যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার থেকে ফল আমদানি বন্ধ আছে। ‘বিলাসী পণ্য’ বিবেচনায় আমদানি করা ফলের ওপর সম্পূরক শুল্ক অতিরিক্ত ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অতিরিক্ত এই শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত ফল আমদানি বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নূরউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দুদিন ফল আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানি করা হবে। এ সময়ের মধ্যে বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহার না হলে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফল আমদানি বন্ধ থাকবে।’

বেনাপোল বন্দর ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে যেসব খাদ্য আমদানি হয়, তার মধ্যে বড় অংশ রয়েছে আপেল, আঙুর, কমলা ও মালটা। বর্ধিত শুল্ক–কর আরোপের আগে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আদায় করত কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতি কেজি ফলে সরকারকে রাজস্ব দিতে হতো ১০১ থেকে ১১৫ টাকা। হঠাৎ করেই গত ৯ জানুয়ারি এনবিআরের নতুন এক নির্দেশনায় ফল আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক আরও ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে কেজিতে শুল্ক–কর ১৫ থেকে ১৮ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৬ থেকে ১৩৮ টাকা। আমদানি খরচ বাড়ায় সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে খুচরা বাজারে।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নূরউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘বিলাসী পণ্য হিসেবে আমদানিকৃত ফলের ওপর এক বছরে তিন দফায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা সম্পূরক শুল্ক–কর বাড়িয়েছে এনবিআর। আপেল, আঙুর, কমলা হচ্ছে শিশুখাদ্য ও রোগীর পথ্য। এটা কীভাবে বিলাসী পণ্য হয়, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।’

বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো.

কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিলাসী পণ্যের কোনো তালিকা নেই। তবে যেসব পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়, সাধারণত সেসব পণ্যকে বিলাসী পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।’

বর্ধিক শুল্কের কারণে খুচরা বাজারে আপেল, কমলা ও আঙুর ফলের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে গেছে। এসব ফল আমদানি বন্ধ থাকলে আগামী রমজান মাসে বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

ফল কীভাবে বিলাসী পণ্য হিসেবে বিবেচিত হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘এটা এনবিআরের পলিসিগত বিষয়। আমরা বাস্তবায়ন করি। এ বিষয়ে এনবিআর কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।’

বেনাপোল বন্দরের একজন কর্মকর্তা জানান, ফল ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ফল আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব আয় কমেছে। ধর্মঘটে দুই দিন ফল আমদানি বন্ধে বেনাপোল বন্দর থেকে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নারায়ণগঞ্জে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল কর্মী নিহত

নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া বালুর মাঠ এলাকায় ছুরিকাঘাতে অপূর্ব নামের এক ছাত্রদল কর্মী নিহত হয়েছেন। তিনি পঞ্চবটির বিসিক শিল্পনগরীর টি-শার্ট গার্মেন্টসের শ্রমিক ছিলেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত ছাত্রদলের মিছিল শেষে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছাত্রদল কর্মীরা সম্রাট নামের একজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা নিহত ও হামলাকারী দুইজনকেই ছাত্রদল কর্মী বললেও, স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, হামলাকারী বিএনপির কেউ না। তাদের কর্মসূচি বানচাল করতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মোহাম্মদ ইয়ামিন জানান, ধর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্রদলের মিছিলের কর্মসূচি শেষ করে তারা চাষাড়াস্থ শহীদ মিনারের পেছন দিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি দেখতে পান, পপুলারের পেছন দিকে নিহত অপূর্ব ও হামলাকারী সম্রাটের মধ্যে বাকবিতণ্ডা চলছে। এক পর্যায়ে দুইজনের মধ্যে হাতাহাতি লেগে যায়। এসময় তিনি অপূর্বকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখেন। পরে তার বুকে ছুরিবিদ্ধ দেখতে পান।

তিনি জানান, হামলার পরে সম্রাট পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাকে ধরে গণপিটুনি দেয়। তাকে ছাড়িয়ে নিতে তার ভাই আসলে তাকেও গণপিটুনি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে সম্রাটকে উদ্ধার করে। এসময় অপূর্বকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ও সম্রাটকে পুলিশ নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক অপূর্বকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের বাবা মাসদাইর জামালের গ্যারেজ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ খোকন ও নিহতের স্ত্রী সাথী আক্তার জানান, নিহত যুবক বিসিকের টি-শার্ট গার্মেন্টসের শ্রমিক। তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবচেয়ে ছোট ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার জাবুটিয়া গ্রামে। কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা তারা বুঝতে পারছেন না।

হাসপাতালে সম্রাট হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জানান, যারা হামলা করেছিল তারা চলে গেছে। তিনি শহীদ মিনারের পাশের বেইলি টাওয়ারের একটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারী।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু জানান, সারাদেশে ধর্ষণের বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবাদে ধর্ষণকারীদের বিচারের দাবিতে ছাত্রদলের মিছিলে নিহত অপূর্ব এসেছিল। যে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে তিনি বিএনপির কেউ না। আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের কর্মসূচি বাতিল করতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।        

সম্পর্কিত নিবন্ধ