মেঘনা নদীতে গুলিতে দুজন নিহতের ঘটনায় মামলা, বাদী জানেন না আসামি কারা
Published: 5th, February 2025 GMT
চাঁদপুরের মোহনপুরের নাসিরারচর এলাকায় মেঘনা নদীতে প্রতিপক্ষের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজনের মৃত্যুর ঘটনার পাঁচ দিন পর হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টার পর ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১২ থেকে ১৩ জনকে আসামি করে চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানায় মামলাটি করা হয়।
মামলার বাদী গুলিতে নিহত মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রাসেল ফকিরের মা আনরা বেগম। তবে বাদী জানেন না মামলা হয়েছে কি না অথবা কারা মামলার আসামি। তাঁর দাবি, তাঁকে কাগজে সই করতে বলা হয়েছে, তিনি শুধু সই করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে কিবরিয়া বাহিনীর হামলায় কানা জহির বাহিনীর রাসেল ফকির ও রিফাত খান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
স্থানীয় লোকজন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মতলবের নাসিরারচরে ১০-১৫টি ড্রেজারের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু কাটছিলেন কিবরিয়া। বালু কাটা নিয়ে কিবরিয়া ও কানা জহির বাহিনীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর কানা জহির পক্ষের রাসেল ফকির, রিফাত, আইয়ুব আলীসহ কয়েকজন স্পিডবোটে করে সেখানে বালু লুট করতে যান। রাসেলদের স্পিডবোটকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় কিবরিয়া বাহিনীর লোকজন। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাসেলসহ তিনজনকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাসেল ও রিফাত মারা যান।
মামলার বাদী আনরা বেগম বলেন, গতকাল রাতে কয়েকজন তাঁদের বাড়িতে যান। তিনি তাঁদের চেনেন না। একটি কাগজে সই নিয়েছেন তাঁরা। কাদের আসামি করা হয়েছে, এ বিষয়ে তিনি ও তাঁর স্বামী কিছুই জানেন না।
আনরা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, পড়ালেখা জানি না। কারে আসামি করছে, হেইডা কইতে পারি না।’ যাঁর বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ, তাঁর নামে মামলায় নেই, আপনি বিচার পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘গরিবরা আবার বিচার পায় নাকি।’
নিহত রাসেল ফকিরের মা আনরা বেগমের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অগ্রণী ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দীপঙ্কর ঘোষের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি ছেংগারচর বাজার শাখার ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ে মামলা হয়েছে।
সোমবার দুদক চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আজগর হোসেন বাদী হয়ে ঘটনায় জড়িত ওই ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) দীপঙ্কর ঘোষকে আসামি করে মামলাটি করেন।
মামলার বিবরণে বাদী উল্লেখ করেন, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি ছেংগারচর বাজার শাখার ব্যবস্থাপক মো. ইউসুফ মিয়া টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মতলব উত্তর থানায় অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের রেকর্ডপত্র থানা থেকে পাঠানো হয় দুদক কার্যালয়ে। অভিযোগের প্রেরিত রেকর্ডপত্র তথ্যাদির আলোকে দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে মামলার অনুমোদন প্রাপ্ত হয়।
মামলার বাদী বলেন, মামলার রেকর্ডপত্র ও তথ্যাদির পর্যালোচনা করে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি ছেংগারচর বাজার শাখার অফিসার (ক্যাশ) দীপঙ্কর ঘোষ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাত করে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এর আগে গত বছর ১ সেপ্টেম্বর ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মতলব উত্তর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অগ্রণী ব্যাংক ছেংগারচর বাজার শাখার অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন দীপংকর ঘোষ। গত ২৯ আগস্ট দীপংকর ঘোষ ব্যাংকে না এলে তার ব্যবহৃত মোবাইলফোন নম্বরে কল করলে তিনি জানান, তার বাবা অসুস্থ, তাই আসতে দেরি হবে। কিন্তু পরে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ব্যাংকে তিনি না এলে পুনরায় দীপংকরকে কল করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ওইদিন প্রকৃত অবস্থান জানার জন্য দীপংকরের স্ত্রী আঁখি সাহার মোবাইলে কল দেওয়া হয়। সেসময় তিনি জানান, তার স্বামী অফিসের উদ্দেশে ঢাকার বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন।
কিন্তু ওইদিন বিকেল হয়ে গেলেও দীপংকর ঘোষ ব্যাংকে উপস্থিত হননি। ফলে ব্যাংকের ভল্ট খোলা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে তার কার্যকলাপ সন্দেহজনক হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইউসুফ মিয়া।
শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, দীপংকর ঘোষের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং ব্যাংকের ভল্টের থাকায় নগদ টাকা পরিমাণ যথাযথ আছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মোতাবেক গত ৩০ আগস্ট মতলব উত্তর থানার একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পরে ১ সেপ্টেম্বর থানায় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে মিস্ত্রি দ্বারা ভল্টের গ্রিল কেটে এবং চাঁদপুরের প্রধান শাখায় রক্ষিত ডুব্লিকেট চাবি দিয়ে ভল্ট খোলা হয়। পরে সবার উপস্থিতিতে গণনা করে ভল্টে ২৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮ টাকা ৭১ পয়সা সরেজমিনে পাওয়া যায়।
ব্যাংকের ক্যাশ পজিশন অনুযায়ী ১ কোটি ২ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮ টাকা ৭১ পয়সা ছিল। অর্থাৎ ক্যাশ পজিশন অনুযায়ী গণনাকালে ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা কম পাওয়া যায়।
মামলায় আরও উল্লেখ্য আছে, ব্যাংকের ক্যাশিয়ার দীপংকর ঘোষ কিছুদিন ধরে প্রায়ই কাঁধে করে একটি ব্যাগ নিয়ে আসা-যাওয়া করেন। তিনি ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকায় ব্যাংকের ভল্টের একটি চাবি তার কাছে রক্ষিত থাকাতে কৌশল অবলম্বন করে তিনি নিজে অথবা অজ্ঞাতনামা বিবাদীরা ব্যাংকের ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছেন।