নির্মাণকাজে ব্লকের ব্যবহার বাড়াতে প্রয়োজন সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা
Published: 4th, February 2025 GMT
বায়ুদূষণ কমাতে সরকারি নির্মাণকাজে ব্লকের ব্যবহার বাড়ালে দেশের কৃষিজমি বাঁচবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বায়ুদূষণ কমানো ও কৃষিজমি সংরক্ষণে ব্লকের ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ব্লকের ব্যবহার শুধু পরিবেশ বান্ধব নয়, এটি নির্মাণ খাতের দক্ষতা ও স্থায়িত্বও বাড়ায়। আমরা সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও অংশীজনদের সঙ্গে সমন্বয় করে এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করব।
তিনি আরও বলেন, এই উদ্যোগ পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমরা সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, ম্যাক্স গ্রুপ ও বাংলাদেশ এএসি ব্লক অ্যান্ড প্যানেল ম্যানুফ্যাকচারস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে ম্যাক্সক্রিট লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর এবং ইকো- ফ্রেন্ডলি গ্রিন ব্রিকস লিমিটেডের শাহরিয়ার সাজ্জাদ।
প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড.
নির্মাণকাজে ব্লকের ব্যবহার বাড়াতে প্রয়োজন সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এমন কথা জানিয়ে তিনি বলেন, একটি ব্লক কারখানা করতে ২৫ লাখ টাকায়ও করা যায়। আবার ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকা দিয়েও করা যায়। সেটার স্পেসিফিকেশন ভিন্ন। কার্বন ইমিশনের টার্গেটও সেটা বিভিন্ন মাত্রার। এগুলোর শ্রেণিকরণ করতে হবে। বিভিন্ন গ্রেডের এবং বিভিন্ন স্পেসিফিকেশন রেট শিডিউল পিডব্লিইউডি’র শিডিউলে উল্লেখ্য করতে হবে। সেই রেট থেকে যেই যেই রিসপেক্টিভ ডিপার্টমেন্ট অ্যাম্প্লেয়াররা যখন টেন্ডার করবেন তখন কোন ব্রিকস তারা লাগাতে চান সেটা তারা ওই ব্রিকসের রেট অনুযায়ী টেন্ডারে উল্লেখ্য করে দিলেই ঠিকাদার সেটা লাগাতে বাধ্য হবেন।
ইকো-ফ্রেন্ডলি গ্রিন ব্রিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তিলোত্তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, যেহেতু এটা একটা বড় উদ্যোগ, রাতারাতি এটা করা সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে এএসি ব্লক ও অন্য ব্লক দিয়ে করার প্রক্রিয়া হাতে নিলে ভালো হবে।
বিনিয়োগকারীরা জানান, বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তরে এএসি ব্লকের যে রেট ধরা হয়েছে সেটা আমাদের উৎপাদন খরচের চাইতেও অনেক নীচে। গণপূর্ত অধিদপ্তর স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলাপ আলোচনা ছাড়াই এককভাবে এই রেট দিয়েছে। যে কারণে আমরা সরকারি বিল্ডিংয়ে এএসি ব্লক ব্যবহার করতে পারি না। আমাদের উৎপাদিত ব্লক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই বেশি নেয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রতিনিধি, নির্মাণ খাতের বিশেষজ্ঞ এবং ব্লক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দূষণ নিয়ন্ত্রণ শাখার উপসচিব সিদ্ধার্থ শংকর কুন্ডু।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট পর ব শ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মহানবী (সা.) এবং এক কুস্তিগিরের গল্প
এই গল্পটি যেমন শিক্ষণীয়, তেমনি উপভোগ্যও। রাসুল (সা.) তখন প্রায় ৫০ বছর বয়সী। দশ বছর ধরে তিনি ইসলাম প্রচার করেছেন। তাঁকে চরম বিরোধিতা, নির্যাতন ও নানা রকম কষ্টের মুখোমুখি হতে হচ্ছিল। তবু তিনি কখনো করুণা, ধৈর্য কিংবা সহনশীলতা হারাননি।
একদিন তিনি মক্কার বাইরে হাঁটছিলেন। হঠাৎ তাঁর সামনে পড়ল রুকানা নামে বিখ্যাত এক ব্যক্তি। রুকানা ছিল কুরাইশদের মধ্যে সবচেয়ে বলশালী, সেরা কুস্তিগির। রুকানা মহানবীকে (সা.) ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করত না; তবে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে সে দ্বিধা ও সংশয়ে ছিল। সে বুঝতে পারত না নবীজি (সা.) আসলে কী প্রচার করছেন।
মহানবী (সা.) তাকে দেখে বললেন, ‘রুকানা, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।’
রুকানা বলল, ‘তা হলে চলো, আগে কুস্তি লড়ি, তারপর কথা হবে।’
আরও পড়ুনতিরন্দাজ এক সাহাবী১৩ নভেম্বর ২০২৩নবীজি (সা.) হাসিমুখে বললেন, ‘ঠিক আছে, কুস্তি হোক।’
উভয়ে প্রস্তুত হলেন, কুস্তি শুরু হলো। রাসুল (সা.) রুকানাকে এক চাপে মাটিতে ফেলে দিলেন। রুকানা বিস্ময়ে হতবাক! সে জীবনে কখনো হারেনি। সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আবার হোক।’
দ্বিতীয়বারও রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে মাটিতে ফেলে দিলেন। রুকানা এবার পুরোপুরি হতবাক। সে বলল, ‘আরও একবার!’
রাসুলুল্লাহ (সা.) তৃতীয়বারও তাকে মাটিতে আছড়ে ফেললেন। রুকানা এবার সত্যিই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বলল, ‘আপনি বুঝতে পারছেন না, আমি জীবনে কখনো হারিনি। কেউ কখনো আমাকে মাটিতে ফেলতে পারেনি। এটা কীভাবে সম্ভব।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তবে শোনো, আমি তোমাকে আরও আশ্চর্য কিছু দেখাব।’
একটু দূরে একটি গাছ ছিল। রাসুল (সা.) সেই গাছকে ডাক দিলেন। গাছটি নিজে থেকেই স্থান পরিবর্তন করে তাঁর কাছে চলে এলো। তিনি গাছকে বললেন, ‘ফিরে যাও।’ গাছটি আবার ফিরে গেল তার আগের জায়গায়। রুকানা এই অলৌকিক ঘটনা দেখে সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইবাদতযোগ্য নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসুল।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে অভিনন্দন জানিয়ে আবার নিজের পথে রওনা দিলেন।
আরও পড়ুননারী সাহাবি হজরত শিফা (রা.)১৬ ডিসেম্বর ২০২৪একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা
এই ঘটনাটি আমাদের শেখায়, রাসুল (সা.) কীভাবে মানুষের সঙ্গে আচরণ করতেন, কীভাবে ইসলাম প্রচার করতেন। তিনি ছিলেন এই পৃথিবীর সবচেয়ে বরকতময় মানুষ। আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল অমূল্য। তবু তিনি মানুষকে এতটাই ভালোবাসতেন, এতটাই বুঝতেন এবং গুরুত্ব দিতেন যে, তিনি একজন মানুষের সঙ্গে সময় নিয়ে কুস্তিও করতেন, শুধু তাকে বোঝানোর জন্য।
তিনি চাইলে শুধু একটি বক্তৃতা দিয়েই বা হাতে একটি পুস্তিকা ধরিয়ে দিয়েই চলে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করতেন না। তিনি আগে মানুষকে বুঝতেন, তাদের মানসিক অবস্থাকে গুরুত্ব দিতেন। এ জন্যই মানুষ তাঁকে ভালোবাসত, তাঁর কথা শুনত, আর ইসলাম গ্রহণ করত। তাঁর এই মনোভাবই আমাদের জন্য আদর্শ হওয়া উচিত।
যখন আমাদের কারও সঙ্গে ইসলামের কথা বলার সুযোগ আসে, তখন আগে সেই মানুষটিকে বোঝার চেষ্টা করি, তার মতো করে কথা বলি। আর যদি তাতে একটু কুস্তিও লড়তে হয়—তাহলে তাই হোক!
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,০৭৮; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ৮,৪৫০; সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১,৭৭৪)
আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫