চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ৪৬
Published: 4th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার দুপুর ২টা থেকে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রুজুকৃত মামলার আসামিসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন থাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দায়েরকৃত মামলার আসামিসহ একাধিক মামলার আসামি রয়েছে।
আরো পড়ুন:
ফেনীতে যুবলীগ নেতাকে ধরে পুলিশে দিল ছাত্ররা
কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের ২ নেতা গ্রেপ্তার
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য বল গ আওয় ম ল গ গ র প ত র কর
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণখেলাপির নৈতিক দায় কার
বাংলাদেশে ঋণখেলাপির পরিমাণ বাড়ছে এবং সামগ্রিক বিবেচনায় প্রায় নব্বই দশকের আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। এই বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কেউ বাণিজ্যিক ব্যাংকের দুর্বল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন, কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথাযথ নজরদারির অভাবকে, আবার কেউ বৃহৎ ঋণগ্রহীতা বা ঋণখেলাপিদের প্রতি রাজনৈতিক সরকারের আনুকূল্যকে। খেলাপি ঋণের দৈন্যদশায় ইতিমধ্যে সম্পাদিত আর্থিক খাতের সংস্কারগুলোর কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ইতিমধ্যে বারবার বলা হয়েছে, আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ। এই খেলাপি ঋণ দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত একটি সমস্যা। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে ঋণগ্রহীতার কারণে যেমন কোনো ঋণ খেলাপি হয়, তেমনি ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে কোনো কোনো ঋণ খেলাপি হতে পারে। খেলাপি ঋণের এই বৃদ্ধিকে ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা একটি অশনিসংকেত হিসেবেই দেখছেন।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে। গভর্নর বলেছেন, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপিগুলো বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। ২৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে মোট ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, এই সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার কিছুটা বেড়েছে। সেদিক থেকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি অবশ্যই উদ্বেগজনক।
খেলাপি ঋণ একটি বড় সমস্যা, সন্দেহ নেই। ব্যাংকিং খাতের আরও বড় সমস্যার অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ। এটি এমন একটি সমস্যা, যা ধামাচাপা দিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এত দিন এই সমস্যা আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে, যার ফলে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আবার ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা এবং ব্যাংকগুলোর কিছু পদস্থ কর্মকর্তা, মালিক আর দুষ্ট ঋণগ্রহীতার অনৈতিক যোগসাজশের কারণে ঋণের নিরাপত্তা চিন্তা না করেই অনেক ঋণ দেওয়া হয়েছে। ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’র মতো অনেক ঘটনাও ঘটেছে।
দেশের আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদে অবিলম্বে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির এই প্রবণতা রোধ করা প্রয়োজন। কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেন পরিকল্পিতভাবেই ঋণখেলাপি হয়ে যাচ্ছে।
অনেকে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পুরোটাই লোপাট করতে চাইছেন কিংবা করেছেন। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, দুর্নীতির মাধ্যমে গৃহীত ঋণখেলাপি, ঋণ জালিয়াতিসহ নানা ঘটনা, যা আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে গেছে। আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ছদ্মবেশী খেলাপি ঋণ একটি মারাত্মক সমস্যা। এখানে ভালো ঋণের অন্তরালে যে পরিমাণ খারাপ ঋণ ছদ্মবেশে আছে, তার পরিমাণ নেহাত কম নয়। এই ছদ্মবেশী খেলাপি ঋণ মূলত খেলাপি ঋণ। নানা রকম নিয়মের ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে, বিশেষ করে তথাকথিত পুনঃ তফসিলের সুযোগ নিয়ে এসব নিম্নমানের ঋণকে ভালো ঋণ হিসেবে দেখিয়ে বা ‘উইন্ডো ড্রেসিং’ করে দুই ধরনের ক্ষতি সাধন করা হয়ে থাকে।
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর কৌশলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণের তথ্য বের হয়ে আসছে। এ ছাড়া অবলোপন, পুনঃ তফসিল ও আদালতে চলমান মামলার ঋণের পরিমাণ যুক্ত হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে। অনেকে বলছেন, এটি ৫ লাখ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে; বিশেষ করে আগামী মাসের ১ তারিখ থেকে ঋণ শ্রেণীভুক্তকরণের নীতিমালা আরও কঠিন বা আন্তর্জাতিক নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হলে।
আমরা মনে করি, খেলাপি ঋণসংক্রান্ত অনিয়মগুলো বন্ধ করে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ সন্তোষজনক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে হলে দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণ প্রদান এবং ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমূল কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। এগুলোকে আধুনিক এবং প্রযুক্তিনির্ভর করে তুলতে হবে। খেলাপি ঋণের সমস্যা সমাধানে সরকার ও সব অংশীজনের সমন্বয়ে বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনাও প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে একটি কথা জোরের সঙ্গে বলতে হয়—ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নিয়মানুবর্তিতা আনতে হলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে জবাবদিহি আনতে হবে। দুষ্ট ঋণগ্রহীতাদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া উচিত নয়। অন্যদিকে ঋণ কেন এবং কার কারণে মন্দ হয়, তার গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
মামুন রশীদ ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক।