলধারায় যুক্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ সৃষ্টিতে আদিবাসীদের রক্ত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সমাজকে টিকিয়ে রাখে নারী। সমতল কিংবা পাহাড়ে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর সর্বপ্রথম এই গণ–অভ্যুত্থানকে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান বলে নারীদের আলাদা করা হয়। দেশের রাজনীতিবিদ, লেখক, সাহিত্যিকরা এই গণ–অভ্যুত্থানকে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান না বলে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান বললেই পারতেন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের সাহসিকতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, নারীরা সাহসিকতার জন্য নানা ধরনের পুরস্কার পাচ্ছেন, কিন্তু কল্পনা চাকমার গল্প কোথায়? তাঁর পুরস্কারটি কোথায়?

নারীদের ওপর চলমান সহিংসতা রোধে স্নিগ্ধা রেজওয়ানা বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার টিকে থাকার কোনো মোরাল গ্রাউন্ড (নৈতিক ভিত) নেই।’

জাতীয় নারী সংস্কার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, ‘আমাদের জন্মই আজন্ম পাপ। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পরবর্তী যে বৈষম্যহীন সমাজ আমরা চেয়েছিলাম, সেখানে বর্তমানে নারীদের উপস্থাপন বলে দেয় এ দেশে আবারও বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।’ অবিলম্বে তিনি নারী সংস্কার কমিশনের কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন।

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য লুনা নূর মনে করেন, দেশে গণতন্ত্র ও সহনশীলতার চর্চা না থাকলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, যেমন আদিবাসী নারীর অস্তিত্ব স্বীকার করা সম্ভব নয়। বর্তমানে তৌহিদি জনতার সংবিধানবিরোধী স্লোগান নারী–পুরুষের সমতা নিশ্চিতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আদিবাসী সমাজে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নারী নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুলেখা ম্রং। বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেখানে ১১টি সুপারিশ প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে আদিবাসী নারীদের মানবাধিকার নিশ্চিত, আদিবাসী নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ ও নিরাপত্তা জোরদার করা, দোষীদের শাস্তি ও ভুক্তভোগীদের সহায়তা । শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমি ও সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিতসহ কর্মসংস্থানে কোটা সংরক্ষণ জরুরি। জাতীয় ও স্থানীয় সরকারে প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন ও মন্ত্রণালয় গঠন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারীর অধিকারকে দেখতে হবে মানবাধিকার হিসেবে