Samakal:
2025-02-05@06:46:38 GMT

গাড়িবিলাস

Published: 4th, February 2025 GMT

গাড়িবিলাস

সোমবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদনমতে, এ পর্যন্ত সরকারিভাবে সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা নিয়ে গাড়ি কিনেছেন ৪ হাজার ২০০ আমলা। এ সত্ত্বেও বেশির ভাগ কর্মকর্তা অবৈধভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এতে প্রতি মাসে চালক, রক্ষণাবেক্ষণ ও আনুষঙ্গিক খরচ হচ্ছে ২১ কোটি টাকা। সে হিসাবে বার্ষিক খরচ দাঁড়ায় ২৫২ কোটি টাকা। 

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সচিবদের জন্য গাড়ি ক্রয়ে সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা চালু করে। মূলত আমলাদের বাগে আনতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের জন্য নানা সুবিধার বন্দোবস্ত করেছিলেন। এটি ছিল তারই ধারাবাহিকতা। প্রতিবেদনে সাবেক এক সচিব এ নীতিকে ঘুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যখন গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধিত্বকারী সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ওঠে, তখন তা অত্যন্ত বেদনা ও হতাশার।

প্রতিবেদনমতে, উপদেষ্টাদের কারও কারও বিরুদ্ধে তিন-চারটি গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম দুটি গাড়ি ব্যবহার করছেন। তাঁর জন্য চালক বরাদ্দ রয়েছে ৩ জন। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ একাই ব্যবহার করছেন তিনটি গাড়ি। এভাবে অনেকেই একাধিক গাড়ি ব্যবহার করছেন, যা আইন ও নৈতিকতার পরিপন্থি।

অর্থ সচিব, খাদ্য সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব এবং তাদের পিএস বেআইনিভাবে আলাদা গাড়ি ব্যবহার করছেন। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিবদের বিরুদ্ধেও এ অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া পরিবারের জন্য রেখেছেন আলাদা যানবাহন। 

একটি মিথ্যা হাজার মিথ্যার জন্ম দেয়। তেমনিভাবে একটি অসৎ পন্থা আরও বহু অসততার দিকে ঠেলে দেয়। এ কারণে পরিবহন পুল থেকে সচিবদের জন্য গাড়ি সরবরাহ নীতি বন্ধ হওয়ার পরও বিভিন্ন অজুহাতে মন্ত্রণালয়গুলো গাড়ি কেনা বাড়িয়েছে। সুতরাং, প্রত্যাশিতভাবে আওয়ামী সরকার গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সুদমুক্ত যে ঋণ সুবিধা চালু করেছিল, তা রাষ্ট্রীয় তহবিল তছরুপের পথ প্রশস্ত করেছে। অর্থাৎ সদিচ্ছা ও স্বচ্ছতা না থাকায় একটি দুর্নীতি অন্যান্য দুর্নীতির পথ উন্মুক্ত করেছে। এই তো, ২০১৭ সাল থেকে উপসচিবদেরও একই ঋণ সুবিধা দেওয়া শুরু হয়। প্রতিবেদনমতে, শুরুতে গাড়ি কিনতে ২০ লাখ এবং চালক, তেল বাবদ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে গাড়ি বাবদ ৩০ লাখ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা বাড়ানো হয়। 
গবেষক ও সাবেক আমলা আকবর আলি খান ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ গ্রন্থে সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতিকে ‘সামগ্রিক কাঠামোগত’ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে, এ ধরনের দুর্নীতি নিরন্তর প্রতিক্রিয়া বা চেইন রিঅ্যাকশন সৃষ্টি করে। ‘এক ধরনের দুর্নীতি অন্য ধরনের দুর্নীতির জন্ম দেয়, এক খাত হতে দুর্নীতি অন্য খাতে সংক্রমিত হয়।’ সচিবদের পর উপসচিবদের ঋণ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁর এ মন্তব্য প্রযোজ্য। 

বাংলাদেশ এখন পাঁচ দশকের রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা ও দু্‌র্নীতির কবলে নিমজ্জিত। কাঠামোগত দুর্নীতির কারণে পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হলে আমাদের দরকার নতুন রাজনৈতিক কাঠামো, যা ‘শুয়রের বাচ্চাদের’ অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমেই এসব জঞ্জাল মুক্ত করা সম্ভব। তবে সেই আশা এখনও বহুদূর।
আমলা ও উপদেষ্টাদের গাড়িবিলাস নিয়ে যে প্রতিবেদন দেখা যাচ্ছে, তা স্পষ্টত গণভ্যুত্থানের ‘স্পিরিট’-এর পরিপন্থি। ইতোমধ্যে কয়েকটি বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা উঠলে সরকার তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেছে। আশা করি, গাড়ি বরাদ্দে যেসব অব্যবস্থাপনা রয়ে গেছে, সেগুলোর শিগগিরই নিরসন হবে। 

ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল
Iftekarulbd@gmail.

com 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র করছ ন ঋণ স ব ধ উপদ ষ ট ত কর ছ র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার থেকে আলাদা করার সুপারিশ

বিসিএস শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারভুক্ত না রেখে জুডিশিয়াল সার্ভিসের মতো আলাদা করার সুপারিশ করছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। আর প্রশাসন ক্যাডারের জন্য বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তে এমন একটি সার্ভিস করা হচ্ছে, যেখানে তাদের পদগুলো মাঠ প্রশাসনে সীমাবদ্ধ থাকবে।

তবে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ক্যাডার ও নন–ক্যাডার কর্মকর্তারা পরীক্ষার মাধ্যমে উপসচিব হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার, নন–ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ নেওয়া হবে। বর্তমানে উপসচিব পদে পরীক্ষা ছাড়াই প্রশাসন থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ পদোন্নতি হয়।

আজ প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা। পুরোনো চারটি বিভাগকে চারটি প্রদেশ করাসহ শতাধিক সুপারিশ থাকছে।

এ ছাড়া বিসিএস ক্যাডার পদে শুরুর পদ, অর্থাৎ যোগদানের পদ ষষ্ঠ গ্রেড (বর্তমানে তা নবম গ্রেড) করা, শূন্য পদের বাইরে পদোন্নতি না দিতে সুপারনিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত) পদ বন্ধ করা, উপসচিব পর্যায়ে গাড়ির ঋণসুবিধা বাতিল করা, মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা কমানো, চারটি বিভাগকে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা) চারটি প্রদেশ করাসহ শতাধিক সুপারিশ থাকতে পারে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এর আগে গতকাল সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে শেষবারের মতো সভা করেন কমিশনের সদস্যরা।

এ সময় কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর কাছে সাংবাদিকেরা সুপারিশ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলতে রাজি হননি তিনি। শুধু বলেন, ১০০টির বেশি সুপারিশ আছে। আর সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সেটি হবে পাবলিক ডকুমেন্ট। ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে, সবাই জানবেন।’

আমরা যেসব সুপারিশ করছি, সেগুলো সবই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তবে বাস্তবায়ন করা হবে কি না, সেটা সরকার বুঝবে। আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, প্রধান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

বর্তমানে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীন তিন ধাপের নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডারে নিয়োগ হয়। চাকরিপ্রার্থীদের পছন্দক্রম ও পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ক্যাডার নির্ধারণ করা হয়। ক্যাডারগুলো হলো প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র, কর, কৃষি, আনসার, নিরীক্ষা ও হিসাব, সমবায়, শুল্ক ও আবগারি, পরিবার পরিকল্পনা, মৎস্য, খাদ্য, বন, সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য, পশুসম্পদ, ডাক, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, গণপূর্ত, রেলওয়ে প্রকৌশল, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক, সড়ক ও জনপথ, পরিসংখ্যান ও বাণিজ্য ক্যাডার। একেকটি চাকরির কাজের ধরন একেক রকম। পদ-পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধায় ভিন্নতা আছে। এসব নিয়ে ক্যাডারগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্বও আছে।

এর মধ্যে কর্মকর্তাদের সংখ্যার দিক দিয়ে বিসিএস শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বড় ক্যাডার। শিক্ষা ক্যাডারে কর্মকর্তা প্রায় ১৬ হাজার। আর স্বাস্থ্য ক্যাডারের সদস্য ৩০ হাজারের বেশি। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বিসিএসে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার হিসেবে না রেখে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো আলাদা করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে। তবে এই ক্যাডারের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ক্যাডার থেকে আলাদা করা হলেও উপসচিব পর্যায়ে পদোন্নতির পরীক্ষায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের কর্মকর্তারাও যাতে অংশ নিতে পারেন, সে রকম সুপারিশও থাকছে।

পরিচয় প্রকাশ না করে একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসনের ক্ষেত্রে ভিন্ন রকমের সুপারিশ দিতে যাচ্ছে কমিশন। অন্য ক্যাডারের সঙ্গে সমতা আনতে প্রশাসনকে আলাদা সার্ভিস হিসেবে গণ্য করা হবে। সমবায় ও খাদ্য ক্যাডারও প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত হবে। প্রশাসন ক্যাডারের পদগুলো মাঠ প্রশাসনে (ইউএনও, এডিসি ইত্যাদি) সীমাবদ্ধ থাকবে। মাঠপর্যায়ে শীর্ষ পর্যায়ের পদ হবে বিভাগীয় কমিশনার। তবে আরেকটি শীর্ষ পদ থাকবে, নাম হতে পারে ‘চিফ কমিশনার’। শীর্ষ পদ থেকে মূলত মাঠ প্রশাসনকে তদারকির কাজটি করা হবে। এখন যেটা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শাখা।

বর্তমানে প্রশাসন ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব হতে পারেন। সরকারের এই পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়। বর্তমানে কর্মরত উপসচিবের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬০০। উপসচিব হওয়া কর্মকর্তারাই ধাপে ধাপে ওপরের পদে যাবেন।

বর্তমানে জেলা প্রশাসক হন প্রশাসন ক্যাডার থেকে উপসচিব হওয়া কর্মকর্তারা। কিন্তু উপসচিবদের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের (যেমন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) মধ্যে থেকেও একটি অংশ যাতে ডিসি হতে পারে, সে রকম সুপারিশ করতে পারে সংস্কার কমিশন।

মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি যেসব মন্ত্রণালয়ে একাধিক বিভাগ আছে, সেখানে ‘চিফ সেক্রেটারি’ পদ চালুর সুপারিশ করতে পারে কমিশন। বর্তমানে ২৫ বছর চাকরি করলে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার সুযোগ পান কর্মকর্তারা। এ ক্ষেত্রে তাঁরা পেনশন–সুবিধা পান। এখন ১৫ বছর চাকরি করলেই পেনশন–সুবিধাসহ স্বেচ্ছা অবসরে যেতে পারবেন বলে সুপারিশ করছে কমিশন।

কমিশনপ্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা যেসব সুপারিশ করছি, সেগুলো সবই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তবে বাস্তবায়ন করা হবে কি না, সেটা সরকার বুঝবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রশাসন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে দেখা করলেন তরুণ কর্মকর্তারা
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার থেকে আলাদা করার সুপারিশ