অপরাধ জগতে মেরূকরণ, হত্যা হামলা বেড়েছে খুলনায়
Published: 4th, February 2025 GMT
খুলনায় সন্ত্রাসীদের মেরূকরণ হয়েছে। দীর্ঘদিন পর এলাকায় ফিরে নতুন করে সংগঠিত হয়েছে সন্ত্রাসী পলাশ গ্রুপের সদস্যরা। পুরোনো সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবু, আশিক বাহিনীর অনুসারীদের মধ্যে প্রায়ই তাদের সংঘাত হচ্ছে। নগরীতে সশস্ত্র মহড়া, প্রকাশ্যে খুনের ঘটনাও বাড়ছে। মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, বিগত দিনে হামলা ও হত্যার প্রতিশোধ, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খুন-সংঘাত বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা সন্ত্রাসীদের অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) তথ্য বলছে, গেল নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে খুলনা মহানগরীতে ১০টি খুনের মামলা হয়েছে। বছরের শেষ ৬ মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ২৩টি। অন্যদিকে ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে খুন হয়েছিল মাত্র একটি। শেষ ৬ মাসে হত্যা মামলা ছিল ১১টি। গত জানুয়ারি মাসেই দুটি হত্যা এবং ৬ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে জখম করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খুলনায়ও পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়ে। এই সুযোগে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতারা এলাকায় ফিরে আসে। অনেকে জেল থেকে ফিরে আগের তৎপরতায় জড়িয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
কর্মকর্তারা জানান, ৫ আগস্টের আগে খুলনায় গ্রেনেড বাবু, আশিক ও নূর আজিম গ্রুপের তৎপরতা ছিল বেশি। এর মধ্যে আশিক ও নূর আজিম নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় তৎপরতা চালাত। কিন্তু নগরজুড়ে আধিপত্য ছিল গ্রেনেড বাবুর তৈরি ‘বি কোম্পানির’। নগরীর মাদক সিন্ডিকেটের বড় অংশ ছিল তার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
গত ১ জানুয়ারি নূর আজিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আশিকের ভাই সজীবসহ পরিবারের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর তালিকায় নাম থাকায় দেশে ফেরেনি শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবু। শক্তি প্রদর্শন করতে তৎপর হয়ে ওঠে পলাশ গ্রুপ। গত দুই মাসে ৯ জনকে কোপানাে ও ৩ খুনে গ্রুপটির নাম এসেছে।
সন্ত্রাসীদের তৎপরতার বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন এমন দুই ব্যক্তি জানান, মাত্র দুই মাসের মধ্যে বাহিনী তৈরি করে বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে পলাশ গ্রুপ। দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, লোকবল তৈরি করে তার উত্থান অবিশ্বাস্য রকম দ্রুততার সঙ্গে ঘটেছে। গ্রেনেড বাবুর সঙ্গে বিরোধ ছিল এমন সন্ত্রাসী ট্যাঙ্কি শাওন, কালা লাভলু এবং দেলোও পলাশের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। এছাড়া পুরোনো সন্ত্রাসী সুমন শেখ ওরফে বোমা সুমন, কালা রনি, দাদো মিজান সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, ১২ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। আরও অভিযান চলছে।
আলোচিত ৫ খুন, মামলা গতিহীন
গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের ১০টি খুনের মধ্যে রিকশাচালক তাসিনুরকে হত্যা করে রিকশা ছিনতাই, হরিণটানার কৃষ্ণপদ হত্যা, অজ্ঞাত দুটি লাশ উদ্ধার এবং সাবেক এমপি মন্নুজান সুফিয়ানের ভাগনে রূপম হত্যা মামলার সুরাহা হয়েছে। অন্য ৫টি মামলা নিয়ে আলোচনা চলছে নগরজুড়ে। এসব মামলায় মোট আসামি ছিলেন ৪২ জন। এর মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত ২ নভেম্বর রাতে নগরীর আলকাতরা মিল এলাকায় সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে আশিকুর রহমান ওরফে পঙ্গু রাসেলকে হত্যা করে।
গত ২৯ নভেম্বর রাতে নগরীর টুটপাড়া এলাকায় গুলি ছুড়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আমিন মোল্লা বোয়িংকে গুরুতর আহত করে সন্ত্রাসীরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, আশিকের ভাই সজীবসহ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
১৮ ডিসেম্বর হাজী মুহসীন রোডে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে রংমিস্ত্রি মো.
গত ২০ জানুয়ারি পুরাতন রেলস্টেশন এলাকায় ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মানিক হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মেহেদী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি রাতে নগরীর তেঁতুলতলা মোড়ে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকারকে হত্যা করে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও পলাশ গ্রুপ জড়িত।
কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের টহল, চেকপোস্ট, গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো হচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে। খুব শিগগির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর এল ক য় নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ১৭ এপ্রিল সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ
গাজায় ইসরায়েলের চলমান নৃশংস গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। একই সঙ্গে অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গণতন্ত্র মঞ্চ গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে ১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে।
আজ বুধবার দুপুরে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে মঞ্চের বর্তমান সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভায় এ কথা বলা হয়। পরে গণতন্ত্র মঞ্চ এ নিয়ে গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়।
বিজ্ঞপ্তিতে গাজা খালি করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবাসন তৈরির পাঁয়তারাকে বেসামাল আগ্রাসী অপতৎপরতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন ও সংহতিও ব্যক্ত করা হয়।
সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনের স্থবিরতা ও অকার্যকারিতায় সামাজিক নৈরাজ্যের বিস্তার ঘটছে, মব–সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে। জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে বলেও সভায় বলা হয়।
গণতন্ত্র মঞ্চের ওই সভার প্রস্তাবে বলা হয়, সামাজিক নৈরাজ্যের এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিনিয়োগসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহসভাপতি কে এম জাবের। নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার প্রমুখ।
নতুন সমন্বয়ক
আগামীকাল ১০ এপ্রিল থেকে পরবর্তী তিন মাসের জন্য গণতন্ত্র মঞ্চের নতুন সমন্বয়কের দায়িত্বপালন করবেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম। মঞ্চের বর্তমান সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আজকের সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।