নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পাঠক সংকটে ভুগছে গ্রন্থাগার। সরকারি পর্যায়ে দুটি গ্রন্থাগার গড়ে উঠলেও পাঠকের উপস্থিতি কম। একই কারণে বেশির ভাগ বেসরকারি গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে গেছে।
আজ ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো দিবসটি উদযাপন করা হয়। জনগণের পাঠাভ্যাস সৃষ্টির লক্ষ্যে ও সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোর কার্যক্রম গতিশীল করতে দিবসটি উদযাপন করা হয়। একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে গ্রন্থাগারের বিকল্প নেই।
বইয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ বাড়াতে সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বাড়িতে জেলা পরিষদের অর্থায়নে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্রন্থাগার থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে খুব কম দেখা যায়। বর্তমানে সোনারগাঁ গঙ্গাবাসী ও রামচন্দ্র পোদ্দার ইনস্টিটিউশন মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে একটি গ্রন্থাগার রয়েছে, তবে সেটিও প্রায় পাঠকশূন্য। তিনটি গ্রন্থাগারে ৩১ হাজারের বেশি বই, ম্যাগাজিন ও পত্রিকা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে সেগুলো অবহেলায় পড়ে রয়েছে।
গ্রন্থাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিকদের মতে, খুব কম পাঠকই বই পড়তে আসেন। অনেকে এলেও শুধু বই হাতে নিয়ে সেলফি তুলে চলে যান। পাঠকদের মধ্যে পড়ার অভ্যাস কমে গেছে।
লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের গ্রন্থাগার
১৯৯১ সালে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে লোক ও কারুশিল্পের ওপর গবেষণার জন্য লাইব্রেরি ও ডকুমেন্টেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে প্রায় ১২ হাজার দেশি-বিদেশি লেখকের প্রবন্ধ, কবিতা, গবেষণা গ্রন্থ, ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে। গবেষক ও দর্শনার্থীরা এখান থেকে গবেষণার জন্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারেন। এটি সব পাঠকের জন্য উন্মুক্ত।
জ্যোতি বসু মেমোরিয়াল গ্রন্থাগার
২০১০ সালে জ্যোতি বসুর মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে বারদী ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামে ২০১১ সালের ৪ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের অর্থায়নে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি গ্রন্থাগার নির্মাণ করা হয়, যা ২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট উদ্বোধন করা হয়। সেখানে প্রায় ২ হাজার ৬০০ দেশি-বিদেশি বই সংরক্ষিত রয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগার
সোনারগাঁয়ের শতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোনারগাঁ গঙ্গাবাসী ও রামচন্দ্র পোদ্দার ইনস্টিটিউশন মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে একটি গ্রন্থাগার রয়েছে, যেখানে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার বই রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ কমতে থাকায় এই গ্রন্থাগারটিও কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের গ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ১২ হাজার দেশি-বিদেশি গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনী ও গবেষণাধর্মী বই থাকলেও পাঠকশূন্যতা বিরাজ করছে। প্রতিদিন ১০-১৫ জন পাঠক বই পড়তে এলেও প্রায় ২০০ দর্শনার্থী প্রবেশ করেন, যাদের অধিকাংশই বই হাতে নিয়ে ছবি তুলে চলে যান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন পাড়া, মহল্লা ও সংগঠনের উদ্যোগে গড়ে ওঠা গ্রন্থাগার। পাঠকের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হলে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের লাইব্রেরিয়ান ও ক্যাটালগার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো.
জ্যোতি বসু মেমোরিয়াল গ্রন্থাগারের সহকারী লাইব্রেরিয়ান মাজেদা বেগম জানান, মানুষের বইয়ের প্রতি আগ্রহ নেই। বেশির ভাগ সময় গ্রন্থাগার ফাঁকা থাকে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাদের অলস সময় কাটাতে হয়।
সোনারগাঁ গঙ্গাবাসী ও রামচন্দ্র পোদ্দার ইনস্টিটিউশন মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক মানিক চন্দ্র দাস বলেন, স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা পাঠক সংখ্যা কমার অন্যতম কারণ।
প্রতিষ্ঠানটির সহকারী লাইব্রেরিয়ান বিপ্লব চন্দ্র বর্মণ বলেন, শিক্ষার্থীদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর জন্য তালিকা করে বই বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। লাইব্রেরি রুমে বসে পড়ার আগ্রহ না থাকায় বিকল্প উপায় খোঁজা হচ্ছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘বরবাদ’ দিয়ে বিশ্ববাজারে সিনেমা পরিবেশনায় শাকিবের এসকে ফিল্মস
আন্তর্জাতিক পরিসরে সিনেমা পরিবেশনা শুরু করল দেশ সেরা চিত্রনায়ক শাকিব খানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে ফিল্মস বা শাকিব খান ফিল্মস।
বাংলাদেশের স্বনামধন্য এই প্রযোজনা হাউজটি সিনেমা নির্মাণের পাশাপাশি এখন থেকে নিয়মিত নর্থ আমেরিকা (এসকে ফিল্মস ইউএসএ) এবং গলফে (এসকে ফিল্মস ইউএই) সিনেমা পরিবেশনা করবে।
৯ এপ্রিল (নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময়) সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্তোরাঁয় এসকে ফিল্মস ইউএসএ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন এসকে ফিল্মস ইউএসএ-এর সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক বদরুদ্দোজা সাগর, ফারজানা আক্তারসহ অনেকে।
আরো পড়ুন:
তামান্নার নতুন আইটেম গানের শুটিংয়ের ভিডিও ফাঁস
শাবনূরের ঝটিকা সফরের কারণ কী?
এসকে ফিল্মস ইউএসএ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আগামী ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ও ১৯ এপ্রিল কানাডায় ‘বরবাদ’ মুক্তির মাধ্যমে এসকে ফিল্মস ইউএসএ আন্তার্জাতিকভাবে ফিল্ম ডিসট্রিবিউশন শুরু করবে।
মধ্যপ্রাচ্যেও কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’, ‘পাসওয়ার্ড’, ‘বীর’ সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে ফিল্মস জানায়, অচিরেই মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াতে এসকে ফিল্মস ফিল্ম ডিসট্রিবিউশন শুরু করবে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বদরুদ্দোজা সাগর বলেন, “বড় পরিসরে বাংলা সিনেমাকে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিবে এসকে ফিল্মস ইন্টারন্যাশনাল। সেই ধারাবাহিকতায় এসকে ফিল্মস ইন্টারন্যাশনালি ফিল্ম ডিসট্রিবিউশনের উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করি, এই উদ্যোগ বাংলা সিনেমার জন্য সুফল বয়ে আনবে এবং বিশ্বময় বাংলা সিনেমার জয়যাত্রা অব্যাহত রাখবে।”
ঈদুল ফিতরে বাংলাদেশের ১২০টি সিনেমা হলে মুক্তির পর সারাদেশে ব্যাপক আলোচনার তৈরি করেছে ‘বরবাদ’। মুক্তির ১০দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো দর্শকদের আগ্রহ কমেনি। সিনেপ্লেক্স, মাল্টিপ্লেক্স থেকে সিঙ্গেল স্ক্রিন; সবখানে দৈনিক হাউজফুল যাচ্ছে। বাংলাদেশের দর্শকদের উল্লাস আগ্রহী করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা প্রবাসী বাঙালিদের। শাকিব খানের ‘প্রিয়তমা’, ‘রাজকুমার’, ‘তুফান’ দেখে মুগ্ধ হওয়া প্রবাসী দর্শকরা এখন ‘বরবাদ’ সিনেমার জন্য অপেক্ষা করছেন।
বদরুদ্দোজা সাগর বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা প্রবাসীরা ‘বরবাদ’ দেখার জন্য অনেক আগ্রহী। এসকে ফিল্মস ইউএসএ এসব দর্শকদের আগ্রহকে সম্মান জানিয়ে ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ও ১৯ এপ্রিল কানাডায় ‘বরবাদ’ আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক পরিসরে মুক্তি দিচ্ছে।”
যেসব স্টেটে বাঙালি কমিউনিটি রয়েছে, সেসব স্থানের থিয়েটারে প্রদর্শিত হবে ‘বরবাদ’। প্রথম সপ্তাহে ৩৫-৪০টি থিয়েটারে সিনেমাটি মুক্তি পাবে বলে জানিয়েছেন বদরুদ্দোজা সাগর।
১৮ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ‘বরবাদ’ সিনেমা প্রদর্শিত হবে। এগুলো হলো— নিউ ইর্য়ক, বোস্টন, ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, আটলান্টা, মিশিগান, সানফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস, ম্যারিল্যান্ড, বাফেলো, ফিলাডেলফিয়া। ১৯ এপ্রিল কানাডার বাঙালি জনবসতিপূর্ণ মন্ট্রিয়াল, অটোয়া এবং টরন্টো শহরে দেখা যাবে ‘বরবাদ’।
মেহেদি হাসান হৃদয় পরিচালিত ‘বরবাদ’ সিনেমায় শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ইধিকা পাল। তা ছাড়াও অভিনয় করেছন মিশা সওদাগর, ফজলুর রহমান বাবু, শহীদুজ্জামান সেলিম, যীশু সেনগুপ্ত, শ্যাম ভট্টাচার্য, মানব সাচদেভ প্রমুখ। এছাড়া আইটেম গানে পারফর্ম করেছেন ওপার বাংলার অভিনেত্রী নুসরাত জাহান। রিয়েল এনার্জি প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত