শিশুকে কেন অন্যের সামনে শাসন করা ঠিক নয়
Published: 5th, February 2025 GMT
আমরা জানি, প্রতিটি শিশুই আলদা। একেক শিশুর বেড়ে ওঠার ধরন, কোনো কিছু বোঝার সক্ষমতা, কাজের ধরন, কাজ করার প্রতি আগ্রহ একেক রকম। কোন পরিস্থিতিতে শিশু কেমন আচরণ করবে, তা একটা বয়স পর্যন্ত আন্দাজ করা যায় না। ফলে অনেক সময়েই দেখা যায়, বাড়ির বাইরে কোথাও শিশুর আচরণে বিরক্ত হয়ে মা-বাবা বকাঝকা করেন। সবার সামনেই তাকে শাসন করেন, কখনো কখনো শিশুর গায়ে হাতও তোলেন। অথচ ২০১৩ সালের শিশু আইনেই স্পষ্ট উল্লেখ আছে, শিশুকে আঘাত করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
আমাদের দেশের মা-বাবার মধ্যে একটি ধারণা বেশ প্রচলিত, আর সেটি হলো শাসন না করলে সন্তান ‘মানুষ’ হবে না। আর শাসন বলতে এখানে মারধর, অপমানজনক কথাবার্তা, অন্যের সঙ্গে তুলনা, চিৎকার ইত্যাদিকেই বোঝায়। পুরো পরিবারের সামনে কিংবা একদম অপরিচিত পরিবেশে অনেক মানুষের সামনেও শিশুকে বকাঝকা দিতে পিছপা হন না অনেক অভিভাবক। কারণ, তাঁরা মনে করেন, শিশুর ভালোর জন্যই এই শাসন। এ ছাড়া নিজের সন্তানকে শাসন করতে কেন স্থান-কাল-পাত্র দেখতে হবে, এটাও বোধগম্য হয় না অনেকের কাছে। বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন অনেক ভিডিও আমরা ছড়িয়ে পড়তে দেখি, যেখানে বাবা কিংবা মা শিশুকে বকছেন, মারধর করছেন কিংবা প্রকাশ্যে অপমান-অপদস্থ করছেন। আবার পরিবার বা বাইরের কোনো সদস্য সেই ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
অথচ শিশুকে প্রকাশ্যে শাসন করলে তার নানা ধরনের মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। নিউজ এইটিন ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকাশ্যে শাসন করলে শিশুর শৈশব নিয়ে একধরনের ভীতি তৈরি হয়। অনেক গবেষকই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, প্রকাশ্যে শাসনের শিকার হয়েছেন, এমন অনেকেই বড় হয়ে বিষণ্নতায় ভুগেছেন।
আরও পড়ুনকোন বয়সের শিশুকে ঘরের কী কাজ করাবেন২০ নভেম্বর ২০২৪কঠোর শাসন শিশুর মস্তিষ্কের গঠনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শৈশবে কঠোর শাসনের মুখে পড়েছেন, এমন মানুষদের সঙ্গে অন্যদের এমআরআই রিপোর্টের তুলনা করে এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। শিশুকে প্রকাশ্যে শাসন করা বা মারধর করা কেন উচিত নয়, সে বিষয়ে জানতে কথা বলেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাউফুন নাহারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আধুনিক মনোবিজ্ঞান বলে, প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনোভাবেই শিশুকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে, তার সঙ্গে চিৎকার করা যাবে না, মারধর তো করা যাবেই না।’
অতিরিক্ত মারধর বা শাসনে বেড়ে ওঠা শিশুর মধ্যে পরবর্তী জীবনে নিষ্ঠুরতা দেখা দিতে পারে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মার্কিন নীতিতে হতভম্ব ইউরোপে নতুন যুগ, উদার গণতন্ত্র অবদমনের শঙ্কা
যুগ যুগ ধরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে বিভক্ত করা। তাদের ভাবনা ছিল, এ বিভক্তির কারণে ভেঙে পড়বে পশ্চিমা জোট, যারা ইউরোপের প্রুশিয়া অঞ্চলে সোভিয়েত ইউনিয়নের ট্যাঙ্ক প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছিল। কিন্তু এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন এক উপহার মস্কোর হাতে তুলে দিয়েছেন, যার জন্য তারা ‘শীতল যুদ্ধ’ বা তারও আগে থেকে অপেক্ষা করছিল।
শনিবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ট্রাম্পের সামগ্রিক আচরণে ইউরোপ কার্যত হতভম্ব। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভিত্তি স্বাধীনতা। তারা গণতন্ত্রের পক্ষে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এলেও এখন মিত্রতে পরিণত হয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের। এতে ইউরোপ নিজেদের উপেক্ষিত ভাবছে। তারা আবারও নিজেদের শক্তি-সক্ষমতা (সামরিক) বাড়ানোয় নজর দিচ্ছে। তারা মার্কিন নীতিতে বিস্মিত ও ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
ইউরোপের বিভিন্ন নেতার মুখে উঠে আসছে বিষয়টি। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মধ্যপন্থি রিনিউ ইউরোপ গ্রুপের সভাপতি ভ্যালেরি হায়ার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে সেই স্তম্ভ, যাকে কেন্দ্র করে শান্তির ব্যবস্থাপনা হয়। কিন্তু তারাই এখন অবস্থান পরিবর্তন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘পুতিন যে অপপ্রচার চালান, সেটাই এখন ট্রাম্পের মুখে। আমরা নতুন যুগে প্রবেশ করেছি।’
ইউরোপের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপ ও আচরণের আবেগি প্রভাব অনেক গভীর। ১৯৪৫ সালে শেষ হওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে যে সমৃদ্ধ ও মুক্ত মহাদেশের দীর্ঘ যাত্রা শুরু হয়েছিল, তার মূলে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ‘পশ্চিম’ বলতে যা বোঝায় তা ক্রমেই পাল্টাচ্ছে। বহু বছর ধরে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নানা উত্তেজনার মধ্যেও একটি বিষয়ে ছিল মতৈক্য, তা হলো– উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। বর্তমানে এ প্রশ্নে ইউরোপ, রাশিয়া, চীন আর যুক্তরাষ্ট্র– প্রত্যেকেই আলাদা। ‘পশ্চিম’ এখন কেবল এক ধারণা। কীভাবে শূন্যতা পূরণ হবে, তা পরিষ্কার নয়। তবে সহিংসতার বিষয়টি নিশ্চিত। কারণ, পরাশক্তিগুলো এটা চাচ্ছে।
প্যারিসের পো ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিকোল বাচারন বলেন, ‘ট্রাম্প যেটা করছেন এর সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে, উদার গণতন্ত্রের অবদমন।’
ইউরোপের পপুলিস্টরা বিপাকে
ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপের কারণে ইউরোপের জনপ্রিয় রাজনীতিকরা (পপুলিস্ট) পড়েছেন বিপাকে। শনিবার দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই রাজনীতিকরা ইউক্রেন প্রশ্নে কতটা ট্রাম্পের সঙ্গে থাকবেন, বা কতটা দূরত্বে– তা নির্ণয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবস্থান থেকে একেবারেই দূরে থাকার কথা ভাবছেন। যেভাবে ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আচরণ করা হয়েছে, তা নিয়ে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। নরডিক দেশসহ পশ্চিম ইউরোপে রাশিয়ার প্রতি বিদ্বেষ রয়েছে ব্যাপক। এর বিপরীতে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোয় রুশ সহমর্মীদের পাওয়া যায়।
এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ন্যাটো জোটকে আক্রমণ করেন। তিনি ইউরোপের মিত্রদের সতর্ক করে বলেন, যদি তারা নিজেদের প্রতিরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যয় না করে, তাহলে ওয়াশিংটন তাদের সুরক্ষা দিতে পারবে না। গত বৃহস্পতিবার তিনি ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা তো কমন সেন্স, তাই না। যদি তারা খরচ না করে, আমি তাদের সুরক্ষা দিতে যাব না। না, আমি সুরক্ষা দেব না।’ ট্রাম্প জানান, ন্যাটো নিয়ে তাঁর এমন দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বছরের। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের প্রথম মেয়াদে তাঁর এ দৃষ্টিভঙ্গি ন্যাটো মিত্রদের কাছে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, এ জন্য ৭৫ বছর পুরোনো ট্রান্সআটলান্টিক জোটের অন্য সদস্যরা প্রতিরক্ষায় ব্যয় বাড়িয়েছে, যদিও এখনও তা পর্যাপ্ত নয়। তাদের আরও খরচ করা উচিত।