দলবদলে লা লিগা–বুন্দেসলিগা–সৌদি প্রো লিগের চেয়েও বেশি খরচ করেছে ম্যান সিটি
Published: 5th, February 2025 GMT
দলবদল শুরুর আগে থেকেই এমন কিছুর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, দলের ভাগ্য বদলাতে টাকার থলে নিয়ে খেলোয়াড় কিনতে নামবে ম্যানচেস্টার সিটি। বাস্তবেও হয়েছে তা-ই। ব্যর্থতা কাটাতে জানুয়ারিতে দেদার অর্থ খরচ করেছে ইতিহাদের ক্লাবটি। এমনকি প্রিমিয়ার লিগের বাকি ১৯ দল মিলে যত খরচ করেছে, সিটির খরচ তার প্রায় কাছাকাছি।
শীতকালীন দলবদলে প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো সব মিলিয়ে খরচ করেছে ৩৭ কোটি পাউন্ড। যেখানে ১৯ দলের খরচ ১৯ কোটি পাউন্ড এবং সিটির একার খরচ ১৮ কোটি পাউন্ড। শীতকালীন দলবদলে প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের দ্বিতীয় খরুচে দল সিটি। সবার ওপরে চেলসি।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে চেলসি খরচ করেছিল ২৭ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড। সামগ্রিকভাবে শীতকালীন দলবদলের মধ্যেও অবশ্য সেবারই সবচেয়ে খরচ করেছিল প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো। ২০২৩ সালের শীতকালীন দলবদলে খরচ হয়েছিল রেকর্ড ৮১ কোটি ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড।
আরও পড়ুনসেই অর্থের ছায়াতলেই সিটির ভাগ্য বদলাতে চাইছেন গার্দিওলা২৪ জানুয়ারি ২০২৫খরচের দিক থেকে সিটি শুধু বাকি ক্লাবগুলোকেই টেক্কা দেয়নি; বরং অন্য লিগগুলোকেও পেছনে ফেলেছে। যেমন দলবদলে ফরাসি লিগের ক্লাবগুলো সবাই মিলে খরচ করেছে ১৭ কোটি পাউন্ড, যা সিটির চেয়ে এক কোটি পাউন্ড কম।
একইভাবে সৌদি লিগ ও বুন্দেসলিগার খরচ ১৪ কোটি পাউন্ড করে, যা সিটির চেয়ে ৪ কোটি পাউন্ড কম। আর লা লিগার দলগুলো তো সিটির ধারেকাছেও নেই। এবারের দলবদলে লা লিগার ক্লাবগুলো খরচ করেছে ২ কোটি পাউন্ড।
এবারের দলবদলে সিটির সবচেয়ে বেশি দাম দিয়ে কেনা খেলোয়াড় ওমর মারমুশ। ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে ৫ কোটি ৯০ লাখ পাউন্ডে এই মিসরীয় ফরোয়ার্ডকে কিনেছে সিটি। এরপর তারা দলবদল শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে নিকো গঞ্জালেসকে পোর্তো থেকে কিনেছে ৫ কোটি পাউন্ডে।
আর লাঁস থেকে আবদুলকোদির খুসানোভকে কিনতে সিটির খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৩৬ লাখ পাউন্ড। এ ছাড়া দলবদলে ব্রাজিলের পালমেইরাস থেকে সিটি নিয়ে এসেছে ভিতর রেইসকে। তাঁর পেছনে ক্লাবটির খরচ হয়েছিল ২ কোটি ৯৬ লাখ পাউন্ড।
আরও পড়ুন‘ট্যাংক’, ‘দ্য ট্রেন’, ‘দানব’—সিটিতে যোগ দেওয়া কে এই উজবেক ডিফেন্ডার ২১ জানুয়ারি ২০২৫প্রিমিয়ার লিগে খরচ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি হিসাবের সঙ্গে আর্থিক হিসাবও ইতিবাচক ধারায় ফিরল
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের শেষ সময়ে অর্থনীতির সব কটি সূচকই ছিল নড়বড়ে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রবাসী আয় বাড়তে থাকে, পণ্য রপ্তানি সাময়িকভাবে হোঁচট খেলেও পরে ঘুরে দাঁড়ায়। অন্যদিকে আমদানিতে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। সেগুলো হচ্ছে চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাব।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই-নভেম্বরে চলতি হিসাবে যেখানে ঘাটতি ছিল ১৯ কোটি মার্কিন ডলার, সেখানে ডিসেম্বরের শেষে উদ্বৃত্ত হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অন্যদিকে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ছিল ৫৬ কোটি ডলার। ডিসেম্বরের শেষে সেটি ১৩৮ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাব ইতিবাচক ধারায় ফেরার পাশাপাশি বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাণিজ্য ঘাটতি কমে ৯৭৬ কোটি ডলারে নামে। এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, চলতি হিসাবের পাশাপাশি আর্থিক হিসাব উদ্বৃত্ত হয়েছে। মূল্যস্ফীতিও কমে এসেছে। ফলে অর্থনীতির শুভযাত্রা শুরু হয়েছে। সামনে আরও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৬৬১ কোটি ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল আরও বেশি, যা পরিমাণে ১ হাজার ১৬৩ কোটি ডলার। তবে বর্তমান ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস জুলাই-ডিসেম্বরে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর এক মাস আগেও হিসাবটিতে ঘাটতি ছিল।
সাধারণভাবে চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪৫৪ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছর উদ্বৃত্ত ছিল ৬৮৯ কোটি ডলার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর আর্থিক হিসাব ঘাটতি নিয়ে শুরু হয়। তবে অর্থবছরের প্রথমার্ধ শেষে আর্থিক হিসাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে উদ্বৃত্ত হয়েছে ১৩৮ কোটি ডলার।
দেশে আন্তর্জাতিক সম্পদের মালিকানা হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি পরিমাপ করা হয় আর্থিক হিসাবের মাধ্যমে। সাধারণত এই হিসাবে ঘাটতি তৈরি হলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুত ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। ডলার-সংকট তীব্র হয়ে ওঠায় দেড় দশকের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো এ হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতিও কিছুটা কমেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এই সূচকে ঘাটতি ছিল ৩৮ কোটি ডলার, যা তার আগের মাসে ছিল ২৪৭ কোটি ডলার। গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি ছিল ৩৪৫ কোটি ডলার।