চালু হচ্ছে গোলাপি রঙের বাস, ওঠা যাবে না টিকিট ছাড়া
Published: 4th, February 2025 GMT
আবদুল্লাহপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করা ২১টি কোম্পানির বাস একক কোম্পানির অধীনে পরিচালনা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলম। তিনি বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার একক কোম্পানির অধীনে টিকিট কাউন্টারভিত্তিক বাস পরিচালনা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। বাসগুলোর রঙ হবে গোলাপি।
রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে সংগঠনটির কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, আবদুল্লাহপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে প্রায় ২ হাজার ৬১০টি বাস চলাচল করবে। এসব বাসে টিকিট ছাড়া কেউ উঠতে পারবেন না। যত্রতত্র বাসে ওঠানামাও করা যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল আলম বলেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ১৬ বছর ধরে ঢাকা শহরে বাস-মিনিবাস চুক্তিতে যাত্রী পরিবহন করছে। এতে গণপরিবহন চলাচলে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করার কারণে সড়কে যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ১৯ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ, ঢাকা মহানগরে যানজট নিরসন এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ–সংক্রান্ত এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাসের মালিকেরা চালকদের সঙ্গে যাত্রাভিত্তিক (ট্রিপ) চুক্তি না করে পাক্ষিক বা মাসিক ভিত্তিতে চুক্তি সম্পাদন করতে বলা হয়েছে। তাই আগামী বৃহস্পতিবার প্রাথমিকভাবে গাজীপুর থেকে ঢাকার বিভিন্ন গন্তব্যে টিকিট কাউন্টার ভিত্তিতে চালকেরা বাস চালাবেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় আবদুল্লাহপুর থেকে এই সেবার উদ্বোধন করা হবে।
মালিক সমিতির এই নেতা আরও বলেন, চলতি মাসের মধ্যেই মিরপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুরে চলাচল করা বাসগুলোকে একইভাবে কাউন্টারের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। এখন থেকে বাস কাউন্টার পদ্ধতিতে চালাতে হবে এবং যাত্রীদের নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে বাসে যাতায়াত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এম এ বাতেন, কোষাধ্যক্ষ এ এস এম আহম্মেদ খোকন, দপ্তর সম্পাদক কাজী মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দক্ষ স্বেচ্ছাসেবকরাই পারে দুর্যোগ প্রস্তুতি উন্নত করতে
উপকূলজুড়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় বহুমুখী সংকট ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে অন্যান্য বছরের মত এবারও পালিত হচ্ছে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস ২০২৫। ‘দুর্যোগের পুর্বাভাস প্রস্তুতি, বাঁচায় প্রাণ ক্ষয়ক্ষতি-এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আজ (১০ মার্চ) পালিত হচ্ছে দিবসটি।
দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ থেকে শুরু করে নানান কর্মসূচি নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
বছর ঘুরে বার বার জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস মনে করিয়ে দেয় দুর্যোগ প্রস্তুতির কথা, দুর্যোগ বিষয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির কথা। এ দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে দুর্যোগ প্রস্তুতি জোরদার করার তাগিদ আসে। প্রতিবছর দুর্যোগ সচেতনতায় এমন আরো অনেক দিবস পালিত হলেও দুর্যোগে মানুষের ভয় কাটে না। সাইক্লোনের সিগন্যাল পেলে এখনো আতংক ছড়ায় উপকূলের মানুষের মনে।
২০০৭ সালের সাইক্লোন সিডর, ২০০৯ সালের সাইক্লোন আইলা, ২০২০ সালের আম্ফান উপকূলের মানুষদের মনে এখনো ভয় নিয়ে আসে। ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী সাইক্লোন বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করেছিল প্রচন্ড শক্তি নিয়ে। এ সাইক্লোনটি পৃথিবীর ইতিহাসে এখন অবধি সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতি বলে জানাচ্ছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা। ১৯৯১ সালের সাইক্লোন উপকূলে আঘাত করেছিল। এ ছাড়াই উপকূলের আঘাত করেছে আরো অনেক সাইক্লোন। এসব সাইক্লোনে বিপুল পরিমাণ জান ও মালের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু যথাযথ প্রস্তুতি থাকলে এই ক্ষতি অনেকটাই এড়ানো সম্ভব ছিল।
২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি ১০ মার্চকে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস হিসেবে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসেবে ৯ বছর ধরে এ দিবসটি যথাযোগ্য আয়োজনের মাধ্যমে দেশব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস থাকা সত্বেও জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, কেননা, বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। দুর্যোগের আঘাতে আমাদের দেশে প্রতিবছর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। শুধু উপকূল অঞ্চল নয়, গোটা দেশই এখন দুর্যোগের মুখোমুখি। ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশে মার্চ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালন করা হয়ে আসছিল।
মন্ত্রিসভায় দিবসটি পালনের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর। ২০১৫ সালে দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস ও বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস ছিল একই দিনে (অর্থাৎ ২৬ মার্চ)। এ কারণে ওই বছর ৩১ মার্চ জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস হিসেবে পালিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্মতিপত্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে মার্চের শেষ সপ্তাহের পরিবর্তে অন্য কোনো দিনে এটি উদযাপন করার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। এরই আলোকে ১০ মার্চ জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস হিসাবে নির্ধারিত হয়।
স্বেচ্ছাসেবকদের অ্যাডভান্স প্রশিক্ষণের একটি সেশন
প্রস্তুতিতে বহুমূখী সংকট
উপকূলসহ সারাদেশের দিকে তাকালে এখনো দুর্যোগ প্রস্তুতিতে নানান সংকট চোখে পড়ে। বেড়িবাঁধবিহীন এলাকায় এখনো জোয়ার এলে মানুষের আতংক বাড়ে। মানুষের বিপন্নতা কাটে না প্রান্তিক এলাকায়। গত কয়েক বছর ধরে উপকূল এলাকায় উচ্চ জোয়ারের চাপ প্রবলভাবে আঘাত করছে। বর্ষাকালের কয়েক মাস বহু মানুষকে অন্যত্র সরে যেতে হচ্ছে। ফসল ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে জোয়ারের চাপে। বর্ষাকালে উচ্চ জোয়ারের চাপে উপকূলের বিপুল এলাকা ঝুঁকির মধ্যে থাকে। কোন বছর বড় দুর্যোগের ঘটনা না ঘটলেও ছোট ছোট প্রাকৃতিক বিপদগুলো প্রতিবছর উপকূলের বিপুল সংখ্যক মানুষদের ক্ষতির মুখে ফেলে। বর্ষাকালে অনেক স্থানে নদীর ভাঙন দেখা দেয়। এতে বাড়িঘর হারায় বহু মানুষ। গোটা উপকূল জুড়ে লবনাক্ততার প্রভাব তীব্র আকার ধারণ করে। সুপেয় পানি থেকে শুরু করে কৃষি কাজ অবধি সবখানে লবনাক্ততার প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। মানুষের বহুমুখী দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে বিশেষ কোন প্রস্তুতি চোখে পড়ে না।
সাইক্লোন, বন্যা এমনকি অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের ক্ষেত্রেও সিগন্যালিংয়ে এখনো অনেক সমস্যা রয়েছে। যথাযথ সিগন্যালিং মানুষের জীবন ও সম্পদ বাঁচাতে পারে। জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্কগুলো দুর্যোগে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনার তাগিদ দেয়। একই সাথে জাতিসংঘের ঘোষণা রয়েছে ‘আরলি ওয়ারনিং ফর অল’; যা সবার জন্য আগাম সতর্কতা নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়। ২০২৭ সালের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জনের তাগিদ দিয়েছে জাতিসংঘ। দুর্যোগ প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে মডেল হলেও এখন অবধি সবার জন্য আগাম সতর্কতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বহু বছর আগে থেকে সিগন্যালিংয়ে পরিবর্তন আনার তাগিদ দিয়েছেন। কেননা, বর্তমানে প্রচলিত সিগন্যালিং ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের জন্য বোধগম্য নয়। ১৯৯১ সালের সাইক্লোনের পর থেকে বাংলাদেশের উপকূল জুড়ে সাইক্লোন শেলটারের সংখ্যা বাড়ানো হলেও এখনো রয়ে গেছে অনেক সমস্যা। অব্যবস্থাপনাজনিত কারণে সাইক্লোন শেলটারগুলো এখনো সব মানুষদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়। সাইক্লোনে শেলটারে যাওয়ার ক্ষেত্রেও মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাব আছে।
পানি থেকে অসুস্থদের উদ্ধারের কৌশল শিখছেন স্বেচ্ছাসেবকরা
দরকার দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক দল
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দুর্যোগ মোকাবিলার উদ্যোগ গ্রহণের গুরুত্বও বেড়েছে অপরিসীম। এক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের গুরুত্বও বেড়েছে অনেক। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকরী সাইক্লোনের পর থেকে বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের প্রসার ঘটে। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে সুনাম অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, দুর্যোগ প্রস্তুতিতে নতুন ধ্যান ধারণা যুক্ত করা এবং স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম জোরদার করায় মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতিও কমে এসেছে।
এবছর জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবসের মাত্র কয়েকদিন আগে বরগুনার তালতলীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল স্বেচ্ছাসেবকদের এই অ্যাডভান্স প্রশিক্ষণ। যা দুর্যোগ প্রস্তুতিতে বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করবে। বরগুনা জেলার ৬টি উপজেলা থেকে নির্বাচিত ১০০ নারী-পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক বাস্তবভিত্তিক এ প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছেন। প্রশিক্ষণটি ভাবিষ্যতে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবকদের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে; যাতে তারা দুর্যোগাক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে এবং দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে। অক্সফ্যাম বাংলাদেশের সহায়তায় এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে স্বেচ্ছাসেবী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগোনারী।
‘আঁধার, দুর্যোগ, শান্তিতে, স্বেচ্ছাসেবক সবার আগে’—এই স্লোগান সামনে রেখে বরগুনার তালতলীতে শুভসন্ধ্যা সমুদ্রসৈকতে তিনদিনব্যাপী অ্যাডভান্স সার্ভাইভাল স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। দেশে দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে এ ধরণের প্রশিক্ষণ এটাই প্রথম। প্রশিক্ষণ থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্যোগকালের কঠিন সময়ের জন্য শক্তিশালী হওয়ার কলাকৌশল শিখেছে; যা তাদের বিপন্ন মানুষদের সহায়তা করতে কাজে লাগবে।
বরগুনা জেলার পাঁচটি উপজেলা থেকে তালিকাভূক্ত স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্য থেকে বিভিন্ন ধাপে বাছাইয়ের মধ্যদিয়ে এই প্রশিক্ষণের জন্য ১০০ অংশগ্রহণকারী নির্বাচন করা হয়। এদের মধ্যে ৫০ জন নারী এবং ৫০ জন পুরুষ। করোনা মহামারীর জরুরি সময় থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে জাগোনারী। প্রাথমিক পর্যায়ে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩০০’র বেশি স্বেচ্ছাসেবক বিভিন্ন সময়ে বেসিক দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ পেয়েছে। তাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক অ্যাডভান্স সার্ভাইভাল প্রশিক্ষণে অংশগ্রহনের সুযোগ পেয়েছে। প্রশিক্ষণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দক্ষ প্রশিক্ষকগণের সরাসরি তত্বাবধানে দুর্যোগ মোকাবিলার বাস্তবভিত্তিক কলাকৌশলগুলো শিখতে পেরেছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডো, স্কাউট ও বিএনসিসির অভিজ্ঞ ট্রেনার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার ও মানবিক কার্যক্রম বিশেষজ্ঞগণ প্রশিক্ষণের বিভিন্ন অধিবেশন পরিচালনা করেন।
হাতেকলমে প্রশিক্ষণ সেশনে স্বেচ্ছাসেবকরা
দক্ষতা ছড়িয়ে দিতে হবে
একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হয়েও ছোটবেলা থেকে স্বেচ্ছাসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার সোহাগ আকন। বরগুনার তালতলীতে অনুষ্ঠিত অ্যাডভান্স স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে সোহাগ আকন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে স্বেচ্ছাসেবী কাজে আমার বিশেষ আগ্রহ। এর আগে অনেক প্রশিক্ষণ পেয়েছি। কিন্তু এবারের প্রশিক্ষণটি ছিল সম্পূর্ন ব্যতিক্রম। দুর্যোগকালে মানুষের পাশে দাঁড়াতে এই প্রশিক্ষণ আমাকে অনেক সাহায্য করবে। আমার মাধ্যমে প্রশিক্ষণের দক্ষতা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে যাবে।’
আরেকজন অংশগ্রহনকারী, বরগুনা সদর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক ইমা আকতার বলেন, ‘আগামীদিনে নিজের প্রস্তুত করতে এ প্রশিক্ষণ আমাকে সাহায্য করেছে। আমরা দলবেঁধে প্রশিক্ষণে হাতেকলমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার নানান কৌশল শিখেছি। প্রশিক্ষণে অনেককিছুই ছিল, যা আমি আগে কখনো শিখিনি। এ প্রশিক্ষণের পর স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে মানব সেবায় আমার ভূমিকা আরো জোরদার হবে বলে আশাকরি।’
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডো রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ১০০জন স্বেচ্ছাসেবককে একসাথে প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন কৌশল তারা হাতে কলমে শিখতে পেরেছে। বরগুনার মত একটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকদের এ ধরণের প্রশিক্ষণ খুব দরকারি ছিল। শুধু বরগুনায় নয়, এ প্রশিক্ষণ সমগ্র উপকূল জুড়ে হওয়া দরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা জোরদার করতে পারলে দুর্যোগ ঝুঁকি কমে আসবে।’
বনের ভেতরে দুর্যোগ মহড়ায় অংশ নিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা
বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণে গুরুত্বারোপ
বরগুনায় তিনদিনব্যাপী প্রশিক্ষণের সেশনগুলোতে স্বেচ্ছাসেবকদের দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্যোগ মোকাবিলায় তিনটি পর্যায়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছেন। প্রশিক্ষণে উদ্ধার (Rescue), বেঁচে থাকা (Survival) এবং প্রাথমিক চিকিৎসা (First Aid) বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক দক্ষতা অর্জনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। উদ্ধার (Rescue) পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের সাথে উদ্ধারের দক্ষতা অর্জন করেন অংশগ্রহণকারীরা। তারা অপারেশন উদ্ধার বিষয়ে হাতেকলমে শিখতে পেরেছেন। দুর্যোগকালে নিজেদের বাঁচাতে ভেলা প্রস্তুত করার কৌশল শিখেছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। যা উদ্ধার এবং পানিতে বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। একই সাথে তারা শিখেছে দড়ির দক্ষতা; যা উদ্ধার ও জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়।
প্রশিক্ষণে টিকে থাকা (Survival) বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করেছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। এই পর্যায়ে তারা তাঁবু ক্যাম্পিং এবং টিকে থাকার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। উন্নত নিরাপত্তার জন্য অংশগ্রহনকারীরা গাছের প্ল্যাটফর্ম এবং অস্থায়ী আশ্রয় তৈরি করার কৌশল শিখেছেন। তারা জরুরি অবস্থার জন্য কীভাবে নিজেদের ক্ষমতায়িত করতে হয়, তা আয়ত্ব করেছেন। তারা স্থিতিস্থাপকতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য জীবন দক্ষতা কীভাবে বাড়ানোর কৌশল শিখেছেন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের একটি অগ্রণী প্রকল্প, সেবা করার জন্য প্রস্তুত, স্বেচ্ছাসেবকেরা নিজেদের ঝুঁকি হ্রাস করা এবং টিকে থাকার দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছেন।
প্রশিক্ষণে স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাথমিক চিকিৎসা (First Aid) বিষয়ে হাতেকলমে জ্ঞান অর্জন করেছেন। তারা কোয়ান্টাম পদ্ধতি শিথিলকরণ এবং ধ্যানে মগ্ন হয়ে জীবনে ফিরতে পেরেছিলেন; যা নিজেদের প্রস্তুতি আরো জোরদার করতে সাহায্য করেছে। এর মাধ্যমে তারা প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ বিষয়ে ধারণা পাবে। জরুরি পরিস্থিতে সময়কে কাজে লাগানোর চর্চা করতে পেরেছেন তারা। চিকিৎসা সহায়তা আসার আগে যাতে কীভাবে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা যায়; সে কৌশল শিখতে পেরেছেন তারা।
ঢাকা/টিপু