গাজীপু‌রের টঙ্গীর তুরাগ তী‌রে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সুরায়ে নেজামের (যোবায়ের অনুসারী) দ্বিতীয় ধা‌পের ইজতেমার। আজ বুধবার দুপুর ১২টা ৯ মি‌নি‌টে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়ে শেষ হয় ১২ টা ২৭ মিনিটে। উর্দু ও বাংলা ভাষায় মোনাজাত করা হয়।

এর আগে সকালে বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ভাই ফারুক সাহেব। এরপর হেদায়েতি বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান।

এসময় যারা আল্লাহর রাস্তায় বের হবেন তাবলীগের সফরে তাদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বয়ান দেওয়া হয়। এই বয়ানের পরে গুরুত্বপূর্ণ নসিহত পেশ করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা। এর পরেই আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশের মাওলানা যোবায়ের।

এ সময় আমিন আমিন ধ্বনিতে কম্পিত হয় পুরো ইজতেমা ময়দান। তুরাগ তীরে সমবেত হয়ে অশ্রুভেজা চোখে লাখ লাখ মুসল্লি দেশ জাতি ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। দুই হাত তুলে প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চেয়ে কান্নার বুক ভাসায় দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি। গোটা দুনিয়ায় পথভ্রষ্ট মুসলমানের সঠিক পথে চলা। এবং তাবলীগের কাজে সবাইকে নিয়োজিত হওয়ার তাওফিক কামনা করে মহান আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত প্রার্থনা করা হয়। ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনায় দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি স্রষ্টার দরবারে কান্নাকাটি করেন। লাখো কণ্ঠে উচ্চারিত হয় আমিন-আমিন। এছাড়াও সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, কাতার ও আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মুসুল্লি বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন। এক ময়দানে থাকা-খাওয়া এবং রাত্রিযাপনসহ আল্লাহকে রাজি খুশি করাতে আমল করেন এসব মুসল্লিরা। ইজতেমা ময়দানে বসে শুনেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সব মাওলানাদের বয়ান। তাবলীগ জামাত আয়োজন করে এই বিশ্ব ইজতেমার।

আজ আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে সুরায়ে নেজামের দুই ধাপের ইজতেমার।

এই ইজ‌তেমার প্রথম প‌র্বের মত ‌দ্বিতীয় প‌র্বে মুস‌ল্লি মোনাজা‌তে কম ছি‌লেন। ত‌বে আজ‌কে গাজীপু‌র ও টঙ্গী‌তে পোশাক কারখানাগু‌লো আজ‌কে খোলা ছি‌ল।

সুরায়ে নেজামের (যোবায়ের অনুসারী) মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান সমকালকে জানান, দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির আগমনে ভরে যায় ইজতেমার ময়দান। শান্তিপূর্ণভাবেই আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

মাওলানা সাদ কান্দলভী অনুসারিদের ইজতেমা আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১৬ ফেব্রুয়া‌রি শেষ হ‌বে ২০২৫ সা‌লের বিশ্ব ইজ‌তেমা।

মোনাজতে শে‌ষে মূল মঞ্চ থে‌কে জানা‌নো হয় আগামী (২০২৬) বছ‌রের ইজ‌তেমা ২ জানুয়া‌রি থে‌কে ৪ জানুয়া‌রি প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হবে। প‌রের ধাপ হবে ৯ থে‌কে ১১ জানুয়া‌রি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব শ ব ইজত ম ব শ ব ইজত ম ইজত ম র ময়দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পরীক্ষার্থী এবার

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হচ্ছে। প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা। ১১ শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৩০ হাজার ৪৫টি স্কুল ও মাদ্রাসার ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় বসবে। এ বছর দেশের ৩ হাজার ৭১৫ কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। চলবে ১৩ মে পর্যন্ত।

সাধারণ ৯ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে ৭ লাখ ১ হাজার ৯৫৩ জন ছাত্র এবং ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯৭৮ ছাত্রী। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী এ বছর ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন ছাত্র এবং ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ ছাত্রী। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ এবং ৩৪ হাজার ৯২৮ জন ছাত্রী।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় ১ লাখ। সংখ্যায় তা ৯৫ হাজার ২২২ জন। শুধু তাই নয়, বিগত পাঁচ বছরে এবারই সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। জানা গেছে, ২০২৪ সালে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। ২০২৩ সালে ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন, ২০২২ সালে ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ এবং ২০২১ সালে ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম-বেশি হওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কোনো বছরই রেজিস্ট্রেশন করা সব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসে না। এটাকে ঝরে পড়াও বলা যায় না। সাধারণত কমপক্ষে তিন বছরের মধ্যে শিক্ষাজীবনে ফিরে না এলে তাকে ঝরে পড়া বলে। দারিদ্র্যের কারণে অনেকে এক বছর পরীক্ষা দিতে না পারলে পরের বছর অংশ নেয়।

রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মাদ ফেরদাউস সমকালকে বলেন, নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করা সব শিক্ষার্থীই বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেবে, এমনটা কখনও হয় না। দুই বছরে দারিদ্র্য, বাল্যবিয়ে, অসুস্থতা অথবা টেস্ট পরীক্ষায় ভালো করতে না পারা অনেক পরীক্ষার্থীই শেষ পর্যন্ত বোর্ড পরীক্ষায় বসে না। তারা অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে পরে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম বা বেশি বছরভেদে হতেই পারে, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের কেউ কেউ মনে করেন, এখনও শিক্ষার্থী ঝরে পড়া বন্ধ হয়নি। উপবৃত্তি চালু করায় একসময় শিক্ষার্থী বেড়ে ছিল। উপবৃত্তির পরিমাণটা এখন এমন যে, তা দিয়ে আর অভিভাবক-শিক্ষার্থীকে স্কুলমুখী করা যাচ্ছে না। আর করোনার পর থেকে অনেক শিক্ষার্থী সাধারণ ধারার পড়াশোনা ছেড়েছে। একই সঙ্গে ইবতেদায়ি তথা আলিয়া ধারার মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী কম ভর্তি হচ্ছে। অনেকে হাফেজি পড়ছে, কওমি ঘরানার মাদ্রাসায় ভর্তি হচ্ছে। ফলে সাধারণ ধারার পড়ালেখায় শিক্ষার্থী কমছে।

এবার প্রশ্ন ফাঁসমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকাল হওয়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ২০০ গজের মধ্যে শুধু পরীক্ষার তিন ঘণ্টা ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। তবে কেন্দ্রভেদে এ দূরত্ব কমবেশি হতে পারে।’

কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ

ঢাকা মহানগরী এলাকায় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ