পোষ্য কোটা নিয়ে মুখোমুখি জাবির শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
Published: 4th, February 2025 GMT
পোষ্য কোটা বাতিল ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান নেন।
এরপরই দুপুর পৌনে ২টার শিক্ষার্থীরা বটতলা থেকে একটি মিছিল বের করে বিভিন্ন হল, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে অবস্থান নেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের অনশনের মুখে পোষ্যকোটা সংস্কারের প্রতিবাদে কর্মবিরতি ঘোষণা করে মিছিল নিয়ে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে আসেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে দুপুর পৌনে ২টার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বটতলা এলাকা থেকে একটি মিছিল নিয়ের করে বিভিন্ন হল, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিতে মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরোধ করে রাখেন।
বিক্ষোভে ‘দাবি মোদের একটাই পোষ্য কোটার বাতিল চাই’, ‘হলে হলে খবর দে পোষ্য কোটার কবর দে’, ‘সংস্কার না বাতিল, বাতিল বাতিল’, ‘শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
এর আগে, সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২ টায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সংস্কারের আশ্বাস দিলে অনশন কর্মসূচি থেকে সরে আসেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, বিকেলে উপাচার্য রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার ও প্রক্টরসহ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের উপর্যুপরি স্লোগানে উপাচার্য কোন কথা বলতে পারেননি। তবে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাত্রদলের কর্মীরা প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা করেছেন বলে অভিযোগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবি উত্থাপন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানা হলে পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচিতে দেওয়ার হুশিয়ারি দেন তারা।
দাবিগুলো হলো- পৌষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে; আজ যারা কর্মচারীদের আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ ও শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের চিহ্নিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাকরিচ্যুত করতে হবে; পরবর্তীতে কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী যদি ক্যাম্পাস অচল করার ঘোষণা দেয় তাদেরও চাকরিচ্যুত করতে হবে এবং ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে হবে।
আন্দোলনরত ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহরাব তূর্য বলেন, “দুদিন অনশন করার পর প্রশাসন যৌক্তিক সংস্কারের আশ্বাস দিলে আমরা কর্মসূচি স্থগিত করি। এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আজ কর্মকর্তা–কর্মচারীরা মিছিল করে এবং আমাদের একজন শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করেন। এখন আমাদের একটাই দাবি, পোষ্য কোটা বাতিল করতে হবে। উপাচার্য কোন সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে আমরা আগামীকাল থেকে পুরো জাহাঙ্গীরনগর অচল করে দেব।”
কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভে অফিসার সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বাবুল উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। তিনি আশুলিয়া থানা বিএনপির সহ-সভাপতি এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বহিষ্কৃত কর্মকর্তা।
আন্দোলন নিয়ে শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সোহেল রানার ফেসবুক পোস্ট
এছাড়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গুপ্ত সংগঠনের এ, বি, সি টিম বলে অভিহিত করেছেন শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সোহেল রানা। এক ফেসবুক পোস্টে এ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভিডিওচিত্র শেয়ার দিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদিকে, পোষ্য কোটার জন্য আগের সব সুযোগ-সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে বুধবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কর্মকর্তা–কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান বাবুল বলেন, “পোষ্য কোটা একটি প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা। বাংলাদেশের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই এ সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। যতদিন পর্যন্ত পূর্বের সুযোগ-সুবিধা পুনর্বহাল করা না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের লাগাতার কর্মবিরতি চলবে।”
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশাসনিক ভবন ছেড়ে চলে গেলেও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সেখানেই অবস্থান করতে দেখা গেছে। সমস্যার সমাধানে শিক্ষার্থীদের কাছে সময় চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবস থ ন র কর ম
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনে থাকা তিতুমীর কলেজের ৩ শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে অনশনে থাকা তিন শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। রোববার দুপুরে মহাখালীতে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাসেল।
তিনি বলেন, অনশনে থাকা তিন শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের প্রসাব তৈরি হচ্ছে না। তিনজনের মধ্যে একজনের প্রসাব হচ্ছে না। কিডনি প্রসাব তৈরি করার জন্য যে প্রক্রিয়া থাকে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ সাত দফা দাবিতে টানা পাঁচ দিন ধরে অনশন কর্মসূচি পালন করে আসছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে চলছে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের কর্মসূচি। আজও সড়ক অররোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুরে বাঁশ দিয়ে তিতুমীর কলেজের সামনের দুই পাশের রাস্তা আটকে দেন তারা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে গত ২৯ জানুয়ারি থেকে তিতুমীর কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে অনশন শুরু করেন। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ায় শনিবার দু’জনসহ এখন পর্যন্ত সাতজনকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি দুই শিক্ষার্থী হলেন– উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের মফিজুল ইসলাম ও বাংলা বিভাগের আবু নাঈম। এ ছাড়া অনশনরত ৯ শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করেছে। তাদের স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। একজন চিকিৎসক ও দু’জন নার্সকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধের কারণে ওই দিন মহাখালী থেকে গুলশান এবং গুলশান থেকে মহাখালী পর্যন্ত রাস্তার যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা দাবি পক্ষে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছেন তারা। এর আগে শুক্রবারও তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কটি অবরোধ করেন। সেদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে বিকেল ৪টার মধ্যে দাবি মানা না হলে আবার সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
আজ রোববারও আমরণ অনশনের পাশাপাশি ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি পালন করার কথা জানান তারা। এই কর্মসূচির আওতায় ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করা হবে। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিশ্ব ইজতেমা ও আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি শিথিলের কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবিগুলো হলো—
১. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।
২. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২০২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
৩. শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নতুবা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করতে হবে।
৪. ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম দুইটি বিষয় 'আইন' এবং 'জার্নালিজম' বিষয় সংযোজন করতে হবে।
৫. একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
৬. শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিত করতে হবে।
৭. আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ করতে হবে।