সিদ্ধিরগঞ্জে সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগ নেতা ইব্রাহিম গ্রেপ্তার
Published: 4th, February 2025 GMT
সিদ্ধিরগঞ্জে যৌতুক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসাাম সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগ নেতা মো: ইব্রাহিম (৪১) কে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। গত সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারী) দিবাগত রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল হাবিবউল্লাহ টাওয়ারের সামনে থেকে তার স্ত্রী রেহেনা বেগমের দায়েরকৃত মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আওয়ামীলীগ নেতা মো: ইব্রাহিম সোনারগাঁয়ের বেলর এলাকার আবুল হাসেমের ছেলে। সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকায় ২ নম্বর গলিতে অর্গানিক শপ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
জানা যায়, পদ-পদবী না থাকলেও সোনারগাঁয়ের সাবেক সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাতের একনিষ্ট কর্মী হিসেবে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত সে। একসময় নুন আনতে পানতা ফুরালেও বর্তমানে তিনি বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক।
যোগাযোগ রয়েছে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা শেখ সেলিমের সাথে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জ থানায় মামলা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
ইব্রাহিমের স্ত্রী রেহেনা জানান, ২০০৮ সালে ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী আমাদের বিয়ে হয়। আমাদের সংসারে ১৫ বছর বয়সী একজন ছেলে এবং ৮ বছর বয়সী একজন কন্যা সন্তান রয়েছে। গত দেড় বছর ধরে সে ছেলে-মেয়ে সহ আমার কোন খোঁজ-খবর এমনকি ভরণ-পোষন দিচ্ছে না। ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করছি।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীকে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ স দ ধ রগঞ জ আওয় ম ল গ
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েল হত্যা করে, মিথ্যা বলে, আর পশ্চিমা মিডিয়া তা বিশ্বাস করে
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও সিভিল ডিফেন্সের ১৫ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁরা যোদ্ধা ছিলেন না। সন্ত্রাসীও ছিলেন না। তাঁদের কাছে কোনো রকেট বা অস্ত্র ছিল না। তাঁরা ছিলেন ত্রাণকর্মী, মানবতার সেবক। যখন যেখানে বোমা ফেলা হচ্ছিল, সেখানেই তাঁরা আহতদের সাহায্য করতে ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁরা নিজের জীবন বাজি রেখে অন্যদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।
এর আগে গত ২৩ মার্চ গাজার দক্ষিণে রাফা এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী একটি অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবার গাড়ির বহরকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এতে আটজন রেড ক্রিসেন্টের কর্মী, ছয়জন ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের কর্মী এবং একজন জাতিসংঘের কর্মী নিহত হন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছিল, এই গাড়িগুলো ছিল অপরিচিত। সন্দেহ করা হয়েছিল, গাড়ির মধ্যে যোদ্ধারা ছিলেন, কিন্তু এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল।
রিফাত রাদওয়ান নামে নিহত চিকিৎসাকর্মীদের একজনের মোবাইল ফোন থেকে পাওয়া ফুটেজে দেখা যায়, গাড়িগুলোতে স্পষ্টভাবে লালবাতি জ্বলছিল; সেগুলো চিহ্নিত অ্যাম্বুলেন্স ছিল এবং কোথাও কোনো অস্ত্র দেখা যায়নি। তারপর শুরু হয় ইসরায়েলি বাহিনীর প্রচণ্ড গুলি।
পরে রিফাতের মরদেহ আরও ১৩ জনের সঙ্গে একটি গণকবরে পাওয়া যায়। তাঁদের কয়েকজনের দেহে সরাসরি হত্যার চিহ্ন ছিল—মাথা বা বুকে গুলি লেগেছিল। কারও কারও হাত বাঁধা অবস্থায় ছিলেন।
মৃত্যুর পরও তাঁদের প্রমাণ দিতে হলো যে তাঁরা ত্রাণকর্মী ছিলেন।
তারপরও পশ্চিমা গণমাধ্যমের বড় অংশ প্রথমেই ইসরায়েলের কথাই প্রচার করল, ‘ইসরায়েল বলছে…’, ‘আইডিএফ দাবি করছে…’, ‘একজন সামরিক সূত্র জানিয়েছে…।’ এসব কৌশলে সাজানো বাক্য যেন রেড ক্রিসেন্টের রক্তমাখা ইউনিফর্মের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। যেন তারা সত্যের চেয়ে বেশি ‘সত্য’।
এটা নতুন কিছু নয়। এটা একবারের ভুলও নয়।
এটাই একটা সিস্টেম।
এখানে ফিলিস্তিনিদের শুধু বেঁচে থাকাই অপরাধের মতো মনে করা হয়। আমাদের অস্তিত্বকেও সন্দেহের চোখে দেখা হয়—প্রথমে সবাইকে বোঝাতে হয় যে আমরা কোনো হুমকি নই, আমাদের জীবনও মূল্যবান, তারপর হয়তো কেউ আমাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবে। এটাই হচ্ছে মানবতা হারানোর আসল রূপ।
আমি গাজায় জন্মেছি, সেখানেই বড় হয়েছি। আমি জানি, রেড ক্রিসেন্টের ইউনিফর্মের অর্থ কী। এর মানে হলো, সব শেষ হয়ে গেলেও আশার একটা আলো আছে। এর মানে হলো, কেউ আসছে সাহায্য করতে—লড়াই করতে বা হত্যা করতে নয়, জীবন বাঁচাতে। এর মানে হলো, ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও কারও কাছে জীবন এখনো মূল্যবান।
বিশ্বকে এখনই ফিলিস্তিনিদের প্রমাণ করতে বাধ্য করা বন্ধ করতে হবে যে তাঁরা মানুষ। আমরা মিথ্যা বলি আর আমাদের হত্যাকারীরা সত্য বলে—এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যাঁরা শুধু ফেরেশতা, শুধু তাঁদের জন্য শোক প্রকাশ করা যাবে, এই ভাষ্যকে আর প্রচার করতে দেওয়া যাবে না।আমি এটাও জানি, সেই আশাকে হারালে কেমন লাগে। সেখানে চিকিৎসাকর্মীদের প্রথমে হত্যা করা হয়, তারপর তাঁদের সম্মান নষ্ট করা হয়। তাঁদের সততা নিয়ে বিতর্ক তোলা হয় আর তাঁদের সহকর্মীরা গণকবর খুঁড়ে মরদেহ উদ্ধার করেন। তাঁদের সন্দেহের চোখে দেখা হয়, তারপর ভুলে যাওয়া হয়।
মানবতা হারানো শুধু কথার কথা নয়, এটা শুধু গণমাধ্যমের কাঠামো বা রাজনৈতিক ভাষার সমস্যা নয়। এটা হত্যা করে। মুছে ফেলে। এটা পুরো জাতিগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পরও বিশ্বকে চোখ ফিরিয়ে নিতে বলে। এটা আমাদের বলে দেয়: তোমার জীবন ততটা মূল্যবান নয়; তোমার শোক সত্যি কি না, তা আমরা যাচাই না করা পর্যন্ত শোক বলে বিবেচিত হতে পারে না; তোমার মৃত্যু দুঃখজনক কি না, তা আমাদের ছাড়পত্রের ওপর নির্ভরশীল।
এ কারণেই এই ১৫ জন চিকিৎসাকর্মী ও উদ্ধারকর্মীর মৃত্যু এত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি শুধু একটি হত্যাকাণ্ডের গল্প নয়। এটি সেই অবিশ্বাসের প্রক্রিয়ার গল্প, যা প্রতিবার ফিলিস্তিনিরা নিহত হলে উঠে আসে। এটি সেই বাস্তবতা, যেখানে আমাদের নিজেদেরই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ হতে হয়, নিজেদের আইনি লড়াই চালাতে হয়, নিজেদের প্রচারের কাজ করতে হয় এবং সবকিছুর সঙ্গে মরদেহের জন্য শোকও করতে হয়।
এই বোঝা আর কাউকে বইতে হয় না। যখন কোনো পশ্চিমা সাংবাদিক নিহত হন, তাঁদের সম্মান জানানো হয়। যখন কোনো ইসরায়েলি নাগরিক মারা যান, তখন তাঁদের নাম আর ছবি বিশ্বজুড়ে স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। কিন্তু যখন কোনো ফিলিস্তিনি মারা যান, তখন তাঁর পরিবারের প্রথম কাজ হয় প্রমাণ করা, যে তিনি সন্ত্রাসী ছিলেন না।
আমাদের সব সময় দোষী ধরে নেওয়া হয়, যতক্ষণ না নির্দোষ প্রমাণিত হই। অনেক সময় সেটা প্রমাণ করাও সম্ভব হয় না।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, পশ্চিমা গণমাধ্যমে ইসরায়েলের কথা বেশি গুরুত্ব পায়, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের কথা গুরুত্ব দেওয়া হয় কম। ইসরায়েল যদি কোনো দাবি করে, তা যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিশ্বাস করা হয়; কিন্তু ফিলিস্তিনিরা কিছু বললে তা সন্দেহের চোখে দেখা হয়। এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন তাঁদের দুঃখ-কষ্ট, কান্না বা শোক তাঁদের কথাকে অবিশ্বাস্য বা অতিরঞ্জিত করে তোলে; অর্থাৎ ফিলিস্তিনিরা যা বলছেন, তা সত্য হলেও তাঁদের যন্ত্রণা দেখিয়ে তাঁরা বেশি বলছেন বা বাড়িয়ে বলছেন—এমন ধারণা তৈরি করা হয়।
এই গণমাধ্যমের ধারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোকেও প্রভাবিত করে—অস্ত্র বিক্রি থেকে শুরু করে কূটনৈতিক দায়মুক্তি, আন্তর্জাতিক মঞ্চে নীরবতা থেকে জাতিসংঘে ভেটো দেওয়া পর্যন্ত। সবকিছু একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। ফিলিস্তিনিদের পুরোপুরি মানুষ বলে যেহেতু গণ্য করা হয় না, সেহেতু তাদের হত্যাকারীদেরও পুরোপুরি দায়ী করা হয় না।
এর মানসিক চাপও ভয়াবহ। আমরা শুধু শোক করি না; আমাদের শোকের স্বীকৃতির জন্যও লড়তে হয়। আমরা শুধু আমাদের মৃত ব্যক্তিদের দাফন করি না; তাঁদের মৃত্যু স্বীকার করানোর জন্যও সংগ্রাম করি। আমরা এমন এক মানসিক চাপে বাস করি, যা কোনো সম্প্রদায়ের সহ্য করা উচিত নয়। আমাদের প্রতিনিয়ত প্রমাণ করতে হয় যে আমরা তা নই, যা বিশ্ব আমাদের ভেবে নিয়েছে।
এই ১৫ জন চিকিৎসাকর্মী ও উদ্ধারকর্মী ছিলেন সত্যিকারের নায়ক। তাঁরা বিপদের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁরা তাঁদের জনগণের সেবা করেছিলেন। তাঁরা জীবনের পবিত্রতায় বিশ্বাস করতেন। তাঁদের স্মৃতি সম্মানের যোগ্য। অথচ তাঁদের গল্পও একটি বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বকে এখনই ফিলিস্তিনিদের প্রমাণ করতে বাধ্য করা বন্ধ করতে হবে যে তাঁরা মানুষ। আমরা মিথ্যা বলি আর আমাদের হত্যাকারীরা সত্য বলে—এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যাঁরা শুধু ফেরেশতা, শুধু তাঁদের জন্য শোক প্রকাশ করা যাবে, এই ভাষ্যকে আর প্রচার করতে দেওয়া যাবে না।
আল–জাজিরা থেকে নেওয়া
ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
আহমেদ নাজার একজন ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নাট্যকার।