অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়া এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আপনি ছবি দেখে পণ্য অর্ডার করে সেটি হাতে পাওয়ার পর দেখলেন, ছবির সঙ্গে হাতে পাওয়া পণ্যের আকাশ-পাতাল তফাত।

নিশ্চয়ই দুঃখ পাবেন, রাগও হতে পারে। কিন্তু পণ্য অর্ডার করার পর যদি দেখেন পণ্য নয়, সেটির ছবি পাঠানো হয়েছে, তবে আপনার অনুভূতি কী হতে পারে?

এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার বাসিন্দা সিলভেস্টার ফ্রাঙ্কলিন। তিনি চীনভিত্তিক খুচরা পণ্য বিক্রেতা কোম্পানি আলিএক্সপ্রেসে একটি ড্রিল মেশিন অর্ডার করেছিলেন।

আলিএক্সপ্রেস থেকে ফ্রাঙ্কলিনকে পণ্য সরবরাহ করা হয়। কিন্তু প্যাকেট খুলে তিনি হতভম্ব হয়ে যান। ৬৮ বছর বয়সী এই আমেরিকান ড্রিল মেশিন নয়, পেয়েছেন ড্রিল মেশিনের একটি ছবি। নিউইয়র্ক পোস্ট–এ এ নিয়ে খবর প্রকাশ পেয়েছে।

ফ্রাঙ্কলিন বলেন, তিনি গত বছরের নভেম্বরে আলিএক্সপ্রেসে ৪০ মার্কিন ডলারে একটি ডিআইওয়াই অ্যাপলায়েন্স (ড্রিল মেশিন) ও একটি প্রেশার ওয়াসার অর্ডার করেছিলেন। চীনভিত্তিক অনলাইন স্টোর আলিএক্সপ্রেসে এই দুটি পণ্যের স্বল্প মূল্য দেখেই তিনি অর্ডার করেন।

কয়েক সপ্তাহ পর ডিসেম্বরের শেষ দিকে ফ্রাঙ্কলিন তাঁর পণ্য হাতে পান। মোড়ক খুলে ভেতরে একটি ভাঁজ করা কাগজ দেখতে পান। ভাঁজ খুলে দেখেন, তিনি যে পণ্য অর্ডার করেছেন, সেগুলোর প্রিন্ট করা ছবি।

ক্ষুব্ধ ফ্রাঙ্কলিন বলেন, ‘আমি প্রায় ৪০ ডলার দাম দিয়েছি। আমি যা হাতে পেয়েছি, তা হলো, ড্রিল মেশিনের একটি ছবি এবং একটি স্ক্রু। আমি খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমি সোজা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার টাকা ফেরত চাই। এটা ভালো নয়। এটা খুব খারাপ। এ সবকিছুই খারাপ। আমি কী বোঝাতে চাইছি, সেটা আপনি বুঝতে পারছেন তো?’

এভাবে প্রতারিত হওয়ার পর ফ্রাঙ্কলিন আলিএক্সপ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাঁর অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে কোনো বার্তা তিনি পাননি।

ফ্রাঙ্কলিনের প্রতারিত হওয়ার গল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। কেউ কেউ একইভাবে তাঁদের প্রতারিত হওয়ার গল্পও জানাচ্ছেন। কেউ কেউ এটা নিয়ে মজা করছেন। কেউ কেউ আবার কেন তিনি ভরসা করা যায় না, এমন একটি ওয়েবসাইটে পণ্য অর্ডার করেছেন, তা নিয়ে ফ্রাঙ্কলিনকে খোঁচা দিতেও ছাড়ছেন না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ র ঙ কল ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘সংসার চালানোই মুশকিল, ইফতার কিনবো কিভাবে’

গাইবান্ধা শহরে কুলির কাজ করেন সদর উপজেলার পূর্ব কোমরনই মিয়াপাড়া গ্রামের জাহিদুল ইসলাম। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। কাজকর্ম তেমন না থাকায় অতিরিক্ত আয়ও হয়না। তবুও কষ্ট করে ৭০ থেকে ৮০ টাকার ইফতার কিনতে হয়। তা দিয়েই চলে পরিবারের চারজনের ইফতার। 

শুধু জাহিদুল ইসলাম নন, তার মতো আরও অনেক মানুষের আয় কমে যাওয়ায় এবার তাদের অনেকেই  ইফতার সামগ্রী কিনতে পারছেন না। 

সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া প্রায় প্রত্যেক পেশাজীবির আয় কমেছে। এর মধ্যে দিনমজুর, অটোভ্যান-রিকশা চালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অন্যতম। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির তুলনায় তাদের আয় বাড়েনি, বরং কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে পবিত্র রমজান মাসের ইফতার সামগ্রী বিক্রির দোকানেও।

গাইবান্ধা ডিবি রোডের রড সিমেন্টের দোকানে কুলির কাজ করেন শফিকুল ইসলাম। সারাদিনে আয় করেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। তিনি বলেন, “এই টাকা দিয়ে সংসার চালানোই মুশকিল। ইফতার কিনবো কিভাবে? এবছর এক দিনও ইফতার কিনিনি। ভাত-তরকারি দিয়েই ইফতার করি।” 

ডিবি রোডের কাচারি বাজার এলাকায় সড়কের পাশে ভ্রাম্যমাণ ইফতার বিক্রেতা শুভ মিয়া। তিনি বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর বেচা-বিক্রি অনেক কম। গত বছর সারাদিনে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার ইফতার বিক্রি করেছিলাম। এ বছর ৩ হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মানুষের হাতে টাকা নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যও ভালো না।” 

মাঠ বাজার এলাকার আজাদ মিয়া জর্জ কোর্টে চাকরি করেন। বিকেলে ইফতার কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, “আগের মতো আর ইফতার কিনতে পারিনা। এখন বুট, বুন্দিয়াসহ তিন-চারটা আইটেম ৮০ টাকায় কিনেছি। বাসায় মুড়ি আছে, এসব দিয়েই পরিবারের সবাই ইফতার করবো।” 

তিনি বলেন, “চাল, ডাল, তেল, মাছ-মাংসসহ  নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুরই দাম বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। সবকিছু কেমন যেন থমকে আছে। যারা ব্যবসা করেন, তারাও ভালো নেই। তাই, ইফতারের পিছনে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়।” 

রমজানে শহরের ডিবি রোড, স্টেশন রোড, পার্ক মোড়, কাচারি বাজার, পুরাতন বাজার মোড়, জেলা পরিষদ মোড়, হাসপাতাল রোড, বাস টার্মিনাল, খন্দকার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় বসেছে অস্থায়ী এসব ইফতার সামগ্রীর দোকান।

ইফতারের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ১০০ গ্রাম ছোলা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়, বেগুনি ৫ টাকা, পিঁয়াজু ৫ টাকা, প্রতি পিস জিলাপি আকার ভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা, চিংড়ির বড়া ১০ টাকা, গ্রিল চিকেন সিঙ্গেল ৮৫ টাকা, বুন্দিয়া ১০০ গ্রাম ১৫ টাকা, খাসির কার্টলেট ৩০ টাকা, চিকেন ফ্রাই কোয়ার্টার ১২০ টাকা, হালিম হাফ ৮০ টাকা, চিকেন বিরানি ১৫০ টাকা, খাসির কাচ্চি ১৫০ টাকা, বিফ রোল ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

ভ্রাম্যমান ইফতার বিক্রেতা ডি বি রোডের সিয়াম বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি কমেছে। গত বছর রোজার শুরু থেকেই ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার ইফতার বিক্রি করেছি। এবছর ছয় রোজা পার হলেও একদিনে ৫ হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে না।” 

সদর উপজেলার মিয়াপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম রড সিমেন্টের দোকানে কুলির কাজ করেন। সারাদিনে আয় করেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। তিনি জানান, এই টাকা দিয়ে সংসার চালানোই মুশকিল। ইফতার কিনবো কিভাবে? 

রড সিমেন্টের দোকানে কাজ করেন শহরের মিতালিবাজার এলাকার কবির মিয়ার ইফতার কেনার সামর্থ্য নেই 

শহরের মিতালিবাজার এলাকার ভ্যানচালক কবির মিয়া। বিভিন্ন দোকানে কুলির কাজ করেন। তিনি বলেন, “আগের মতো আয়, রোজগার নাই। এখন সারাদিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কামাই করি। ইফতার কেনার সামর্থ্য নেই। ভাত খেয়েই ইফতার করি।”

শহরের বড় মসজিদ এলাকার ভ্রাম্যমাণ ইফতার বিক্রেতা বাদশা মিয়া গত বছর ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা ইফতার বিক্রি করতেন। এ বছর ৩ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারছেন না তিনি। 

বিক্রেতা বাদশা মিয়া বলেন, “এবছর যে বেচা-বিক্রি হচ্ছে, তাতে করে দোকানের কর্মচারীদের বেতন দিতেই শেষ। আগে কখনো এত কম বিক্রি হয়নি। ব্যবসার অবস্থা একেবারেই খারাপ।”

ঢাকা/মাসুম/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ