দালালরে টাকা দিয়ে আমরা সর্বশান্ত, এখন ভাইয়ের লাশটা ফেরত চাই। ভাইয়ের শোক আমরা কীভাবে সইবো। এসব দালালের বিচার চাই। আর কত জীবন নিয়ে খেলা করবে এসব দালাল?

মঙ্গলবার কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন লিবিয়ায় গিয়ে নিহত আবুল বাসার আকনের ভাই বাচ্চু আকন। তার দাবি, সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে নৌযান ডুবে লিবিয়া উপকূলে ভেসে আসা ২৩টি লাশের মধ্যে আবুল বাসার আকনের লাশও রয়েছে। আবুল বাসারের মৃত্যুর বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেন তার ভাই বাচ্চু আকন।

সম্প্রতি লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, লিবিয়া থেকে নৌযানে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন একদল অভিবাসনপ্রত্যাশী। ৫৬ জন আরোহী নিয়ে নৌযানটি ২৫ জানুয়ারি ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়। এরপর ২৮–৩১ জানুয়ারির মধ্যে ২৩টি লাশ সৈকতে ভেসে আসে। গলিত লাশগুলোর পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া গেলেও স্থানীয় সূত্রের বরাতে দূতাবাস বলছে, তাদের প্রায় সবাই বাংলাদেশি।

এসব নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে মাদারীপুরের রাজৈরের ৬ জন বাসিন্দা রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আরও ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা।

তারা বলেন, দালালের খপ্পরে পড়ে পহেলা জানুয়ারি ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন কয়েকজন যুবক। এর মধ্যে মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের চা বিক্রেতা হাসান হাওলাদারের ছেলে টিটু হাওলাদার, গোবিন্দপুর গ্রামের আক্কাস আকনের ছেলে আবুল বাশার আকন, ফিরোজ শেখের ছেলে ইনসান শেখ, শাখারপাড় গ্রামের ফারুক মোল্লার ছেলে সজিব মোল্লা, আড়াইপাড়া গ্রামের ইলিয়াস চৌধুরীর ছেলে আহাদ চৌধুরি এবং সদর উপজেলার ঘটমাঝি এলাকার মিরাজ ফরাজির ছেলে সুজন ফরাজী মারা গেছেন।

মাদারীপুরের রাজৈরের বাসিন্দা সুজন ফরাজীর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে তার চাচা আকবর ফরাজী বলেন, আমার ভাতিজা ২৫ তারিখে নৌকাডুবিতে মারা গেছে। নৌকাটিতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ছিল। দালালরা এভাবে মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছে। এসব দালালের বিচার চাই।

নিহত টিটু হাওলাদারের বাবা হাসান হাওলাদার বলেন, আমি সামান্য চা দোকানি। আমাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আমার ছেলেকে ইতালি নেয়ার জন্য টাকা নেয়। এখন শুনি ছেলে মারা গেছে। আমি দালালের বিচার চাই।

রাজৈর থানার ওসি মাসুদ খান বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিহতদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। 

রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল হক বলেন, খবরটি শুনেছি। নিহতদের লাশ দেশে আনার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

চীনে গেলেন রোগীদের প্রথম দল, খুলল চিকিৎসার নতুন দুয়ার

উন্নত চিকিৎসাসেবা নিতে চীনা দূতাবাসের সহযোগিতায় বাংলাদেশি রোগীদের প্রথম দল সোমবার চীনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে।

এদিন দুপুর আড়াইটায় ফ্লাইটে ১৪ রোগী, ৫ জন বাংলাদেশি চিকিৎসক, ৫ ট্রাভেল এজেন্ট ও ১ সাংবাদিকসহ ৩১ সদস্যের দল কুনমিং উদ্দেশ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

দলটিকে বিদায় জানাতে এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দীন, কালচারাল কাউন্সেলর লি শাওফেংসহ সংশ্লিষ্টরা।

কুনমিংয়ের পাবলিক হাসপাতাল, ইউননান কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতাল, কুনমিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল এবং ইউননান ক্যান্সার হাসপাতালসহ চারটি হাসপাতালে উন্নত প্রযুক্তি, মান, মেডিকেলসেবাসহ, বাংলা ও ইংরেজি দোভাষীসুবিধার সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা থাকবে বাংলাদেশিদের জন্য বলে জানান ইয়াও ওয়েন।

ইয়াও ওয়েন বলেন, চাইনিজ এয়ারলাইন্স রোগীদের সুবিধার্থে স্বল্পমূল্যে বিমান টিকিটের ব্যবস্থা করছে, চিকিৎসা ভিসা আরো সহজতর করতে দূতাবাস সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দীন বলেন, চীন বাংলাদেশ ৫০ বছরে এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সম্পর্কের নতুন এক অধ্যায় শুরু হল।

সম্প্রতি পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরে তিনি বিদেশে চিকিৎসা সমস্যায় বাংলাদেশিদের জন্য চীনকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন। তারই প্রেক্ষিতে চীন সরকার সেদেশের চারটি হাসপাতালে বাংলাদেশিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা চালু করেছেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।

সফররত বাংলাদেশি চিকিৎসকরা সে দেশের চিকিৎসার ধরন, প্রযুক্তি ও মান সম্পর্কে অবগত হবেন এবং পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ