কফিনে শেষ শয্যায় শুয়ে আছেন জেনি। সমাধিক্ষেত্রে তাঁকে ঘিরে জটলা। জেনিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছেন প্রেমিক চার্লস মেল্টন। গত শুক্রবার মুক্তি পাওয়া ‘লাভ হ্যাংওভার’ গানের দৃশ্যে এভাবেই জুটি বেঁধেছেন জেনি ও মেল্টন। গানটি প্রকাশের পর রীতিমতো আলোচনার ঝড়। কে পপ গানের শ্রোতাদের ছাপিয়ে অন্য শ্রোতাদের মধ্যেও ইংরেজি গানটি ছড়িয়ে পড়েছে।
গানের র্যাপ অংশে গলা মিলিয়েছেন মার্কিন গায়ক ডমিনিক ফাইক। গানের সুরে, কথায় প্রেম আর বিরহ ছড়িয়েছেন তাঁরা।
এই সপ্তাহে আসা গান নিয়ে একটা ভোট নিয়েছে বিলবোর্ড। সর্বোচ্চ প্রায় ৬৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে ‘লাভ হ্যাংওভার’। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দ্য উইকেন্ডের ‘হারি আপ টুমরো’ পেয়েছে ১৫ শতাংশ ভোট।
জেনি.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যার ১০০০ দিন
ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যার ১,০০০ দিন হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো পাওয়া যায়নি এই হত্যাকাণ্ডের সুবিচার।
আল-জাজিরার পোড়-খাওয়া সাংবাদিক শিরিন নিহত হন ২০২২ সালের ১১ মে। পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে এক ইসরায়েলি হামলার সংবাদ প্রচার করছিলেন তিনি। তার মাথায় ছিল হেলমেট, পরনে ছিল স্পষ্ট 'প্রেস' লেখা ভেস্ট। এরপরেও তাকে "ঠান্ডা মাথায় খুন" করে ইসরায়েল, দাবি করেছে আল জাজিরা।
সংবাদ মাধ্যম, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা, এমনকি জাতিসংঘ শিরিনের মৃত্যু নিয়ে তদন্ত করে এবং একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়- রীতিমত পরিকল্পনা করে শিরিনকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী।
২৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের আগ্রাসন নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন করে গেছেন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান শিরিন। যে দিন তাকে হত্যা করা হয়, সেদিন সংঘর্ষ এবং ক্রস-ফায়ারের আওতা থেকে দূরে ছিলেন শিরিন এবং তার সহকর্মীরা। তবে তার ২০০ মিটার (৬৬০ ফুট) দূরে ছিল ইসরায়েলি সেনারা। তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্পষ্ট ভিডিও রয়েছে। তাতে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ শিরিনকে সাহায্য করতে যেসব সহকর্মীরা ছুটে এসেছিলেন, তাদের ওপরেও গুলিবর্ষণ করা হয়।
সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরেও শিরিনকে হত্যার পর ইসরায়েলকে নিয়ে বলার মত কোনো তদন্ত করেনি কেউই, না জাতিসংঘ, না যুক্তরাষ্ট্র, না কোনো আন্তর্জাতিক আদালত।
ইসরায়েলের বক্তব্য
শুরুর দিকে দায় এড়াতে চেষ্টা করে ইসরায়েল। দাবি করা হয়, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা হত্যা করেছে শিরিনকে। কিন্তু দ্রুতই তারা দায় স্বীকার করে, দাবি করে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে শিরিনের মৃত্যু ছিল নিছকই 'দুর্ঘটনা।'
এক সপ্তাহ পর ইসরায়েল জানায় তারা এ ঘটনায় কোনো তদন্ত করবে না, কারণ তাতে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে সমালোচনা দেখা দেবে।
এরও এক বছর পর ইসরায়েল সেনা মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি শিরিনের মৃত্যুতে 'গভীর দুঃখ' প্রকাশ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এর মতে শিরিনের মৃত্যুর আগে ২২ বছর সময়কালে ২০ জন সাংবাদিকে মৃত্যুতে কোনো ইসরায়েলি সেনার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ইসরায়েল। শুধু তাই নয়, ২০২৩ সালে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৫৯ ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে হত্যা করে ইসরায়েল।
যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ
ইসরায়েলের দুঃখ প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে তদন্তের তাগাদা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। অথচ প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জোর দিয়ে বলেছিলেন শিরিনের হত্যার সাথে জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত।
প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি, পশ্চিম তীরের কর্তৃপক্ষ সুবিচারের আশায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিয়েছিল এ বিষয়ে। শিরিনকে হত্যা করে যে বুলেটটি, তা তুলে দেওয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফরেনসিক এক্সপার্টদের হাতে। এর তেমন কোনো সুরাহা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন জানান, বুলেটটি এতই ক্ষতিগ্রস্ত যে তার থেকে কোনো তথ্য বের করা যায়নি।
অন্যান্য তদন্ত
শিরিনের মৃত্যু নিয়ে স্বাধীনভাবে তদন্ত করে কয়েকটি সংবাদ সংস্থা এবং তদন্ত সংস্থা। ২০২২ সালের মে মাসে সিএনএন জানায় তাদের তদন্তে দেখা গেছে শিরিনকে টার্গেট করেছিল ইসরায়েল।
ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনি সংস্থা আল-হক এবং ব্রিটিশ সংস্থা ফরেনসিক আর্কিটেকচারের প্রকাশিত এক যৌথ তদন্তে দেখা যায় পরিকল্পনা করেই হত্যা করা হয় শিরিনকে।
এছাড়া আল-জাজিরাও এ বিষয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট কী করেছে?
শিরিন হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলার অনুরোধ করে আলজাজিরা। এটা ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। ছয় মাসব্যাপী অনুসন্ধান চালিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান, ভিডিও ফুটেজ এবং বিভিন্ন ধরনের নতুন আলামত নিয়ে তৈরি একটি তথ্যপঞ্জিও আইসিসির কাছে দাখিল করেছে আলজাজিরা। এছাড়া ওই বছরই আইসিসি বরাবর আরেকটি মামলার অনুরোধ করে শিরিনের পরিবার।
কিন্তু এ বিষয়ে কোনো মামলা হবে কিনা, বা শিরিনের সুবিচারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা, এ বিষয়ে এখনো মুখ খোলেনি আইসিসি।
জাতিসংঘের ভূমিকা
ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, শিরিনকে টার্গেট করে অযৌক্তিক বলপ্রয়োগ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা এটাও জানায় যে ইসরায়েলি বাহিনীর এক বিশেষ ইউনিট এর সাথে জড়িত।
কমিশনের এই তদন্তে আটজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়, এ বিষয়ে সহজলভ্য সব তথ্য যাচাই করা হয়, এছাড়া আল জাজিরা, সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনগুলোকেও আমলে নেওয়া হয়।
জাতিসংঘের এই তদন্তের তথ্য আইসিসিকে দিয়ে তাদের তদন্তে সাহায্য করার অনুরোধ জানিয়েছে আল জাজিরা।