বর্তমান বিশ্বের সব থেকে আলোচিত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই মানুষেরই তৈরি। অথচ ক্রমবিকাশের চরম মহূর্তে সৃষ্টি নিজেই যেন তার স্রষ্টাকে প্রতিস্থাপন করতে চলেছে। মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তাকে লেখ্য রূপ দেওয়ার শৈলী বিগত শতাব্দীর শেষ লগ্নেও ব্যক্তির বিশেষত্বকে অনন্য করে তুলত। কিন্তু বর্তমানে চোখের পলকে অবলীলায় লিখতে পারা এআই সেই বিশেষত্বের নেপথ্যে যেন কতক শর্ত জুড়ে দিয়েছে। লিখিত সৃষ্টিকর্মে এআইয়ের ব্যবহার বিচিত্রভাবে প্রভাবিত করছে সাংবাদিক ও লেখকসমাজকে। যার ধারাবাহিকতায় প্রশ্ন উঠেছে তথ্যবহুল প্রতিবেদন বা অনবদ্য রচনার জন্য নতুন মাপকাঠি নিরূপণের। লেখকদের সৃজনশীল কাজে এআইয়ের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের তুলনামূলক বিশ্লেষণ জেনে নেওয়া যাক—

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি লেখকদের সৃজনশীলতার পরিপন্থী

একটি লেখার পটভূমি থেকে শুরু করে প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। কিন্তু এআইয়ের যুগে এখন সেই পরিসরটি অনেক ছোট হয়ে এসেছে। বিশ্বের নামকরা এআই টুলগুলোর মধ্যে রয়েছে চ্যাটজিপিটি, গ্রামার্লি, জেমিনি, জ্যাস্পার ও ক্লড। সম্প্রতি সর্বাধিক প্রসিদ্ধ চ্যাটজিপিটির সঙ্গে প্রথম সারিতে থেকে অন্য সব এআইকে টেক্কা দিচ্ছে চীনের ডিপসিক। এগুলোর মাধ্যমে সময়সাপেক্ষ কাজগুলো খুব কম সময়েই করে ফেলা যায়। ফলে পেশাদার লেখকেরা মনোনিবেশ করতে পারেন লেখার আবহ ও মৌলিকতার দিকে। চলুন, লেখালেখিতে এআই টুলগুলোর প্রধান সুবিধাগুলো জেনে নিই।

*সৃজনশীলতায় এআইয়ের ইতিবাচক দিক

কন্টেন্টের বিচিত্রতা—

এআইয়ের পারদর্শিতার ব্যাপ্তি তথ্যবহুল প্রতিবেদন থেকে পৌঁছে গেছে সৃজনশীল গল্প পর্যন্ত। ধরন–আকারনির্বিশেষে মার্কেটিংয়ের জন্য যেকোনো কপিরাইটিংয়ের জন্য এখন আর দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করতে হয় না। আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, লেখাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উদ্দীষ্ট পাঠকদের জন্য তৈরি হয়, যা পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দৈনিক তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা এই টুলগুলোর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেন। শুধু তা–ই নয়, ওয়েব অ্যাপগুলো লেখার ভাষাশৈলীতেও ভিন্নতা আনতে সক্ষম। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক রিপোর্ট, কথোপকথন ধাঁচের ব্লগ পোস্ট, নাটকের সংলাপনির্ভর স্ক্রিপ্ট এবং ই-মেইল রাইটিং; প্রতিটির ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকে।

আরও পড়ুনব্রুনেই সরকার দেবে ডিপ্লোমা-আন্ডারগ্র্যাজুয়েট-পোস্টগ্র্যাজুয়েটে বৃত্তি, আবেদন করুন০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাইটার্স ব্লক থেকে পরিত্রাণ

লেখকদের জন্য এআইয়ের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হচ্ছে রাইটার্স ব্লক থেকে মুক্তি। প্রত্যেক সৃষ্টিশীল লেখকের এমন কিছু সময় আসে, যখন তাঁর চিন্তা লেখার প্রয়োজনীয় রসদ জোগাতে পারে না। এতে যেকোনো লেখা শুরু করতেই তাঁর মধ্যে একরকম স্থবিরতা কাজ করে। এই রাইটার্স ব্লকের জড়তা কাটতে পেরিয়ে যায় অনেকটা সময়। বর্তমান পটভূমিতে এই বন্দিদশা থেকে নিমেষেই উদ্ধার করে নিয়ে যেতে পারে এআই সফটওয়্যারগুলো। অবশ্য ইন্টারনেটের আগমনের পর থেকেই লেখকেরা এই মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা মোকাবিলার হাতিয়ার পেয়ে গিয়েছিলেন। আর এখন সেই হাতিয়ার আরও মোক্ষম হয়ে উঠেছে। এআই প্ল্যাটফর্মগুলো যেকোনো বিষয়ের ওপর নতুন নতুন ধারণা দেখাতে পারে। এ ছাড়া এখানে পুরোনো কোনো রচনার ভেতর থেকে অভিনব দৃষ্টিকোণও খুঁজে পাওয়া যায়।

চতুর্মাত্রিক গবেষণা

ইন্টারনেটের যুগ শুরু হওয়ার পর থেকে সার্চ ইঞ্জিনগুলো গবেষণাপ্রক্রিয়ায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। কিন্তু এগুলো সার্চ করা নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর ইন্টারনেটজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা কন্টেন্টগুলো সামনে হাজির করেই ক্ষান্ত হতো। ব্যবহারকারী সেগুলোর ওপর গবেষণা করে তাঁর কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি খুঁজে নিতেন। কিন্তু এখন এআই ব্যবহারকারীর হয়ে এই উত্তর সরাসরি বের করে দেয়। বিশেষ করে গুগলের জেমিনি এক ক্লিকেই দীর্ঘ কন্টেন্টের সারবস্তু বের করে দেয়। সামগ্রিকভাবে এই বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণ গবেষণার সময় কমিয়ে এনেছে। ফলে লেখক ও সাংবাদিকেরা আরও সূক্ষ্ম গবেষণার দিকে যেতে পারেন।

আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস স্কলারশিপে আবেদন শুরু, আইএলটিএসে ৬.

৫ অথবা টোয়েফলে ৮৪ হলে আবেদন ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ব্যাকরণগত দিক থেকে নির্ভুল লেখনীর নিশ্চয়তা

প্রকাশনা–জগতের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় প্রুফরিডিং বা লেখার খসড়া সম্পাদনার ঝামেলাকে অনেকটা কমিয়ে এনেছে এআই। তথ্য ভুল না শুদ্ধ এবং লেখার ধরন যেমনই হোক না কেন; প্রতিটি লেখাই ব্যাকরণগত নির্ভুলতা নিয়েই তৈরি হয়। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ধরন অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া হলে ভাষাশৈলীর সমস্যাও দূর হয়। বাকি থাকে তথ্যের যথার্থতা, যা সম্পূর্ণভাবেই গবেষণার ওপর নির্ভরশীল।

লেখার নির্দিষ্ট ধরন বা নিজস্বতা সংরক্ষণ

চ্যাটজিপিটিসহ প্রথম সারির সব কটি এআইয়েই রয়েছে লেখকদের নিজস্ব শৈলী সংরক্ষণ করে রাখার সুযোগ। এর মধ্যে রয়েছে একজন লেখকের বাক্যবিন্যাস, শব্দচয়ন এবং পাঠকদের সম্বোধনের ধারা, যা লেখকের স্বকীয়তার পরিচায়ক। সেটিং থেকে একবার নির্ধারণ করে রাখা হলে প্রতি কন্টেন্ট জেনারেশনের ক্ষেত্রেই সেই স্বকীয়তা বজায় থাকে।

আরও পড়ুনচুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় উপস্থিতি ৮৩ শতাংশ, ফল প্রকাশের তারিখ নির্ধারণ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

*লেখকদের সৃষ্টিশীল কাজে এআইয়ের নেতিবাচক ভূমিকা

গতানুগতিক রচনার প্রসার—

বিষয়বস্তুর গভীরে গিয়ে প্রতিটি সূক্ষ্ম স্থানের জন্য সঠিক প্রম্পট বা নির্দেশনা না দেওয়া হলে এআই মোটাদাগে বিষয়টি বিশ্লেষণ করে। তাতে বাক্যবিন্যাস হয় গতানুগতিক এবং সার্বজনীন শব্দগুচ্ছে পরিপূর্ণ হওয়ায়, তা ইন্টারনেটে থাকা অন্যান্য লেখার সঙ্গে মিলে যায়। এ ধরনের রচনার সবচেয়ে মানহীন দিক হচ্ছে একই শব্দ বা শব্দগুচ্ছের পুনরাবৃত্তি। এআইকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নির্দেশনার পদ্ধতি নিয়ে যথার্থ ধারণা ব্যতীত মানসম্পন্ন লেখা পাওয়া অসম্ভব। দুঃখজনক হলেও সত্য যে সাধারণ নির্দেশনা দেওয়ার চর্চাটি বিপুল পরিসরে ঘটছে। এতে গোটা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ছে গতানুগতিক রচনা। এটি সাহিত্যসহ সামগ্রিক প্রেস মিডিয়ার জন্য ক্ষতিকর।

স্বকীয়তার অবক্ষয়

এআই অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদ্যমান কাজ ও তথ্যের ভিত্তিতে লেখা তৈরি করে। শিরোনাম ও পর্যালোচনায় কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও সেগুলো দিন শেষে সমজাতীয় লেখারই পৃষ্ঠপোষক। কিংবদন্তির কোনো গল্পে অ্যাডাপ্টেশনও একটি সৃজনশীলতা যখন সেখানে লেখকের স্বকীয়তা থাকে। কিন্তু বর্তমানে কম সময়ে এআইয়ের লেখাগুলো লেখকদের সেই স্বকীয়তা আরোপের প্রতি নিরুৎসাহিত করছে। এআই প্রস্তাবিত আবহ এবং কাঠামোর ওপরই তারা নিজেদের কাজগুলো প্রস্তুত করছে। এটি দীর্ঘ মেয়াদে কিংবদন্তিতুল্য লেখক তৈরির সম্ভাবনা ধূলিসাৎ করে দিতে পারে।

পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণার প্রতি নিরুৎসাহ

সময় যত গড়াচ্ছে, এই প্রযুক্তিতেও ক্রমাগত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ফিচার। এটি উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠী তৈরিতে অবশ্যই উপযোগী। কিন্তু ভয়ের বিষয় হচ্ছে, প্ল্যাটফর্মগুলো বিশ্বের সর্বশেষ হালনাগাদকৃত তথ্যের সঙ্গে একীভূত হতে যথেষ্ট সময় নিচ্ছে। তাই যাঁরা অন্ধের মতো টুলগুলো ব্যবহার করছেন, তাঁদের কাজগুলো নিয়ে থেকে যাচ্ছে সন্দেহের অবকাশ। রিরাইটিং, প্যারাফ্রেজিংসহ দ্রুত লেখার ফিচারগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা এবং ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের প্রবণতা কমিয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে অনলাইনভিত্তিক সফটওয়্যারগুলো পুরোনো তথ্যগুলোর সমন্বয়ে সার্চকৃত প্রশ্নের এককথায় উত্তর হাজির করছে। এভাবে ভুল তথ্য প্রচারের মধ্য দিয়ে পাঠকদের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।

এআই ব্যবহারের সঠিক উপায়

ক্লড, জ্যাস্পার, গ্রামার্লি, জেমিনি ও জনপ্রিয় চ্যাটজিপিটি; প্রতিটি চ্যাটবটই লেখক এবং সাংবাদিকদের জন্য হতে পারে শক্তিশালী হাতিয়ার। চলুন, সৃজনশীলতা বজায় রেখে এই টুলগুলো ব্যবহার করার কয়েকটি সঠিক পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক।

ছবি: রয়টার্স

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল খকদ র স য় র জন য ব যবহ র স জনশ ল র ওপর রচন র

এছাড়াও পড়ুন:

লেখকদের সৃজনশীলতায় এআই প্রভাব, ব্যবহারে সুবিধা-অসুবিধা

বর্তমান বিশ্বের সব থেকে আলোচিত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই মানুষেরই তৈরি। অথচ ক্রমবিকাশের চরম মহূর্তে সৃষ্টি নিজেই যেন তার স্রষ্টাকে প্রতিস্থাপন করতে চলেছে। মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তাকে লেখ্য রূপ দেওয়ার শৈলী বিগত শতাব্দীর শেষ লগ্নেও ব্যক্তির বিশেষত্বকে অনন্য করে তুলত। কিন্তু বর্তমানে চোখের পলকে অবলীলায় লিখতে পারা এআই সেই বিশেষত্বের নেপথ্যে যেন কতক শর্ত জুড়ে দিয়েছে। লিখিত সৃষ্টিকর্মে এআইয়ের ব্যবহার বিচিত্রভাবে প্রভাবিত করছে সাংবাদিক ও লেখকসমাজকে। যার ধারাবাহিকতায় প্রশ্ন উঠেছে তথ্যবহুল প্রতিবেদন বা অনবদ্য রচনার জন্য নতুন মাপকাঠি নিরূপণের। লেখকদের সৃজনশীল কাজে এআইয়ের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের তুলনামূলক বিশ্লেষণ জেনে নেওয়া যাক—

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি লেখকদের সৃজনশীলতার পরিপন্থী

একটি লেখার পটভূমি থেকে শুরু করে প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। কিন্তু এআইয়ের যুগে এখন সেই পরিসরটি অনেক ছোট হয়ে এসেছে। বিশ্বের নামকরা এআই টুলগুলোর মধ্যে রয়েছে চ্যাটজিপিটি, গ্রামার্লি, জেমিনি, জ্যাস্পার ও ক্লড। সম্প্রতি সর্বাধিক প্রসিদ্ধ চ্যাটজিপিটির সঙ্গে প্রথম সারিতে থেকে অন্য সব এআইকে টেক্কা দিচ্ছে চীনের ডিপসিক। এগুলোর মাধ্যমে সময়সাপেক্ষ কাজগুলো খুব কম সময়েই করে ফেলা যায়। ফলে পেশাদার লেখকেরা মনোনিবেশ করতে পারেন লেখার আবহ ও মৌলিকতার দিকে। চলুন, লেখালেখিতে এআই টুলগুলোর প্রধান সুবিধাগুলো জেনে নিই।

*সৃজনশীলতায় এআইয়ের ইতিবাচক দিক

কন্টেন্টের বিচিত্রতা—

এআইয়ের পারদর্শিতার ব্যাপ্তি তথ্যবহুল প্রতিবেদন থেকে পৌঁছে গেছে সৃজনশীল গল্প পর্যন্ত। ধরন–আকারনির্বিশেষে মার্কেটিংয়ের জন্য যেকোনো কপিরাইটিংয়ের জন্য এখন আর দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করতে হয় না। আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, লেখাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উদ্দীষ্ট পাঠকদের জন্য তৈরি হয়, যা পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দৈনিক তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা এই টুলগুলোর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেন। শুধু তা–ই নয়, ওয়েব অ্যাপগুলো লেখার ভাষাশৈলীতেও ভিন্নতা আনতে সক্ষম। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক রিপোর্ট, কথোপকথন ধাঁচের ব্লগ পোস্ট, নাটকের সংলাপনির্ভর স্ক্রিপ্ট এবং ই-মেইল রাইটিং; প্রতিটির ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকে।

আরও পড়ুনব্রুনেই সরকার দেবে ডিপ্লোমা-আন্ডারগ্র্যাজুয়েট-পোস্টগ্র্যাজুয়েটে বৃত্তি, আবেদন করুন০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাইটার্স ব্লক থেকে পরিত্রাণ

লেখকদের জন্য এআইয়ের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হচ্ছে রাইটার্স ব্লক থেকে মুক্তি। প্রত্যেক সৃষ্টিশীল লেখকের এমন কিছু সময় আসে, যখন তাঁর চিন্তা লেখার প্রয়োজনীয় রসদ জোগাতে পারে না। এতে যেকোনো লেখা শুরু করতেই তাঁর মধ্যে একরকম স্থবিরতা কাজ করে। এই রাইটার্স ব্লকের জড়তা কাটতে পেরিয়ে যায় অনেকটা সময়। বর্তমান পটভূমিতে এই বন্দিদশা থেকে নিমেষেই উদ্ধার করে নিয়ে যেতে পারে এআই সফটওয়্যারগুলো। অবশ্য ইন্টারনেটের আগমনের পর থেকেই লেখকেরা এই মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা মোকাবিলার হাতিয়ার পেয়ে গিয়েছিলেন। আর এখন সেই হাতিয়ার আরও মোক্ষম হয়ে উঠেছে। এআই প্ল্যাটফর্মগুলো যেকোনো বিষয়ের ওপর নতুন নতুন ধারণা দেখাতে পারে। এ ছাড়া এখানে পুরোনো কোনো রচনার ভেতর থেকে অভিনব দৃষ্টিকোণও খুঁজে পাওয়া যায়।

চতুর্মাত্রিক গবেষণা

ইন্টারনেটের যুগ শুরু হওয়ার পর থেকে সার্চ ইঞ্জিনগুলো গবেষণাপ্রক্রিয়ায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। কিন্তু এগুলো সার্চ করা নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর ইন্টারনেটজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা কন্টেন্টগুলো সামনে হাজির করেই ক্ষান্ত হতো। ব্যবহারকারী সেগুলোর ওপর গবেষণা করে তাঁর কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি খুঁজে নিতেন। কিন্তু এখন এআই ব্যবহারকারীর হয়ে এই উত্তর সরাসরি বের করে দেয়। বিশেষ করে গুগলের জেমিনি এক ক্লিকেই দীর্ঘ কন্টেন্টের সারবস্তু বের করে দেয়। সামগ্রিকভাবে এই বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণ গবেষণার সময় কমিয়ে এনেছে। ফলে লেখক ও সাংবাদিকেরা আরও সূক্ষ্ম গবেষণার দিকে যেতে পারেন।

আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস স্কলারশিপে আবেদন শুরু, আইএলটিএসে ৬.৫ অথবা টোয়েফলে ৮৪ হলে আবেদন ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ব্যাকরণগত দিক থেকে নির্ভুল লেখনীর নিশ্চয়তা

প্রকাশনা–জগতের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় প্রুফরিডিং বা লেখার খসড়া সম্পাদনার ঝামেলাকে অনেকটা কমিয়ে এনেছে এআই। তথ্য ভুল না শুদ্ধ এবং লেখার ধরন যেমনই হোক না কেন; প্রতিটি লেখাই ব্যাকরণগত নির্ভুলতা নিয়েই তৈরি হয়। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ধরন অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া হলে ভাষাশৈলীর সমস্যাও দূর হয়। বাকি থাকে তথ্যের যথার্থতা, যা সম্পূর্ণভাবেই গবেষণার ওপর নির্ভরশীল।

লেখার নির্দিষ্ট ধরন বা নিজস্বতা সংরক্ষণ

চ্যাটজিপিটিসহ প্রথম সারির সব কটি এআইয়েই রয়েছে লেখকদের নিজস্ব শৈলী সংরক্ষণ করে রাখার সুযোগ। এর মধ্যে রয়েছে একজন লেখকের বাক্যবিন্যাস, শব্দচয়ন এবং পাঠকদের সম্বোধনের ধারা, যা লেখকের স্বকীয়তার পরিচায়ক। সেটিং থেকে একবার নির্ধারণ করে রাখা হলে প্রতি কন্টেন্ট জেনারেশনের ক্ষেত্রেই সেই স্বকীয়তা বজায় থাকে।

আরও পড়ুনচুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় উপস্থিতি ৮৩ শতাংশ, ফল প্রকাশের তারিখ নির্ধারণ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

*লেখকদের সৃষ্টিশীল কাজে এআইয়ের নেতিবাচক ভূমিকা

গতানুগতিক রচনার প্রসার—

বিষয়বস্তুর গভীরে গিয়ে প্রতিটি সূক্ষ্ম স্থানের জন্য সঠিক প্রম্পট বা নির্দেশনা না দেওয়া হলে এআই মোটাদাগে বিষয়টি বিশ্লেষণ করে। তাতে বাক্যবিন্যাস হয় গতানুগতিক এবং সার্বজনীন শব্দগুচ্ছে পরিপূর্ণ হওয়ায়, তা ইন্টারনেটে থাকা অন্যান্য লেখার সঙ্গে মিলে যায়। এ ধরনের রচনার সবচেয়ে মানহীন দিক হচ্ছে একই শব্দ বা শব্দগুচ্ছের পুনরাবৃত্তি। এআইকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নির্দেশনার পদ্ধতি নিয়ে যথার্থ ধারণা ব্যতীত মানসম্পন্ন লেখা পাওয়া অসম্ভব। দুঃখজনক হলেও সত্য যে সাধারণ নির্দেশনা দেওয়ার চর্চাটি বিপুল পরিসরে ঘটছে। এতে গোটা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ছে গতানুগতিক রচনা। এটি সাহিত্যসহ সামগ্রিক প্রেস মিডিয়ার জন্য ক্ষতিকর।

স্বকীয়তার অবক্ষয়

এআই অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদ্যমান কাজ ও তথ্যের ভিত্তিতে লেখা তৈরি করে। শিরোনাম ও পর্যালোচনায় কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও সেগুলো দিন শেষে সমজাতীয় লেখারই পৃষ্ঠপোষক। কিংবদন্তির কোনো গল্পে অ্যাডাপ্টেশনও একটি সৃজনশীলতা যখন সেখানে লেখকের স্বকীয়তা থাকে। কিন্তু বর্তমানে কম সময়ে এআইয়ের লেখাগুলো লেখকদের সেই স্বকীয়তা আরোপের প্রতি নিরুৎসাহিত করছে। এআই প্রস্তাবিত আবহ এবং কাঠামোর ওপরই তারা নিজেদের কাজগুলো প্রস্তুত করছে। এটি দীর্ঘ মেয়াদে কিংবদন্তিতুল্য লেখক তৈরির সম্ভাবনা ধূলিসাৎ করে দিতে পারে।

পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণার প্রতি নিরুৎসাহ

সময় যত গড়াচ্ছে, এই প্রযুক্তিতেও ক্রমাগত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ফিচার। এটি উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠী তৈরিতে অবশ্যই উপযোগী। কিন্তু ভয়ের বিষয় হচ্ছে, প্ল্যাটফর্মগুলো বিশ্বের সর্বশেষ হালনাগাদকৃত তথ্যের সঙ্গে একীভূত হতে যথেষ্ট সময় নিচ্ছে। তাই যাঁরা অন্ধের মতো টুলগুলো ব্যবহার করছেন, তাঁদের কাজগুলো নিয়ে থেকে যাচ্ছে সন্দেহের অবকাশ। রিরাইটিং, প্যারাফ্রেজিংসহ দ্রুত লেখার ফিচারগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা এবং ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের প্রবণতা কমিয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে অনলাইনভিত্তিক সফটওয়্যারগুলো পুরোনো তথ্যগুলোর সমন্বয়ে সার্চকৃত প্রশ্নের এককথায় উত্তর হাজির করছে। এভাবে ভুল তথ্য প্রচারের মধ্য দিয়ে পাঠকদের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।

এআই ব্যবহারের সঠিক উপায়

ক্লড, জ্যাস্পার, গ্রামার্লি, জেমিনি ও জনপ্রিয় চ্যাটজিপিটি; প্রতিটি চ্যাটবটই লেখক এবং সাংবাদিকদের জন্য হতে পারে শক্তিশালী হাতিয়ার। চলুন, সৃজনশীলতা বজায় রেখে এই টুলগুলো ব্যবহার করার কয়েকটি সঠিক পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক।

ছবি: রয়টার্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ