গাজীপুরে বেক্সিমকোর আরও চারটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা
Published: 5th, February 2025 GMT
বেক্সিমকো শিল্পপার্কের আরও চারটি শাখা কারখানা বন্ধ করে (লে-অফ) শ্রমিকদের ছাঁটাই করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুরের সারাব এলাকায় মাইকিং করে এবং নোটিশ দিয়ে বিষয়টি জানায় কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলো হচ্ছে পার্কের ইয়ার্ন ইউনিট-২, টেক্সটাইল, ডেনিম ও নিটিং। তবে বেক্সিমকোর অন্য বিভাগ যেমন রূপগঞ্জের ইয়ার্ন ইউনিট-১-এর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
গণ–অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা। ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার হন সালমান এফ রহমান।
তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ না থাকা ও কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে না পারায় ১৫ ডিসেম্বর থেকে বেক্সিমকো শিল্পপার্কের ১৬টি কারখানা লে-অফ বা বন্ধ ঘোষণা করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ কর্তৃপক্ষ। কারখানাগুলো বন্ধ থাকলেও শ্রম আইন অনুযায়ী, ডিসেম্বর ও জানুয়ারির বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ঋণ দেবে জনতা ব্যাংক। বেক্সিমকো গ্রুপের বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোয় কাজ করেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। এবার নতুন করে আরও ৪টিসহ বন্ধ কারখানার সংখ্যা দাঁড়ালো ২০–এ।
গতকাল দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কারখানায় পর্যাপ্ত কাজ না থাকার কারণে সরকার কর্তৃক গঠিত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৫ ডিসেম্বরের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডে (বেক্সিমকো লিমিটেড-ইয়ান-২, টেক্সটাইল, ডেনিম ও নিটিং), কর্মরত সব কর্মকর্তা–কর্মচারী ও শ্রমিকদের বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬–এর সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক লে-অফের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এই সিদ্ধান্ত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। লে-অফ চলাকালে লে-অফকৃত কর্মকর্তা–কর্মচারী ও শ্রমিকদের আইন অনুযায়ী মজুরি বা বেতন দেওয়া হবে। লে-অফ থাকাকালে লে-অফকৃত কর্মকর্তা–কর্মচারী ও শ্রমিকের সশরীর কারখানায় এসে হাজিরা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
ওই ঘোষণার পর আজ বুধবার সকাল থেকে কোনো শ্রমিক কারখানা এলাকায় আসেননি। এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে শিল্প পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বেক্সিমকোসহ আশপাশের কারখানা এলাকায় মোতায়েন রয়েছেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, বেক্সিমকোর আরও চারটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। আজ থেকে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। সকাল থেকে কোনো শ্রমিক কারখানা এলাকায় আসেননি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
অবরোধ-মানববন্ধনসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী কর্মসূচি
দেশব্যাপী নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ, অনলাইনে হেনস্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনগুলো তাদের নানা কর্মসূচি অব্যহত রয়েছে। সোমবার (১০ মার্চ) সকাল থেকেই তারা বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করেন। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)
ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষকদের কঠোর শাস্তির দাবিতে আবারো ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রাবি শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা দলে দলে প্যারিস রোডে জড়ো হতে শুরু করেন। এরপর সেখান থেকে বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নেন তারা। এ সময় তালাইমারি থেকে একদল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মেইন গেটে যোগদান করেন।
এ সময় তারা ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশান’, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে জবাই কর’, ‘উই ওয়ান্ট যাস্টিস, নো মোর রেপিস্ট’, ‘খুনি কেন বাহিরে, ইনটেরিম জবাব চাই’, ‘রাবির অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশান’, ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’, ‘আমার মায়ের কান্না, আর না আর না’, ‘তুমি কে আমি কে? আছিয়া আছিয়া’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
২ ঘন্টা পর বেলা ১টার দিকে আগামীকাল মঙ্গলবারের কর্মসূচি ঘোষণা করে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি ঘোষণা করেন স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব।
তিনি বলেন, “আগামীকাল আমরা চোখে কাপড় বেঁধে ফেসবুকে শেয়ার ও ‘উই ওয়ান্ট যাস্টিস নো মোর রেপিস্ট’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করবো।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)
দেশব্যাপী নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ, অনলাইনে হেনস্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বেলা সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহীদ মিনারের পাদদেশে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক হুমায়ুন হাবিব হিরণের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর. আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মৌসুমী আফরোজ, বৈশাখী।
অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক, যুগ্ম আহ্বায়ক জর্জিস মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সাবেক সভাপতি নবীনূর নবীন, মুরাদ হাসান, আব্দুল গাফফার প্রমুখ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)
দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে ইবি শাখা ছাত্রদল।
এসময় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ ও সদস্য সচিব মাসুদ রুমী মিথুনের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবিব, আনারুল ইসলাম, মনিরুল হক, সদস্য সাব্বির, রাফিজ আহমেদ, নুর উদ্দিন, সৌরভ, উল্লাস, মুক্তাদির, সাক্ষর প্রমুখ কর্মীরা।
মানববন্ধনে তাদের হাতে ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’, ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘জাস্টিস ফর আছিয়া, আছিয়া আছিয়া’, ‘তুমি কে আমি কে, আছিয়া আছিয়া’, ‘মাগুরায় ধর্ষণকাণ্ডের অভিযুক্তদের ফাসি চাই’, ‘ধর্ষণের বিচার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক’ বিভিন্ন প্লাকার্ড দেখা যায়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)
দুপুর ২ টার দিকে ধর্ষক ও নারী নিপীড়কদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে কুবি শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এ সময় তারা ‘তুমি কে, আমি কে? আছিয়া আছিয়া’, ‘রশি লাগলে রশি নে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’ ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মানববন্ধনে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এই পর্যন্ত যত ধর্ষণ হয়েছে কোনটিরই সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা হয়নি। তাই এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আছিয়ার সুষ্ঠু বিচার চাই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আছিয়ার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)
দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ব্যানারে দেশব্যাপী নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন শাবিপ্রবি শিক্ষকরা। মানববন্ধনে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক অংশ নেন। এর মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষক।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি নিরোধ সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাবিনা ইসলাম এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো এবং আইনের কঠোর প্রয়োগেরও আহ্বান জানান।
ঢাকা/মেহেদী