প্রতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব ক্যানসার দিবস। বলিউডের বেশ কজন তারকা ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে জয়ী হয়েছেন। তাদের সাহসী মনোবল এই লড়াইয়ে জয়ী হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাদের লড়াকু মনোভাব লাখো ক্যানসার আক্রান্তকে আশার আলো দেখিয়েছে। বিশেষ দিনে বলিউডের এমন সাত তারকাকে নিয়ে এই প্রতিবেদন।

কিরণ খের
২০২১ সালে অভিনেত্রী ও রাজনীতিবিদ কিরণ খেরের মাল্টিপল মাইলোমা ধরা পড়ে। এটি এক ধরনের রক্তের ক্যানসার। মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। চিকিৎসা চলাকালীনও টেলিভিশন রিয়ালিটি শোয়ের বিচারকের দায়িত্বও পালন করেছেন এই অভিনেত্রী। এই সংগ্রামে জয়ী হয়ে কাজেও পুরোদমে কাজে ফিরেছেন কিরণ।

রাকেশ রোশান
২০১৯ সালে বলিউড পরিচালক, অভিনেতা হৃতিক রোশানের বাবা রাকেশ রোশানের গলায় স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা ধরা পড়ে। হৃতিক রোশান ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছিলেন, “বাবা সম্ভবত আমার দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ। কয়েক সপ্তাহ আগে ক্যানসার ধরা পড়লেও পুরো উদ্যমে এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।”

আরো পড়ুন:

বলিউডের ব্যয়বহুল ৬ বিবাহবিচ্ছেদ

আসছে ‘মুন্না ভাই থ্রি’, যা বললেন পরিচালক

সোনালি বেন্দ্রে
২০১৮ সালে বলিউড অভিনেত্রী সোনালি বেন্দ্রের মেটাস্ট্যাটিক ক্যানসার ধরা পড়ে। চতুর্থ স্টেজে তার ক্যানসার শনাক্ত হয়। ইনস্টাগ্রাম পোস্টে সোনালি লিখেছিলেন, “একেবারে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে এই লড়াই লড়ছি। কারণ আমার পাশে রয়েছে আমার পরিবার ও বন্ধুরা।” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে দীর্ঘ চিকিৎসার পর সম্পূর্ণ সুস্থ হন সোনালি।

সঞ্জয় দত্ত
২০২০ সালের আগস্টে বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় দত্তর ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে। স্টেজ ফোরে ক্যানসার শনাক্ত হলেও কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন। আবেগঘন এক পোস্টে তিনি লেখেন, “শেষ কয়েকটা সপ্তাহ আমার পরিবার ও আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। কিন্তু যেমনটা বলা হয়ে তাকে, ঈশ্বর সবচেয়ে কঠিন লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ তার সবথেকে শক্তিশালী সৈনিকদেরই দেন।”

মহিমা চৌধুরী
‘পরদেশ’খ্যাত বলিউড অভিনেত্রী মহিমা চৌধুরী স্তন ক্যানসার আক্রান্ত হন। ২০২২ সালে অভিনেতা অনুপম খের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের খবর দেন। পাশাপাশি তাকে ‘হিরো’ বলেও মন্তব্য করেন অনুপম। পরে এক ভিডিও বার্তায় মহিমা বলেন, “আমার কোনো লক্ষণ ছিল না। প্রতিবছরই নিয়ম করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাই। এবার পরীক্ষার সময় চিকিৎসক সন্দেহবশত স্তনের টিস্যুর কিছুটা অংশ বায়োপসি পরীক্ষা করতে দেন। পরীক্ষায় ফল নেগেটিভ আসে। কিন্তু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। অস্ত্রোপচারের পর পুরো টিস্যুর বায়োপসি করানো হয়, তখন খুব সূক্ষ্ম একটা অংশে ক্যানসারের উপস্থিতি পাওয়া যায়।” তবে এ লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন মহিমা।

মনীষা কৈরালা
২০১২ সালে বলিউড অভিনেত্রী মনীষা কৈরালার জরায়ুতে ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন। ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এখন কাজ করছেন তিনি। এমনকি নিজের সংগ্রামের জার্নি নিয়ে একটি স্মৃতিকথাও লিখেছেন এই অভিনেত্রী।

তাহিরা কাশ্যপ
২০১৮ সালে অভিনেতা আয়ুষ্মান খুরানার স্ত্রী তাহিরা কাশ্যপ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ করেন। তার ডাক্টাল কার্সিনোমা ইন সিটু (DCIS) ধরা পড়ে। যেখানে তার ডান স্তনে উচ্চ-গ্রেডের ক্যানসার কোষ ছিল। চিকিৎসার পর ক্যানসারমুক্ত হন। ২০২৪ সালে পরিচালক হিসেবে তার অভিষেক ঘটে।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্নীতির টাকা আড়ালে জেলার সোহেল স্ত্রীকে সাজান মাছচাষি

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার (বরখাস্ত) সোহেল রানা বিশ্বাসের স্ত্রী হোসনে আরা পপি মাছ চাষ করে দুই কোটি টাকা আয় করেছেন। এ আয় থেকে সোহেল রানাকে ৮০ লাখ টাকা দান করেছেন। কিন্তু এগুলো সবই কাগজে-কলমে। ৯ বছর তিনি মাছ চাষ করলেও কোন পুকুরে চাষ করেছেন, কোথায় বিক্রি করেছেন– তার দালিলিক কোনো প্রমাণ নেই। স্বামীর অবৈধ আয় আড়াল করতে নিজেকে মৎস্য চাষি সাজাতে গিয়ে করেছেন অভিনব জালিয়াতি। ২০১৭ সালে কেনা তিনটি ১০০ টাকার স্ট্যাম্পকে ২০১১ সালে কেনা স্ট্যাম্প দেখিয়ে ভুয়া লিজ চুক্তি করেন পপি।  তবে এই দম্পতির শেষরক্ষা হচ্ছে না। দুদক ময়মনসিংহে ছয়টি ব্যাংকে পপির  আটটি অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ১ লাখ টাকার হদিস পেয়েছে। কিন্তু এ সম্পদ অর্জনের কোনো বৈধ ও গ্রহণযোগ্য উৎস পাওয়া যায়নি।
সোহেল রানা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ছুটি নিয়ে ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ট্রেনে বাড়ি যাওয়ার সময় ভৈরবে দুই বস্তায় ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকাসহ রেলওয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। 

চট্টগ্রামে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর সহকারী পরিচালক এনামুল হক বলেন, হোসেনে আরা পপি গৃহিণী। সোহেল রানা বিশ্বাস দুর্নীতির অর্থ আড়াল করতে পপিকে মৎস্য চাষি বানান। যে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে জমি নিয়ে মৎস্য চাষের কথা বলা হয়, সেই স্ট্যাম্প ২০১১ সালে কেনা দেখানো হলেও তদন্তে দেখা যায়, তিনটি স্ট্যাম্পই ২০১৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন থেকে বিতরণ করা হয়েছে। স্ট্যাম্প জালিয়াতি করে পপি দুই কোটি টাকা মৎস্য খাত থেকে আয় দেখালেও এ অর্থ মূলত স্বামীর দুর্নীতির অর্থ। তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি প্রতিবেদনটি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
তবে অভিযুক্ত পপি বলেন, ‘আমি মাছ চাষ করেই দুই কোটি টাকা আয় করেছি। স্ট্যাম্পগুলোও সঠিক। দুদক তদন্ত করে কী পেয়েছে, জানি না। আমার স্বামীও কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন।’ পপি ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। দুদক তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, পপি ২০১১ সাল থেকে স্বামীর বাড়ির পরিবর্তে নেত্রকোনায় বাবার বাড়িতে মৎস্য ব্যবসা শুরু করেন বলে দাবি করেন। কিন্তু ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যবসার বিল ভাউচার, ট্রেড লাইসেন্স, নিজের নামে কোনো পুকুর, মৎস্য চাষি হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কোনো প্রত্যয়নপত্র দুদককে দেখাতে পারেননি। শুধু তিনটি ১০০ টাকার স্ট্যাম্প উপস্থাপন করেন। আয়কর নথিতে তিনি ২০১১-১২ করবর্ষে মৎস্য চাষে ১৩ লাখ টাকা, ২০১১-১৩ বর্ষে ১৫ লাখ, ২০১৩-১৪ বর্ষে ২০ লাখ, ২০১৪-১৫ বর্ষে ৩০ লাখ, ২০১৫-১৬ বর্ষে ৩৫ লাখ, ২০১৬-১৭ বর্ষে ২০ লাখ, ২০১৭-১৮ বর্ষে ২২ লাখ, ২০১৮-১৯ বর্ষে ২৩ লাখ, ২০১৯-২০ বর্ষে ২৩ লাখ টাকাসহ ২ কোটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন উল্লেখ করেন। কিন্তু এসবের বৈধ উৎস পায়নি দুদক। 

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১১-১২ করবর্ষ থেকে ২০১৮-১৯ করবর্ষ পর্যন্ত নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার দলধলা মৌজার ৩০৪ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেছেন উল্লেখ করা হয়। কথিত দেলোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের জন্য মাছ চাষের লিজ চুক্তির তিনটি স্ট্যাম্প যাচাই করে দুদক। ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ট্রেজারি শাখা থেকে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ তিনটি স্ট্যাম্প ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে রাজু আহমেদ নামক ভেন্ডারের কাছে ছাড়করণ করা হয়। এছাড়া পপি ময়মনসিংহ জেলার ছয়টি ব্যাংকে আটটি অ্যাকাউন্টের মধ্য থেকে দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আগে অপরাধের দায় থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য তিনটি ব্যাংক থেকে ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে সরিয়ে ফেলেছেন। তাঁর নামে প্রিমিয়ার ব্যাংক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ৫০ লাখ করে ১ কোটি টাকার দুটি এফডিআর আছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্নীতির টাকা আড়ালে জেলার সোহেল স্ত্রীকে সাজান মাছচাষি