একটা চুম্বকের সঙ্গে রশি বাঁধা। যাতায়াতের রাস্তায় চুম্বকটি ফেলে হাতের রশি টেনে হেঁটে চলেন শেফালী বেগম। চুম্বকের আকষর্ণে সড়কে পড়ে থাকা লোহার টুকরো, পুরাতন ব্লেডসহ বিভিন্ন ধরনের লৌহজাত বস্তু আটকে যায় সেই চুম্বকে। পরে ওইসব বস্তু চুম্বক থেকে আলাদা করে বিক্রি করেন ৭০ বছর বয়সী এই নারী। তা থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে শেফালীর একাকী জীবন। এটি শেফালীর বেঁচে থাকার পেশা।
সাদা-কালো চুলের শ্যামলা বর্ণের এই নারীকে অপরিচিতরা পাগল ভাবেন। তবে পরিচিতরা জানেন তিনি পাগল নন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বৃদ্ধ বয়সে তার পাশে নেই কেউ। পরিত্যক্ত চাটমোহর দাতব্য চিকিৎসালয়ের উত্তরপাশে বড়াল নদীপাড়ে ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরে শেফালী থাকেন। স্বামী, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন কেউ না থাকায় মানবেতর জীবন কাটছে তার।
কয়েকদিন আগে চাটমোহর পৌর সদরে কথা হয় শেফালী বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, তার পৈত্রিক নিবাস চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের লাউতিয়া গ্রামে। বাবা মৃত আব্দুর রহমান প্রামাণিক। শেফালীরা ছিলেন চার ভাই, দুই বোন। বড় পরিবার পরিচালনা করতে হিমশিম খেতেন শেফালীর মৎসজীবী বাবা আব্দুর রহমান। শেফালী যখন ছোট তখন তার বাবা মারা যান। তাই অভাবের সংসারে পড়ালেখার সুযোগ হয়নি তার।
এক পর্যায়ে কাজের সন্ধানে শেফালী চলে যান পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরদী উপজেলায়। ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের পাশে থাকতেন তিনি। যৌবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন সেখানে। জিআরপি থানার তৎকালীন পুলিশ সদস্যরা তার অসহায়ের কথা ভেবে আলম হোসেন নামে রংপুরের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেন শেফালীকে।
অন্ধকার জীবনে নতুন সংসার হয় শেফালীর। স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাড়িতে সুখে-দুঃখে ভালোই দিন কাটছিল তাদের। প্রায় ১৫ বছর সংসার করার পর একদিন শেফালীকে ছেড়ে পালিয়ে যান আলম। অনেক খুঁজেও স্বামীকে ফিরে পাননি তিনি। পরে শুনেছেন, অন্য কাউকে বিয়ে করে তার সঙ্গে সংসার করছেন আলম।
নদীপাড়ের ভাঙাচোরা ঝুপড়ি ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে শেফালী বেগম
কী করবেন, কিভাবে চলবেন ভেবে না পেয়ে অভিমানে ঈশ্বরদী ছেড়ে জন্মভূমি চাটমোহরে ফিরে আসেন শেফালী। পৌর সদরে সুলতান হোসেন নামের এক ব্যক্তির সহায়তায় তার জায়াগায় একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করতে থাকেন। সেখান থেকে নিমতলা এলাকায় বড়াল নদীর পাড়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স-এর পাশে সরকারি জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় শেফালীর। কয়েক বছর পর সেখান থেকেও সরে যেতে হয় তাকে। সর্বশেষ গত ১০ বছর ধরে বসবাস করছেন পরিত্যক্ত চাটমোহর দাতব্য চিকিৎসালয়ের উত্তর পাশে বড়াল নদীপাড়ে ছোট ভাঙা একটি ঝুপড়ি ঘরে।
শেফালী বেগম বলেন, “খেয়ে পরে জীবন চালানোর জন্য কিছু না কিছু তো করতে হবে। ভিক্ষা করে পেট চলে না। তাই বেঁচে থাকার জন্য পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি চুম্বকের সাহায্যে লোহা সংগ্রহের কাজ।”
তিনি বলেন, “ভোর হলে বেরিয়ে পড়ি যেদিকে মন চায় সেদিকে। মাঝারি আকৃতির একটা চুম্বকের সঙ্গে রশি বাঁধা থাকে। চুম্বকটি রাস্তায় ফেলে রশির অপর প্রান্ত ধরে চুম্বকটিকে টেনে হেঁটে চলি। চলার সময় চুম্বকের সঙ্গে আটকে যায় লোহার টুকরো, পুরাতন ব্লেড ও অন্য লোহার বস্তু। বিক্রি হয় না বলে ধারালো ব্লেডগুলো চুম্বক থেকে টেনে খুলে দেই। লোহার টুকরোগুলো বিক্রি করে যে টাকা পাই, তাতেই চলে আমার জীবিকা।”
তিনি আরো বলেন, “শুধু লোহা নয়, প্লাস্টিকও সংগ্রহ করতে হয়। প্রায় সারাদিন চলে লোহা ও প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহের কাজ। লোহা-প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়েই জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। সংগ্রহ করা লোহা ও প্লাস্টিকের বোতল চাটমোহর দাতব্য চিকিৎসালয়ের বারান্দায় জমাই। কিছুদিন পরপর বিক্রি করি। যে টাকা পাই তা দিয়েই খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যায়।”
কুড়িয়ে আনা লোহার বিভিন্ন বস্তুর সঙ্গে শেফালী বেগম
শেফালী বলেন, “বাড়িঘর, ছেলে-মেয়ে কেউ নেই। বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন কাজ করা কঠিন হয়ে গেছে। অসুখ লেগেই থাকে। পেটের ভাত-কাপড়ের পাশাপাশি লাগে ওষুধ। তাই জীবন চালাতে কাজ করতে হচ্ছে। ভাঙা ঘরে শেয়াল কুকুর ঢোকে। রান্না করা ভাত কুকুরে খেয়ে যায়। বৃষ্টির সময় পানি পরে ঘরের চাল দিয়ে। একটা ঘর থাকলে সেখানে নিশ্চিন্তে থাকতে পারতাম। সরকারিভাবে একটা ঘরের ব্যবস্থা হলে শান্তিতে মরতে পারতাম।”
চাটমোহর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, “শেফালীর ব্যাপারটি আমি জানলাম। তিনি যদি চাটমোহরের নাগরিক হয়ে থাকেন সমাজসেবা অফিস থেকে বয়ষ্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেব। অসুস্থ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।”
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, “তার (শেফালী বেগম) বিষয়ে কেউ কিছু জানায়নি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। সরকারি প্রকল্পের ঘর খালি থাকা সাপেক্ষে তাকে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া যায় কি না সেটি দেখা হবে।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব যবস থ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হচ্ছে মেটা এআই উইজেট, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
স্মার্টফোনের হোম স্ক্রিনে প্রয়োজনীয় অ্যাপের উইজেট চালু থাকলে সেই অ্যাপে প্রবেশ না করেই হালনাগাদ সব তথ্য জানা যায়। তাই এবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেটা এআই উইজেট ব্যবহারের সুযোগ চালু করতে যাচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ। নতুন এ সুবিধা যুক্ত হলে হোয়াটসঅ্যাপ চালু না করেই স্মার্টফোনের হোম স্ক্রিন থেকে সরাসরি মেটা এআইয়ের বিভিন্ন প্রযুক্তিসেবা ব্যবহার করা যাবে। এরই মধ্যে নির্বাচিত ব্যবহারকারীদের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে মেটা এআই উইজেট চালু করা হয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপের তথ্যমতে, মেটা এআই উইজেটের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা হোম স্ক্রিন থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানার পাশাপাশি ছবি আপলোড ও ভয়েস মোড চালু করতে পারবেন। ফলে মেটা এআই চ্যাটবট ব্যবহারের জন্য হোয়াটসঅ্যাপে প্রবেশ করতে হবে না।
আরও পড়ুনহোয়াটসঅ্যাপে যে ৮ কাজ কখনো করবেন না ১০ জুন ২০২৪অনলাইনে প্রকাশিত স্ক্রিনশটে দেখা গেছে, মেটা এআই উইজেটের আকার সহজেই পরিবর্তন করা যাবে। ফলে ব্যবহারকারীরা তাঁদের প্রয়োজন অনুযায়ী উইজেটের আকার ছোট-বড় করতে পারবেন। তবে এ সুবিধা কেবল যাঁরা হোয়াটসঅ্যাপে মেটা এআই ব্যবহার করছেন, তাঁদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
আরও পড়ুনহোয়াটসঅ্যাপে কল করার নতুন চার সুবিধা১৪ ডিসেম্বর ২০২৪প্রসঙ্গত, মেটা এআই চ্যাটবটটি নিজস্ব এললামা ভাষা মডেলের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করেছে মেটা। গুগলের জেমিনি বা ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির মতোই বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যায় চ্যাটবটটিতে। তাই ইতিমধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপে মেটা এআই চ্যাটবট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নতুন উইজেট যুক্ত হলে এ সুবিধা আরও সহজলভ্য হবে এবং এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
আরও পড়ুনহোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হওয়ার ৫ লক্ষণ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪