স্কুলের মাঠজুড়ে নির্মাণসামগ্রী। তীব্র শব্দ করে ক্ষণে ক্ষণে প্রবেশ করছে ভারী যানবাহন। সেই সঙ্গে ধুলাবালি উড়ে ঢুকছে স্কুলে। ক্লাস করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চরচাপলি ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বারবার নিষেধ করলেও তাদের কথা আমলে নেওয়া হয়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে, চাপলি বাজার থেকে দোলাই মার্কেট পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণকাজের জন্য স্কুলের খেলার মাঠের সামনের অংশে নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। মাঠের একটি বড় অংশজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে পাথর। মাঠের মধ্যে রয়েছে ভারী যন্ত্র। পাথর ও বালুমিশ্রিত করা প্লান্ট মেশিন বিকট শব্দে চলছে। নির্মাণসামগ্রীর ধুলাবালি এবং বিটুমিন গলানোর কাজে ব্যবহৃত টায়ার পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় এলাকা আচ্ছন্ন। স্কুল মাঠটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। বিকট শব্দের কারণে শিক্ষকদের পাঠদানে মনোযোগ দিতে পারছে শিক্ষার্থীরা। যাতায়াতের পথে পোশাক নোংরা হওয়া এবং শিশু-কিশোরদের মাঠে খেলাধুলায় বিঘ্ন ঘটছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কারও অনুমতি না নিয়ে মাঠে নির্মাণসামগ্রী রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাধা দিলে বলে নির্মাণসামগ্রী রাখবে; কিন্তু কর্মযজ্ঞ চালাবে না। অথচ এখন স্কুল মাঠেই কাজ করছেন ঠিকাদার। এভাবে চললে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
গত সোমবার বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, পিচ পোড়ানো আর প্লান্ট মেশিন থেকে কালো বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসে ভেসে গিয়ে স্কুলে ঢুকছে। সেখানে কথা হয় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফসা আক্তার, মারিয়া রিতু, তানজিলা, সিফাতুল, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জোবায়ের, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সেফা, সুমাইয়া ও জান্নাতের সঙ্গে। তারা জানায়, স্কুলে প্রবেশ করতে তাদের পোশাক ধুলায় নষ্ট হয়ে যায়। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের পাঠদানে 
মনোযোগ দিতে পারে না তারা। মাঠে বিকট শব্দে মেশিন চলায় শিক্ষকদের কথাই শোনা যায় না। অনেকের মাথা ব্যথা হচ্ছে। অনেকে ছুটির আগে স্কুল থেকে চলে যাচ্ছে।
স্কুলের গণিত বিভাগের সহকারী শিক্ষক আদম আলী বলেন, এক সপ্তাহ ধরে মাঠ দখল করে সড়কের কাজ চলছে। ক্লাসের সময় তাদের মেশিন চললে শিক্ষার্থীরা কিছু বোঝে না। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা চলে যায়। বিকট শব্দে শ্রেণিকক্ষে সমস্যা হয়।
প্রধান শিক্ষক গাজী আলী আহম্মেদের ভাষ্য, যে রাস্তায় কাজ হচ্ছে তার আশপাশে অনেক জায়গা থাকলেও স্কুল মাঠে এই কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে। কারও অনুমতি না নিয়েই ঠিকাদার বিদ্যালয় মাঠে এসব রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অসহ্য হয়ে তাদের কাছে অনুরোধ করেছি যাতে স্কুল বন্ধের দিন কাজ করে। এর পরও ক্লাস চলাকালে বিকট শব্দে কাজ করছে। এখন যে অবস্থা তাদের জন্য আমাদের স্কুল বন্ধ করে রাখতে হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম জানান, স্কুলের খেলার মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখা বেআইনি। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেই কাজটিই করেছে। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এলাকাবাসীও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তালুকদার এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.

জাফরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অন্য কোথাও ভালো জায়গা না থাকায় আমরা এখানে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে না।’
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, স্কুল মাঠে সড়কের নির্মাণসামগ্রী রেখে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

নেত্রকোনায় বন্ধুর হবু স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রদল নেতা গ্রেপ্তার, দল থেকে বহিষ্কার

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল আহমেদকে (২৪) দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে জেলা ছাত্রদলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি শামসুল হুদা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সারোয়ার আলম ও সাধারণ সম্পাদক অনিক মাহবুব চৌধুরী এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী (২০) নেত্রকোনা শহরের বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গে কলমাকান্দা উপজেলার এক ছাত্রের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি উভয়ের পরিবারের সিদ্ধান্তে তাঁদের বিয়ের দিনতারিখ ঠিক হয়। তাঁরা দুজন গত সোমবার দুর্গাপুরে ঘুরতে যান। ওই ছাত্রের সঙ্গে ছাত্রদল নেতা ফয়সাল আহমেদের বন্ধুত্ব ছিল। তাঁর কথামতো তাঁরা সেখানে একটি হোটেলে ওঠেন। গতকাল বিকেলে ওই ছাত্র হোটেল থেকে বের হয়ে খাবার কিনতে যান। এ সময় তাঁর হবু স্ত্রী হোটেলে অবস্থান করছিলেন। এ সুযোগে ফয়সাল তাঁর বন্ধু ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশকে জানিয়ে দ্রুত তাঁকে গ্রেপ্তার করতে অনুরোধ জানান। পরে ফয়সাল ওই ছাত্রীর কক্ষে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করেন। মেয়েটি বাধা দিলে তাঁকে মারধর করা হয়। পুলিশ ওই ছাত্রকে আটক করলে তিনি জানান, তাঁর হবু স্ত্রী হোটেলে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছেন। পরে পুলিশ তাঁকে নিয়ে হোটেলের কক্ষে যায়। সেখান থেকে ওই মেয়েকে উদ্ধার এবং ফয়সালকে আটক করা হয়।

এ ঘটনায় সন্ধ্যায় মেয়েটি বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগে ফয়সালের বিরুদ্ধে মামলা করেন বলে জানান দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান।

ওসি মাহমুদুল হাসান আজ বুধবার সকালে বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রদল নেতা ফয়সালকে আদালতে নেওয়া হচ্ছে। মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষার জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এদিকে এ ঘটনার পর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে ফয়সালকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের তাঁর সঙ্গে কোনো রকম সম্পর্ক না রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অনিক মাহবুব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্গাপুর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

এর আগে গত ২৯ মার্চ দুর্গাপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পারভেজ মোশারফ এবং পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরিফুল রহমানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় দলীয় পদ থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ