সংগীত আমাদের জীবনে আবেগের ভাষা। আমরা যখন কথা দিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি না, তখন সংগীত হয়ে ওঠে আমাদের একান্ত সঙ্গী। সংগীত বা মিউজিক থেরাপি ঠিক এমনই একটি উপায়, যা সংগীতের মাধ্যমে মন ভালো রাখা এবং মানসিক সুস্থতা ফিরিয়ে আনার সুযোগ দেয়। এ থেরাপি উদ্বেগ, বিষণ্নতা কিংবা অন্যান্য মানসিক চাপে থাকা মানুষের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
কীভাবে কাজ করে মিউজিক থেরাপি?
মিউজিক থেরাপি শুধু অনুভূতি প্রকাশের একটি মাধ্যম নয়, এটি আমাদের মনের গভীরে কাজ করে। যেখানে আমাদের আবেগ, চিন্তা এবং আত্মবিশ্বাস একসঙ্গে যুক্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সংগীত আমাদের মস্তিষ্কের এমন অংশকে সক্রিয় করে, যা আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সংগীতের সুর, লহরি এবং রিদম আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মতো হরমোন তৈরি করে, যা মন ভালো রাখতে সহায়ক।
এ ছাড়া সংগীত শোনার সময় আমাদের মস্তিষ্কের স্নায়ুসংযোগ আরও দৃঢ় হয়; যার ফলে আবেগ এবং চিন্তার মধ্যে সমন্বয় তৈরি হয়। মিউজিক থেরাপি আমাদের মনের চাপ কমায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই পদ্ধতি মনের গভীরে শান্তি এনে দেয় এবং আমাদের আরও ভালো অনুভব করতে সাহায্য করে।
মিউজিক থেরাপির উপকারিতা
মিউজিক থেরাপি আমাদের মনকে শান্ত রাখে। এর কিছু সহজ এবং গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো–
উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমানো: যখন আমাদের মন কোনো চাপের মধ্যে থাকে, সংগীত তা কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে মনে শান্তি আসে।
মানসিক চাপ কমানো: সংগীত মানসিক চাপ হালকা করে। এর ফলে আমরা আবার আরাম অনুভব করতে পারি।
মনের ভারসাম্য ধরে রাখা: এই থেরাপি আমাদের মনকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে, যাতে আমরা সহজে শান্ত থাকতে পারি।
আত্মবিশ্বাস বাড়ানো: সংগীত আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। সেই সঙ্গে নতুন করে ইতিবাচকভাবে ভাবতে সাহায্য করে।
সমস্যা সমাধানে সাহায্য: এটি আমাদের চিন্তাভাবনা পরিষ্কার করে। এতে সমস্যা সমাধানও বেশ সহজ হয়।
আপনার জন্য কোন ধরনের মিউজিক থেরাপি প্রয়োজন?
প্রত্যেক মানুষের আবেগ বা মানসিক পরিস্থিতি আলাদা। মানসিক পরিস্থিতি এবং আবেগীয় অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মিউজিক থেরাপির ধরনও হতে পারে ভিন্ন। একজন মনোরোগ চিকিৎসকই বলতে পারবেন আপনার জন্য কোন মিউজিক থেরাপি সবচেয়ে ভালো কাজ করবে।
অ্যানালাইটিক্যাল থেরাপি: নিজের অনুভূতি বা চিন্তা নিয়ে আপনি কিছুটা বিভ্রান্ত হন এবং সেগুলো কথা বলার মাধ্যমে বুঝতে চান, তাহলে এই থেরাপি আপনার জন্য ভালো হবে। এখানে সংগীতের মাধ্যমে আপনি নিজের মনের কথা বলার সুযোগ পাবেন।
রিসেপটিভ থেরাপি: আপনি মানসিক শান্তি বা আরাম অনুভব করতে চান? সংগীত শোনা আপনার জন্য একটি দারুণ উপায়। এর মাধ্যমে আপনার মন শিথিল হয়ে যাবে এবং আপনি শান্তি পাবেন।
কম্পোজিশনাল থেরাপি: আপনি নিজে সংগীত রচনা করে যদি মনের কথা প্রকাশ করতে চান, এটি আপনার জন্য সঠিক থেরাপি হতে পারে। এতে আপনি সংগীতের মাধ্যমে অনুভূতির মুক্তি পাবেন।
ইমপ্রোভাইজেশনাল থেরাপি: যদি আপনি নিজের মনের অবস্থা সংগীতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করতে চান, তাহলে এই থেরাপি আপনার অনুভূতি তুলে ধরতে সাহায্য করবে।
কীভাবে মিউজিক থেরাপিস্ট খুঁজবেন?
আমাদের দেশে যদি আপনি মিউজিক থেরাপিস্ট খুঁজতে চান? প্রথমেই স্থানীয় থেরাপি সেন্টার বা মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় যোগাযোগ করতে পারেন। অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মিউজিক থেরাপি সেবা দেওয়া হয়। সেগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেও আপনি একজন দক্ষ মিউজিক থেরাপিস্ট খুঁজে পেতে পারেন। এ ছাড়া কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও মিউজিক থেরাপিস্টদের খোঁজ পাওয়া যায়, যেখানে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী থেরাপিস্ট নির্বাচন করতে পারেন। v
সূত্র: আমেরিকান মিউজিক থেরাপি অ্যাসোসিয়েশন, ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর মিউজিক থেরাপি
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ য য কর র মন র
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে ‘বিনা লাভের দোকান’ চালু করেছে শিক্ষার্থীরা
নড়াইলে রমজানে ক্রেতা সাধারণের মনে স্বস্তি দিতে ও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে বিনা লাভের (কেনা দামে বিক্রি) দোকান চালু করা হয়েছে।
সোমবার (১০মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জেলা টাস্কফোর্স টিম ও কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব নড়াইল জেলা শাখার উদ্যোগে পরিচালিত বিনা লাভের দোকানটি উদ্বোধন করেন নড়াইল জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এম এম আরাফত হোসেন, জেলা ক্যাবের সেক্রেটারি ও টাস্কফোর্স টিমের সদস্য কাজী হাফিজুর রহমান, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান, টাস্কফোর্স টিমের সদস্য শুভ মোল্যা, ক্যাব সদস্য স্বপ্না রানী রায় প্রমুখ।
নড়াইল জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, এই মহতি উদ্যোগের কারণে রমজানে সাধারণ ক্রেতা-ভোক্তারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
আরো পড়ুন:
পদ্মায় গোসলে নেমে এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু
ঢাবি কেন্দ্রীকতার প্রতিবাদ
২ ঘণ্টা রেললাইন অবরোধ করে রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
এ দোকানে ডিম, আলু, বেগুন, পেঁয়াজ ও রসুন বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি পিস ডিম ১০.৩০ টাকা, প্রতি কেজি আলু ১৬ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ৫০ টাকা, পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩৫ টাকা, রসুন প্রতি কেজি নতুন ৭০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
ভওয়াখালী গ্রামের ক্রেতা আকিকুর রহমান জানান, বিনা লাভের দোকান থেকে ন্যায্যমূল্যে পণ্যে কিনতে পেরে তিনি খুশি। খোলা বাজারে বেগুন ৬০-৭০ টাকা, রসুন ৮০-৯০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকা, আলু ২০ টাকা, ডিম প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১১-১২ টাকা। অথচ এই দোকান থেকে তিনি বেগুন ৫০ টাকা, আলু ১৬ টাকা, ডিম প্রতি পিস সাড়ে ১০ টাকা, পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, রসুন ৭০ টাকা কিনতে পেরেছেন।
দোকানটি পরিচালনায় রয়েছেন হাসিব, শুভ মোল্যা, নওয়াব মোল্যা, শাহারুল, ফাহমিদা ফাইজা এবং একজন ক্যাব সদস্য ও একজন সাংবাদিক প্রতিনিধি।
ঢাকা/শরিফুল/বকুল