অন্য জেলার চেয়ে বগুড়ায় ছুরিকাঘাতের ঘটনার চিত্র ভয়াবহভাবে বেড়েছে। গত দুই বছরে বগুড়ায় প্রতিমাসে গড়ে ১০টি করে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাগুলোর অধিকাংশই ঘটেছে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। কথার আগেই যেন ছুরি চলে এ জেলায়।

কেন বাড়ছে ছুরিকাঘাতের ঘটনা? কেন এর প্রতিকার হচ্ছে না? কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, আসামি পক্ষের ভয়ভীতি এবং স্থানীয়ভাবে মীমাংসার কারণে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ মামলায় যাচ্ছে না বা মামলার পরেও আপস-মীমাংসা করছে। ছুরিকাঘাতের ঘটনা রোধের একটি উপায় হিসেবে পুলিশও বাদী হয়ে আগ বাড়িয়ে মামলা করছে না। অন্যদিকে এই ঘটনাকেন্দ্রিক যে বিচারিক কার্যক্রম সেটিও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না সংশ্লিষ্টদের নিয়ম লঙ্ঘন এবং বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে। ফলে সামান্য কথা কাটাকাটির জেরেই ছুরিকাঘাত একটা মামুলি বিষয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। ছুরিকাঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও তার পরিবার, প্রশাসন, আইনজীবীদের সাথে বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী- ২০২৩ সালে ছুরির আঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছিলেন ১৫৩ জন। ২০২৪ সালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১১৫ জন। জেলা পুলিশ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী (যেগুলোর মামলা হয়েছে) ২০২৩ সালে ছুরিকাঘাতে আহতের সংখ্যা ৭৫টি আর নিহতের সংখ্যা ১৫টি। ২০২৪ সালে ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন জেলার ১০৪ জন এবং মারা গেছেন ২০ জন।

২০২৪ সালের নভেম্বরে বগুড়া সদর উপজেলার সাবগ্রাম ইউনিয়নের আকাশতারা এলাকায় ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে ইসতিয়াক রহমান (২১) নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাত করেন সিজান (১৫) নামের এক কিশোর। বাম পাশের কিডনির নিচে দুটি স্ট্যাব করা হয়। ২০ দিনেরও বেশি সময় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ইসতিয়াক। 

এ বিষয়ে ইসতিয়াকের বড় ভাই ইখতিয়ার বলেন, “ছুরিকাঘাতটি তার বাম পাশের কিডনির নিচে অনেক বেশি গভীরে চলে গিয়েছিল। এজন্য অপারেশন করতে হয় তাকে। এ বিষয়ে আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু আসামি পক্ষের লোকজন আমার বাবা-চাচাদের কাছে অনেক অনুনয় করার কারণে মামলা করা হয়নি। স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়েছে।”

গত বছরের নভেম্বরে মোবাইল চুরির ঘটনা কেন্দ্র করে বগুড়ার সোনাতলা পৌর শহরের কলাগাছী পাড়ায় বেলাল হোসেন নামের এক যুবক সায়েদ আলী নামের এক পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তির পিঠে ছুরিকাঘাত করেন। 

ঘটনাটি জানিয়ে সায়েদ আলীর ছেলে শাজাহান আলী বলেন, “ঘটনার পর তারা আদালতে এ বিষয়ে মামলা করেছিলেন। তবে বেলাল আমাদের আত্মীয় হওয়ায় স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে নিয়েছি। পরবর্তীতে আদালত থেকে মামলা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।” 

একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বগুড়া সদর উপজেলার ফাঁপোড় ইউনিয়নের কৈচর মধ্যপাড়া মাদ্রাসা মাঠে ফুটবল খেলা নিয়ে দ্বন্দ্বে আরাফাত ও রিয়াদ নামে দুই ভাইকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এদের মধ্যে আরাফাতকে বুকে আর রিয়াদ বুকে, পায়ে এবং নিতম্বে ছুরিকাঘাত করা হয়। রিয়াদ মারা যান ওই দিনই। আরাফাত দুই দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায় ফেরেন। তারা ওই গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা আনন্দ নামে একজনকে ধরে সেনাবাহিনীর কাছে দেয়। পরে তাকে সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। 

এ বিষয়ে রিয়াদ ও আরাফাতের চাচাতো ভাই মো.

শামীম আহমেদ বলেন, “ফুটবল খেলা নিয়েই এ ঘটনা ঘটিয়েছে জিম, আনন্দ, জিসান, পায়েল, আকাশ, শুভ। আমিও ফুটবল খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। আমরা চার জনকে আটক করেছিলাম। দুজনকে মেম্বার ছেড়ে দিয়েছে। একজন পালিয়ে গেছে। একজনকে আমরা সেনাবাহিনীর কাছে দিয়েছি।” 

মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “রিয়াদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে।”

আরাফাতকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা চেষ্টা করা হলো এ সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা হয়নি কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শুধুমাত্র রিয়াদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাতেই মামলা হয়েছে। আরাফাতেরটাও ওটার মধ্যেই আছে।”

২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর রাতে শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়ায় বন্ধুদের সাথে পূজা মণ্ডপে ‍ঘুরতে গিয়ে ছুরিকাঘাতের শিকার হন তিনজন। এদের মধ্যে জুনায়েদ আলী (২০) নামের যুবককে বুকে, মিল্লাত হোসেন ও জামিরুল ইসলামের পায়ে স্ট্যাব করা হয়। বুকে ছুরির আঘাত করার কারণে জুনায়েদ মারা যান। 

এ বিষয়ে কথা হয় ছুরিকাঘাতের শিকার মিল্লাত হোসেনের মায়ের সাথে। তিনি বলেন, “আমার ছেলে বন্ধুদের সাথে বেজোড়ায় বন্ধুদের সাথে পূজা মণ্ডপে ঘুরতে যায়। তারা অটোতে ছিল। রং সাইড দিয়ে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল যাওয়ার সময় অটো চালক মোটরসাইকেল চালককে উদ্দেশ্য করে বলেছিল ‘গাজা খেয়ে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে’। এই কথা শুনে তারা মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে অটো রিকশার সামনে এসে আমার ছেলেসহ আরো দুই জনকে ছুরিকাঘাত করে চলে যায়। একজন তো মারাই গেছে। আমার ছেলে তিনদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। আমার ছেলে এবং তার বন্ধুরা সবাই ছোট। যারা ছুরি মেরেছে তাদেরকে ওরা চিনত না। ওরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর শিকার করেছে তারা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল। ছেলেকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় আমরা কোন মামলা করিনি। তবে হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকার বাদী হয়ে মামলা করেছে।”

কাহালু উপজেলার নারহট্টগ্রামের সুলতান নামের এক যুবক তার বন্ধুর দ্বারা ছুরিকাঘাতের শিকার হন। তুচ্ছ ঘটনায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করানোর পর তিনি সুস্থ হন। তবে এ ঘটনায় তারা থানায় কোন মামলা দায়ের করেননি। এসব কথা জানান সুলতানের ভাই বায়েজীদ বোস্তামি।

একই বছরের অক্টোর মাসে বগুড়া সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের হরিগাড়ী গ্রামের শাহাদত হোসেন (২৫) নামের এক যুবককে গাছের সাথে বেধে বেধড়ক পেটানোর পর পায়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। 

ঘটনার বিস্তারিত জানাতে গিয়ে শাহাদতের বাবা শামসুল হক বলেন, “আমার ছেলে দর্জির কাজ করত। ঢাকায় কাজ শিখে গ্রামে ফিরে সেখানেই একটি টেইলার্স দিয়েছিল। নারী-পুরুষের পোশাক তৈরি করত। এই সূত্রে ওই গ্রামের পাপ্পু নামে এক ব্যক্তির মামাতো বোনের সাথে শাহাদতের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় তিন মাসের মত তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর মধ্যে একদিন রাতে পাপ্পুসহ আরো চার জন আমার ছেলের দোকানে গিয়ে তাকে সেখান থেকে বের করে একটি গাছের সাথে বেঁধে বেধড়ক পেটায়। মাথা ফাঁটিয়ে দেয়। পিঠ ফাঁটিয়ে দেয়। পায়েও একই অবস্থা করে। এরপর পায়ে কয়েকটি চাকু মেরে ফেলে রেখে যায়। পরে বিষয়টি জানতে পেরে ছেলেকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করাই। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলাও করেছিলাম। কিন্তু মামলার আসামি এবং থানার দারোগা তাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। আমি গরিব মানুষ, তাই বেশি কিছু করতে পারিনি।”

এসব বিষয়ে বগুড়া জজকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট দিলরুবা নুরী বলেন, “স্ট্যাবিংয়ের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আইন আছে। স্ট্যাবিংয়ে মামলা না হওয়ার ঘটনাও আছে প্রচুর। ভিকটিমরা মামলাতেই যায় না। অভিযোগটাই দায়ের হচ্ছে না। থানা অবধি যাচ্ছে না। তার আগেই ঘটনার সমঝোতা হচ্ছে। এর কারণ বিচারহীনতা, বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা, ভিকটিম বা তার পরিবারের হয়রানি, অর্থব্যয় সব মিলে বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজ মননে নেতিবাচক প্রভাব থাকায় তারা মামলায় যাচ্ছে না।” 

বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অ্যাডভোকেট নুরী বলেন, “এরকম ঘটনায় দেখা যায় টাকার বিনিময়ে অথবা ক্ষমতার প্র্যাকটিস করে বা ভয়ভীতি এলাকায় থাকতে হবে নিজেদের সুরক্ষা বিবেচনায় মামলা পর্যন্ত না গিয়ে টাকা পয়সা দিয়ে এটাকে মিনিমাইজ করা হচ্ছে। এরকম একটি অপরাধমূলক বিষয়েও যখন শেষ পর্যন্ত শাস্তি পর্যন্ত আসছে না। কোন অপরাধ করে টাকার বিনিময়ে পার পাওয়া গেলে অপরাধ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে যেগুলো অভিযোগ হিসেবে আসে- হয়তো থানায় অভিযোগ এলো, আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে কি দেবে না এর তদন্তভার যে পুলিশ কর্মকর্তার কাছে থাকে, সেই পুলিশ কর্মকর্তা হয়তো একদিকে আসামির কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসামিকে বলছে যে, তার নাম রাখবে না চার্জশিটে। বাদীকে বলছে নাম রাখবে। দুইপক্ষের কাছ থেকে টাকা খেয়ে খেয়ে দীর্ঘ সময় নেয় চার্জশিট দেওয়ার ক্ষেত্রে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাদী পক্ষ যদি প্রভাবশালী না হয় আসামিপক্ষ বিচার শুরু হওয়ার আগেই চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পেয়ে যায়। চার্জশিটে যখন নাম থাকে না, তখন তার আর বিচারই শুরু হয় না।” 

তিনি আরো বলেন, “একটি ঘটনা যখন একটি এলাকায় ঘটছে, মানুষ দেখছে কে ঘটিয়েছে। এরপর যখন মানুষ দেখছে ওই ব্যক্তি খালাস পেয়ে যাচ্ছে, তখন ওই এলাকার মননে আসবে যে বিচার হয় না। তখন সমাজের মধ্যে কিন্তু এটা প্রমাণিত হয়ে যায় যে, বিচারহীনতা আছে। রাষ্ট্রীয়ভাবেও বিচার হয় না। তখন নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতাটা বেড়ে যায়।” 

বগুড়া জজকোর্টের এই আইনজীবী আরো বলেন, “ছুরিকাঘাত একটি আমলযোগ্য অপরাধ। এই আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ নিজেই পদক্ষেপ নিতে পারে। নিজেই এফআইআর করে মামলা করতে পারে। তবে এটা একেবারে পুলিশের অবলিগেশনের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু যদি ভিকটিম ভয়ভীতির মধ্যে আছে কিংবা তার সুরক্ষা ইত্যাদি অনেক কিছু বিবেচনা করে তারা যদি চায় এই অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবে, তারা করতে পারে।” 

বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম মইনুদ্দীন বলেন, “ছুরিকাঘাতের ঘটনায় কেউ মামলা করতে গেলে আঘাতের ধরন দেখে মামলার ধারা নির্ধারণ করা হয়। ঘটনার শিকার ব্যক্তির আঘাতের মাত্রা যেমন তার মামলার ধারাও তেমন। সাধারণত ছুরিকাঘাতের ঘটনায় ৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/ ৩০৭ ধারাগুলোয় মামলা অন্তর্ভুক্ত করা হয় এরকম ঘটনায়।”

ছুরিকাঘাতের ঘটনায় মামলার পর যেসব আসামি ধরা পড়ে তাদের ভবিষ্যত কী হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জামিনের ক্ষেত্রে এটি ম্যাজিস্ট্রেটের ইচ্ছে। অনেক সময় দ্রুত জামিন দেন আবার অনেক সময় দেন না। উকিলের উপরও নির্ভর করবে, কোন উকিল কেমন কথা বলবে।”

ছুরিকাঘাতের ঘটনায় দেখা যায়, মামলার পরিমাণ অনেক কম হয় এর কারণ কি? ভিকটিম যদি মামলা না করে সেক্ষেত্রে এ ধরণের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে মামলা করার কোন সুযোগ আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আইনগত কোন সুযোগ নেই। রাষ্ট্রীয় বিষয়ে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা নিতে পারে কোন ব্যক্তিগত বিষয়ে মামলা নিতে পারে না। যেমন কোন হত্যাকাণ্ড ঘটলো কিংবা লাশ পাওয়া গেলো অজ্ঞাত, আত্মীয় স্বজন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এমন বিষয় হলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করতে পারে। কিন্তু আহত কোন ব্যক্তি যদি তার আঘাতের বিচার না চায়, তবে তার পক্ষে বাদী হয়ে পুলিশের মামলা করার সুযোগ নেই।”

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান বলেন, “সময় লাগে ছুরিকাঘাতের মামলার বিচার করতে। আমরা মামলার পর ইনভেস্টিগেশন করে সত্যতা বের করে চার্জশিট দিয়ে দিচ্ছি। পরের কাজ কোর্টের। এরকম ঘটনায় মামলার পর শাস্তি প্রক্রিয়া পর্যন্ত পৌঁছাতে সর্বনিম্ন এক বছর লেগে যায়। এটা নরমাল ইস্যু। বিচার পর্যন্ত একটি মামলার মাসে একটির বেশি হাজিরা পড়ে না। তো একটি মামলার ক্ষেত্রে ১০টা, ১২টা, ১৪টা হাজিরা তো লাগেই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ভিকটিম বা তার পরিবার মামলা করতে চায় না।” 

কেন করতে চায় না এরকম কোন অবজার্ভেশন আপনাদের আছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ নিয়ে আমাদের কোন গবেষণা নেই। তবে স্বাভাবিকভাবে অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি যে, দুই পক্ষ সমঝোতা করছে। তারা আর মামলা করতে আগ্রহী হয় না বা কেউ ভয় ভীতি পাচ্ছে এরকম কোন কারণে হয়তো হয় না।” 

ছুরিকাঘাতের ঘটনায় তো পুলিশ চাইলেই বাদী হয়ে মামলা করতে পারে, পুলিশ এটা করছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ক্রিমিনাল মামলার মূল জিনিসটি হচ্ছে একটি পক্ষ নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত ভাবছে কিনা। সে যদি নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত না ভাবে যে তাকে ছুরি মেরেছে বা আঘাত করেছে এটি তার কোন ক্ষতি না এক্ষেত্রে সে না চাইলে সে মামলা নাও করতে পারে। তবে ভিকটিম বা ভিকটিমের পরিবার শনাক্ত থাকার পরেও তারা বাদী হয়ে মামলা করলো না, এক্ষেত্রে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করলো এরকম প্র্যাকটিস আপাতত নেই। কারণ, দুই পক্ষের মধ্যে তো এরকম ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে, দুই পক্ষের মধ্যে যদি একপক্ষ মনে করে থাকে সে ক্ষতিগ্রস্ত না তাহলে পুলিশ এখানে আগ বাড়িয় মামলা করবে না। আগে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত মনে হতে হবে। আমরা সেই জায়গাগুলোতেই বাদী হচ্ছি যেখানে আসলে অপরাধী পাওয়া যাচ্ছে না এবং যে ব্যক্তি ভিকটিমাইজ হয়েছে সে জীবিতও না। ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ আমরা আবিষ্কার করতে পারছি না। তার মানে কি ওই ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত বিচার বিহীন যাবে এরকম ঘটনায় আমরা নিজেরা বাদী হয়ে নিই। যখন অজ্ঞাত ব্যক্তির কেউ থাকে তখন রাষ্ট্র তার পাশে দাঁড়ায়।”

স্ট্যাবিংরোধে আপনাদের করণীয় কি জানতে চাইলে তিনি তিনি বলেন, “অন্যান্য জেলার চেয়ে আমাদের জেলায় স্ট্যাবিং আসলেই বেশি হচ্ছে। এটির জন্য আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক কিছু প্রোগ্রাম করব। যদিও এটি অন্য ডিপার্টমেন্টের করার কথা। এটি তাদের সুযোগ আছে এবং তারা আইনগতভাবে বাধ্য। সেই ডিপার্টমেন্টগুলোকে নক করতে হবে এসব ক্ষেত্রে।”

বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আব্দুল বাসেদ বলেন, “স্ট্যাবিং বাংলাদেশের অন্যান্য যে কোন জায়গার চেয়ে বগুড়ায় তুলনামূলক বেশি ঘটছে। স্ট্যাবিংয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিরা খুব সহজে জামিন পাচ্ছে না। এসব আসামিদের জন্য সেপারেট কোন আইন নেই। অস্ত্র উদ্ধার হলে ১৮৭৮ সালের যে অস্ত্র আইন আছে, ওই আইনের যে ধারায় মামলা হচ্ছে। গ্রেপ্তারের পর অন্তত দুই মাসের নিচে কোন জামিন বিবেচনা করা হয় না। আবার কখনও কখনও চার মাসের আগে তাদের জামিন হচ্ছে না, বিশেষ করে যাদের কাছ থেকে চাকু উদ্ধার হচ্ছে। এছাড়া যথোপযুক্ত স্বাক্ষী প্রমাণ পেলে শাস্তিটা নিশ্চিত হচ্ছে। শাস্তির খাতা থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। স্বাক্ষী পেলে তো আদালত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। কিন্তু স্বাক্ষী না পেলে তো সেখানে আর কোন উপায় থাকে না।”

বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, “স্ট্যাবিং রোধে আমাদের পক্ষ থেকে স্থানীয় বাজারে যে বার্মিজ ছুরি, চাকু বিক্রি নিষিদ্ধ করেছি। এরপরেও যেখানে এরকম ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে সেখানে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোর তৎপরতা রাখা হয়। যেমন যেখানে জনসমাগম বেশি হয়, মেলায় কিংবা কোন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর পেট্রোল টিম সতর্ক অবস্থা থাকে। সে কারণে কিন্তু আগের চেয়ে এখন ছুরিকাঘাতের সংখ্যা কমেছে।”

ঢাকা/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ র ক ঘ ত র ঘটন য় ছ র ক ঘ ত কর ন ম র এক য র উপজ ল র ন দ র কর র পর ব র কর র ক আর ফ ত অপর ধ ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

১৮ ঘণ্টায় কী ঘটেছিল, যা ট্রাম্পকে শুল্কনীতি স্থগিত করতে বাধ্য করেছিল

যুক্তরাষ্ট্র ৯ এপ্রিল হঠাৎ করেই আমদানি পণ্যের ওপর ১০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এতে বন্ডের বাজারে বেজে ওঠে অশনিসংকেত। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বৈশ্বিক বাণিজ্যে পরিবর্তনের উদ্যোগ গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা দানা বাঁধতে থাকে।

নতুন মার্কিন শুল্কনীতির প্রভাবে এক সপ্তাহের মধ্যে মার্কিন শেয়ারবাজারের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১২ শতাংশ বাজার মূলধন হারায়। এরপরও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা অব্যাহতভাবে বলতে থাকেন, তাঁরা আত্মবিশ্বাসী। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, ট্রাম্পের বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পরিবর্তন এবং কয়েক দশকের পুরোনো বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকে বাতিল করে দেওয়ার পরিকল্পনা বেশ ভালোভাবে কার্যকর হবে।

হোয়াইট হাউসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন শেয়ারবাজার (ওয়াল স্ট্রিট) বুঝতে পারে না, একজন সাধারণ মার্কিন নাগরিক প্রতিদিন কী চান—আর সাধারণ নাগরিকেরা এখনো ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই ট্রাম্প তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসেন। তিনি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাত আরও উত্তপ্ত করে তুললেও অন্যান্য দেশের ওপর নতুন শুল্ক স্থগিত করেন। এই আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে পুঁজিবাজারের সূচকে বড় ধরনের উত্থান ঘটে।

মাত্র এক সপ্তাহ আগে নেওয়া শুল্কনীতি পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথে পোস্ট দেওয়ার প্রায় ৯০ মিনিট পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়, মানুষ এটিকে আর্থিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দিন হিসেবে আখ্যায়িত করছে।’

ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত অনেককেই হতবাক করেছে। বিশেষ করে যখন তাঁর প্রশাসন বলে আসছিল, এর মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করতে চান ট্রাম্প।

তবে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত ট্রাম্প ও তাঁর বাণিজ্য উপদেষ্টারা বহু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এবং বিদেশি নেতার সঙ্গে আলাপ করেছেন, যাঁরা বিশ্ববাজারে অস্থিরতা ও বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান মন্দার আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে কিছু করার জন্য তাঁরা ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

গতকাল বুধবার বিকেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কয়েক দিন ধরেই তিনি নিজের মত বদলানোর কথা ভাবছিলেন। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত আজ সকালেই, বেশ সকালেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা দ্রুত এ–সংক্রান্ত পরিকল্পনা লিখে ফেলি। আমরা কোনো আইনজীবীর দ্বারস্থ হইনি। আমরা এটি আমাদের হৃদয় থেকে লিখেছি।’

গত মঙ্গলবার রাতে ফক্স নিউজে শন হ্যানিটির রাত ৯টার অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া একদল রিপাবলিকান সিনেটরের সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ফোনালাপ করেন ট্রাম্প। এ সময় কিছু সিনেটর ট্রাম্পের নতুন আরোপিত শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওই সন্ধ্যায় ট্রাম্প বন্ড বাজারেও নজর রাখছিলেন, যেখানে মানুষজন কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন। গতকাল ট্রাম্পই এ কথা বলেছেন।

শন হ্যানিটির সাক্ষাৎকারের শেষে বিজ্ঞাপন বিরতির আগে সিনেটর জন নিলি কেনেডি শুল্ক নিয়ে ‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে উপস্থাপকের কাছে ১৫ সেকেন্ড সময় চেয়েছিলেন।’

মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত ট্রাম্প এবং তাঁর বাণিজ্য উপদেষ্টারা বহু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এবং বিদেশি নেতার সঙ্গে আলাপ করেছেন, যাঁরা বিশ্ববাজারে অস্থিরতা এবং বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান মন্দার আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে কিছু করার জন্য তাঁরা ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে কেনেডি বলেন, সময় চাওয়ার কারণ ছিল, সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম তাঁকে বলেছিলেন, ট্রাম্প অনুষ্ঠানটি দেখবেন। হ্যানিটির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কেনেডি ও গ্রাহাম ছাড়াও সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা জন থুন, রিপাবলিকান সিনেটর টিম স্কট, সাউথ ক্যারোলাইনার কেটি বয়েড ব্রিট, আরকানসর টম কটন, টেক্সাসের টেড ক্রুজ এবং ওকলাহোমার মার্কওয়েন মুলিন উপস্থিত ছিলেন।

কিছু সিনেটর ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসা অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলাপ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এসব সিনেটরের কয়েকজন অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

গ্রাহাম বলেন, তিনি মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্পকে বলেছেন, ‘কোনটা যথেষ্ট আর কোনটা যথেষ্ট নয়, তা ঠিক করার দায়িত্ব আমি আপনার ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু আমি মনে করি, আপনি বুঝতে পারছেন, মানুষজন সত্যিকারের অগ্রগতি চাইছে।’

আরও পড়ুনট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে চীনের ‘অস্ত্রের’ মোকাবিলায় কি জিততে পারবে যুক্তরাষ্ট্র২২ ঘণ্টা আগে

সিনেটর ট্রেড ক্রুজ বলেন, তিনি ট্রাম্পকে বলেছেন, শুল্কের ক্ষেত্রে প্রশাসনের সামনে দুটি পথ রয়েছে। একটি হচ্ছে ট্রাম্প অন্যান্য দেশকে তাদের নিজস্ব শুল্ক কমাতে রাজি করানোর জন্য পাল্টা শুল্ক ব্যবহার করতে পারেন। অন্যটি হচ্ছে তিনি গত সপ্তাহে ঘোষিত শুল্ক বহাল রাখতে পারেন। এর ফলে অন্যান্য দেশ প্রতিশোধ নিতে বাধ্য হবে।

ট্রেড ক্রুজ বলেন, ‘তবে আমার মনে হয়, দ্বিতীয় পদক্ষেপটি দেশের জন্য এবং টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর হবে। দ্রুত একটি বা তার বেশি বড় বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে আমি তাঁকে (ডোনাল্ড ট্রাম্প) উৎসাহিতও করেছি।’

ক্রুজ বলেন, এই কথোপকথন ট্রাম্পকে প্রভাবিত করেছে বলে আশা করছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শুল্ক স্থগিতের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা ক্রুজ ও অন্য সিনেটরদের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল বলেও মনে করছেন এই সিনেটর।

গতকাল বুধবার সকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা জন থুনের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট কারিন কেলার-সাটারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। রাতারাতি ৩১ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে সুইজারল্যান্ডের অভিজাত রোলেক্স ঘড়ি এবং চকলেটের বাজারে বড় ধাক্কা লেগেছে।

সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট এই শুল্কনীতি শিথিল করতে ট্রাম্পকে জোর দেন। এটি তাঁর দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলেও জানান তিনি।

সুইস অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ২৫ মিনিট ধরে চলা ওই ফোনকলে কারিন কেলার-সাটার মার্কিন কর্মসংস্থান তৈরিতে সুইস ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবদানের কথা তুলে ধরেন। গত বছর তাঁর দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা শিল্পপণ্যের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করেছিল বলেও উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্প সকাল আটটার দিকে ফক্স নিউজে সম্প্রচারিত ব্যাংকিং জায়ান্ট জেপি মর্গান চেজের প্রধান নির্বাহী জেমি ডিমনের সাক্ষাৎকারও দেখেন। এ সময় জেমি ডিমন সতর্ক করে দেন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মন্দা একটি ‘সম্ভাব্য পরিণতি’। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, তিনি যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁদের বেশির ভাগের কাছ থেকে শুনেছেন, এই আগ্রাসী শুল্কের কারণে তাঁরা বাণিজ্যিক কার্যক্রমে কাটছাঁট করছেন।

আরও পড়ুনশুল্ক আরোপের পর বিশ্বনেতারা এখন আমাকে ‘স্যার’ ‘স্যার’ করছেন: ট্রাম্প২১ ঘণ্টা আগে

জেমি ডিমনের ওই সাক্ষাৎকার ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে সম্প্রচার করা হয়। সেখানে তিনি আরও বলেন, ‘আমি এখন বিষয়গুলোকে শান্ত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখছি। কিন্তু আমার মনে হয়, আমরা যদি এ ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি না করতে পারি, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’

গতকাল সকালে ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে ট্রাম্প জনসাধারণকে বলেন, ‘শান্ত থাকুন’। যা ঘটছে, তা নিয়ে তিনি মার্কিনদের চিন্তা না করতে বলেন। এর কয়েক মিনিট পরে তিনি আরেকটি পোস্টে লেখেন, ‘এটি (শেয়ার) কেনার জন্য একটি দুর্দান্ত সময়।’

ততক্ষণে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ বাণিজ্য কর্মকর্তা মারোস সেফকোভিচের কাছ থেকে একটি ফোনকল পান। ইইউ মার্কিন ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে গতকাল শুল্ক আরোপের অনুমোদন দিয়েছে।

সয়াবিন চাষি থেকে শুরু করে প্লাস্টিক প্রস্তুতকারক পর্যন্ত ট্রাম্পের সব স্তরের সমর্থকদের ক্ষতির মুখে ফেলার লক্ষ্যে ইইউ এই নীতি নিয়েছে। মার্কিন পণ্য ও পরিষেবার বড় ক্রেতা ইইউ। ইইউর নেতারা ওয়াশিংটনকে আরও বড় ধাক্কা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে সম্ভব বাণিজ্য বাধা দূর করতে একটি চুক্তি করার চেষ্টাও করছেন তাঁরা।

গতকাল দুপুর নাগাদ লুটনিক ও মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ওভাল অফিসে বসেছিলেন। তাঁরা এমন একটি পরিকল্পনা করছিলেন, যা পরে নিজ দলের কিছু সদস্যকেও হতবাক করে দিয়েছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প যখন ট্রুথ সোশ্যালের জন্য তাঁর সবচেয়ে অসাধারণ পোস্টগুলোর একটির ভাষা ঠিক করছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে বসেছিলেন তাঁর প্রশাসনের এ দুই শীর্ষ কর্মকর্তা। ট্রাম্প বিশ্ববাসীর কাছে শুল্ক স্থগিতের বার্তা পাঠানোর ১২ মিনিট পর বেলা দেড়টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করেন লুটনিক।

আরও পড়ুন:

শুল্ক আরোপের পর বিশ্বনেতারা এখন আমাকে ‘স্যার’ ‘স্যার’ করছেন: ট্রাম্প

ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে চীনের ‘অস্ত্রের’ মোকাবিলায় কি জিততে পারবে যুক্তরাষ্ট্র

আরও পড়ুনপাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করলেন ট্রাম্প, এ সময় এই শুল্ক থাকছে ১০ শতাংশ১৮ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ