দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা চালের বড় অংশ যায় নওগাঁ ও কুষ্টিয়ার মোকামগুলো থেকে। দুই জেলার মোকামেই এখন চালের দাম কমতির দিকে। গত দুই সপ্তাহে নওগাঁর মোকামে কেজিপ্রতি চালের দাম ২ থেকে ৪ টাকা কমেছে। আর কুষ্টিয়ায় কমেছে ৫০ পয়সার মতো। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।
মিলমালিক ও পাইকারেরা বলছেন, চালের আমদানি বাড়ানো এবং এসব চাল গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় দাম কমতির দিকে। এ ক্ষেত্রে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির প্রভাবও পড়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
মোকামে চালের দাম কমায় ঢাকার বাজারেও চালের দাম কমেছে। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পাইকারি বিক্রেতা শফিউজ্জামান সোলায়মান জানান, কয়েক দিনের মধ্যে পাইকারিতে মোটা চালের দাম কেজিতে দুই–তিন টাকা এবং চিকন চালের দাম এক–দুই টাকা করে কমেছে। পাইকারিতে প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল ৪৯ টাকা ও পাইজাম চাল ৫৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই দাম চার দিন আগেও দুই টাকা করে বেশি ছিল। আর পাইকারিতে দাম কমায় খুচরা পর্যায়েও অনেকটা একই হারে দাম কমেছে।
নওগাঁর মোকামে চালের দাম বাড়লে বা কমলে এর প্রভাব পড়ে সারা দেশের বাজারে। নওগাঁয় ৮০টি স্বয়ংক্রিয় (অটো) চালকল রয়েছে। আর হাসকিং মিল রয়েছে ৮০০টির বেশি। গত দুই সপ্তাহে নওগাঁর মোকামে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তাতে গ্রাহক পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত কমেছে। বেশি কমেছে মোটা চালের দাম।
গতকাল মঙ্গলবার নওগাঁর বৃহত্তম চালের মোকাম সদর উপজেলার কারখানাগুলোতে মোটা চাল হিসেবে পরিচিত স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি বস্তা ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫৫০ টাকায় আর মাঝারি উনপঞ্চাশ জাতের প্রতি বস্তা চাল ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি বস্তা স্বর্ণা চাল ২ হাজার ৬৫০ থেকে ২ হাজার ৭৫০ টাকা আর উনপঞ্চাশ জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকায়।
এ ছাড়া সরু চাল হিসেবে পরিচিত প্রতি বস্তা জিরাশাইল চাল ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকায় আর প্রতি বস্তা কাটারিভোগ চাল ৩ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকায় গতকাল বিক্রি হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি বস্তা জিরাশাইল চাল ৩ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকায় আর প্রতি বস্তা কাটারিভোগ ৩ হাজার ৪৫০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মিলমালিকেরা বলছেন, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম পাইকারিতে প্রতি বস্তায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আর সরু চালের দাম বস্তায় ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বিদেশ থেকে সরকারের চাল আমদানি ও ওএমএসের (খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি) মাধ্যমে সুলভ মূল্যে চাল বিক্রি করায় চালের দাম নিম্নমুখী।
পাইকারি বাজারে চালের দাম কমার প্রভাব পড়েছে নওগাঁর খুচরা বাজারেও। সরেজমিনে আলাপকালে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, খুচরায় মোটা চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে। আর সরু চালের দাম কমেছে কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা।
আমন মৌসুমে উৎপন্ন হওয়া মোটা চাল হিসেবে পরিচিত স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণা চালের দাম দুই সপ্তাহ আগে ছিল কেজি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। এখন তা কমে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় নেমেছে। উনপঞ্চাশ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে, যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ছিল ৬১ থেকে ৬২ টাকা।
গত বোরো মৌসুমে উৎপন্ন হওয়া জিরাশাইল চালের দাম দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৬৮ থেকে ৭২ টাকা। এখন তা কমে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় নেমেছে। কাটারিভোগ চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৩ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৭৪ থেকে ৭৫ টাকায়।
নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজারে চাল কিনতে এসেছিলেন গৃহবধূ ছানোয়ারা বেগম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দাম কমলেও এটা নিম্নবিত্তের জন্য অনেক বেশি। এক কেজি মোটা চাল ৫৫ টাকা। গত বছর এই চালের দাম সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা ছিল।’ তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেট করে চালের দাম সব সময় বাড়তি রাখা হয়। সরকার চাইলেই দাম কমাতে পারে।’
তবে দাম কমায় গরিব মানুষেরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে বলে মনে করেন এই বাজারের খাদ্যভান্ডার চাল আড়তের স্বত্বাধিকারী মোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, ‘খোলাবাজারের কার্ডধারীরা চাল পাচ্ছেন। ফলে বাজারে মোটা চালের গ্রাহক কিছুটা কমেছে। এ ছাড়া আমদানি করা চাল বাজারে আসায় মোকামে চালের দাম কমেছে। এ কারণে আমরাও খুচরা পর্যায়ে দুই থেকে তিন টাকা কমে চাল বিক্রি করতে পারছি।’
মোকামে ক্রেতা কমেছে বলে জানান নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘মোকামে চাল বিক্রি কমে যাওয়া মিলমালিকেরা ধান কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে ধানের দাম মণপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।’
এদিকে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে গত কয়েক দিনে চালের দাম কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা কমেছে। রোজার আগে চালের দাম না-ও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন মিলমালিকেরা।
কুষ্টিয়ার খাজানগরের চাল সারা দেশে পরিচিত। সেখানে ৬৪টি চালকলে মিনিকেট চাল উৎপাদিত হয়। প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে এখনকার চাল ঢাকাসহ দেশের অর্ধেকের বেশি জেলায় সরবরাহ করা হয়। তবে কয়েক দিন ধরে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা কোনো ফরমাশ দিচ্ছেন না বলে জানান মিলমালিকেরা।
একাধিক মিলমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০ দিন ধরে মোকামে মিনিকেট চাল মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৭৯ টাকায়। অবশ্য গত ৬ জানুয়ারি এই মোকামে মিলগেটে মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৭৪ টাকায়।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতি কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদীন প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, ১০ দিন ধরে কোনো বেচাকেনা নেই। আমদানি করা চালের কারণে হয়তো দেশি চাল বিক্রি কমেছে। কেউ কেউ কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা দাম কমিয়েছে। রোজার আগে চালের দাম না–ও বাড়তে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ল র দ ম কম দ ম কম ছ দ ম কম য় পর চ ত পর য য় আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ঘরসংসার গুছিয়ে অভিনয়ের জন্য সময় বের করেছি: শার্লিন
শার্লিন ফারজানা। অভিনেত্রী ও মডেল। বিয়ে, ঘর-সংসার গোছানো ও মা হওয়ার কারণে অনেক দিন অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন। বিরতি ভেঙে আবার অভিনয় জগতে পা রেখেছেন। এই সময়ের ব্যস্ততা, অভিনয় ভাবনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
বিরতি ভেঙে অভিনয়ে ফিরেছেন। সময়ের পালাবদলে কেমন লাগছে কাজের পরিবেশ?
এখন তো ভালো কিছু করে দেখানোর সুযোগ অনেক গুণ বেড়েছে। অনলাইন বিনোদনের নতুন এক দুয়ার খুলে দিয়েছে। ওটিটির হাওয়ার ঝাপটা টেলিভিশনেও লেগেছে। সেখানেও বড় বাজেটে কাজ হচ্ছে। এসব তো আছেই, সেই সঙ্গে বেড়েছে নতুন মুখের আনাগোনা। নতুনরাও ভালো করছে। এসব দেখে কাজের আনন্দ বেড়ে গেছে। অস্বস্তি শুধু ভিউ নিয়ে কাড়াকাড়ির বিষয়টা। অনেকেই দেখছি শুধু ভিউয়ের পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ তারকা ও নির্মাতার কাজের মূল্যায়ন করছেন ভিউ দেখে, যা একদমই সমর্থন করতে পারছি না।
যখন অনেকে নতুন কিছুর প্রত্যাশায় ছিলেন, তখনই অভিনয় থেকে সরে গিয়েছিলেন, কেন?
জীবনে এমন কিছু সময় আসে, যখন খুব হিসাবনিকাশ করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বিয়ে, সংসার, মাতৃত্বের স্বাদ পেতে অভিনয়ে বিরতি নেওয়া জরুরি ছিল। জানি না ওই সময়ে আমার কাছে দর্শকের কতটুকু প্রত্যাশা ছিল। যদি দর্শক মনে প্রত্যাশা তৈরি হয়েও থাকে, তবু সেটা ওই মুহূর্তে পূরণ করা সম্ভব ছিল না। তবে দর্শকের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টা যে একেবারে বুঝিনি, তা নয়। বুঝতে পেরেছি, বলেই ঘরসংসার– সব কিছু গুছিয়ে অভিনয়ের জন্য সময় বের করেছি।
ছোট ও বড়পর্দার পর ওটিটিতে কাজ শুরু করেছেন। এই মাধ্যম কতটা সম্ভাবনাময় বলে মনে হচ্ছে?
বড় বাজেট ও যথেষ্ট সময় নিয়ে ওটিটির একেকটি সিরিজ, সিনেমা তৈরি করা হচ্ছে। প্রচুর নিরীক্ষাও চলছে। এতে শিল্পী ও নির্মাতাদের কাজে যেমন চ্যালেঞ্জ আছে, তেমনি আছে ভিন্ন ধাঁচের কিছু করে দেখানোর সুযোগ। এ কারণেই ওটিটির প্রতিটি আয়োজনে গল্প ও চরিত্র উপস্থাপন থেকে শুরু করে নির্মাণে ভিন্নতার ছাপ দেখা যাচ্ছে। এর সুবাদে ভালো ভালো কাজ দেখার সুযোগ পাচ্ছেন দর্শক।
সিনেমায় ফেরার ইচ্ছা আছে?
‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমার পর আর কোনো ভালো কাজের প্রস্তাব পাইনি। পাবই বা কীভাবে, সিনেমা তো বলতে গেলে হচ্ছেই না। বছরের হাতেগোনো কয়েকটি সিনেমা হচ্ছে। এর মধ্যে দর্শক মনে ছাপ ফেলার মতো সিনেমা হচ্ছে খুব কম। তারপরও সিনেমায় অভিনয় করতে প্রস্তুত, যদি ভালো কোনো পরিচালক কাছ থেকে ডাক পাই। কারণ আমি এখনও পরিচালকনির্ভর অভিনেত্রী।
সমসাময়িক অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তুলনায় আপনাকে কাজ কম করতে দেখা যায়– এর কারণ কী?
অন্যদের তুলনায় কাজের সংখ্যা কম না বেশি– এই বিষয়টা আমাকে ভাবায় না। সবসময় ভালো কাজ করতে চাই। চাই ভালো ভালো গল্প, চরিত্র আর নির্মাতা; যাদের একেক জনের গল্প উপস্থাপন ভঙ্গি একেক রকম। কিন্তু চাইলেই তো পছন্দসই কাজ যখন-তখন আসে না। তাই যতক্ষণ তা না পাচ্ছি, নিজের মতো করেই ব্যস্ত থাকতে চাই।