পোশাক তো বদলাতেই হয়। ধুলোবালিতে নোংরা হলে বদলাতে হয়; আবহাওয়া অনুযায়ী বদলাতে হয়; হাল ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়েও বদলাতে হয়। ষাটের দশকের শেষ দিকে ‘টেডি’ পোশাক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল; সত্তরের দশকে ‘বেলবটম’। এখন আর সেসব কেউ পরে না। ফ্যাশন বদলেছে; বদলেছে পোশাক। মানুষ কিন্তু তেমনই আছে; বদলায়নি। কেউ কেউ অবশ্য বদলেছে; পোশাকের কারণে নয়; বদলেছে অন্তর্সত্তা। আসলে মানুষের বদলটা ঘটে ভেতর থেকেই; পোশাক থেকে নয়।
ইদানীং কথা চলছে পুলিশ বাহিনীর পোশাক বদলের। অনেক জল্পনাকল্পনার পর চূড়ান্ত হয়েছে নতুন পোশাক। ২০ জানুয়ারি সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমনটিই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.
যতটুকু জানা যায়, ২০২০ সাল থেকেই পুলিশের বর্তমান পোশাক পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা চলছিল। ২০২১ সালের শুরুর দিকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য বেশ কয়েকটি পোশাকের ট্রায়ালও হয়। তার পরও নানা কারণে নতুন পোশাক পাননি পুলিশ সদস্যরা। এরই মাঝে পতন ঘটে গেছে সরকারের। ধরে নেওয়া যায়, আগের সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায়ই বর্তমান সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে।
অখণ্ড ভারতীয় উপমহাদেশে পুলিশের ইউনিফর্মের রং ছিল খাকি। ব্রিটিশ অফিসার স্যার হ্যারি লুমসডেনের পরামর্শে ১৮৪৭ সালে এটি চালু হয়। তার একশ বছর পর ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান হয়েছে; কিন্তু পুলিশের পোশাকের রং খাকিই রয়ে গিয়েছিল। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশেও খাকি রং চালু ছিল।
বাংলাদেশ পুলিশের পোশাকে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে ২০০৪ সালে; মহানগরগুলোয় হালকা জলপাই রং, জেলা পুলিশের গাঢ় নীল। র্যাবের কালো ও এপিবিএনের পোশাক তৈরি করা হয় খাকি, বেগুনি আর নীল রঙের মিশ্রণে। এমনকি ২০০৯ সালেও কিছুটা পরিবর্তন আসে। প্রতিবারই এর পেছনে ‘অকাট্য যুক্তি’ দেখানো হয়েছে।
যে যুক্তিতেই পুলিশের পোশাক পরিবর্তন হোক না কেন; গত অর্ধশতাব্দীতে পুলিশের আচরণে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন এসেছে? উনিশ শতকের মাঝামাঝি আনুষ্ঠানিক যাত্রার সময় থেকেই পুলিশ বাহিনী শাসক শ্রেণির লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলে যেহেতু আজকের মতো রাজনৈতিক ‘ক্যাডার’ ছিল না; পুলিশই ছিল শাসক শ্রেণির ভরসা। পুলিশ কাজটি দক্ষতার সঙ্গে চালিয়ে গেছে।
আশা করা হয়েছিল, স্বাধীনতার পর অন্তত স্বাধীন দেশের উপযোগী পুলিশ বাহিনী গড়ে উঠবে। কিন্তু তা ঘটেনি। না ঘটারই কথা। কারণ স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে শাসক বদলালেও শাসকের শ্রেণি বদলায়নি। শাসক শ্রেণি তার শ্রেণিস্বার্থেই তা হতে দেয়নি। সেই হিসাবে বলা যায়, যতদিন শাসক শ্রেণির চরিত্র বদল না হবে; পুলিশের গুণগত পরিবর্তন আশা করা বাহুল্য হয়েই থাকবে।
বলা হয়– পুলিশ জনগণের বন্ধু। বন্ধুই তো হওয়ার কথা! কিন্তু হতে পারেনি। হতে দেওয়া হয়নি। কারণটা খুবই স্পষ্ট। রাষ্ট্র নিজেই যেখানে শোষণের মাধ্যম, পুলিশ যে মাধ্যমের হাতিয়ার; সেখানে পুলিশ জনগণের বন্ধু হয় কেমন করে? মানুষ আসলে পুলিশকে ভয় পায়; যেমন ভয় পেয়েছে ব্রিটিশ আমলে, তেমনি পাকিস্তান আমলে। এখনও তেমনটিই চলছে। ভয়কে জিইয়ে রেখে বন্ধু হওয়া যায় না। কিন্তু পুলিশের প্রতি এই ভয়টা শাসক শ্রেণির খুব প্রয়োজন। প্রয়োজন ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। গণতন্ত্রহীন কিংবা দুর্বল গণতন্ত্রের দেশে পুলিশ কখনও জনগণের বন্ধু হতে পারে না।
আমাদের দেশে সুবিদিত, পুলিশকে ম্যানেজ করতে পারলে অনেক কিছু ম্যানেজ করা যায়। পুলিশ হাতে থাকলে নির্বাচনে জেতা যায়; প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা যায়; জমির দখল নেওয়া বা উচ্ছেদ করা; ইত্যাকার কাজ! এ কারণে প্রবল পরাক্রমশালী মন্ত্রী-এমপিরা পর্যন্ত পুলিশকে সমঝে চলেন। চলতে তারা বাধ্য। কারণ স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতে পারেনি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে জনগণের ক্ষমতায়নও ঘটেনি। সংবিধানে যা-ই লেখা থাকুক; জনগণ কেবলই ‘প্রজা’। আসল রাজা ‘রাষ্ট্র’। আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোতে আরোহণে পুলিশের সহযোগিতা অনিবার্য।
নিজেদের অনিবার্যতা সম্পর্কে পুলিশও বিলক্ষণ সচেতন। তাই তারাও সুযোগ গ্রহণ করে। কিছুদিন আগেই কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় বিএনপির কর্মিসভায় হাজির হয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগ আমলে নির্যাতিত দাবি করে বক্তৃতা করলেন থানার ওসি মঈনুল ইসলাম (সমকাল, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪)। বোঝাতে চাইলেন, তিনি বিএনপির লোক।
মঈনুল ইসলাম মনে করেছেন, রাজনীতির যে অবস্থা, তাতে আগামী নির্বাচনে বিএনপিরই ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই তিনি এখন থেকেই ভবিষ্যতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন। এ ধরনের কাজ আমরা আওয়ামী লীগ আমলেও দেখেছি। পুলিশ সদস্যরা আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জন্য ভোটের প্রচারণা করেছেন। বিরোধী দল মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারের মতো আচরণ করেছেন।
২০২৩ সালের আগস্টে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার ওসি তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের জন্য প্রকাশ্যেই ভোট চেয়ে বক্তৃতা করেছিলেন। একই কাজ করেছিলেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থানার ওসি। তিনিও আওয়ামী লীগকে নিজের দল দাবি করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন। এসব খবর সে সময়কার পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। সমালোচনাও হয়েছে। কিন্তু সরকার তা গায়ে লাগায়নি। কেনইবা লাগাবে! সরকারি দল আর পুলিশ– ইতিহাসের সব পর্যায়েই মিলেমিশে রাষ্ট্র নামে শোষণযন্ত্রকে পাহারা দিয়ে আসছে। সম্পর্কটি তাই সিমবায়োটিক; দু’পক্ষই লাভবান তাতে। যতদিন এই সম্পর্ক ভাঙা না যাবে, পোশাক বদলে কোনো কাজ হবে না।
মোদ্দাকথা, পোশাকের ক্ষেত্রে যতই পরিবর্তন আনা হোক; রাষ্ট্র নিজে যতদিন জনগণের বন্ধু না হবে, ততদিন পুলিশও বন্ধু হবে না। হতে পারবে না। সবার আগে তাই রাষ্ট্রকে জনগণের হতে হবে। কিন্তু চরিত্র না বদলালে রাষ্ট্রও জনগণের হবে না। তাই রাষ্ট্রের চরিত্রকে বদলাতে হবে সর্বাগ্রে। শোষক পুঁজির মালিকানা ভেঙে রাষ্ট্রকে নিয়ে আসতে হবে জনগণের মালিকানায়। লিখতে হবে নতুন খতিয়ান। তখনই কেবল পুলিশ হবে জনগণের বন্ধু। মানুষ তখন পোশাকের দিকে নয়, তাকাবে পোশাকের ভেতরের মানুষটার দিকে।
মোশতাক আহমেদ: কলাম লেখক; অবসরপ্রাপ্ত পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার, জাতিসংঘ
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য ক ষমত আওয় ম বদল ত ক বদল বদল ছ
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক হতে হবে সম্মান ও সমতার
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো, তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। গত জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ঠিক আগের মতো নেই। আমরা দেখছি, এখন কিছু স্তরে সম্পর্ক চলমান, আবার কিছু স্তরে বিশেষ করে রাজনৈতিক পর্যায়ে এ সম্পর্ক এক ধরনের জড়তার মধ্যে পড়েছে। এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে আমি মনে করি, সেই জড়তা কাটানো গেল। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ বৈঠকের মাধ্যমে আলাপ-আলোচনার সুযোগ পেলেন। দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই যোগাযোগের মাধ্যমে পারস্পরিক প্রত্যাশা ও সম্পর্ক আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার পথ তৈরি হলো। এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে একটি বিষয় সামনে এসেছে– সম্পর্কে মতপার্থক্য থাকলেও আলোচনা দরকার। তারা সে উপলব্ধি থেকেই কথা বলেছেন। সেখান থেকে দুই দেশের অবস্থানের বদল হয়েছে বলে মনে হয়নি। তবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যায়ে দুই সরকারপ্রধানের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সম্পর্ক সেভাবে এগিয়ে নিতে হবে।
অস্বীকার করা যাবে না, নিকটতম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ-ভারত পরস্পরের ওপর নানাভাবে নির্ভরশীল। তবে বিগত সময়ে দুই দেশের মধ্যে যে ধরনের সম্পর্ক ছিল, সেখান থেকে প্রতিবেশী হিসেবে সম্মানজনক ও সমতার সম্পর্কে উত্তরণ গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু নীতিগতভাবে বিষয়টি সেই প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। এ জন্য একটি ভিশন তৈরি করতে হবে, সে আলোকে একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে এবং সেখানে সমন্বয় থাকতে হবে। পাশাপাশি এর সপক্ষে জনমর্থনও গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমাদের প্রত্যাশা আছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নিজেও বলেছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। একে আমরা জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন হিসেবেই দেখছি। কিন্তু এটি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের অভ্যন্তরীণ কাজ করতে হবে। যেমন আমি ভিশনের কথা বলেছি। এই ভিশন হতে হবে ‘কনসিস্ট্যান্ট’।
ভারতের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক; যেখানে বাণিজ্য, সীমান্ত, নিরাপত্তা, অভিন্ন নদী আছে। এই বিষয়গুলোর ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে আমরা সমন্বয় করতে পারছি কিনা, তা গুরুত্বপূর্ণ। চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমাদের জনগণের মধ্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেই জনপ্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, অর্থাৎ সমতা ও ন্যায্যতার নীতি কাজে লাগাতে সৃজনশীল, টেকসই ও দক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এই বৈঠকের আগে আমরা দেখেছি, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফর করেছেন। বাংলাদেশের বাস্তবতার কারণেই আমাদের সবার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে যেমন ভারতের সম্পর্ক; তেমনি চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও সম্পর্ক বিদ্যমান। আমাদের দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় যেসব অংশীদার আছে, সবার সঙ্গেই আমাদের স্বার্থে কাজ করতে হবে। চীনের সঙ্গে ভারতের এক ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। সেটা তাদের সম্পর্কের বিষয়। তাদের মতপার্থক্য আমাদের দেখার কিছু নেই। আগে আমরা দেখেছি, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অনেকটা একপক্ষীয় ছিল; সেই অর্থে স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল না। এখন বাংলাদেশের বাস্তবতায় বলা চলে, সম্পর্ক স্বাভাবিক দিকে যাচ্ছে। কাজেই স্বাভাবিক হিসেবে দেশের স্বার্থে সবার সঙ্গে আমরা সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি।
রোহিঙ্গা সংকট আমাদের বড় সমস্যা। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলেই দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের এক ধরনের ত্রিপক্ষীয় যোগাযোগ আছে। প্রধান উপদেষ্টার বেইজিং সফরের সময়েও চীন রোহিঙ্গা বিষয়ে সহযোগিতা করবে– এ রকম একটি ইঙ্গিত দিয়েছে। তারা বলেছে, আমরাও যেন রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করি। রোহিঙ্গা সংকট একটি জটিল সমস্যা। মিয়ানমারে সাত-আট বছরে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা যখন নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসে তখন সেখানে এক ধরনের গণতান্ত্রিক শাসন ছিল; অং সান সু চির দল ছিল ক্ষমতায়। এর পর ২০২১ সালে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হওয়ার পর বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী বিদ্রোহ করে। তারই অংশ হিসেবে আমরা দেখেছি, সম্প্রতি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইনের বড় অংশ দখল করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এ কারণেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আরও বেশি জটিল হয়েছে। এ বিষয়ে অগ্রসর হতে গেলে আমাদের কৌশলী হতে হবে এবং মানবিকতার বিষয়ও দেখতে হবে।
মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হয়েছে বিমসটেক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিমসটেক আঞ্চলিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে; যেখানে ভারতও এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আগামী দুই বছরের জন্য বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর এ আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের চেয়ারের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের নেতৃত্বে বিমসটেকের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য কতটা সফলভাবে সামনে এগিয়ে যাবে, তা দেখার বিষয়। আমরা যদি আঞ্চলিক দেশগুলোর সহায়তায় বিমসটেকে ভালো কিছু করতে পারি, তাও নিঃসন্দেহে মানুষ স্মরণ করবে।
যা হোক, ইউনূস-মোদি বৈঠক প্রসঙ্গে আসি। সেখানে অনেক কথাই হয়েছে। ভারতের দিক থেকে স্থিতিশীলতা, উদার নীতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের প্রত্যাশা প্রকাশ পেয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রত্যাশাও গুরুত্বপূর্ণ। গত দেড় দশকে এর অনুপস্থিতিতেই স্বৈরতন্ত্রের উদ্ভব। চব্বিশের পরিবর্তনের পর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বর্তমান সরকারও কাজ করে যাচ্ছে। টেকসই একটি সমাজ আমরা গড়তে চাই। আমাদের অন্য অংশীদারদেরও প্রত্যাশা, সবাইকে নিয়ে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে টেকসই শাসন কাঠামো তৈরি। যাদের জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে, তারা যেন জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন। সেটাই এখনকার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। সেভাবে আমাদের কাজ করতে হবে। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ যতটা বলিষ্ঠভাবে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে দায়িত্বশীল সরকার তৈরি করতে পারবে এবং সমাজ কাঠামোতে যতই শান্তিপূর্ণ ব্যবস্থা কায়েম হবে ততই আমরা ভারতসহ সবার সঙ্গে সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারব।
এম হুমায়ুন কবির: যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত