যেভাবে আরও কর্তৃত্ববাদের পথে হাঁটছে পাকিস্তান
Published: 5th, February 2025 GMT
মাত্র তিন দফা বৈঠকের পরই সরকার আর বিরোধী দলের সংলাপ ভেঙে গেল। এতে কেউ বিস্মিত হয়েছে বলে মনে হয় না। দুই পক্ষের মধ্যে আস্থার অভাব! কোনো সমাধানের জন্য তারা প্রস্তুত ছিল কি না, তা–ও একটা বড় প্রশ্ন। সংলাপ শুরু হলো ডিসেম্বরে। পিটিআইয়ের মূল দাবি ছিল দুজন কমিশনার নিয়োগ আর দলের বন্দী কর্মীদের মুক্তি। শাসক জোট রাজি হলো না। সংলাপ ভেঙে গেল।
সরকারের সত্যিই যদি বিরোধীদের প্রতি কোনো অভিযোগ থাকে, তা প্রমাণের তো উপায় আছে। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ উপস্থাপনের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো নিরপেক্ষ ও বৈধ পদ্ধতিতে সত্য উদ্ঘাটনের জন্য বিচারিক কমিশন গঠন করা। তবে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) যে সংলাপ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিল, তার তাৎক্ষণিক কারণ ছিল তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও আলোচনাসংক্রান্ত কমিটির মুখপাত্র, সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের নেতা হামিদ রাজার বাড়িতে চালানো অভিযান।
তবু পিটিআইয়ের অবস্থান ছিল সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। যদি সরকার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য দুটি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিত। এই শর্তে দলটি আলোচনার দরজা খোলা রেখেছিল। তবে দলীয় নেতা ইমরান খান সরকারের এই অনীহাকে ‘প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন।
সম্প্রতি মূলধারার সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার সাইবার অপরাধ আইনে পরিবর্তন প্রস্তাব করছে। এখন অনলাইনে বক্তৃতা দিলেও তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যাবে। স্বভাবসুলভভাবে, সরকার এই সংশোধনীগুলো সংসদে কোনো আলোচনা ছাড়াই ঢেলে দিয়েছে। তখন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা চিৎকার করছিলেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সংশোধিত আইনে, অনলাইনে কেউ মিথ্যা সংবাদ ছড়ালে তিন বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে। এমনিতে পাকিস্তানে অনলাইনে পদে পদে বাধা।
সরকার ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া পরিচালনায় আগের বেসামরিক সরকারগুলোর চেয়েও কঠোর ভূমিকা পালন করেছে। কোন বিষয়গুলো সম্প্রচার করা যাবে না এবং কারা অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হতে পারবেন, তা নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
বিরোধীদলীয় নেতাদের সংবাদ প্রচার এবং উপস্থাপন নিয়েও ‘পরামর্শ’ প্রদান করা হচ্ছে। এই সব সংশোধনী নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ হচ্ছে। করছে বিরোধী দল, গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো। পিটিআইসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল সংসদে এই সংশোধনীর নিন্দা জানিয়েছে। আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি একে ‘দমনমূলক আইন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
নতুন আইন পাস হওয়ার পর সাংবাদিকেরা জাতীয় পরিষদ ও সিনেট থেকে ওয়াকআউট করেন। সাংবাদিক সংগঠনগুলো দেশব্যাপী রাস্তায় নেমে একে কালো আইন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত হিসেবে অভিহিত করে বিক্ষোভ করেছে। পাকিস্তান মানবাধিকার কমিশন বলেছে, এই আইন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা দমনে রাজনৈতিক কর্মী, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে। সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়গুলোতে এটিকে ‘নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করছে না।
সরকারের বিতর্কিত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে এই সাইবার অপরাধ আইন সংশোধনী আর তার আগে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে দুর্বল করা ২৬তম সাংবিধানিক সংশোধনীর অনুমোদন পাকিস্তানকে আরও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের দিকে ঠেলে দেওয়ারই ইঙ্গিত দেয়। এসব পদক্ষেপ বিরোধী দলকে আরও দূরে ঠেলে আলোচনার সম্ভাবনা কঠিন করে দিয়েছে।
সংঘাতপূর্ণ রাজনীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হবে। সরকার বাজেট ঘাটতি কমানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে সীমিতভাবে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে। কিন্তু তা এসেছে আইএমএফের ঋণ প্যাকেজ দিয়ে।
এই স্থিতিশীলতা অত্যন্ত নাজুক। একে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ। তার চেয়েও বড় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হলো স্থিতিশীলতা থেকে বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের পথে এগিয়ে যাওয়া। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ১ শতাংশের কম। বিনিয়োগ ইতিমধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে নিচে নেমে গেছে। তার ওপরে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থী সহিংসতা বেড়েছে।
এ বিষয়গুলোর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ। সেই ভিত্তিতে সরকার ও বিরোধী দল, বিশেষত ক্ষমতাসীন জোটকে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে হবে। নমনীয়তা দেখাতে হবে। দেশের স্বার্থে একটি কার্যকর সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য উভয় পক্ষেরই দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন।
● মালিহা লোধি সাবেক রাষ্ট্রদূত
ডন থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ জাভেদ হুসেন
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নাক কান গলার যত্নে যেসব অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি
আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নাক-কান-গলা। শরীরের এসব অঙ্গ বেশ নরম। অনেকেই আমরা এসব অঙ্গের প্রতি যত্ন নিতে উদাসীন। তবে শরীরের এসব অঙ্গের প্রতি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।নাক, কান ও গলার যত্ন নেওয়ার সঠিক উপায় জানিয়েছেন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. মশিউর রহমান।
নাক: নিঃশ্বাস গ্রহণের সময় বাতাস আমাদের নাকের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে। নাক দিয়ে আমরা ঘ্রাণ নিয়ে থাকি এবং নাকের অনেক কাজ রয়েছে। নাক ফুসফুসকে রক্ষা করে। কারণ নাক দিয়ে যদি জীবাণু বা দূষিত বাতাস ঢুকে যায় সেটা কিন্তু ফুসফুসে ইফেক্ট ফেলে। তাই আপনার যদি নাক ভালো না থাকে, নাক বন্ধ থাকে, যদি নিঃশ্বাস নিতে না পারেন তাহলে ফুসফুস আক্রান্ত হতে পারে। নাক দিয়ে বাতাস নিতে না পারলে রাতের বেলা ঘুমানোর সময় আপনি মুখ দিয়ে বাতাস নেবেন। ফলশ্রুতিতে কিন্ত আপনার নাক ডাকাসহ নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে। সুতরাং নাকের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নাকের যত্নের মধ্যে অন্যতম একটি যত্ন নাক আপনি খোঁচাবেন না। যেকোন কিছু দিয়ে নাক পরিষ্কার করার চেষ্টা করবেন না। আঙুল নাকের ভেতরে ঢুকিয়ে দেবেন না। এটি নাকের অন্যতম একটি যত্ন। যদি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, ঠাণ্ডা, সর্দি যদি প্রায়ই লেগে থাকে এবং নাকের মাংস বৃদ্ধি পেয়ে যায় তাহলে আপনাকে একজন নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কানের যত্ন: কানের কাজ হলো শ্রবণ এবং ভারসাম্য রক্ষা করা। আমি দাঁড়িয়ে আছি কিংবা মাথা ব্যথা করছে এগুলো কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করছে কান। কানের ব্যালান্সিং এ কোন সমস্যা হলে মানুষ সুস্থভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। যেকোন সময় যে কেউ হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে। কানের যত্নের জন্যে আমরা উচ্চ শব্দ থেকে দূরে এবং নিরাপদে থাকবো। উচ্চ শব্দের কোন জায়গায় গেলে কানে আমরা ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করতে পারি। আরেকটা বিষয় কানকে কখনোই খোঁচানো যাবে না। কটনবার, চাবির রিং কিংবা কাঠি কোনো কিছু দিয়েই কান খোঁচানো যাবে না। কান খোঁচাতে গেলে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে এবং স্থায়ীভাবে বধিরতা হতে পারে।
আরো পড়ুন:
শীতকালে বিটরুট কেন খাবেন
হাঁটবেন নাকি সিঁড়ি টপকাবেন
গলা: গলা দিয়ে আমরা কথা বলি এবং খাবার গ্রহণ করি। আমরা কখনো এমন কিছু সেবন করবো না যা গলাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা খাবার এরিয়ে যেতে হবে। উচ্চ শব্দে আমরা কথা বলার চেষ্টা করবো না এবং আমরা চিল্লাচিল্লি করবো না। গলায় কোন ধরনের ফোলাভাব, আলসার, ঢোক গিলতে কষ্ট, শ্বাসকষ্ট কিংবা টনসিল হলে আমরা একজন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবো।
ঢাকা/লিপি