নওগাঁয় আম গাছে ম-ম ঘ্রাণ, বাম্পার ফলনের আশা
Published: 5th, February 2025 GMT
দেশের অন্যতম আম উৎপাদকারী জেলা নওগাঁয় গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার আমের মুকুল বেশি এসেছে। বাতাসে মুকুলের ম-ম ঘ্রাণ। কয়েক দিনের কুয়াশা ছাড়া আবহাওয়া আমের অনুকূলে। মুকুলের আধিক্য দেখে বাম্পার ফলনের আশা করছেন আমচাষি।
বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষিবিদরাও। তাঁরা বলছেন, এখন পর্যন্ত আবহাওয়া আম চাষের অনুকূলে রয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে। এবার গত বছরের চেয়ে ২০০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে, গত বছরের চেয়ে এবার ২৫ হাজার টন ফলন বাড়তে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সাধারণত ধরা হয় দীর্ঘস্থায়ীভাবে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে আমের মুকুল ধরতে চায় না। তবে এবার জানুয়ারি মাসে দুয়েক দিন করে শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও দীর্ঘস্থায়ী শৈত্যপ্রবাহ ছিল না। গড় তাপমাত্রা প্রায় ২০ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিল। এই তাপমাত্রা আমের জন্য অনুকূল। তবে কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে কুয়াশা থাকছে। তাপমাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। কুয়াশার কারণে মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য আমচাষিদের ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আমচাষিরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী এক মৌসুমে ভালো ফলন হলে পরেরবার আমের ফলন কম হয়। সে হিসাবে গত বছর নওগাঁয় আমের ফলন কম হওয়ায় এবার তাঁরা আমের বাম্পার ফলনের আশায় আছেন। বাগানে প্রায় সব গাছেই মুকুল এসেছে। ঘন কুয়াশা থাকলেও শীতের তীব্রতা কম হওয়ায় মুকুলের তেমন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তারপরও কুয়াশার কারণে মুকুলকে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করছেন তাঁরা।
এবার নওগাঁ জেলায় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ করা হয়েছে। গত বছর এই পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর। গত বছর আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩১ হাজার টন। উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টন। এবার ৪ লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার নওগাঁ জেলায় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ করা হয়েছে। গত বছর এই পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর। গত বছর আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩১ হাজার টন। উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টন। এবার ৪ লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়। এই দুই উপজেলাতেই প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির বাগানে এবার আম চাষ হয়েছে। গত শনিবার ও রোববার সাপাহার ও পোরশা উপজেলার বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাগানগুলোর অধিকাংশ গাছেই ব্যাপক মুকুল এসেছে। মুকুলে আমগাছের পাতা ঢেকে গেছে। কোনো কোনো বাগানে শতভাগ গাছে মুকুল এসেছে। আবার কোনো কোনো ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে।
এবার অনেক আগেই মুকুল এসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে।রায়হান আলম, আমচাষিসাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়া এলাকাসহ ২০০ বিঘা জমির ওপর তিনটি আমবাগান রয়েছে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার। তিনি স্থানীয় বাজারে আম বিক্রি ছাড়াও বিদেশেও আম রপ্তানি করে থাকেন। সোহেল রানা বলেন, গত বছর তাঁর বাগানে ৫০-৬০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। এবার এখন পর্যন্ত তাঁর বাগানে ৮০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। ফাল্গুন মাস আমের মুকুল আসার উপযুক্ত সময়। আশা করছেন, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে বাকি গাছগুলোয়ও মুকুল আসবে। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত আমের জন্য অনুকূলে আছে। রোদের তাপ কম পেলে ও প্রকৃতি কুয়াশায় ঢেকে থাকলে মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে জন্য গাছে ছত্রাকনাশক কীটনাশক স্প্রে করছেন সোহেল।
পোরশা উপজেলার বড়গ্রাম এলাকার আমচাষি রায়হান আলম বলেন, গত বছর শীতের কারণে অনেক দেরিতে মুকুল এসেছিল। ১৫ থেকে ২০ দিন দেরি হয়েছিল। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়েও অনেক গাছে মুকুল ধরেছিল। তবে সে তুলনায় এবার অনেক আগেই মুকুল এসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ক ল এস ছ ৩০ হ জ র হ জ র টন গত বছর র নওগ উপজ ল করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নিবন্ধন সনদ পেল দেশের ২৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, ‘‘দেশের জিআই পণ্যের তালিকা সমৃদ্ধ করার পর সেগুলো বাণিজ্যিকভাবে বিকশিত করতে হবে। এই পণ্যের বাজারজাতকারীদের ন্যায্য স্বীকৃতি এবং পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে হবে। এতে স্থানীয় উদ্যোক্তা বা উৎপাদনকারীদের ক্ষমতায়ন হবে। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকলের অংশগ্রহণ জরুরি।’’
বুধবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর আয়োজিত বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘‘মেধাসম্পদ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে বর্ণিত মানুষের জন্য স্বীকৃত অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম অধিকার। সংগীত কেবল বিনোদন নয়, এটি মানবতার আবেগ, অনুভূতি ও সংস্কৃতির এক অনুপম প্রকাশভঙ্গি। সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনের জন্য সঙ্গীতের মেধাসম্পদ অধিকার সংরক্ষণ জরুরি।’’
শিল্প সচিব জনাব মো. ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আলোচক ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। মেধা সম্পদ দিবসের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্পী, অভিনেত্রী ও সংগীত পরিচালক জনাব আরমিন মুসা।
আলোচনা সভায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘‘বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উৎসব গান। এদেশের মানুষ গানের মাধ্যমে ভাব প্রকাশ করে। যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। সঙ্গীত নিয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বড় প্রকল্পের কাজ করছে। যা দেশের মানুষ কিছুদিনের মধ্যে দেখতে পাবে। সঙ্গীতের কপিরাইট নিশ্চিত করতে হবে।’’
শিল্প সচিব জনাব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘‘যারা জীবিকা নির্বাহ করে, বাজারজাত করে এবং পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখে সেসব আবেদনকারী জিআই সনদ নিবন্ধন পাবে। জিআই পণ্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পণ্য জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।’’
অনুষ্ঠানে ২৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়। ভৌগোলিক পণ্যের সনদ বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক ও নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার নাকফজলি আমচাষী সমবায় সমিতির নিকট হস্তান্তর করা হয়।
এবারের বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল “IP and music: Feel the beat of IP”। এ বছর সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকারসহ সংগীতায়তনের সংশ্লিষ্ট সকলের সৃজনশীলতা সংরক্ষণ এবং নতুন উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে মেধাসম্পদের অধিকার সুরক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
নিবন্ধন সনদপ্রাপ্ত ২৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হলো:
নরসিংদীর লটকন (সনদ নাম্বার: ৩২), মধুপুরের আনারস (৩৩), ভোলার মহিষের দুধের কাঁচাদই (৩৪), মাগুরার হাজরাপুরী লিচু (৩৫), সিরাজগঞ্জের গামছা (৩৬), সিলেটের মনিপুরি শাড়ি (৩৭), মিরপুরের কাতান শাড়ি (৩৮), ঢাকাই ফুটি কার্পাস তুলা (৩৯), কুমিল্লার খাদি (৪০), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি (৪১), গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গহনা (৪২), সুন্দরবনের মধু (৪৩), শেরপুরের ছানার পায়েস (৪৪), সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি (৪৫), গাজীপুরের কাঁঠাল (৪৬), কিশোরগঞ্জের রাতাবোরো ধান (৪৭), অষ্টগ্রামের পনির (৪৮), বরিশালের আমড়া (৪৯), কুমারখালীর বেডশিট (৫০), দিনাজপুরের বেদানা লিচু (৫১), মুন্সীগঞ্জের পাতক্ষীর (৫২), নওগাঁর নাকফজলি আম (৫৩), টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের জামুর্কির সন্দেশ (৫৪) এবং ঢাকাই ফুটিকার্পাস তুলার বীজ ও গাছ (৫৫)।
উল্লেখ্য জামদানি শাড়ি দেশের প্রথম পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি পায়। এখন পর্যন্ত দেশের ৫৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে।
নঈমুদ্দীন/তারা