জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা
Published: 5th, February 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখোমুখি অবস্থানের মুখে পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে বারোটার দিকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সামনে উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। তবে শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক যে সুবিধা রয়েছে সেটা বিবেচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠনের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) পোষ্য কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন দেওয়া হবে বলে জানান উপাচার্য। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভায় পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন নানাভাবে বঞ্চিত হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক যে সুবিধা রয়েছে সেটা বিবেচনা করার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে।’
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কয়েকজন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনশনে বসেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার এই কোটায় বেশ কিছু পরিবর্তনের ঘোষণা দেন উপাচার্য। ওই ঘোষণায় অনির্ধারিত সংখ্যক পোষ্য কোটার পরিবর্তে ৪০টি কোটার কথা উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া একজন ব্যক্তি একবারের জন্য এ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ওই অনশন ভাঙেন। এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ভাষ্য ছিল, তাঁরা দুটো কারণে নতুন কোটা পদ্ধতির ঘোষণাটি মেনে নিয়েছিলেন। কারণ দুটো হলো, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের (জাকসু) তফসিল নির্ধারিত সময়ে (৬ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা ও আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা ঠিক সময় শুরু করতে পারা (৯ ফেব্রুয়ারি)।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁরা মঙ্গলবার সকালে আগের মতো পোষ্য কোটা বহালের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে যান। এ সময় ভবনের দেয়ালে ‘পোষ্য কোটা বাতিল করো’ লেখাসংবলিত শিক্ষার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন কয়েকজন কর্মচারী।
এদিকে পোস্টার ছেঁড়ার প্রতিবাদ জানাতে কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবনের সামনে গেলে এক শিক্ষার্থীকে এক কর্মচারী ধাক্কা দেন বলে অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এরপর বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে যান এবং দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে কর্মচারীরা সেখান থেকে চলে যান। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাঁরা পুরো পোষ্য কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁরা উপাচার্যকে সিদ্ধান্ত নিতে চার ঘণ্টা সময় বেধে দেন।
এদিকে পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণার পর আনন্দ প্রকাশের পাশাপাশি কিছুটা সন্দেহও প্রকাশ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মুন্না বলেন, ‘অযৌক্তিক পোষ্য কোটা কোটা বাতিল হওয়ায় আমরা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই। নতুন বাংলাদেশে সব ধরনের বৈষম্য নিপাত যাক। তবে উপাচার্য প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার জন্য যে কমিটি করেছে সেই কমিটি আবার প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার আওতায় পোষ্যদের ভর্তির সুযোগ করে দেয় কি না সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনে থাকা তিতুমীর কলেজের ৩ শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে অনশনে থাকা তিন শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। রোববার দুপুরে মহাখালীতে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাসেল।
তিনি বলেন, অনশনে থাকা তিন শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের প্রসাব তৈরি হচ্ছে না। তিনজনের মধ্যে একজনের প্রসাব হচ্ছে না। কিডনি প্রসাব তৈরি করার জন্য যে প্রক্রিয়া থাকে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ সাত দফা দাবিতে টানা পাঁচ দিন ধরে অনশন কর্মসূচি পালন করে আসছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে চলছে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের কর্মসূচি। আজও সড়ক অররোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুরে বাঁশ দিয়ে তিতুমীর কলেজের সামনের দুই পাশের রাস্তা আটকে দেন তারা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে গত ২৯ জানুয়ারি থেকে তিতুমীর কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে অনশন শুরু করেন। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ায় শনিবার দু’জনসহ এখন পর্যন্ত সাতজনকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি দুই শিক্ষার্থী হলেন– উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের মফিজুল ইসলাম ও বাংলা বিভাগের আবু নাঈম। এ ছাড়া অনশনরত ৯ শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করেছে। তাদের স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। একজন চিকিৎসক ও দু’জন নার্সকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধের কারণে ওই দিন মহাখালী থেকে গুলশান এবং গুলশান থেকে মহাখালী পর্যন্ত রাস্তার যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা দাবি পক্ষে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছেন তারা। এর আগে শুক্রবারও তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কটি অবরোধ করেন। সেদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে বিকেল ৪টার মধ্যে দাবি মানা না হলে আবার সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
আজ রোববারও আমরণ অনশনের পাশাপাশি ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি পালন করার কথা জানান তারা। এই কর্মসূচির আওতায় ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করা হবে। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিশ্ব ইজতেমা ও আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি শিথিলের কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবিগুলো হলো—
১. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।
২. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২০২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
৩. শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নতুবা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করতে হবে।
৪. ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম দুইটি বিষয় 'আইন' এবং 'জার্নালিজম' বিষয় সংযোজন করতে হবে।
৫. একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
৬. শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিত করতে হবে।
৭. আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ করতে হবে।