যুবকের সৎ কাজ এবং পাথর সরে যাওয়া
Published: 5th, February 2025 GMT
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) বরাতে একটি হাদিস আছে।
নবী (সা.) বলেছেন, একবার তিনজন লোক পথ দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে তারা একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিল। হঠাৎ পাহাড় থেকে এক খণ্ড পাথর পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তারা একে অপরকে বলল, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা নিজেদের কিছু সৎকাজের কথা চিন্তা করে বের করো। তাঁর অছিলা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা হলে হয়তো আল্লাহ তোমাদের ওপর হতে পাথরটি সরিয়ে দেবেন।
তাদের একজন বলতে লাগল, হে আল্লাহ! আমার আব্বা-আম্মা খুব বৃদ্ধ ছিলেন। আর আমার ছোট ছোট সন্তানও ছিল। আমি তাদের ভরণ-পোষণের জন্য পশু পালন করতাম। সন্ধ্যায় যখন বাড়ি ফিরতাম তখন দুধ দোহন করে আমার সন্তানদের আগে আমার আব্বা-আম্মাকে পান করাতাম। একদিন আমার ফিরতে দেরি হয়ে গেল। সন্ধ্যা হওয়ার আগে আসতে পারলাম না। এসে দেখি তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তখন আমি দুধ দোহন করলাম, প্রতিদিন যেমন করি। তারপর আমি তাঁদের শিয়রে (দুধ নিয়ে) দাঁড়িয়ে রইলাম। তাদের জাগাতে লাগল না।
আরও পড়ুনসুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াতের গুরুত্ব১৮ অক্টোবর ২০২৩আবার তাদের আগে আমার বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানোও সংগত মনে হলো না। বাচ্চারা অবশ্য দুধের জন্য আমার পায়ের কাছে পড়ে কান্নাকাটি করছিল। এভাবে ভোর হয়ে গেল। হে আল্লাহ! আপনি জানেন, আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্যই এ কাজটি করে থাকি, তাহলে আপনি আমাদের সামনে থেকে পাথরটা খানিক সরিয়ে দিন, যাতে আমরা আসমানটা দেখতে পাই।
তখন আল্লাহ পাথরটাকে সামান্য সরিয়ে দিলেন। তাতে তারা আসমান দেখতে পেল।
দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। পুরুষেরা যেভাবে নারীদের ভালোবাসে, আমি তাকে তার চেয়ে বেশি ভালোবাসতাম। একদিন আমি তার কাছে বাসনা প্রকাশ করলাম (অর্থাৎ, কুপ্রস্তাব দিলাম)। কিন্তু তার জন্য এক শ দিনার না নিয়ে আসা পর্যন্ত সে সম্মত হলো না। চেষ্টা করে আমি তা জোগাড় করলাম। যখন আমি তার পদযুগলের মাঝখানে বসলাম। তখন সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় কর। অন্যায়ভাবে আমার সতীত্ব হরণ করো না। তখন আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। হে আল্লাহ! আপনি জানেন, আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্য এ কাজটি করে থাকি, তাহলে আপনি আমাদের জন্য পাথরটা সরিয়ে দিন।
তখন পাথরটা কিছুটা সরে গেল।
আরও পড়ুনকোরআনের আলোকে জান্নাতে যাওয়ার জন্য কিছু ইঙ্গিত১৯ অক্টোবর ২০২৩তৃতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমি এক ফারাক চালের বিনিময়ে একজন শ্রমিক নিয়োগ করেছিলাম। যখন সে তার কাজ শেষ করে আমাকে বলল, আমার পাওনা দাও। আমি তাকে পাওনা দিতে গেলে সে তা নিল না। আমি তা দিয়ে কৃষি কাজ করতে লাগলাম। তা দিয়ে গরু ও তার রাখাল জমা করলাম। বেশ কিছু দিন পর সে আমার কাছে এসে বলল, আল্লাহকে ভয় কর (আমার মজুরি দাও)। আমি বললাম, এসব গরু আর রাখাল নিয়ে নাও। সে বলল, আল্লাহকে ভয় কর, আমার সঙ্গে ঠাট্টা কোরো না। আমি বললাম, আমি তোমার সঙ্গে ঠাট্টা করছি না, এগুলো নিয়ে নাও। তখন সে তা নিয়ে গেল। হে আল্লাহ! আপনি জানেন, যদি আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য এ কাজটি করে থাকি, তাহলে পাথরের বাকি অংশটুকু সরিয়ে দিন।
তখন আল্লাহ পাথরটা সরিয়ে দিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৩৩৩)
আরও পড়ুনসুরা লোকমানের উপদেশ বদলে দিতে পারে জীবনে চলার ধরন২০ অক্টোবর ২০২৩.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য আল ল হ করল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সামরিক বিমানে করে ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ফেরার পর থেকেই অবৈধ অভিবাসন ও অনুপ্রবেশের মতো ইস্যু নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারই অংশ হিসেবে এবার সামরিক বিমানে করে ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক পরিবহনে করে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসী ফেরত পাঠানোর মধ্যে সবচেয়ে দূরত্ব গন্তব্য হলো ভারত।
সোমবার একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, “সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে করে ভারতীয় অভিবাসীদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।”
এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার মধ্যে অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল অবৈধ অভিবাসী সমস্যা সমাধান। নির্বাচনে জয়লাভের পর সেই প্রতিশ্রতি রাখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
এরইমধ্যে, কিউবার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত মার্কিন নৌঘাঁটির অধীনের পরিচালিত কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে বন্দিশালা সম্প্রসারণে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন এ বন্দিশালায় অবৈধ অভিবাসীদের রাখার কথা জানান।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে সহায়তা নিচ্ছে সামরিক বাহিনীর। আটক অবৈধ অভিবাসীদের রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে সামরিক ঘাঁটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “সামরিক বাহিনীর সি-১৭ বিমানে করে অভিবাসীদের একটি ফ্লাইট ভারত রওনা দিয়েছে। যেটি পৌঁছাতে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগবে।”
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনও টেক্সাসের এল পাসো এবং ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়াগোতে আটক ৫ হাজারের বেশি অভিবাসীকে বহিষ্কারের জন্য ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত সামরিক বিমানে করে অভিবাসীদের গুয়াতেমালা, পেরু এবং হন্ডুরাসে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সামরিক বিমানে করে অভিবাসী ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া যদিও ব্যয়বহুল। রয়টার্স জানিয়েছে, গত সপ্তাহে গুয়াতেমালায় একটি সামরিক বিমানে করে অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে জনপ্রতি কমপক্ষে ৪ হাজার ৬৭৫ ডলার খরচ হয়েছে।
গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প। অভিষেক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণেই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ বন্ধ করে দেবেন। তাদেরকে ‘অপরাধী’ হিসেবে বর্ণনা করে ট্রাম্প বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এমন লাখো অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে।”
একই সঙ্গে ট্রাম্প জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান নিয়মকানুনে পরিবর্তন আনার কথা জানান। নতুন নিয়মের আওতায় নথিবিহীন অর্থাৎ অবৈধ কোনো অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান প্রসব করলে সেই শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশেও সই করেছেন তিনি।
ঢাকা/ইভা