রাজশাহীর চারঘাটের নিমপাড়া ইউনিয়নে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড খুলনা অঞ্চলের ডেপুটি কমিশনার আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী মুসফিকা আকতার মিম। বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলার ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে মঙ্গলবার চারঘাট মডেল থানায় মাটি ও বালু ব্যবস্থাপনা আইনে মামলা করেন।
২০১৮ সালে উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের জোতকার্তিক হিন্দুপাড়ায় রাকিবুল ইসলাম, রাজু আহমেদ ও সঞ্জু আলী নামে তিন ভাইয়ের সাড়ে আট বিঘা জমি ৭০ লাখ টাকায় কেনেন ডেপুটি কমিশনারের স্ত্রী মুসফিকা আক্তার। জমিটি কেনার সময় সেখানে আমবাগান ছিল। চলতি বছর বাঘা উপজেলার হাবিবুর রহমানের সঙ্গে সেই বাগানে পুকুর খননের জন্য চুক্তি করেন। ২০ জানুয়ারি থেকে সেই জমিতে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করেন। এতে জমির পাশে থাকা বাড়িগুলো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উদ্বিগ্ন আশপাশের জমির মালিকরা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জানুয়ারি সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন। সেখানে কাউকে না পেয়ে মাটি ভেকু মেশিনটি অকার্যকর করে খননকাজ বন্ধ করে দেন। অভিযানের পরদিনই আবারও ভেকু মেশিন মেরামত করে গভীর রাতে মাটি কাটা শুরু করেন মুসফিকা আকতার মিমের লোকজন। অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার জমির মালিক ও খননকারীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী বাসিন্দারা জানান, মুসফিকা আক্তার মিম একজন গৃহিণী। তাঁর বাবা বেল্টু আলী নন্দনগাছী এলাকার কৃষক। তাঁর পক্ষে ৭০ লাখ টাকায় জমি কেনা সম্ভব না। মূলত ডেপুটি কমিশনার আবুল কালাম আজাদ নিজের নামে জমি না কিনে স্ত্রীর নামে কিনেছেন।
স্ত্রীর নামে মামলা ও জমি কেনার বিষয়ে ডেপুটি কমিশনার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জমিটি আমার স্ত্রী তার বাবার সূত্রে পেয়েছে। জমি কেনার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। শুনেছি, জমিটি 
এক ব্যক্তিকে লিজ দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু আমি জানি না।’

চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রির অপরাধে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন বলেন, জোতকার্তিক হিন্দুপাড়ায় জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করা হচ্ছিল। খবর পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে খনন বন্ধ করা হয়। এর পরও গভীর রাতে সেখানে খননকাজ করা হয়। রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নিয়ম নেই। এ কারণে ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।
পদ্মা ও বড়াল অধ্যুষিত রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তিন ফসল আবাদের পাশাপাশি অসংখ্য আমের বাগান রয়েছে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে এসব এলাকায় উদ্বেগজনক হারে পুকুর খনন হয়েছে। ২০০৭ সালের পর দেড় দশকে শত শত পুকুর খনন হয়েছে। যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে বিভিন্ন গ্রামের ফসলি মাঠে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। আশঙ্কাজনক হারে আম, ধান, গম, ভুট্টার মতো খাদ্যশস্য ও সরিষা উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় পুকুর খনন বন্ধে উপজেলার চাষিরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় চারঘাটে এই প্রথম পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ক র খনন উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

মুকসুদপুরে হাটবাজারের ভূমি বন্দোবস্ত পেতে এসি ল্যান্ডের ‘সেলামি’ চাওয়ার অভিযোগ

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ও জলিরপাড় ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেছেন উপজেলার জলিরপাড় এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। গতকাল শনিবার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বরাবর তাঁরা লিখিত অভিযোগ দেন।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগীরা উপজেলার জলিরপাড় বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি হাটবাজারের একেকজনের জমি বন্দোবস্তের জন্য ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাসের মাধ্যমে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা আড়াই লাখ টাকা ‘সেলামি’ চেয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। তবে অভিযুক্ত গোলাম মোস্তফা ও রিমন বিশ্বাস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জলিরপাড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ২৫ বছর ধরে পাউবোর জমিতে দোকানঘর তুলে ব্যবসা করেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী। পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জেলা প্রশাসক পাউবোর ওই জমি পুনঃ গ্রহণ (রিজুম) করেন। ২০১৭ সালে পেরিফেরিভুক্ত হয়ে নকশা বের হয়। ২০২৪ সালে ইজারার মাধ্যমে ২৯ জন ব্যবসায়ীকে ওই ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। এর আগে ২০২০ সালে টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হলে সরকারি নির্দেশে সড়কের পাশের পেরিফেরিভুক্ত জমি থেকে দোকানপাট নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেন ব্যবসায়ীরা। সড়ক প্রশস্ত করার কাজ শেষ হয়েছে। ওই জমি সড়ক বিভাগের কাজে না লাগায় আগের ব্যবসায়ীরা ডিসিআরের নবায়নে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে আবেদন করেন। এ ছাড়া নতুন করে একাধিক ব্যক্তি ওই ভূমি বন্দোবস্ত নিতে আবেদন করেন।

অভিযোগ ওঠে, ১ মার্চ সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মাদ গোলাম মোস্তফা ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাসের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের জলিরপাড় ভূমি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে একটি সভা করেন। সভায় তিনি হাটবাজারের ভূমি বন্দোবস্ত নিতে তাঁকে আড়াই লাখ টাকা ‘সেলামি’ দিতে হবে বলে নির্ধারণ করে দেন। যেখানে সরকার নির্ধারিত ফি বছরে মাত্র ১৬০ টাকা। এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হলে তাঁরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

জলিরপাড় বাজারের শহীদুল, তৌহিদ শেখ, লিপি বেগমসহ কয়েকজন বলেন, তাঁরা গরিব মানুষ। ডিসিআর নিয়ে ওই জমিতে ঘর তুলে ব্যবসা করে খাচ্ছিলেন। এর মধ্যে সড়কের কাজ শুরু হলে ঘর ভেঙে ফেলতে বাধ্য হন। এখন ডিসিআর নবায়ন করতে গেলে এসি ল্যান্ড তা করে দেননি। উল্টো তহশিলদারের (উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা) মাধ্যমে ভূমি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আড়াই লাখ টাকা লাগবে বলে জানান। তাঁরা এত টাকা কোথায় পাবেন। এ ব্যাপারে তাঁরা জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ভুক্তভোগী চুন্নু চোকদার বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। রাস্তার পাশে সরকারি জমি বন্দোবস্ত নিয়ে একটি ছাপরা তুলেছি। এখন নতুন করে বন্দোবস্ত নিতে হবে। এ জন্য এসি ল্যান্ড অফিসে আড়াই লাখ টাকা দিতে হবে। তা না হলে আমার ছাপরা ভেঙে দেবেন বলে হুমকি দিচ্ছে তহশিলদার রিমন বিশ্বাস। আমি এত টাকা কোথায় পাব?’

তবে রিমন বিশ্বাস সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কারও কাছে টাকা চাইনি। আর ডিসিআর দেওয়ার আমি কেউ না। আমরা শুধু এখান থেকে সরেজমিন প্রতিবেদন দিয়ে থাকি। তাঁরা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’

মুকসুদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জমি বন্দোবস্তের জন্য আড়াই লাখ টাকা চাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার ডিসিআরের চুক্তি এক বছরের। পরবর্তী সময়ে আমি তাঁদের না-ও দিতে পারি। কোথাও লেখা নেই যে পুনরায় তাঁদের সঙ্গে আমার চুক্তি করতে হবে। আমি তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য নই। অনেকের দোকানের অস্তিত্ব নেই। যে কারণে যাচাই-বাছাই নতুন করে বন্দোবস্ত দেওয়া হবে। ওখানে বালু ভরাট করা হচ্ছে। একটা বড় ধরনের খরচের বিষয়ও রয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে লিখিত কিছু অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুকসুদপুরে হাটবাজারের ভূমি বন্দোবস্ত পেতে এসি ল্যান্ডের ‘সেলামি’ চাওয়ার অভিযোগ