ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা উপজেলার নাসির গ্লাস কারখানা থেকে নিশিন্দা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এলাকায় অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। কিছু স্থানে খানাখন্দ এত বড়, সেসব স্থানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভালুকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ২৫ কিলোমিটার এলাকা খানাখন্দে ভরে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ি এলাকার আইডিয়াল মোড় থেকে উত্তরে স্কয়ার ফ্যাশান, মাস্টারবাড়ি বাসস্ট্যান্ড হয়ে তেপান্তর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার। আমতলী, সিডস্টোর বাজার, ভালুকা সদরের খিরু নদীর দক্ষিণে এআর ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে উত্তরে থানার মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার। এ ছাড়া ভরাডোবার বাকসাতরা মোড় থেকে উত্তরে ক্লাবের বাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঢাকাগামী লেনের কার্পেটিং উঠে অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। কিছু খানাখন্দ যেন মরণফাঁদ। যেখানে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
একাধিক গাড়িচালক জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা উপজেলার মাস্টারবাড়ি ও থানার মোড় এলাকার কিছু রাস্তা সবচেয়ে খারাপ ও বিপজ্জনক। এসব এলাকায় গাড়ি চালানো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের দাবি, মাছের গাড়ি থেকে পানি পড়ে সব সময় ওইসব গর্ত ভরে থাকে। অপরিচিত চালকরা গর্তের আকার ও গভীরতা বুঝতে না পারার কারণে প্রায়ই দেখা যায়, মাস্টারবাড়ি এলাকায় সড়কের গর্তে পড়ে গাড়ি উল্টে আছে।
ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের তথ্যমতে, এমনিতেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করে। অপরদিকে সদর, ভালুকা ও ত্রিশাল উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বেশি পাঙাশ মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব মাছ পানিভর্তি ড্রামে ট্রাকে এই মহাসড়ক দিয়ে রাজধানীসহ দেশের হাটবাজারে নেওয়া হয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি রাতে ২৫০-৩৫০ ট্রাক মাছ পরিবহন করা হচ্ছে। মহাসড়কজুড়ে ওইসব মাছ বহনকারী ট্রাক থেকে অনবরত পানি পড়ছে। এই পানির কারণেই অল্প সময়ের মধ্যে মহাসড়কের কার্পেটিং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ময়মনসিংহ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী খাইরুল বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন জানান, মহাসড়কের কিছু স্থান ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে ভালুকা উপজেলার ভরাডোবার ক্লাবের বাজার, ভালুকা সদরের থানার মোড় খিরু সেতুর দুই পাশ ও মাস্টারবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকার প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা। ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগ ওইসব ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে অব্যাহত রুটিন ওয়ার্ক করলেও তা ২-৩ দিনের বেশি টিকছে না। তাঁর দাবি, কিছু  ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে ডাবল এইচবিবি করা হলেও বেশি দিন টিকছে না। সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মূল কারণ প্রতিদিন মাছ বহনকারী শত শত ট্রাক ও পিকআপ থেকে অবিরাম পানি ঝরা। গত বছর সদর, ত্রিশাল ও ভালুকা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মাছের গাড়িগুলোয় পানি সরবরাহ করা মহাসড়কের দু’পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ ৫০টিরও বেশি পানির পাম্প উচ্ছেদ করা হয়েছে। তাতেও ফল পাওয়া যায়নি। এক কথায়, মহাসড়কে পানি পড়া সম্পূর্ণ বন্ধ করতে না পারলে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। 
প্রকৌশলী খাইরুল বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমরা উল্লিখিত বিষয়ে লিখিতভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বারবার করেছি এবং মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে আরসিসি করার প্রস্তাব দিয়েছি। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো আরসিসি করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রম চলমান।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ল ম ট র এল ক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কমছে না অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, বাড়ছে দুর্ঘটনা

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। রাজধানী থেকে ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ও হালুয়াঘাট স্থলবন্দরে যাতায়াতকারীদের একমাত্র ভরসা সড়কটি। প্রতিদিন হাজারো যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক আসা-যাওয়া করে এই পথে। ঈদ উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কের শৃঙ্খলা এক রকম ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনের শিথিলতায় দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে এ সড়কের পরিস্থিতি। বিশেষ করে ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য চরম আকার ধারণ করেছে। অদক্ষ চালকরা কয়েকটি জায়গা থেকে যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলাচল করছে। ফলে দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। এবার ঈদুল ফিতরের সময় মহাসড়কটিতে ঘটা বেশির ভাগ দুর্ঘটনাই ছিল অটোরিকশার সঙ্গে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষ। 
ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ থেকে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়কটি পুরোপুরি অটোরিকশার দখলে চলে গেছে। সরেজমিন গতকাল রোববার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ব্রিজ, ঢাকা বাইপাস, দীঘারকান্দাসহ কয়েকটি পয়েন্টে গিয়ে অটোরিকশার জট দেখা যায়। বাইপাস ও চরপাড়া মোড় থেকে ত্রিশাল অভিমুখে ছেড়ে যেতে দেখা যায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহিন্দ্রা নামে পরিচিত অটোরিকশার সারি। 
ঢাকাগামী কয়েক বাসযাত্রী ও পথচারী জানান, পুলিশ এসব যানবাহন আটকে মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। আবার তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মহাসড়কে চলে আসে। এরা বেশির ভাগই রেজিস্ট্রেশনবিহীন। এদের নেই কোনো ফিটনেস। এরা বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালায়। ফলে প্রতি মাসে এসব যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন অনেক মানুষ। 
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে বিভাগের অন্যান্য জেলায় যেতে হলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স পরিদর্শক ইফতেখারুল ইসলাম মুরাদের তথ্যমতে, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে লাইসেন্সধারী অটোরিকশা চলে প্রায় ১২ হাজার। কিন্তু বাস্তবে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ অটোরিকশা চলে আরও ২০ থেকে ৩০ হাজার। 
সূত্র বলছে, এসব অটোরিকশা নগরীর ভেতর জায়গা না পেয়ে মহাসড়কে চলে যাচ্ছে। থ্রিহুইলারগুলো নগরীর চরপাড়া থেকে ঢাকা বাইপাস হয়ে ত্রিশাল পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন  করে। আর এ পথেই ঢাকাগামী বাস-ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশির ভাগ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। বাস্তবে সিটি করপোরেশন এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। 
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব ও বর্তমানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুমনা আল মজিদ সমকালকে বলেন, লাইসেন্স দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। লাইসেন্স নিয়ে যদি অটোরিকশাগুলো মহাসড়কে চলে যায়, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের না। 

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দীঘারকান্দা এলাকায় কথা হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক কামাল মিয়ার সঙ্গে। তাঁর গাড়িটি নিবন্ধিত কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, অটোরিকশা নিবন্ধন করা এত সহজ না। আমরা সবাইকে ম্যানেজ করে গাড়ি চালাই। বর্তমানে যাত্রীরা বাসের চেয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক হান্নান বলেন, শহরের ভেতরে গাড়ি চালিয়ে শান্তি নেই। যানজটের কারণে চালানো যায় না। এ জন্য আমরা মহাসড়কে গাড়ি চালাই। 
এদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পুলিশের সামনে দিয়েই চলাচল করছে অবৈধ অটোরিকশা। কিন্তু তাদের কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। বাসচালকদের অভিযোগ,  সিএনজির দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়ে গেছে, এর যন্ত্রণায় সড়কে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। একে তো দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে, অন্যদিকে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। 
ময়মনসিংহ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলার প্রতিটি মিটিংয়ে অটোরিকশা বন্ধের দাবি জানাই। এরা সিন্ডিকেট করে আমাদের যাত্রী নিয়ে যায়। 
মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধ করা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এম এম মোহাইমেনুর রশিদ। তিনি বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে পুলিশ একাই লড়ে যাচ্ছে। অথচ প্রশাসনে আরও অনেক বিভাগ আছে। বিআরটিএ ও সিটি করপোরেশন চাইলে অনেক কিছু করতে পারে। 
জেলা বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) মোহাম্মদ আবু নাঈম জানান, অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত মার্চ মাসে তাদের বিরুদ্ধে ১৭৫টি মামলা দিয়ে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মহাসড়কে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে প্রতিদিন আট থেকে ১০টি মামলা দেওয়া হয়। 
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম জানান, ঈদের মধ্যে যাত্রীর চাপ অনেক বেশি ছিল। এ জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অভিযান জোরদার করা হবে। মহাসড়কের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাতে ৫ অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস
  • ময়মনসিংহে চিড়িয়াখানাটির চুক্তি শেষ হয় ৯ মাস আগে, জানে না সিটি করপোরেশন
  • প্রথম আলোতে প্রতিবেদনের পর ময়মনসিংহ মিনি চিড়িয়াখানা সিলগালা, জব্দ ৪৮ প্রাণী
  • ভালুকের শরীরে পচন, বন্ধ হল ময়মনসিংহের মিনি চিড়িয়াখানা
  • সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরের আশঙ্কা নেই
  • অনুমোদন নেই, প্রাণীর জোগানদাতা সাবেক মেয়র, পরিচালনায় সাবেক কাউন্সিলর
  • ময়মনসিংহের মিনি চিড়িয়াখানায় ভালুকের শরীরে পচন
  • অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার
  • ময়মনসিংহে মহাসড়কে অটোরিকশার বিরুদ্ধে বিআরটিএ পুলিশের তৎপরতা 
  • কমছে না অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, বাড়ছে দুর্ঘটনা