জুলাই আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পৃথক কমিশন গঠন করা উচিত। কারা প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের তালিকা তৈরি এবং বিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। 

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) কার্যালয়ে ট্রানজিশনাল জাস্টিস বা ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচার বিষয়ক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা জানান। ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচারের জন্য ট্রুথ কমিশনের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন তারা। 

সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গবেষক ও রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের (রিব) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড.

শামসুল বারী। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য একটা কমিশন হওয়া উচিত ছিল। সেটা হলে দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য তাদের রাস্তায় নামতে হতো না। 

তিনি জানান, জুলাই আন্দোলনে হতাহতদের জন্য একটা ফাউন্ডেশন হয়েছে। সেখানে ১০০ কোটি টাকা জমা হয়েছে। সেখান থেকে কারা সাহায্য পাচ্ছে, কারা পাচ্ছে না, কেন পাচ্ছে না। এগুলো সবার জানতে হবে। 

ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচার নিয়ে আলোচনায় বলা হয়, গৃহযুদ্ধ বা দমনমূলক স্বৈরশাসনের আমলে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত অশান্ত পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ব্যবস্থাকে ক্রান্তিকালীন বিচারব্যবস্থা বলা যায়। ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচার ধারণার সঙ্গে গণতন্ত্রের সম্পর্ক রয়েছে। দেশ এখন একটি ক্রান্তিকালের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এ সময় মানবাধিকার কর্মীদের কী করণীয় সে সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দিতে পারে ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচারের ধারণা। ট্রানজিশনাল বলতে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থার দিকে যাওয়া। ক্রান্তিকালীন বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথ নির্দেশ করে। ট্রানজিশনাল জাস্টিসের মূল লক্ষ্য হলো অপরাধীর বিচার ও দায়ব্যবস্থা নিশ্চিত করে, ভিকটিমের চাহিদা মিটিয়ে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা। তার জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও মেকানিজমের মধ্যে ট্রুথ কমিশন অন্যতম।  

সেমিনার উদ্বোধন করেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল। তিনি ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচারের সঙ্গে মানবাধিকার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার গভীর সংযোগের বিষয়টি তুলে ধরেন। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার ট্রানজিশনের পথে  বিশাল পথ বাকি আছে৷ আমাদের পঞ্চাশ বছরের স্মৃতি সুখকর না। মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমাদের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। আমরা সবসময় অনুকূল পরিবেশ পাবো তা নয়। মানবাধিকার কর্মীরা সব সময় প্রতিকূল পরিবেশেই কাজ করে।

সেমিনারে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন ছাড়াও বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ডব্লিওবিবি ট্রাস্ট, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশ (রিব), স্পেচ ফাউন্ডেশন, বাঙালি সমগ্র জাদুঘর ও নিজেরা করির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে ঢোকার অনুমতি পায়নি চার ট্রাক তৈরি পোশাক, গন্তব্য ছিল স্পেন

ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা প্রত্যাহার করায় পেট্রাপোল কাস্টমস তৈরি পোশাকবোঝাই চারটি ট্রাককে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি (কারপাস) দেয়নি। এতে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে গতকাল বুধবার ট্রাকগুলো ঢাকায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে নিয়ে যাওয়ার সুবিধা দিতে ২০২০ সালের ২৯ জুন আদেশ জারি করেছিল ভারত। ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) গত মঙ্গলবার সেই আদেশ বাতিল করে।

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ঢাকা থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক তিনটি প্রতিষ্ঠান চারটি ট্রাকে পণ্য বোঝাই করে বেনাপোল বন্দরে নিয়ে আসে। ট্রানজিট নিয়ে ওই পণ্য কলকাতার দমদম বিমানবন্দর হয়ে স্পেনে রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস থেকে ট্রাকগুলো প্রবেশের অনুমতি পায়নি। এতে পণ্যগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ফিরিয়ে নিয়েছে।

বেনাপোলে এই পণ্যের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট ছিল পদ্মা ট্রেডিং। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক অনিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা প্রত্যাহার করেছে। এর আগেই ট্রাকবোঝাই এসব পণ্য বেনাপোল বন্দরে চলে আসে। পণ্য ঢুকতে না দেওয়ায় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি।’ তিনি জানান, এই সুবিধা বাতিলের এক দিন আগেও ২০ ট্রাক তৈরি পোশাক তাঁদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতের ট্রানজিট ব্যবহার করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে। সাধারণত তৈরি পোশাকের রপ্তানি গ্রীষ্মে বাড়ে। এখন রপ্তানির ভরা মৌসুম। এই মুহূর্তে ভারতের এই সিদ্ধান্তে তাঁরা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, ‘যে রপ্তানিকারকের পণ্য ফিরে গেছে, তাদের কোনো প্রতিনিধি আমাদের কিছু জানাননি। তবে আমরা জেনেছি, ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস থেকে কারপাস দেওয়া হয়নি। যে কারণে পণ্য ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

২০২০ সালের ২৯ জুন এক আদেশে ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। তখন বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ভারতের কলকাতা বন্দর, নবসেবা বন্দর ও কলকাতা বিমান কার্গো কমপ্লেক্স ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছিল সিবিআইসি। এখন সে সুবিধা প্রত্যাহার করল ভারত।

বিবৃতিতে ভারত দাবি করেছে, এসব পদক্ষেপে ভারতের সীমান্ত দিয়ে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়বে না।

বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, বেনাপোল দিয়ে ভারতের ট্রানজিট নিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করা হয়, তার বেশির ভাগ যায় ইউরোপের দেশগুলোয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বেনাপোল ও পেট্রাপোল দিয়ে স্পেন ও সুইজারল্যান্ডে বেশি যায়। এই বন্দর দিয়ে নেপাল ও ভুটানে পণ্য রপ্তানি কম হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ