Prothomalo:
2025-04-10@11:46:10 GMT

মোকামে কমতির দিকে চালের দাম

Published: 5th, February 2025 GMT

দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা চালের বড় অংশ যায় নওগাঁ ও কুষ্টিয়ার মোকামগুলো থেকে। দুই জেলার মোকামেই এখন চালের দাম কমতির দিকে। গত দুই সপ্তাহে নওগাঁর মোকামে কেজিপ্রতি চালের দাম ২ থেকে ৪ টাকা কমেছে। আর কুষ্টিয়ায় কমেছে ৫০ পয়সার মতো। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।

মিলমালিক ও পাইকারেরা বলছেন, চালের আমদানি বাড়ানো এবং এসব চাল গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় দাম কমতির দিকে। এ ক্ষেত্রে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির প্রভাবও পড়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

মোকামে চালের দাম কমায় ঢাকার বাজারেও চালের দাম কমেছে। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পাইকারি বিক্রেতা শফিউজ্জামান সোলায়মান জানান, কয়েক দিনের মধ্যে পাইকারিতে মোটা চালের দাম কেজিতে দুই–তিন টাকা এবং চিকন চালের দাম এক–দুই টাকা করে কমেছে। পাইকারিতে প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল ৪৯ টাকা ও পাইজাম চাল ৫৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই দাম চার দিন আগেও দুই টাকা করে বেশি ছিল। আর পাইকারিতে দাম কমায় খুচরা পর্যায়েও অনেকটা একই হারে দাম কমেছে।

নওগাঁর মোকামে চালের দাম বাড়লে বা কমলে এর প্রভাব পড়ে সারা দেশের বাজারে। নওগাঁয় ৮০টি স্বয়ংক্রিয় (অটো) চালকল রয়েছে। আর হাসকিং মিল রয়েছে ৮০০টির বেশি। গত দুই সপ্তাহে নওগাঁর মোকামে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তাতে গ্রাহক পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত কমেছে। বেশি কমেছে মোটা চালের দাম।

গতকাল মঙ্গলবার নওগাঁর বৃহত্তম চালের মোকাম সদর উপজেলার কারখানাগুলোতে মোটা চাল হিসেবে পরিচিত স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি বস্তা ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫৫০ টাকায় আর মাঝারি উনপঞ্চাশ জাতের প্রতি বস্তা চাল ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি বস্তা স্বর্ণা চাল ২ হাজার ৬৫০ থেকে ২ হাজার ৭৫০ টাকা আর উনপঞ্চাশ জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকায়।

এ ছাড়া সরু চাল হিসেবে পরিচিত প্রতি বস্তা জিরাশাইল চাল ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকায় আর প্রতি বস্তা কাটারিভোগ চাল ৩ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকায় গতকাল বিক্রি হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি বস্তা জিরাশাইল চাল ৩ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকায় আর প্রতি বস্তা কাটারিভোগ ৩ হাজার ৪৫০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মিলমালিকেরা বলছেন, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম পাইকারিতে প্রতি বস্তায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আর সরু চালের দাম বস্তায় ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বিদেশ থেকে সরকারের চাল আমদানি ও ওএমএসের (খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি) মাধ্যমে সুলভ মূল্যে চাল বিক্রি করায় চালের দাম নিম্নমুখী।

পাইকারি বাজারে চালের দাম কমার প্রভাব পড়েছে নওগাঁর খুচরা বাজারেও। সরেজমিনে আলাপকালে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, খুচরায় মোটা চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে। আর সরু চালের দাম কমেছে কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা।

আমন মৌসুমে উৎপন্ন হওয়া মোটা চাল হিসেবে পরিচিত স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণা চালের দাম দুই সপ্তাহ আগে ছিল কেজি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। এখন তা কমে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় নেমেছে। উনপঞ্চাশ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে, যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ছিল ৬১ থেকে ৬২ টাকা।

গত বোরো মৌসুমে উৎপন্ন হওয়া জিরাশাইল চালের দাম দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৬৮ থেকে ৭২ টাকা। এখন তা কমে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় নেমেছে। কাটারিভোগ চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৩ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৭৪ থেকে ৭৫ টাকায়।

নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজারে চাল কিনতে এসেছিলেন গৃহবধূ ছানোয়ারা বেগম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দাম কমলেও এটা নিম্নবিত্তের জন্য অনেক বেশি। এক কেজি মোটা চাল ৫৫ টাকা। গত বছর এই চালের দাম সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা ছিল।’ তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেট করে চালের দাম সব সময় বাড়তি রাখা হয়। সরকার চাইলেই দাম কমাতে পারে।’

তবে দাম কমায় গরিব মানুষেরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে বলে মনে করেন এই বাজারের খাদ্যভান্ডার চাল আড়তের স্বত্বাধিকারী মোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, ‘খোলাবাজারের কার্ডধারীরা চাল পাচ্ছেন। ফলে বাজারে মোটা চালের গ্রাহক কিছুটা কমেছে। এ ছাড়া আমদানি করা চাল বাজারে আসায় মোকামে চালের দাম কমেছে। এ কারণে আমরাও খুচরা পর্যায়ে দুই থেকে তিন টাকা কমে চাল বিক্রি করতে পারছি।’

মোকামে ক্রেতা কমেছে বলে জানান নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘মোকামে চাল বিক্রি কমে যাওয়া মিলমালিকেরা ধান কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে ধানের দাম মণপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।’

এদিকে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে গত কয়েক দিনে চালের দাম কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা কমেছে। রোজার আগে চালের দাম না-ও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন মিলমালিকেরা।

কুষ্টিয়ার খাজানগরের চাল সারা দেশে পরিচিত। সেখানে ৬৪টি চালকলে মিনিকেট চাল উৎপাদিত হয়। প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে এখনকার চাল ঢাকাসহ দেশের অর্ধেকের বেশি জেলায় সরবরাহ করা হয়। তবে কয়েক দিন ধরে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা কোনো ফরমাশ দিচ্ছেন না বলে জানান মিলমালিকেরা।

একাধিক মিলমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০ দিন ধরে মোকামে মিনিকেট চাল মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৭৯ টাকায়। অবশ্য গত ৬ জানুয়ারি এই মোকামে মিলগেটে মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৭৪ টাকায়।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতি কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদীন প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, ১০ দিন ধরে কোনো বেচাকেনা নেই। আমদানি করা চালের কারণে হয়তো দেশি চাল বিক্রি কমেছে। কেউ কেউ কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা দাম কমিয়েছে। রোজার আগে চালের দাম না–ও বাড়তে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ল র দ ম কম দ ম কম ছ দ ম কম য় পর চ ত পর য য় আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাইব্যুনালে ২২ মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামি ১৪১, গ্রেপ্তার ৫৪

পুনর্গঠনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ২২টি মামলা (বিবিধ মামলা) হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামি করা হয়েছে ১৪১ জনকে। আসামিদের মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৮৭ জন পলাতক।

আজ বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় এসব তথ্য জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তপ্রক্রিয়ার অগ্রগতিবিষয়ক আপডেট’–বিষয়ক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠন হলে এখানে এখন পর্যন্ত অভিযোগ এসেছে ৩৩৯টি। চলমান তদন্ত কার্যক্রম ৩৯টি। তদন্তের প্রাথমিক সত্যতার আলোকে মামলা (বিবিধ মামলা) হয়েছে ২২টি। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত মোট অভিযুক্ত ব্যক্তি ১৪১ জন। তাঁদের মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক আছেন ৮৭ জন।

১৪১ আসামির মধ্যে ৭০ জন বেসামরিক, ৬২ জন পুলিশ (র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর) সদস্য এবং অবসরপ্রাপ্ত বা বরখাস্ত করা সামরিক কর্মকর্তা ৯ জন।

শেখ হাসিনাসহ চারটি মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে

চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের উপস্থাপন করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, আজ পর্যন্ত তদন্ত শেষ বা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে—এমন মামলা চারটি। এর মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলা, সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলা, রাজধানীর চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা এবং রাজধানীর রামপুরায় কার্নিশে ঝুলে থাকা ব্যক্তির ওপর গুলির ঘটনায় হওয়া মামলাটি রয়েছে।

প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, এসব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দাখিল করা হতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গেই আনুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে।

এক হাজার ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত এক হাজার ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিডিও ও ডিজিটাল সাক্ষ্য সংগ্রহ (এক হাজারের বেশি ভিডিও), পর্যালোচনা, যাচাই–বাছাই ও জিও লোকেশন যাচাইয়ের কাজ চলমান।

গুমবিষয়ক তদন্ত কার্যক্রমে ঢাকা শহরের তিনটি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় গুমের তিনটি কেন্দ্র (আয়নাঘর, হাসপাতাল, এলআইসি ইত্যাদি বিভিন্ন কোডনেমে পরিচিত) পরিদর্শন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ১৫টি জেলায় তদন্ত পরিচালনার উদ্দেশ্যে একাধিকবার পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্তকাজে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়-মাদ্রাসা পর্যায়ে এ পর্যন্ত চারটি গণশুনানি গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে আট শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ