বিশ্ববিখ্যাত আধ্যাত্মিক নেতা, দানশীল ব্যক্তি এবং ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা প্রিন্স করিম আগা খান মারা গেছেন। ৮৮ বছর বয়সী প্রিন্স করিম আগা খান ছিলেন শিয়া ইসলামের ইসমাইলি সম্প্রদায়ের ৪৯তম বংশগত ইমাম। তিনি ১৯৫৭ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে দাদার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন।

তার দাতব্য সংস্থা আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (একেডিএন) স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছে।

আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, ‘তিনি পর্তুগালের লিসবনে শান্তিপূর্ণভাবে ইন্তেকাল করেছেন।’ সূত্র: বিবিসি 

সংস্থাটি তাদের বিবৃতিতে বলেছে, তারা মহামান্যের পরিবার এবং বিশ্বব্যাপী ইসমাইলি সম্প্রদায়ের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছে। 

তারা আরো জানান, ‘আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টা করছি, যেমনটি তিনি চেয়েছিলেন।

মুসলিম সম্প্রদায় ইসমাইলিদের বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ, যার মধ্যে পাকিস্তানে ৫ লাখ। ভারত, আফগানিস্তান এবং আফ্রিকাতেও বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে। 

প্রিন্স করিম আগা খান সুইজারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছেন। তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ছিল এবং তিনি ফ্রান্সের একটি চ্যাটোতে বসবাস করতেন। তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। বাহামায় একটি ব্যক্তিগত দ্বীপ, একটি সুপার-ইয়ট এবং ব্যক্তিগত বিমান ছিল তার। ১৯৫৭ সালে ২০ বছর বয়সে প্রিন্স করিম আগা খান তার দাদার উত্তরসূরী হিসেবে ইসমাইলি মুসলিমদের ইমাম হন।

ফোর্বস ম্যাগাজিন অনুসারে, ২০০৮ সালে রাজপুত্রের আনুমানিক সম্পদ ছিল ১ বিলিয়ন ডলার (৮০১ মিলিয়ন পাউন্ড)। ঘোড়া প্রজননসহ অসংখ্য ব্যবসায়িক স্বার্থের মাধ্যমে তার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ বৃদ্ধি পায়।

তিনি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং আয়ারল্যান্ডে রেসের ঘোড়ার একজন শীর্ষস্থানীয় মালিক এবং প্রজননকারী হয়ে ওঠেন। একসময় বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সবচেয়ে মূল্যবান ঘোড়দৌড়ের ঘোড়া শেরগারের প্রজনন করেন।

তার বিখ্যাত ঘোড়া শেরগার ১৯৮১ সালে এপসম ডার্বি জয় করে, তবে ১৯৮৩ সালে ঘোড়াটি অপহরণ করা হয় এবং আর কখনো ঘোড়াটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আগা খান শাহরাস্তানি (১৯৮৬), কাহ্যাসি (১৯৮৬), সিন্দার (২০০০) এবং হারজান্দ (২০১৬) এর সঙ্গেও আরো চারবার বড় প্রতিযোগিতা জিতেছিলেন।

এদিকে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস এবং তার প্রয়াত মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন আগা খান। 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজা তৃতীয় চার্লসকে এই সমাজসেবীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত বন্ধুর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত রাজা চার্লস। তিনি আগা খানের পরিবারের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ রাখছেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ আগা খানের দূরদর্শিতা, বিশ্বাস এবং উদার মানুষ এবং অসাধারণ একজন নেতা হিসেবে বর্ণনা করে শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেছেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্যসেবা এবং লিঙ্গ সমতায় অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তিনি প্রান্তিক মানুষের স্বার্থে এগিয়ে এসেছিলেন, অসংখ্য জীবনে এক অমোচনীয় চিহ্ন রেখে গেছেন।’

আগা খানের দাতব্য সংস্থা শত শত হাসপাতাল, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রকল্প পরিচালনা করে, মূলত উন্নয়নশীল বিশ্বে।
 
তিনি পাকিস্তানের করাচিতে আগা খান ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ ছাড়া হার্ভার্ড ও এমআইটির যৌথ উদ্যোগে আগা খান প্রোগ্রাম ফর ইসলামিক আর্কিটেকচার চালু করেন। ভারতীয় ঐতিহ্যের সংরক্ষণেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, বিশেষ করে দিল্লির ঐতিহাসিক হুমায়ুনের সমাধির সংস্কারে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার্থীকে ইঙ্গিত করে অশোভন আচরণ, অভিযুক্তকে খুঁজছে পুলিশ

রাজশাহীতে অটোরিকশায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ইঙ্গিত করে অশোভন আচরণ করেছেন এক ব্যক্তি বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ছাত্রী তার এমন কর্মকাণ্ডের ভিডিও নিজের ফেসবুক আইডিতে প্রকাশ করেছেন। ভিডিওটি ভাইরাল হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খুঁজতে শুরু করে পুলিশ।

ঘটনাটি মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিকেলের। ওই ছাত্রী ফেসবুকে অভিযুক্ত ব্যক্তির ছবি এবং ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, “আজকে পরীক্ষা দিয়ে ইফতারি কিনে বাসায় আসার সময় বর্ণালীর মোড়ে এই ...বাচ্চা আমার সামনে বসে। হাতে কাপড়ের বড় বস্তা ছিল। বারবার আমার পায়ে টাচ হচ্ছিল। ভাবলাম, এতো বড় ব্যাগ, তাই হয়তো সমস্যা হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আরো বেশি সমস্যা হওয়ার পর পা সরাতে বলি। তারপর সে নিজের গোপনাঙ্গ নিয়ে অশোভন আচরণ করে।”

ওই ছাত্রী আরো লেখেন, “যখন বুঝতে পারে ভিডিও করছি, তখনই হাত সরিয়ে নেয়। রোজা-রমজানের মাসেও এদের হেদায়েত হয় না। ভেতরের...জেগে উঠে মেয়ে দেখলেই। সারাটাদিন রোজা রেখে পরীক্ষা দিয়ে যখন এসব সহ্য করা লাগে, তখন আর কিছু বলার থাকে না আসলে!”

আরো পড়ুন:

গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা, বরখাস্ত এসপির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ 

খাগড়াছড়িতে গৃহবধূকে ‘ধর্ষণ’ চেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১

কিছুক্ষণ পর ওই ছাত্রী এনিয়ে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, “যারা এই অবধি আমার খোঁজ খবর নিয়েছেন, আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমি সেইফলি বাসায় আসছি। যারা জিজ্ঞেস করছেন, আমি কিছু করতে পেরেছি কি না তাদের জন্য বলি ‘না’। আমি তেমন কিছু করতে পারিনি!”

তিনি আরও লেখেন, “যারা আমাকে চেনেন তারা জানেন, আমি ভীতু অনেক। অল্পতে ভয় পাই। ওই ঘটনার পর আমার হাত-পা কাঁপছিল। গা ঘিনঘিন করছিল। দুটো গালি দেওয়া ছাড়া কিছু করতে পারিনি। এই যে সঠিক জায়গায় সঠিক প্রতিবাদ না করতে পারার কষ্ট আমি আজীবন ধরে পেয়ে আসছি। ওই লোকের খোঁজ পাওয়া গেছে। যত দ্রুত সম্ভব আইনি পদক্ষেপ নেব।”

ফেসবুক আইডির তথ্য অনুযায়ী, ভুক্তভোগী তরুণী রাজশাহীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে তার পোস্ট দেখে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
 
রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, “আমরা ভিডিওটি দেখেছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও দেখেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা আছে। আমরা চেষ্টা করছি, দ্রুতই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।”

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ